বার্ষিক বাজেট গণতন্ত্রের একটি মৌলিক স্তম্ভ। স্বভাবতই এটি একটি রাজনৈতিক দলিল। বাজেট জনগণ থেকে প্রাপ্ত রাজনৈতিক সরকারের ম্যান্ডেট ও অগ্রাধিকার প্রতিফলিত করার কৌশল ও বাস্তবায়নকাঠামোর আর্থিক প্রতিবেদন। জাতীয় সম্পদ কীভাবে বণ্টিত হবে এবং এর দ্বারা কারা উপকৃত হবে, তার একটি নীলনকশা হচ্ছে বাজেট।

এ কারণেই সরকার বাজেট সংসদে উপস্থাপনের মাধ্যমে জনসমক্ষে তুলে ধরে। প্রতিটি দফা যাচাই-বাছাই ও কাটছাঁট করে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা জনগণের মৌলিক অধিকারের আইনি কাঠামো প্রদান করেন। 

সংগত কারণেই জুলাই অভ্যুত্থান–পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকারকে ২০২৫-২৬ সালের বাজেট প্রণয়নে ভিন্ন পথ বেছে নিতে হয়েছে। সংসদ না থাকায় সংবিধানের ৯৩ (৩) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাজেটসংক্রান্ত আইনকাঠামো নিষ্পন্ন করা হবে। সংসদীয় বিতর্ক এবং ‘অনুদানের দাবির’ ওপর ভোট অনুপস্থিত থাকায় সরকার জনগণের মতামত চেয়েছে।

তবে অন্তর্বর্তী সরকারের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ন্যূনতম জাতীয় ঐকমত্য স্থাপনের মাধ্যমে আর্থিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের একটি সুবর্ণ সুযোগ ছিল। তা হাতছাড়া হলো। এটি হলে যুগান্তকারী নজির তৈরি হতে পারত। ৯৩ (৩) বিধান ধারাবাহিকতা রক্ষার সুযোগ দেয়।

জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যে সত্যিকারের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল। তা ধারণ করতে সরকার জনগণের সঙ্গে ‘অনুপস্থিত সংযোগ’ পূরণে অন্যান্য বিষয়ে যেমন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ করছে, বাজেট বিষয়েও আলোচনা করতে পারত। এতে বিভাজনের বদলে রাজনৈতিক ঐকমত্য মজবুত হতো। বাজেট বিষয়ে বর্তমান সংবিধানের জনগণের সার্বভৌমত্ব ও কর্তৃত্ব স্থাপনবিষয়ক ঘাটতি রয়েছে। এ আলোচনা করতে পারলে সেই ঘাটতি পূরণে সংস্কারের রূপরেখাও অর্জিত হতো।

বাজেট রাজনৈতিক প্রক্রিয়া

বাজেটে সংসদীয় নিয়ন্ত্রণের যাত্রা দীর্ঘ ও সমৃদ্ধ। ১২১৫ সালে ‘ম্যাগনাকার্টা’ রাজার কর আরোপের নিরঙ্কুশ ক্ষমতাকে সীমিত করেছিল। এটি সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্বমূলক না হলেও এতে ‘রাজ্যের সাধারণ পরামর্শের’ সম্মতির প্রয়োজন ছিল। যুক্তরাজ্যে ১৬৮৮-৮৯ সালের বিপ্লব সুদৃঢ় করেছিল কর ও ব্যয়ের ওপর সংসদের কর্তৃত্বকে। পরবর্তী সময়ে ‘প্রতিনিধিত্ব ছাড়া কর আরোপ নয়’, এই স্লোগান অষ্টাদশ শতাব্দীতে আমেরিকান বিপ্লবকে প্রজ্বলিত করেছিল। অর্থাৎ যতক্ষণ না নাগরিকদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে কর ধার্য হয় ও সেই কর ব্যয় করা, ততক্ষণ নাগরিকদের কর দিতে বাধ্য করা উচিত নয়।

