ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ৫৫ মাস পর ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। ঝলমলে গ্যালারিতে উড়েছে লাল-সবুজের ঢেউ, গর্জে উঠেছে হাজারো কণ্ঠস্বর। গতকাল সন্ধ্যায় ভুটানকে ২-০ গোলে হারিয়ে দেশের ফুটবলতীর্থে জাতীয় দলের প্রত্যাবর্তন যেন পরিণত হয়েছে এক উৎসবে।

এই জয়ের নায়ক ইংল্যান্ডে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ফুটবলার হামজা চৌধুরী—ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে যাঁর। বাংলাদেশের হয়ে নিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই দুর্দান্ত এক গোল করে তিনি আনন্দের আলো ছড়িয়ে দিয়েছেন সমর্থকদের মধ্যে।

এই আলোয় যেন ফুটবলপাগল জাতি নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। এখন জাতীয় দলে একসঙ্গে ছয়জন প্রবাসী ফুটবলার—জামাল ভূঁইয়া, তারিক কাজী, কাজেম শাহ, হামজা চৌধুরী, ফাহামিদুল ইসলাম ও শমিত সোম।

অপেক্ষমাণ আছেন আরেক তরুণ কিউবা মিচেল। তালিকায় আছেন আরও কয়েকজন। অবস্থা এমন যে খুব শিগগির জাতীয় দলের ২৩ জনের স্কোয়াডের অর্ধেকই ভরে যেতে পারে প্রবাসীতে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁদের নিয়ে উচ্ছ্বাসের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।

তবে এই আশাজাগানিয়া গল্পের আড়ালেও আছে একটি কঠিন বাস্তবতা। সেই বাস্তবতার নাম—ঘরোয়া ফুটবলের বিবর্ণ দশা। দেশের প্রিমিয়ার লিগে এমন অনেক দল খেলছে, যাদের খেলার মতো পর্যাপ্ত অবকাঠামো নেই। নেই নিজস্ব মাঠ, নেই সমর্থক, নেই পৃষ্ঠপোষকতা। বেশির ভাগ ফুটবলার নিয়মিত পারিশ্রমিক পান না, বারবার ধর্মঘটে যেতে হয় তাঁদের। ক্লাবগুলো দিশাহারা, নিচের দিকের লিগগুলো অনিয়মিত, ঢাকার ঘরোয়া ফুটবল কার্যত মৃত।

এ অব্যবস্থার মধ্যে শুধু প্রবাসী ফুটবলারদের আলোয় জাতীয় দলকে এগিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন কতটা বাস্তবসম্মত? মাঝেমধ্যে ম্যাচ জিতে উল্লাসে ভাসে সবাই, কিন্তু কাঠামোগত ব্যর্থতা ঢেকে রাখা যায় না সেই উল্লাসে। ফুটবল এক দিনের খেলা নয়—এটা দীর্ঘমেয়াদি নির্মাণকাজ, যেখানে প্রয়োজন পরিকল্পনা, বিনিয়োগ, ধৈর্য এবং একটি সুদৃঢ় ভিত।

এখন হামজা চৌধুরীর মতো একজন দুর্দান্ত মিডফিল্ডার, যিনি শিলংয়ে ভারতের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করেছেন, দ্বিতীয় ম্যাচেই ঢাকায় গোল করে বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর আগমন সৌভাগ্যের বার্তা বয়ে আনতে পারে। কিন্তু একজন হামজা দিয়ে একটা ভবিষ্যৎ গড়া যায় না, প্রয়োজন শত শত ঘরোয়া হামজা—তাঁদের খোঁজ কে রাখছে?

বাংলাদেশের কিশোরদের জন্য আজ কোনো কার্যকর লিগ নেই। কোচরা অবহেলিত, রেফারিরা বঞ্চিত, শুধু কি তা–ই? কদিন পরপর রেফারিরা পারিশ্রমিকর জন্য ধর্মঘটে যান। অথচ বাফুফে সব মনোযোগ জাতীয় দলকে ঘিরে। যেন ওপরের ঝলমলে একটি বাতি জ্বালিয়ে নিচের ভাঙা ঘরটাকে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। এই বাস্তবতা অস্বীকার করলে চলবে না। বাংলাদেশের ক্লাব ফুটবলের বাস্তবতা ভয়াবহ।

গত বছর ৫ আগস্ট সরকার বদলের পর দুটি ক্লাব প্রিমিয়ার লিগ থেকে বিদায় নিয়েছে। বেশির ভাগ ক্লাবের নেই নিজস্ব মাঠ, নেই একাডেমি। যে কাঠামো থেকে জাতীয় দল উঠে আসার কথা, সেই কাঠামোই আজ ঝুরঝুরে। সুশৃঙ্খল ঘরোয়া কাঠামো ছাড়া ফুটবলের ভবিষ্যৎ নেই।

