Prothomalo:
2025-07-30@09:58:53 GMT

রহস্যময় ব্ল্যাকহোল

Published: 4th, June 2025 GMT

ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণগহ্বর বিশাল মাধ্যাকর্ষণ ক্ষমতাসম্পন্ন মহাজাগতিক সত্তা। এই সত্তা যেন সবকিছুকে আটকে রাখে। ধসে পড়া বিশাল নক্ষত্র থেকে তৈরি হওয়া ব্ল্যাকহোল আলোও শুষে নেয়। সিঙ্গুলারিটিজ বা এককতা আর ইভেন্ট হরাইজন (দিগন্তসীমা) তৈরি করে। অদৃশ্য হলেও আশপাশের অন্য সব বস্তু বা পদার্থের ওপর প্রভাবের মাধ্যমে তাদের উপস্থিতি শনাক্ত করা যায়। বিভিন্ন ব্ল্যাকহোলকে ছায়াপথের কেন্দ্রে দেখা যায়।
ব্ল্যাকহোল অতি রহস্যময় মহাজাগতিক বস্তু, যা ভীষণ শক্তিশালী, এখান থেকে আলোও বের হতে পারে না। বিশাল নক্ষত্র যখন তাদের নিজস্ব মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অধীনে ভেঙে পড়ে, তখন ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। ব্ল্যাকহোল একটি ঘন বিন্দু তৈরি করে, যাকে এককতা বলা হয়, যা দিগন্তসীমাবেষ্টিত থাকে। ব্ল্যাকহোলের ধারণা ১৯১৬ সালে চালু হয়েছিল। ব্ল্যাকহোল সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য এখনো বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করে চলেছেন।

গাইয়া বিএইচ১ বর্তমানে পৃথিবীর নিকটতম ব্ল্যাকহোল। প্রায় ১ হাজার ৫০০ আলোকবর্ষ দূরে ওফিউকাস নামক নক্ষত্রমণ্ডলে অবস্থিত ব্ল্যাকহোলটি। অন্য সব ব্ল্যাকহোলের বিপরীতে গাইয়া বিএইচ১ একটি বাইনারি সিস্টেমের অংশ, যার একটি সূর্যের মতো নক্ষত্র রয়েছে। এটি সক্রিয়ভাবে উপাদান টেনে নেয় না, যার ফলে এটি শান্ত ও শনাক্ত করা বেশ কঠিন। ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থার গাইয়া উপগ্রহ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে আবিষ্কৃত হয়েছে এই ব্ল্যাকহোল। বিজ্ঞানীরা ব্ল্যাকহোলের মহাকর্ষীয় টানের কারণে তার সঙ্গী নক্ষত্রের গতিতে পরিবর্তন শনাক্ত করে গাইয়া বিএইচ১ ব্ল্যাকহোল আবিষ্কার করেন।

অন্যদিকে টিওএন৬১৮ সবচেয়ে বড় পরিচিত ব্ল্যাকহোল। এটি সূর্যের ভরের প্রায় ৬ হাজার ৬০০ কোটি গুণ বড়। এটি একটি অতিবৃহৎ ব্ল্যাকহোল, যা পৃথিবী থেকে কোটি কোটি আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। একটি দূরবর্তী কোয়াসারের মধ্যে অবস্থান করছে। অত্যন্ত শক্তিশালী কোয়াসার থেকে নির্গত তীব্র আলো পর্যবেক্ষণ করে ব্ল্যাকহোলটি শনাক্ত করা হয়েছে।

মিল্কিওয়ের কেন্দ্রীয় ব্ল্যাকহোল স্যাজিটেরিয়াস আ স্টার। এটি একটি অতিবৃহৎ ব্ল্যাকহোল, যা পৃথিবী থেকে প্রায় ২৬ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত। আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত ব্ল্যাকহোলটির ভর সূর্যের প্রায় ৪০ লাখ গুণ বেশি। বিশাল ভর থাকা সত্ত্বেও স্যাজিটেরিয়াস আ স্টার অন্যান্য গ্যালাক্সিতে পাওয়া সক্রিয় ব্ল্যাকহোলের তুলনায় শান্ত।