ঊনবিংশ শতাব্দীতে উদীয়মান বুর্জোয়া ও সামন্ত শাসকশ্রেণির মধ্যে দীর্ঘ সংগ্রামের পর ফ্রান্স আধুনিক বাজেটপদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করেছিল। ফলে জনগণের তথা রাষ্ট্রীয় অর্থের ওপর সংসদের নিয়ন্ত্রণ থাকা গণতান্ত্রিক অগ্রগতির একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে নিশ্চিত হয় যে আইন প্রণয়নকারী পক্ষ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছে এবং রাজস্ব সংগ্রহ ও ব্যয়ের বিষয়েও তাদের চূড়ান্ত অধিকার আছে। 

বাজেট–ব্যবস্থা ও জবাবদিহির ঘাটতি

অর্থমন্ত্রী প্রতি অর্থবছরের জন্য প্রজাতন্ত্রের আনুমানিক আয় ও ব্যয়ের বিবরণ তথা বার্ষিক আর্থিক বিবরণী সংসদে পেশ করেন। তা করা হয় সংবিধানের ৮৭ (১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অর্থবছরের পুরো এক মাস আগে বিতর্কের সুযোগ তৈরি করতে এই দলিল সংসদে উপস্থাপিত হয়।

সংসদ সদস্যরা ‘অনুদানের দাবি’ অর্থাৎ মন্ত্রণালয়গুলোর প্রস্তাবিত ব্যয় যাচাই-বাছাই করেন। ৮৯ (২) অনুচ্ছেদমতে, বার্ষিক আর্থিক বিবরণীর ব্যয়সংক্রান্ত বিষয় দাবির আকারে সংসদে অনুমোদনের জন্য পেশ করা হয়। আর সংসদ অনুমোদন বা অননুমোদন বা উল্লিখিত অর্থের পরিমাণ হ্রাস করার ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এটি নিছক আমলাতান্ত্রিক আচার নয়। এটি জবাবদিহির মৌলিক নীতি। অর্থাৎ সরকার রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক (৭ [১] অনুচ্ছেদ) তথা জনগণের কাছ থেকে তহবিল ‘দাবি’ করছে।

সংসদ সদস্যগণ বরাদ্দ কমাতে ‘কাটছাঁট প্রস্তাব’ আনতে পারেন এবং অনুমোদন, কমানো বা বাতিলও করতে পারেন। ৮৮ অনুচ্ছেদের কিছু অ-ভোটযোগ্য ব্যয়ের তালিকা বাদে প্রতিটি ‘অনুদানের দাবি’ ভোটে উপস্থাপিত হয়। এটি নিশ্চিত করে যে জনগণের প্রতিনিধিরা প্রতিটি ব্যয় সরাসরি অনুমোদন করেন। প্রতিটি দাবি অনুমোদিত হওয়ার পর আইনি কাঠামোয় স্থায়ী রূপ পায়। ৮৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী কর প্রস্তাব নির্ধারণকারী ‘অর্থ বিল’ নিয়ে বিতর্ক হয়ে পাস হলে নতুন কর আইন কার্যকর হয়। ৯০ (১) অনুচ্ছেদ অনুসরণে ‘সমন্বিত তহবিল’ থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দিতে ‘আর্থিক অনুমোদন বিল’ উত্থাপন করে পাস করা হয়।

বাজেট ‘অর্থবিল’ হওয়ায় সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা হয় না। দলের বাইরে গিয়ে ভোট দেওয়ার সুযোগ না থাকায় দলের বাইরের প্রস্তাব যুক্ত করা কঠিন। সত্যিকারের বিতর্কের অভাব এবং অর্থবহ সংশোধনী প্রস্তাব করার অক্ষমতা সংসদীয় জবাবদিহিকে উল্লেখযোগ্যভাবে দুর্বল করে। সংসদীয় কমিটির সুপারিশগুলো প্রায়ই মন্ত্রণালয় দ্বারা বাস্তবায়িত হয় না।

