বাঁশ-বেতের চাটাই বুনে চলে সংসার, পৃষ্ঠপোষকতা চান নারীরা
Published: 4th, June 2025 GMT
বিকেলটা গ্রীষ্মের। দূর প্রান্তের কোনো এক গ্রাম থেকে আসছে এলোমেলো হাওয়া, তাতে লেগেছে রোদের তাপ। এর মধ্যেই মেঠো পথের ধারে টিলার ওপরে একটি বাড়িতে ঢুকে দেখা গেল, একজন নারী ঘোরগ্রস্তের মতো বাঁশ-বেতের চাটাই বুনছেন।
আশপাশের আরও কয়েকটি বাড়িতে নারীরা এসব চাটাই বোনার কাজ করেন। এই আয়ে অনেকের সংসার চলে। টিলাগাঁও নামের গ্রামটিতে কবে এই ধারার শুরু হয়েছিল, তা এখন আর কেউ বলতে পারেন না। বংশপরম্পরায় কাজটি শিখেছেন তাঁরা। টিলাগাঁও গ্রামটি পড়েছে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের গুলেরহাওর এলাকায়।
টিলার ওপরের ওই বাড়িতে যিনি চাটাই বুনছিলেন, তাঁর নাম মরিয়ম বিবি। সম্প্রতি (২ মে) এক বিকেলে টিলাগাঁওয়ে গিয়ে তাঁর দেখা মেলে। মরিয়মের আশপাশে ছড়ানো আরও কিছু সম্পূর্ণ ও অর্ধেক কাজ করা চাটাই পড়ে আছে। একটি ঘরের ভেতর আরেক তরুণী চাটাই বুনছেন।
মরিয়ম বিবি বলেন, ‘১৭ বছর আগে জামাই (স্বামী) মারা গেছইন (গেছেন)। এরপর থাকি হুরুত্বারে পালার লাগি (বাচ্চাদের লালনপালন করতে) চাটাই বানাই। চাটাই বেচিয়া (বিক্রি করে) যা পাই, তা দিয়া কোনো রকম সংসার চলে।’
১৭ বছর আগে সেই যে তাঁর চাটাই বানানোর কাজ শুরু হয়েছিল, তা এখনো চলছে। মরিয়ম জানান, এ কাজের জন্য মহাজনের কাছ থেকে আগাম পুঁজি ধার নেন। তা দিয়ে বাঁশ কেনেন। ছয়টা বাঁশ কিনতে খরচ হয় ৪০০ টাকা। একটি বাঁশ দিয়ে এক থেকে দেড়টি চাটাই তৈরি করা যায়। এরপর মহাজনের কাছে ৭৫ টাকা দামে একটি চাটাই বিক্রি করেন। সপ্তাহে ২০-২৫টি চাটাই তৈরি করতে পারেন। সপ্তাহখানেক পর মহাজনের বাড়িতে এসব চাটাই নিয়ে যান। ৬টি বাঁশের চাটাই থেকে তাঁদের ২০০ টাকার মতো লাভ হয়। মরিয়ম বিবির মতো গ্রামের নাছিমা বেগম, নুরই বেগম, ছায়া বেগম, মজিদা বেগম, জয়নব বেগম, আনোয়ারা বেগমসহ আরও কয়েকজন নারী চাটাই বোনার কাজ করেন।
টিলাগাঁওয়ের কয়েকটি বাড়ি ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় সব বাড়িতেই কমবেশি চাটাই বোনার চিহ্ন। কোথাও আঁটি বেঁধে বাঁশ রাখা, কোথাও বেত কেটে রাখা হয়েছে। কোথাও চাটাই বুনে বিক্রির জন্য জমা করে রাখা হয়েছে।
নিজেদের তৈরি চাটাইয়ের সঙ্গে নারী কুটিরশিল্পীরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে শিক্ষককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে সমাজকর্ম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার বিশ্বাসকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ড সভায় ২৬ জুলাই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। গতকাল সোমবার বিকেলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
সুব্রত কুমার বিশ্বাস পাবনার ঈশ্বরদী পৌর শহরের পোস্ট অফিসপাড়ার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রী যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, অভিযুক্ত শিক্ষক ওই ছাত্রীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং বিয়ের আশ্বাসে শারীরিক সম্পর্কে জড়ান। কিন্তু পরে বিয়েতে অস্বীকৃতি জানালে ছাত্রীটি ২০২৩ সালের ২২ সেপ্টেম্বর বিভাগের প্রধানের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। তদন্ত কমিটি ওই বছরের ৯ অক্টোবর শিক্ষক সুব্রতকে সব ধরনের একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুপারিশ করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি দেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর তদন্ত করে। তদন্তে শিক্ষকের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত হয়। এরপর তদন্ত কমিটি তাঁকে স্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করে। এ সুপারিশের ভিত্তিতেই রিজেন্ট বোর্ড বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত শিক্ষক সুব্রত কুমার বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এস এম আবদুল আওয়াল প্রথম আলোকে বলেন, রিজেন্ট বোর্ডে একজন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এটি আইন অনুযায়ীই হয়েছে।