বিজ্ঞানীদের তথ্যমতে, মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে লাখ লাখ ব্ল্যাকহোল রয়েছে। এসব ব্ল্যাকহোল সুপারনোভা বিস্ফোরণে তাদের জীবনচক্র শেষ করে দেওয়া বিশাল নক্ষত্রের অবশিষ্টাংশ থেকে তৈরি হয়েছে। যদিও মাত্র কয়েক ডজন ব্ল্যাকহোল সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা গেছে। অনেক ব্ল্যাকহোল সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোলের চেয়ে বেশ ছোট। তারা নীরবে মহাকাশে ঘুরে বেড়ায়, কখনো কখনো অন্যান্য তারার সঙ্গে বাইনারি সিস্টেমে প্রবেশ করে এমন সব উপাদান টেনে নেয়, যা তাদের উপস্থিতি প্রকাশ করে।
চারপাশের শক্তি ও বিকিরণের কারণে প্রায়ই ব্ল্যাকহোলকে অবিশ্বাস্যরকম উত্তপ্ত বলে মনে করা হয়। যদিও ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রস্থলের তাপমাত্রা পরম শূন্য বা মাইনাস ২৭৩ দশমিক ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস হতে পারে। পরম শূন্য হলো সম্ভাব্য সবচেয়ে ঠান্ডা তাপমাত্রা, যেখানে পারমাণবিক গতি প্রায় থেমে যায়। এই শীতলতা দেখা দেয়, কারণ এককতা হলো অসীম ঘনত্ব ও মাধ্যাকর্ষণ বিন্দুর এমন এক পরিস্থিতি, যেখানে পদার্থবিদ্যার সাধারণ নিয়ম দেখা যায়। তীব্র মহাকর্ষীয় টান সবকিছুকে আটকে রাখে; কিন্তু দিগন্তসীমার ভেতর থেকে কোনো তাপ বা আলো বেরিয়ে আসে না। মজার বিষয় হলো, ব্ল্যাকহোলের কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় হিমায়িত থাকলেও দিগন্তের ঠিক বাইরের অঞ্চলটি হকিং বিকিরণ নামে একটি ক্ষীণ আভা নির্গত করতে পারে। ব্ল্যাকহোলের সীমানার কাছে কোয়ান্টাম প্রভাবের কারণে এমনটা ঘটে।

ব্ল্যাকহোল তৈরির পদ্ধতি নিয়ে অনেক রহস্য রয়েছে। বৃহৎ নক্ষত্রগুলো যখন তাদের জীবনচক্রের শেষ প্রান্তে পৌঁছায়, তখন ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। নক্ষত্র তার জীবনকালে নিউক্লিয়ার ফিউশনের মাধ্যমে জ্বালানি ব্যবহার করে। বাহ্যিক চাপ তৈরি করে, যা মহাকর্ষের অভ্যন্তরীণ টানকে ভারসাম্যপূর্ণ করে। যখন নক্ষত্রের জ্বালানি ফুরিয়ে যায়, তখন এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে তারাটি ভেঙে পড়ে। সূর্যের ভরের ২০ গুণের বেশি বিশাল নক্ষত্রের ক্ষেত্রে এই পতন বেশ তীব্র হয়। তখন তারার কেন্দ্র সিঙ্গুলারিটি নামক একটি একক বিন্দুতে সংকুচিত হয়, যা একটি দিগন্তসীমাদ্বারা বেষ্টিত থাকে। তখন একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়। নক্ষত্রের বাইরের স্তর একটি সুপারনোভাতে বিস্ফোরিত হতে পারে, যা মহাকাশে বিভিন্ন উপাদান ছড়িয়ে দেয়। নক্ষত্রীয় ব্ল্যাকহোল ছাড়াও সুপারম্যাসিভ ব্ল্যাকহোল রয়েছে, যা লাখ লাখ বছর ধরে তৈরি হয়েছে। ছোট ছোট ব্ল্যাকহোলের মিলন বা ছায়াপথের কেন্দ্রে বিশাল গ্যাস মেঘের পতনের কারণেও ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়।

বিভিন্ন ব্ল্যাকহোল অদৃশ্য থাকে। তাদের মাধ্যাকর্ষণ এতটাই শক্তিশালী যে আলোও বের হতে পারে না। যার ফলে ব্ল্যাকহোলকে সম্পূর্ণ কালো দেখায়। একটি ব্ল্যাকহোলের চারপাশে প্রায়ই একটি জ্বলন্ত অ্যাক্রিশন ডিস্ক থাকে, যা গ্যাস, ধুলা ও অন্যান্য পদার্থের একটি ঘূর্ণমান বলয়। এর ফলে সর্পিলভাবে বিভিন্ন বস্তু প্রবেশ করার সময় উজ্জ্বল বিকিরণ নির্গত করে। এই ডিস্ক অবিশ্বাস্যভাবে আলোকিত হতে পারে, যা অনেক সময় সমগ্র ছায়াপথে দেখা যায়। ব্ল্যাকহোলের তীব্র মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে তাদের চারপাশে আলো বেঁকে যায় ও বিকৃত করতে পারে। এতে মহাকর্ষীয় লেন্সিং নামে একটি ঘটনা তৈরি হয়। আলোর এই বিকৃতি রিংয়ের মতো অদ্ভুত দৃশ্যমান প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। ২০১৯ সালে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ প্রথমবারের মতো একটি ব্ল্যাকহোলের ছায়ার ছবি ধারণ করে।