এই পদ্ধতিগত দুর্বলতা আইন প্রণয়নকারী শাখার তদারকি করার ক্ষমতাকে সীমিত করে। অবাস্তব রাজস্ব পূর্বাভাস এবং পরিপূরক বাজেটের ওপর ঘন ঘন নির্ভরতার কারণে বাজেটের সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতাও প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। পদ্ধতিগত দুর্বলতা, সম্মিলিতভাবে বাংলাদেশের বাজেট–ব্যবস্থায় প্রকৃত জবাবদিহিকে দুর্বল করে। মৌলিক প্রশ্ন থেকেই যায় যে জাতীয় বাজেট কার জন্য, কেন এবং কীভাবে নির্ধারিত হয়? 

অন্তর্বর্তীকালীন শাসনসংক্রান্ত রীতিনীতির অনুপস্থিতি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ডিসেম্বর-জুন নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিয়েছে। একটি সাধারণ নির্বাচন আসন্ন। এবারের বাজেটের অর্থবছরে নির্বাচিত সরকার আসার সম্ভাবনা আছে। বাজেট অনুমোদনের পদ্ধতিতে অবিচ্ছিন্ন সরকারি সেবার প্রয়োজনের সঙ্গে গণতান্ত্রিক বৈধতার নীতির মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন পন্থা থাকে। বাংলাদেশের বহাল সংসদীয় গণতন্ত্রে তা নেই। 

ওয়েস্টমিনস্টার ঐতিহ্য অনুসরণকারী দেশ, যেমন কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি ‘অন্তর্বর্তীকালীন শাসনসংক্রান্ত রীতিনীতি’ মেনে চলে। তাদের অলিখিত কিন্তু দৃঢ়ভাবে অনুসৃত নিয়মগুলো নির্দেশ করে যে নতুন ম্যান্ডেট নেই এবং দায়িত্ব ছেড়ে দেবে, এমন সরকার বড় ধরনের নীতি পরিবর্তন, উল্লেখযোগ্য কর সমন্বয় বা নতুন, বৃহৎ আকারের আর্থিক প্রতিশ্রুতি এড়ানো উচিত।

উদাহরণস্বরূপ, যতক্ষণ না নতুন নির্বাচিত সরকার তার বাজেট উপস্থাপন করে, কানাডা নতুন অর্থবছরের প্রথম কয়েক মাসের সরকারি ব্যয় মেটানোর জন্য ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরবরাহ’ বা ‘হিসাবের ওপর ভোট’ ব্যবহার করে। একইভাবে ভারত ‘অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট’ এবং ‘হিসাবের ওপর ভোট’ (সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের অধীনে) ব্যবহার করে অস্থায়ী আর্থিক পরিকল্পনা করে। জার্মানির সংসদীয় ব্যবস্থায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সম্পর্কে আরও সংজ্ঞায়িত আইনি কাঠামো রয়েছে। ব্রাজিলের মতো দেশগুলো ‘অংশগ্রহণমূলক বাজেটিং’ ব্যবস্থায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে।

জবাবদিহির মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়া

বাজেট অনুমোদনের জন্য প্রচলিত সাংবিধানিক পদ্ধতি, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে। সংবিধানে উল্লিখিত জনগণের চূড়ান্ত মালিকানা এবং সরকারি তহবিলের ওপর নিয়ন্ত্রণ-বাস্তবায়নে ব্যাপক সংস্কার জরুরি।

সংসদ না থাকা অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গণতান্ত্রিক জবাবদিহির চেতনাকে যথাসম্ভব সমুন্নত রাখা। আনুষ্ঠানিক সংসদীয় বিতর্ক না থাকলেও অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বাজেট নিয়ে আলোচনা করা। জবাবদিহি এবং বাংলাদেশে সংসদীয় তদারকি শক্তিশালী করার জন্য মৌলিক সাংবিধানিক ও পদ্ধতিগত সংস্কারও অপরিহার্য। এ ক্ষেত্রে জুলাই সনদে সংসদীয় কমিটিকে শক্তিশালী করা, স্বচ্ছতা এবং জনসাধারণের অংশগ্রহণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য পরিষ্কার নির্দেশিকাসহ বিস্তৃত বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যায়। 

ড.

রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর অধ্যাপক, উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

* মতামত লেখকের নিজস্ব

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক অন চ ছ দ অন র জন য প প রস ত ব র জন ত ক সরক র র উপস থ প ন সরক র ব যবস থ জনগণ র কর ছ ল র র জন ব তর ক অন ম দ ন র জন উল ল খ আর থ ক ক ষমত র ওপর র একট

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে

ফরাসি বিপ্লবের রক্তাক্ত অভিজ্ঞতা থেকে বলা হয়ে থাকে ‘বিপ্লব তার সন্তানদেরই খেয়ে ফেলে’। আধুনিক যুগের বিপ্লব প্রায়ই পুরোনো সংবিধানকে খেয়ে ফেলে। ব্রিটিশ রাজকবি আলফ্রেড টেনিসনের ভাষায়, পুরোনো বন্দোবস্ত সরে গিয়ে স্থান করে দেয় নতুন ব্যবস্থাকে। জার্মান আইনবিদ কার্ল স্মিটের ভাষায়, ‘স্টেট অব এক্সেপশন’ অর্থাৎ ‘পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা’র উদ্ভব ঘটে। ফরাসি বিপ্লবের অন্যতম পুরোধা এবি সিয়েসের মতে, জনগণের গাঠনিক ক্ষমতার উন্মেষ ঘটে।

স্মিটের মতে, ‘পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা’য় যে বা যাঁরা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, তিনি বা তাঁরাই সার্বভৌম। এই সার্বভৌম শক্তি আইনের বাইরে ও আইনের ঊর্ধ্বে। পুরোনো আইনব্যবস্থা, শাসনতন্ত্র, ক্ষমতাকাঠামো বা বিধিবিধান, কোনো কিছু দিয়েই এই পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থাকে ব্যাখ্যা করা যায় না; সেসব থেকে এর চূড়ান্ত বৈধতার নিদান খোঁজাও যায় না। পুরোনো ব্যবস্থা সেই সমাধান দিতেও সক্ষম নয়। বিদ্যমান সবকিছুই পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থায় নয়া সার্বভৌম শক্তির সব সিদ্ধান্তের অধীনে প্রয়োগ হয়।

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের বর্তমান রাষ্ট্রকাঠামোয় যে অবস্থা বিরাজ করছে, সেটাকে এক ‘পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা’ বলা যায়। কারণ, বিদ্যমান সংবিধানের আওতায় এটাকে ব্যাখ্যা করা ও সেই ব্যবস্থা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব ছিল না; কোনো না কোনো অধিসাংবিধানিক প্রক্রিয়ার শরণ নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না।

বাস্তবে ‘পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা’য় বেশির ভাগ সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ পুরোনো ব্যবস্থার পদ্ধতি মেনেই নেওয়া হয়। কারণ, পদ্ধতিগুলো প্রায় সব জায়গাতেই একই থাকে। পার্থক্য থাকে শুধু কোন সার্বভৌম শক্তি সিদ্ধান্ত দিচ্ছে, কেন, কীভাবে, কখন, কাকে দিচ্ছে, এসব ক্ষেত্রে।

আরও একটি কারণে আগের মতো করেই কাজগুলো করা হয়, সেটা হলো, এ পদ্ধতিগুলো শাসনতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা রক্ষা, সার্বভৌম শক্তিকে সাধারণ জনগণের কাছে সহজে অনুভূত বা আবির্ভূত হওয়া ও অনুকরণযোগ্য সবচেয়ে ভালো শাসনতান্ত্রিক দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রয়োগ করা সুবিধাজনক। কিন্তু যত যা–ই হোক না কেন, সব সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপই নতুন সার্বভৌম শক্তির সিদ্ধান্তের অধস্তন হয়ে যায়।

২.

