সুনামগঞ্জে মাঝে বৃষ্টি কিছুটা কমায় মানুষের মনে যে স্বস্তি উঁকি দিয়েছিল, বুধবার রাতের ভারী বৃষ্টিতে সেই স্বস্তির রেশ কেটে গেছে। তার বদলে ‘ছোট-বড় যা–ই হোক এবার একটা বন্যা হয়ে যেতে পারে’, এই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

তবে সুনামগঞ্জে এখন যে পরিস্থিতি এটি বর্ষা মৌসুমে অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তারা। তাঁরা বলেছেন, আবার ভারী বৃষ্টি হওয়ায় পানি বাড়ছে। তবে এখনো কোনো নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেনি।

১৫ দিন ধরে টানা কখনো হালকা, কখনো মাঝারি আবার কখনো টানা ভারী বৃষ্টি হচ্ছে সুনামগঞ্জে। মানুষজন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। অনেকেই মনে করেছিলেন এবার পবিত্র ঈদুল আজহায় হয়তো দিন ভালো থাকবে। কিন্তু মানুষ এখন আশাহত। বরং বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে, এই আশঙ্কায় আছেন। গত বছর ঈদুল আজহার সময়েও সুনামগঞ্জে বন্যার ভোগান্তিতে ছিলেন মানুষ।

সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘মনে করছিলাম ঈদের আগে আগে দিন ধরব (আবহাওয়া ভালো হবে), এখন দেখি আরও উল্টা অর। বইন্যা অই যার। কষ্ট বাড়ের।’

সুনামগঞ্জে গত তিন দিন ভারী বৃষ্টি না হলেও উজানের ঢল নেমেছে। এতে জেলার প্রধান নদী সুরমাসহ সব নদ-নদী ও হাওরে পানি বেড়েছে।

সুনামগঞ্জ পাউবো সূত্রে জানা গেছে, পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় (যে স্থানে নদীর পানির উচ্চতা মাপা হয়) আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা সুরমা নদীর পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৩২ মিটার। একই স্থানে গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় পানির উচ্চতা ছিল ৬ দশমিক ৯৮ মিটারে। এখানে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৩৪ সেন্টিমিটার। বর্ষা মৌসুমে এখানে সুরমা নদীর পানির বিপৎসীমা ৮ দশমিক ৮০ মিটার।

সুনামগঞ্জে গতকাল সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ৮৮ মিলিমিটার। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয় মাত্র ১৮ মিলিমিটার। উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে তখন বৃষ্টি হয়েছিল সুনামগঞ্জের চেয়ে আরও কম, ১৬ মিলিমিটার।

পাউবো কর্মকর্তারা বলছেন, সুনামগঞ্জে ও উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে একই সময়ে, একই সঙ্গে বৃষ্টি কম হওয়া স্বস্তির। এতে পাহাড়ি ঢলের চাপ কম থাকে। সুনামগঞ্জে নদী ও হাওরে পানি স্থিতিশীল থাকে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আবার ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক, জগন্নাথপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চলে পানি বেড়েছে। ছাতকে সুরমা নদী ও জগন্নাথপুরে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি আছে। তাহিরপুর, দোয়ারাবাজার উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওরপাড়ের গোলাবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা খসরুল আলম বলেন, উজানের পাহাড়ি ঢলে হাওরে পানি বেড়েছে। এভাবে বৃষ্টি হলে, ঢল নামা অব্যাহত থাকলে বন্যা হয়ে যাবে।

সুনামগঞ্জ পৌর শহরের লঞ্চঘাট এলাকার ব্যবসায়ী রেনু মিয়া বলেন, ‘বুধবার রাইত পানি বেশি বাড়ছে। মেঘ (বৃষ্টি) ত থামছে না। মেঘ না থামলে পানি আরও বাড়ব।’

পাউবোর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

মামুন হাওলাদার বলেছেন, মূলত ভারী বৃষ্টি হওয়ার কারণেই আবার পানি বাড়ছে। ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে। এভাবে বৃষ্টি হলে পানি আরও বাড়তে পারে।

