Prothomalo:
2025-06-06@13:20:13 GMT

পবিত্র হজ আজ

Published: 5th, June 2025 GMT

সৌদি আরবের স্থানীয় সময় আজ ৯ জিলহজ পবিত্র হজ। ফজরের নামাজের পর আল্লাহর মেহমানরা মিনা থেকে রওনা হচ্ছেন আরাফাতের ময়দানে। এ সময় তাঁদের মুখে মুখে ধ্বনিত হবে—‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্‌ক, লা শারিকা লাক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার।

হজের তিনটি ফরজের একটি আরাফাতের ময়দানে হাজিদের অবস্থান। এটিই হচ্ছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সারা বিশ্ব থেকে আসা নানা ভাষার, নানা বর্ণের মুসলিমরা আরাফাতের ময়দানে সারা দিন অবস্থান করবেন। খুতবা ও নামাজের মধ্য দিয়ে এখানে সারা দিন পার করবেন। হাজিরা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে

আল্লাহর জিকির-আসকার ও প্রার্থনায় মগ্ন থাকবেন। হাজিরা এখানে জোহর ও আসর নামাজ একসঙ্গে আদায় করবেন।

পবিত্র হজের নিয়ম অনুযায়ী, যাঁরা বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, তাঁদেরও আজ স্বল্প সময়ের জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে আরাফাতে নেওয়া হবে। কারণ, আরাফাতে অবস্থান করা হজের অন্যতম ফরজ। নবীজি (সা.

) বলেছেন, ‘আরাফাতে অবস্থানই হজ।’ (মুসনাদে আহমাদ)।

এই পবিত্র প্রান্তরেই মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিদায় হজের ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন। এ বছর আরাফাতের ময়দানে খুতবা দেবেন সৌদি আরবের শুরা কাউন্সিলের সাবেক চেয়ারম্যান, উম্মুল-কুরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শরিয়াহ অনুষদের সাবেক ডিন, মসজিদুল হারামের প্রবীণ ইমাম ও খতিব ফাদিলাতুশ শায়েখ সালেহ বিন হুমাইদ।

আরাফাতের খুতবা এবার ৩৪ ভাষায় সম্প্রচার করা হবে। বিগত বছরের মতো এবারও বাংলায় খুতবার লাইভ অনুবাদ করা হবে। বাংলা অনুবাদক ও লাইভ ভাষ্যকার হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ খলিলুর রহমান মাক্কি।

আরাফাত ময়দান সেজেছে নতুন রূপে। প্রচণ্ড গরম কমিয়ে আনতে ১০০টি সৌরচালিত কুলিং ইউনিট বসানো হয়েছে। ৬০ হাজার বর্গমিটার এলাকাজুড়ে অস্থায়ী তাঁবু স্থাপন করা হয়েছে হজযাত্রীদের আরামের জন্য। ৫০০ চিকিৎসকসহ নতুন মেডিকেল ক্যাম্প আছে এবার। সৌদি সিভিল ডিফেন্স সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে তাঁবুতে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। জরুরি সময়ে ৯১১ নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। হাজিদের জন্য বিনা মূল্যে ইন্টারনেট-সেবা থাকবে।

সারা দিন আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের পর হাজিরা আজ বৃহস্পতিবার সূর্যাস্তের পর মুজদালিফার যাবেন। সেখানে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটানো ওয়াজিব। ফজর নামাজের পর সাতটি পাথর সংগ্রহ করবেন। ১০ জিলহজ মিনায় ফিরে তিন জামারায় পাথর নিক্ষেপ, ঈদুল আজহা, কোরবানি, মাথা মুণ্ডন, তাওয়াফে জিয়ারত ও বিদায় তাওয়াফের মাধ্যমে হজ সম্পন্ন হবে।

তাঁবুর শহর মিনা

এর আগে গতকাল বুধবার (৪ জিলহজ) হজযাত্রীরা মক্কা থেকে মিনায় আসার মধ্য দিয়ে পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়েছে। এই মিনা থেকে আরাফাতের ময়দান প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।

৮ জিলহজ আল্লাহর মেহমানেরা মিনায় আসেন। আগে থেকেই তাই সারি সারি সাদা তাঁবুতে সেজে উঠেছে মিনা উপত্যকা। উঁচু-নিচু পাহাড়ঘেরা মিনার উপত্যকা রূপ নিয়েছে তাঁবুর শহরে। এসব তাঁবুতে অবস্থান করছেন বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে আসা লাখ লাখ মুসলিম। সাদা ইহরামে মোড়া হাজিরা আত্মশুদ্ধির পথে, ইমানের পরীক্ষায় নিয়োজিত। কেউ তসবিহ হাতে জিকির করছেন, কেউবা পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতে মশগুল। নিঃশব্দে গড়িয়ে পড়ছে চোখের পানি। আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা আর আত্মনিবেদনের গভীর মুহূর্তে যেন মিনার আকাশও থমকে গেছে।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্তত ১৮০টি দেশ থেকে প্রায় ১৫ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসলিম এবার হজে অংশ নিচ্ছেন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে হজে গেছেন ৮৭ হাজার ১০০ জন।

বেশির ভাগ বাংলাদেশি হজ এজেন্সি আগে থেকেই হাজিদের জানিয়ে দেন, ৭ জিলহজ (মঙ্গলবার) মাগরিবের নামাজ আদায় করে হোটেলে অবস্থান করতে। এরপর এশার নামাজের পর থেকে ধাপে ধাপে মক্কার বিভিন্ন এলাকা থেকে মোয়াল্লেম বাসে হাজিদের মিনায় পৌঁছানো শুরু হয়। যদিও সুন্নাহ অনুযায়ী, ৮ জিলহজ ফজরের নামাজ আদায় করে মিনার উদ্দেশে রওনা দেওয়া উত্তম।