২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর আমরা যে ‘পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা’য় ঢুকে গিয়েছি, তা ছাত্র–জনতার দাবি ও সক্রিয় আন্দোলনের মুখে সাংবিধানিক পদাধিকারী বিভিন্ন ব্যক্তির পদত্যাগ বা অব্যাহতির ঘটনা থেকে আঁচ করা যায়। স্বাভাবিক সাংবিধানিক অবস্থায় ‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল’ বা জাতীয় সংসদে অভিশংসনের প্রক্রিয়া ছাড়া এদের পদচ্যুত করার সুযোগ নেই; কিন্তু সবই হয়েছে আর তা হয়েছে পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থায়, যেখানে অভ্যুত্থানে বিজয়ীদের অভিপ্রায়ই প্রাধান্য লাভ করে।

তত্ত্বে যেভাবেই থাক না কেন, আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার ইতিহাসে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। ১৯৫৮ সালের পাকিস্তানে আইয়ুব খান সংবিধান রদ করে ‘আইন (বলবৎকরণ) আদেশ, ১৯৫৮’ জারি করেন। তাতে ১৯৫৬ সালের সংবিধানকে মৃত সংবিধান অভিহিত করে রদ করা হলেও সেটিকেই আবার ‘ভেন্টিলেশন’–এ আনা হয়। বলা হয়, রাষ্ট্রীয় সব কর্মকাণ্ড যত দূর সম্ভব ‘মৃত সংবিধান’ অনুযায়ীই চলবে, তবে সামরিক আইনের ওপর প্রাধান্য পাবে।

১৯৬৯ সালে আইয়ুব নিজেই যখন মসনদ ছাড়তে বাধ্য হন, তখন ইয়াহিয়া খান মার্শাল ল জারি করে সংবিধান রদ করে হুবহু একই পদ্ধতি অবলম্বন করেন ‘অস্থায়ী সংবিধান আদেশ, ১৯৬৯’ দিয়ে।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে মতভেদ এত প্রবল কেন?৩০ আগস্ট ২০২৫

বাংলাদেশে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্টে জারি করা মার্শাল ল প্রোক্লেমেশনের ঙ ও চ—দফার মাধ্যমে ঘোষণাপত্র ও সামরিক আইন বিধিমালা ও আদেশ সাপেক্ষে সংবিধান বলবৎ রাখা হয়। এই অধিসাংবিধানিক বন্দোবস্তের অধীনেই ১৯৭৫-৭৯ পর্যন্ত প্রণীত অনেকগুলো ‘প্রোক্লেমেশন অর্ডার’ বলেই সংবিধান সংশোধন করা হয়।

এসব সংশোধন, সংযোজন, বিয়োজন ঘটানো সাংবিধানিক কাঠামো দিয়েই রাষ্ট্র পরিচালনা করে ১৯৭৯ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনও সেই সাংবিধানিক বন্দোবস্তের অধীনেই সম্পন্নের পর গঠিত জাতীয় সংসদে সেগুলো অনুমোদিত হয়। ভুলে গেলে চলবে না যে পঞ্চম সংশোধনী দিয়ে প্রত্যক্ষভাবে সংবিধানে কোনো সংশোধনীই আনা হয়নি, শুধুই অধিসাংবিধানিক বন্দোবস্তের অধীনে আনা সংশোধনীগুলোই অনুমোদন করা হয়।

১৯৮২ সালে এরশাদ ক্ষমতা দখল করে সংবিধান স্থগিত করে দেন এবং আরেক কাঠি সরেস হয়ে ২৪ মার্চ ১৯৮২ জারি করা মার্শাল ল প্রোক্লেমেশনকে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে ঘোষণা করে এর অধস্তন হিসেবে পূর্ববর্তী সব আইনকানুন, ব্যবস্থা চালু রাখেন। এর অধীনে তিনিও ‘প্রোক্লেমেশন অর্ডার’ জারি করে সংবিধানে সংশোধনী আনেন, যেগুলো পরে সপ্তম সংশোধনী হিসেবে অনুমোদিত হয়।