আরও পড়ুনবৃষ্টি কমলেও উজানের ঢলে সুনামগঞ্জে বেড়েছে নদীর পানি২১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনসুনামগঞ্জে ভারী বৃষ্টি কমলেও সুরমা নদীর পানি বাড়ছে০৩ জুন ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ নদ র প ন র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ইউনিয়ন পরিষদে তালা দেওয়ায় মহিলা দলের নেত্রীকে মারধর, অভিযোগ বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে

চাহিদামতো ভিজিএফের স্লিপ না পাওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদে তালা দিয়েছিলেন ভোলার তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়ন মহিলা দলের সভাপতি মালেকা বেগম। ওই ঘটনার জেরে মারধরের শিকার হন তিনি। তাঁর অভিযোগ, ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের লোকজন তাঁর ওপর হামলা করেন।

তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে চাঁচড়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলিল হাওলাদার বলেন, ভিজিএফের চাল নিতে আসা নারীদের হামলায় মালেকা বেগম আহত হয়েছেন।

এদিকে মালেকা বেগমের ওই অভিযোগের প্রতিবাদে আজ শুক্রবার বিকেলে বিক্ষোভ করেছেন এলাকার লোকজন। বিকেল চারটা থেকে ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী এই কর্মসূচি পালিত হয়।

গত মঙ্গলবার সকালে চাঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদে মালেকা বেগমকে মারধর করা হয়। পরে তিনি তজুমদ্দিন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ভোলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তিনি ইউপির সাবেক সদস্য। ওই ঘটনা সম্পর্কে মালেকা বেগম বলেন, ‘গত সোমবার ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইয়াজউদ্দিনের কাছে ঈদে বরাদ্দ ভিজিএফের ১০০টি স্লিপ চেয়েছিলাম। তিনি ৪০ জনের তালিকা দিতে বলেছিলেন। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে কথা–কাটাকাটি হয়। পরদিন মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদে তালা ঝুলিয়ে দেন। তখন ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. ইব্রাহীম হাওলাদারের ভাই কালিমুল্লাহ ও ইউপির দফাদার মো. আলাউদ্দিনের নেতৃত্বে একদল নারী তাঁকে পিটিয়ে জখম করেন। তাঁরা তাঁর ছবি ফেসবুকেও ছড়িয়ে দিয়েছেন।

এ সম্পর্কে বিএনপি নেতা ইব্রাহীম খলিল হাওলাদার বলেন, ‘ওই দিন (মঙ্গলবার) নারীদের মধ্যে চাল বিতরণের কথা ছিল। তাঁরা এসে পরিষদে তালা মারা দেখেন এবং মালেকা বেগমকে তালা খুলে দিতে বলেন। এ সময় কথা–কাটাকাটির একপর্যায়ে মালেকা বেগম হতদরিদ্র নারীদের কামড়ে ক্ষতবিক্ষত করেন। তখন তাঁরা তাঁকে পিটিয়ে জখম করেন। এ ঘটনায় আমার পরিবারের বা বিএনপির কেউ জড়িত নন।’

চাঁচড়া ইউনিয়নের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. ইয়াজউদ্দিন বলেন, ‘তাঁদের ইউনিয়নে ১ হাজার ৬৭৪ জন হতদরিদ্রের নামে ঈদ উপলক্ষে ভিজিএফের চাল এসেছে। মহিলা সভাপতি (মালেক বেগম) একাই ১০০টি স্লিপ দাবি করেন। তাঁকে বলেছিলাম, আইডি কার্ড জমা দেন, চেষ্টা করব। ঘটনার দিন (মঙ্গলবার) সাড়ে ১০টার সময় পরিষদে গিয়ে জানতে পেরেছি তাঁর ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে।’

তজুমদ্দিন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহব্বত খান বলেন, ‘ঘটনার বিষয়ে শুনেছি। তবে কেউ অভিযোগ দেননি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