রাজাবাজারে বহুতল ভবন থেকে পড়ে শিক্ষকের মৃত্যু
Published: 4th, June 2025 GMT
রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজার এলাকায় বহুতল ভবন থেকে পড়ে আবদুল বাকী (৬৮) নামে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সকালে এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের বাসায় হিমেল দেবনাথ (৩০) নামে বিসিএস পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া এক শিক্ষার্থীর অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে।
শেরেবাংলা নগর থানার ওসি ইমাউল হক সমকালকে বলেন, তেজগাঁও কলেজের রসায়ন বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আবদুল বাকী পূর্ব রাজাবাজারের ৩৬ নম্বর বাসার দশম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে থাকতেন। সকাল ৮টার দিকে তিনি ভবনটির ছাদে হাঁটাহাঁটি করছিলেন। একপর্যায়ে নিচে পড়ে যান। এটি দুর্ঘটনা, আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু, তা ময়নাতদন্তে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পুলিশ সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে স্মৃতিশক্তি লোপের সমস্যায় ভুগছিলেন বাকী। এজন্য চিকিৎসাও চলছিল তাঁর। অসুস্থতাজনিত হতাশা থেকে তিনি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে পারেন। একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী তাকে ছাদ থেকে লাফ দিতে দেখেছেন। রাজাবাজারের বাসায় তাঁর স্ত্রী ও ছোট ছেলে থাকেন। বড় ছেলে সিলেটে চাকরি করেন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের শান্তিনিকেতন এলাকার বাসায় মঙ্গলবার রাতে শিক্ষার্থী হিমেল দেবনাথকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে রাত ১টার দিকে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানা পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে পুলিশ খবর পায়, হিমেল অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন। দ্রুত সেখানে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তাঁর শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন ছিল না। তবে তিনি অতীতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন বলে জানা যায়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে জানা যাবে। হিমেলের বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল শ উদ ধ র তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’ তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ কঠিন: সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা
বাংলাদেশে পুলিশে পেশাদারি মনোভাব গড়ে না ওঠার জন্য এই বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারকে দায়ী করছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা। তিনি বলেছেন, বিভাজিত সমাজে ‘আওয়ামী পুলিশ, বিএনপি পুলিশ’—এমন নানা তকমা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।
আজ শনিবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলোর কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশের সংস্কার: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ কথা বলেন তিনি। যৌথভাবে এ বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতি। বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান। একটি প্রবন্ধ তুলে ধরেন পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (অবসরপ্রাপ্ত) ও বাংলাদেশ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতির সহসভাপতি ইয়াসমিন গফুর।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, ‘আমি দুই সরকারপ্রধানের (সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গেই কাজ করেছি। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেয়ে একটা ভদ্রতা, সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে হয়। দেখা করলে অনেক কথার পরও বা অল্প কথার পরও ‘এ কি আমাদের?’—এমন কথা শুনলে প্রথমেই বিব্রত বোধ করতে হয়।’
সরকারের পরিবর্তনে পুলিশে নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতিতে প্রভাবিত হওয়ার উদাহরণ দিয়ে মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, ‘বাড়ি ফরিদপুর যদি হয় বা ফরিদপুরের আশপাশে হয়, কোনো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হবে না। আবার আরেক সময় বগুড়ায় বাড়ি, ঝিনাইদহে বাড়ি, দিনাজপুরের বাড়ি, তাহলে চাকরিতে নেওয়া যাবে না বা ক্ষেত্রবিশেষে পদোন্নতি হবে না।’ এ ধরনের মনোভাব থেকে বের হতে না পারলে পুলিশ বাহিনীর সংস্কার বা পেশাদারি মনোভাব ফেরানো কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পরও আচরণের পরিবর্তন না হওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করে নুরুল হুদা বলেন, ‘এক অদ্ভুত ব্যাপার। এখানে দুই হাজারের মতো লোক মারা গেল। অথচ বিহেভিয়ারে চেঞ্জ নেই।’
দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঠিকভাবে কাজ করতে না পারার অন্তরায় হিসেবে নিয়োগে দুর্নীতি এবং সমাজে বিভাজনকে চিহ্নিত করেন সাবেক এই পুলিশপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এই যে প্রচুর সংখ্যার লোক পয়সা দিয়ে চাকরিতে ঢুকেছে বা এখানে হলে...অনেক পয়সা হয়, এই অ্যাটিচিউড (আচরণ) থাকলে তো ল এনফোর্সমেন্ট (আইনশৃঙ্লা নিয়ন্ত্রণ) মুশকিল। আর ল এনফোর্সমেন্টের আরেকটা বড় জিনিস হচ্ছে আমি যে সমাজে কাজ করতে যাচ্ছি, সেই সমাজ কতখানি বিভাজিত।’
সংস্কারের পটভূমিতে স্বাধীন পুলিশ কমিশনের কর্মপদ্ধতি জানতে চেয়েছেন নুরুল হুদা। পুলিশ রিমান্ডের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
এই গোলটেবিল বৈঠকে আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম, পুলিশ সংস্কার কমিশনের সদস্য অধ্যাপক শাহনাজ হুদা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ অফিসার কল্যাণ সমিতির সভাপতি এম আকবর আলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান বক্তব্য দেন।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের, পুলিশের অতিরিক্ত আইজি কাজী মো. ফজলুল করীম বৈঠকে অংশ নেন।