১৯৭১ সালে ১০ এপ্রিল স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ সরকার একটি আইন জারি করে ‘আইনের ধারাবাহিকতা বলবৎকরণ আদেশ, ১৯৭১’ নামে। এ আইনের বলে ২৫ মার্চ ১৯৭১ পর্যন্ত বিদ্যমান সব আইন, বিধিবিধানকে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের অধীনে কার্যকর রাখা হয়। এরও আগে ১৯৪৭ সালের ভারত-পাকিস্তান সৃষ্টির সময়েও দেখা যায়, নতুন বন্দোবস্তের আলোকে ভারতীয় স্বাধীনতা আইন, ১৯৪৭ এর ১৮(৩) ধারাতেও উভয় রাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আগের সব আইন কার্যকর রাখা হয়।

এসব দৃষ্টান্ত থেকেই বোঝা যায়, যারাই একটা নতুন রাজনৈতিক ব্যবস্থা কায়েম করে, তারা পূর্বের সংবিধান বা আইনি কাঠামোর যেটুকু মানতে চায়, সেটুকুই নিতে পারে। চাইলে পুরোটাই নিতে পারে, না চাইলে পুরোপুরি বাদও দিতে পারে। একবার পূর্ববর্তী সংবিধানের কিছু নিয়েছে বলেই তা সব সময় মেনে চলতে হবে, এ রকম কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

প্রকৃতপক্ষে এটা অভ্যুত্থানের একটা মূলনীতি; পূর্বের কাঠামো থেকে যত দূর সম্ভব বেরিয়ে আসা। কিন্তু যত দিন পর্যন্ত পুরোপুরি বেরিয়ে আসা সম্ভব না হয়, তত দিন আগের রাষ্ট্রকাঠামোর কলকবজাগুলো প্রয়োজনমতো গৃহীত বা বর্জিত হয়। তাদের এই ম্যান্ডেট দেয় অভ্যুত্থানকারী রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী।

৩.

এমন পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের রাজনৈতিক পরিসরে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করা আরেকটা বয়ান নিয়ে দুটো কথা না বললেই নয়। এটি প্রথম প্রকাশ্যে আনেন কবি, লেখক ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তাঁর মতে, বিদ্যমান সংবিধান অনুযায়ী শপথ নেওয়ার মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারের ‘বিপ্লবী চরিত্র’ নষ্ট হয়ে গেছে।

ফরহাদ মজহারের এ রকম বক্তব্যে যুক্তি আছে কি নেই, তাঁর চেয়ে বড় কথা হলো, গণ–অভ্যুত্থানের রাজনীতি, সরকারের বৈধতা, শাসনতান্ত্রিক পরম্পরার ব্যাপারগুলোতে এটাই একমাত্র বা শেষ কথা নয়। এর কারণটি হলো, কাঠামো বদলে গেলেই বৈধতার নতুন পথ তৈরি হয়।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৭১ সালে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর পাকিস্তানিরা ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী অনেক জাতীয় পার্লামেন্ট সদস্যকে (এমএনএ) অযোগ্য ঘোষণা করে। তারপর সেসব আসনে উপনির্বাচন দিয়ে বেশির ভাগ আসনে পছন্দের প্রার্থীদের একতরফাভাবে জিতিয়ে আনে।

কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ’৭০-এর নির্বাচনে বিজয়ী পূর্বের পার্লামেন্ট সদস্যরাই গণপরিষদের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করেন। একই সময় পাকিস্তানেও একটি গণপরিষদ গঠিত হয় ’৭০–এর নির্বাচনে বিজয়ীদের নিয়ে, যেখানে বাংলাদেশ থেকে নির্বাচিত দুজন এমপি ছিলেন নুরুল আমীন ও রাজা ত্রিদিব রায়। বাংলাদেশের গণপরিষদে আবার এই দুজনকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়।