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ত

এছাড়াও পড়ুন:

সব্যসাচী কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন

প্রথিতযশা অধ্যাপক ও পরিসংখ্যানবিদ কাজী মোতাহার হোসেন ছিলেন একজন সব্যসাচী মানুষ। তিনি নিজের কাজের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। তাঁর ঐতিহ্য শিক্ষার্থীদের ধারণ করতে হবে।

জ্ঞানতাপস কাজী মোতাহার হোসেনের ১২৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তৃতা, বৃত্তি, পদক, পুরস্কার ও সনদ দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানের যৌথ আয়োজক কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগ এবং পরিসংখ্যান গবেষণা ও শিক্ষণ ইনস্টিটিউট।

অনুষ্ঠানে ‘যুগলের বন্ধন: কাজী নজরুল ইসলাম-কাজী মোতাহার হোসেন’ শীর্ষক স্মারক বক্তৃতা দেন অধ্যাপক ভীষ্মদেব চৌধুরী। তিনি দুই বন্ধুর সম্পর্কের রসায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই অনুষ্ঠানের দুটো প্রাপ্তি আছে। প্রথমত, মানুষের অবদান ও মেধাকে স্বীকার করা হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, এই উপমহাদেশের একজন প্রথিতযশা সব্যসাচী মানুষের ঋণ স্বীকার করা হচ্ছে।

কাজী মোতাহার হোসেন যেকোনো বিবেচনায় একজন দার্শনিক বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন বিজ্ঞান ও শিল্পের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটিয়েছেন। প্রথম সারির পরিসংখ্যানবিদ, বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ছাড়াও তিনি অনেকগুলো সামাজিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন, প্রভাব বিস্তার করেছেন। একজন মানুষের ছোট জীবদ্দশায় এত গুণ সন্নিবেশিত করা কঠিন। কিন্তু তিনি তা করে দেখিয়েছেন।

সবাইকে নিয়ে চলা, প্রতিষ্ঠান তৈরি করা, নিজের জগতের বাইরে নানা কিছুতে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার মতো ঐতিহ্য কাজী মোতাহার হোসেন করে গেছেন বলে উল্লেখ করেন নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি বলেন, তাঁর সম্মানে যাঁরা আজ স্বীকৃতি পেলেন, তাঁরা এই ঐতিহ্যকে ধারণ করবেন। এটা (বিশ্ববিদ্যালয়) যে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সে বার্তা দেবেন। যেসব শিক্ষার্থী সম্মাননা পাচ্ছেন, তাঁদের ছোট প্রোফাইল তৈরি করে ওয়েবসাইটে তুলে দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মাজেদ বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন একজন সব্যসাচী মানুষ ছিলেন। বিজ্ঞানের এমন কোনো দিক নেই, যেখানে তাঁর পদচারণা ছিল না। তিনি দাবা খুব পছন্দ করতেন। দাবা খেলার কথা শুনলে তিনি ছুটে যেতেন। কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে তাঁর শোনা নানা গল্প তিনি স্মৃতিচারণা করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক জাফর আহমেদ খান বলেন, কাজী মোতাহার হোসেন পরিসংখ্যান চর্চার পথিকৃৎ ছিলেন। বিজ্ঞান, দাবাচর্চারও পথিকৃৎ ছিলেন। এমন কোনো পুরস্কার নেই যে, তিনি পাননি। তাঁর দেখানো পথে যেন শিক্ষার্থীরা নিজেদের আলোকিত করতে পারেন।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন কাজী মোতাহার হোসেন ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী রওনাক হোসেন। এই আয়োজনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের বিভিন্ন বর্ষের সেরা শিক্ষার্থীদের বই, নগদ অর্থ ও সনদ তুলে দেওয়া হয়। এ ছাড়া কাজী মোতাহার হোসেনকে নিয়ে আয়োজিত রচনা প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