তবে বিপুলসংখ্যক হজযাত্রীর ব্যবস্থাপনার জন্য সৌদি সরকারের নির্দেশনায় সন্ধ্যার পর থেকেই এই স্থানান্তর শুরু হয়। এ বছরও সেই ব্যবস্থাপনা অনুসরণ করেছে এজেন্সিগুলো। অনেকে বুধবার সকালে ফজরের নামাজ আদায় করে ইহরাম পরে মিনায় পৌঁছেছেন। তাঁরা জামাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় এবং ইবাদত-বন্দেগিতে দিন-রাত কাটিয়েছেন।

আবহাওয়ার চ্যালেঞ্জ, স্বাস্থ্যসতর্কতা

চলতি বছর সৌদি আরবে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ বিরাজ করছে। মক্কা ও আশপাশের অঞ্চলে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তর। সৌদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ছাতা ব্যবহার ও প্রচুর পানি পান করতে বলেছে এবং প্রয়োজন ছাড়া তাঁবুর বাইরে না যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

আরব নিউজের সূত্র অনুযায়ী, মিনায় এ বছর ১৫ লাখের বেশি হজযাত্রীর থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। অধিকাংশ তাঁবুতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা রয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোতায়েন রয়েছেন কয়েক হাজার নিরাপত্তাকর্মী। রয়েছে ভ্রাম্যমাণ ক্লিনিক, অ্যাম্বুলেন্স ও অগ্নিনির্বাপণ ইউনিট।

আগে বেশ কয়েকবার হজ করেছেন, এমন অনেক বাংলাদেশি হাজির ভাষ্য, অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় এ বছর নিরাপত্তাব্যবস্থা বেশ কড়াকড়ি এবং নিয়মও বেশ কড়াকড়ি। অনেক বাংলাদেশি হজযাত্রীকে অস্থায়ী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে দেখা গেছে।

হজযাত্রীদের প্রস্তুতি

নির্দেশনা ছিল যতটা কম ওজনের ব্যাগ নেওয়া যায়। সেটাই অনুসরণ করছেন বেশির ভাগ হাজি। কেননা এ কদিন চলাচল এবং অবস্থান, যাবতীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন কিছুটা কষ্টসাধ্যও। তা ছাড়া স্থানীয় আবহাওয়া বাংলাদেশসহ বেশির ভাগ দেশের নাগরিকদের অনুকূলে নয়। সব বিবেচনায় হাজিরা আগেভাগেই নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিয়েছেন—ইহরামের কাপড়, ছাতা, পানির বোতল, ওষুধপত্র, রোদচশমা, মিসওয়াক, বিছানোর পাটি ইত্যাদি।

মিনার তাঁবুগুলো দেখতে প্রায় একই রকম হওয়ায় তাঁবুর নম্বর হাতবন্ধনীতে দেওয়া বারকোড থেকে শনাক্ত করে হজকর্মীদের সহায়তায় তাঁবুতে পৌঁছানো গেছে। বাংলাদেশি ৮০ হাজারের বেশি হাজির জন্য নির্দিষ্ট এলাকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁবুসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলো চিহ্নিত করে মানচিত্রও সরবরাহ করা হয়েছে, যা হাজিদের চলাফেরায় বেশ কাজে লেগেছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন কর ব যবস থ হজয ত র র জন য আল ল হ এ বছর করব ন জ লহজ

এছাড়াও পড়ুন:

‘বাইসাইকেল থিভস’-এর সেই শিশুশিল্পী মারা গেছেন

ভিত্তোরিও দে সিকার ক্ল্যাসিক সিনেমা ‘বাইসাইকেল থিভস’-এর শিশু তারকা এনজো স্তাইওলা মারা গেছেন। গত বুধবার ইতালিকর দৈনিক লা রেপুব্লিক প্রথম স্তাইওলার মৃত্যুর খবর জানায়। পরে অভিনেতার মৃত্যুর খবর প্রকাশ করে দ্য হলিউড রিপোর্টারসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর।
‘বাইসাইকেল থিভস’ সিনেমায় স্তাইওলার বাবার চরিত্রে অভিনয় করেন লামবের্তো মাজ্জোরানি। সিনেমায় দেখা যায়, কর্মহীন বাবা তাঁর ছেলেকে নিয়ে চুরি হওয়া সাইকেল খুঁজে বেড়ান রোমের রাস্তায়। ওই সাইকেল ছাড়া তাঁর কাজ করার উপায় নেই, ছেলেকে খাওয়ানোরও উপায় নেই। চুরি হওয়া সাইকেল যেন একেবারে ভেঙে দেয় বাবার বুক। হতাশায় ক্লান্ত হয়ে একসময় তিনিও একটি সাইকেল চুরি করেন, কিন্তু ধরা পড়ে যান পথচারীদের হাতে। তারা তাঁকে ছেড়ে দিলেও ছেলের সামনে অপমানিত হন তিনি। এই সিনেমাই চিরতরে চলচ্চিত্র ইতিহাসে অমর করে রাখে ছোট্ট এনজো স্তাইওলাকে।

১৯৩৯ সালের ১৫ নভেম্বর রোমে জন্মগ্রহণ করেন স্তাইওলা। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি প্রথমবার ভিত্তরিও দে সিকোর সঙ্গে দেখা হওয়ার স্মৃতি ভাগাভাগি করেন।

‘বাইসাইকেল থিভস’-এর দৃশ্য। আইএমডিবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