এ থেকে বোঝা যায়, জনগণের অভিপ্রায় বদলে গিয়েছিল বলেই নতুন কাঠামোর জন্ম হয়েছিল, বৈধতার নতুন নতুন নিয়ম ও পদ্ধতি তৈরি হয়েছিল।

বিশুদ্ধ রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া পরবর্তী সংসদকেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কারণ, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত সেই সংসদও নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ম্যান্ডেট পাবে। তখন তারা নতুন আরেকটি সাংবিধানিক কাঠামোর জন্ম দেবে। তারা যদি জুলাই সনদের আংশিক বাস্তবায়ন করে, তখন তাদের বাধ্য করার ক্ষমতা সংবিধানে থাকবে না; শুধুই রাজপথই হতে পারে তার সমাধান।৪.

আধুনিক কালে সরকার বা কোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থার বৈধতার সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পথ হলো সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক ভূখণ্ডের নাগরিক, সামাজিক–রাজনৈতিক সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে স্বীকৃতি লাভ। শুরুতেই জনগণ ও বহির্বিশ্বের স্বীকৃতির ভেতর দিয়ে জুলাই-উত্তর নয়া রাষ্ট্রব্যবস্থা তার সার্বভৌম ক্ষমতা সুসংহত করেছে।

এই দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে চলতি সংবিধানের আওতায় শপথ নিলেও তাতে অন্তর্বর্তী সরকারের বিপ্লবী চরিত্র ক্ষুণ্ন হয়নি বলেই প্রতীয়মান হয়। কারণ, ৩৬ জুলাই এখানে জনগণের গাঠনিক ক্ষমতার উন্মেষ ও একটা ‘পরম ব্যতিক্রমী অবস্থা’র জন্ম দিয়েছে।

‘পরম ব্যতিক্রমী ব্যবস্থা’ সার্বভৌম ক্ষমতাকে বাছাই করার ম্যান্ডেট দেয়, কী করতে হবে আর কী না করলেও চলবে। তাই অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের অধীনে আদালতের মতামত নেওয়া এবং বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে শপথ গ্রহণকে ‘অবৈধ’ বলার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুনজুলাই সনদ নিয়ে কিছু ভাবনা১৮ আগস্ট ২০২৫৫.

তাহলে জুলাই সনদ নিয়ে কি সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদের শরণাপন্ন হওয়া যেতে পারে? এর জবাব হলো, সেটা হতেও পারে, আবার না–ও হতে পারে। এটাও সার্বভৌম ক্ষমতার সিদ্ধান্তের বিষয়। এ রকম প্রেক্ষাপটে প্রশ্ন হলো, আগামী নির্বাচন কি গণপরিষদ নির্বাচন হবে? সেখানে কি জুলাই সনদ অনুযায়ী সংবিধান পুনর্লিখন করার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত?

লক্ষণীয়, ১৯৭২ সালে গঠিত গণপরিষদ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের জন্য ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত ছিল না। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে তারা পাকিস্তানের সংবিধান রচনার জন্য রায় পেয়েছিলেন। আবার সেই নির্বাচনে জয়ী দল তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান বাংলাদেশে ভোট পেয়েছিল ৭৫ দশমিক ১১ শতাংশ। ফলে অঙ্কের হিসাবেই এখানকার ২৫ শতাংশ মানুষের প্রতিনিধিত্বও সেই গণপরিষদের ছিল না।

আবার গণপরিষদ গঠনের সঙ্গে সঙ্গে গণপরিষদের সদস্যদের সদস্যপদ বাতিল আদেশ পাস করে এর তাঁদের দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মতপ্রকাশের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এভাবে ২০ জনকে বহিষ্কারও করা হয়েছিল। ফলে ওই গণপরিষদের পক্ষে স্বাধীনভাবে জনগণের অভিপ্রায় ব্যক্ত করা সম্ভব ছিল কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

সর্বোপরি ওই গণপরিষদের দ্বারা প্রণীত সংবিধান অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি; এ দেশে বারবার ঘটা গণ–অভ্যুত্থান, সংবিধান স্থগিত, সংবিধান পুনর্লিখনের মতো ঘটনাগুলো থেকেই তা বোঝা যায়। এর ফলে জনগণকে স্বাধীনভাবে তাদের অভিপ্রায় প্রকাশের সুযোগ দিতে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিকে ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়।

 এ রকম পটভূমিতে জুলাই সনদের আইনগত অবস্থান বা এর বাস্তবায়নের পদ্ধতিকে বিবেচনায় নিতে হবে। ৫ আগস্ট থেকে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতায় থাকা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার ভিত্তি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা। আর এই পুরো কর্মযজ্ঞের প্রতিভূ হিসেবেই ধরতে হবে জুলাই সনদকে। সে ক্ষেত্রে সাংবিধানিক বন্দোবস্তের ভেতর দিয়েই এর বাস্তবায়ন হওয়াই মানানসই হয়।

আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গতানুগতিক সাংবিধানিক বন্দোবস্তে ফেরত আসার পর জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে বিদ্যমান সংবিধানের অধীনে বা এর মুখাপেক্ষী করা হলে জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনা তার কর্তৃত্ব হারাবে। এতে যে সাংবিধানিক ব্যবস্থাকে উৎখাত করে জুলাই সংঘটিত হয়েছিল, সেই ব্যবস্থার অধীনেই জুলাই অভ্যুত্থানের বৈধতা-অবৈধতার বিচার বা পর্যালোচনার বিষয়টি উন্মুক্ত হয়ে পড়বে।

আরও পড়ুনজুলাই ঘোষণাপত্র: জন-আকাঙ্ক্ষা এবং রাষ্ট্রের অভিপ্রায়০৮ আগস্ট ২০২৫

আবার পরবর্তী সংসদই কেবল এগুলো বাস্তবায়ন করার আইনগত ক্ষমতার অধিকারী, এটাও অলঙ্ঘনীয় কোনো ব্যাপার নয়।

পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর ক্ষেত্রে এ রকম দেখা গেছে; একইভাবে জুলাই সনদ আগে বাস্তবায়ন করে পরে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে অনুমোদন নেওয়া যেতে পারে।

বিশুদ্ধ রাজনৈতিক অঙ্গীকার ছাড়া পরবর্তী সংসদকেও জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধ্য করার সুযোগ নেই। কারণ, জনগণের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত সেই সংসদও নিজেদের ইচ্ছেমতো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ম্যান্ডেট পাবে। তখন তারা নতুন আরেকটি সাংবিধানিক কাঠামোর জন্ম দেবে। তারা যদি জুলাই সনদের আংশিক বাস্তবায়ন করে, তখন তাদের বাধ্য করার ক্ষমতা সংবিধানে থাকবে না; শুধুই রাজপথই হতে পারে তার সমাধান।

কিন্তু সব রাজনৈতিক প্রশ্নের মীমাংসা রাজপথে হওয়া রাজনৈতিক পরিপক্বতার লক্ষণ নয়। কিছু ফয়সালা জাতীয় ঐকমত্য, কিছু নির্বাচনে আর কিছু সংসদে নেওয়ার মধ্যেই নিহিত থাকে রাষ্ট্রের স্থিতিশীতলতা। জুলাই সনদ প্রশ্নে যে সিদ্ধান্তই নেওয়া হোক না কেন, এ বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে।

মিল্লাত হোসেন আইন–আদালত, সংবিধান বিষয়ে লেখক ও গবেষক

মতামত লেখকের নিজস্ব

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৪ কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে অনিয়ম: ৭ অডিটর নিষিদ্ধ
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • সেপ্টেম্বরের ১৬ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ২০ হাজার কোটি টাকা
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • জুলাই সনদ নিয়ে যেসব বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • বাংলাদেশ ব্যাংক এক দিনে ২৬ ব্যাংক থেকে ৩৫ কোটি ডলার কিনল কেন