এখন যেসব ক্লাব প্রিমিয়ার লিগে খেলছে, তাদের অনেকেরই পেশাদার মানের ফুটবল উপস্থাপন করার সক্ষমতা নেই। দেশের প্রিমিয়ার লিগে খেলার জন্য যে প্রস্তুতি, অবকাঠামো ও সংস্থান দরকার, তার ছিটেফোঁটাও অনেক ক্লাবের নেই। এত দিন বলা হতো, তৃণমূল অবহেলিত। এখন প্রিমিয়ার লিগও অনেক জায়গায় অবহেলার শিকার।

ভুটানের অধিনায়ক লিমার ভাষ্যে ‘বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার সেরা দল’। হয়তো এই মন্তব্য শুনে আপ্লুত হন বাংলাদেশের ফুটবল সমর্থকেরা। কিন্তু বাস্তবতা কি সত্যিই এমন? নাকি এটা একটু ভালো খেলার আলোয় তৈরি হওয়া এক ক্ষণিকের মায়া?

হামজাদের মতো ফুটবলারদের অর্জন নিঃসন্দেহে গর্বের, কিন্তু তাঁদের আলোতেই বাংলাদেশের ঘরোয়া ফুটবলের বিবর্ণতা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ইংল্যান্ড, ডেনমার্ক, কানাডা, ইতালিতে বড় হয়ে ওঠা প্রতিভারা দলকে শক্তি দিচ্ছেন, কিন্তু পায়ের তলায় মাটি কি তৈরি করতে পারছে বাংলাদেশের ফুটবল?

একটি ফুটবল দল যেমন শুধু তার ফরোয়ার্ডের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না, তেমনি একটি দেশের ফুটবল কাঠামোও দাঁড়াতে পারে না শুধু প্রবাসীদের কাঁধে ভর করে। দরকার শক্ত ভিত—যেখানে থাকবে কিশোর লিগ, অঞ্চলভিত্তিক প্রতিযোগিতা, উন্নত কোচিং, ভালো রেফারিং, রেফারিদের জন্য ভালো প্রণোদনা ও ক্লাব সংস্কৃতির নবজাগরণ। এই ভিত গড়ে তুলতে হবে দেশের ভেতর থেকেই।

প্রবাসীরা বাংলাদেশের ফুটবলে গর্ব—তাঁরা সম্মানের প্রতীকও। কিন্তু জাতীয় ফুটবলের টেকসই ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে দেশের মাটিতে, দেশের মানুষের হাতে। আলো চাইলে দরকার শক্ত ভিত। দরকার সত্যিকারের পরিবর্তনের সম্মিলিত সদিচ্ছা।

জাতীয় দলে একটি বা দুটি ম্যাচ জয় মানেই জাতীয় ফুটবলের পুনর্জাগরণ নয়। সেটি শুরু হবে নিচ থেকে—একটি শিশু যখন প্রতিদিন মাঠে খেলবে, একজন কোচ যখন সম্মান নিয়ে কাজ করবে, একদল ক্লাব কর্মকর্তার যখন থাকবে স্বচ্ছতা ও পেশাদারিত্ব। ফুটবল তখনই সত্যিকার অর্থে আলোকিত হবে।

জাতীয় দলে হামজারা গোল করলে হাততালির বন্যা বয়ে যায়, কিন্তু যদি ঢাকার কোনো ক্লাব দুই তিন মাস ধরে খেলোয়াড়দের বেতন না দেয়—তখন সেই খোঁজ কেউ রাখে? প্রবাসীদের আলোয় মোহিত হয়ে যদি সবাই অন্ধ হয়ে যায়, যদি শুধু জাতীয় দলের দিকে তাকিয়ে থাকে, তবে দেশের ফুটবলের শরীরে জমে থাকা অজস্র ফোসকা, ক্ষত আর ভাঙন চোখে পড়বে না। ফুটবল শুধু জাতীয় দলে সীমাবদ্ধ নয়, তার মূল প্রাণশক্তি থাকে ঘরোয়া লিগ, ক্লাব ও প্রান্তিক কাঠামোয়।

ফুটবলের ভিত গড়ার এই দায়িত্ব শুধু ফুটবলারদের নয়, বাফুফে, রাষ্ট্রসহ সবার। তা না হলে ঝাড়বাতির নিচের অন্ধকারই থেকে যাবে বাংলাদেশের ফুটবলের আসল পরিচয়। ফুটবলের আলো প্রবাস থেকে আসুক, কিন্তু ভিত্তি থাকুক এ দেশের মাটিতেই।

আজকের বাংলাদেশ ফুটবলে জাতীয় দল যেন এক রাজহাঁস। আমরা তার দিকে তাকিয়ে মুগ্ধ হচ্ছি। কিন্তু যে পুকুরে সে ভাসে—অর্থাৎ ঘরোয়া লিগ, ক্লাব, মাঠ, প্রশাসন—সেই পুকুরে পানি নেই। রাজহাঁস একদিন শুকিয়ে মরবে, যদি পুকুরের পানি ফিরিয়ে না আনা যায়।

ফুটবল ফেডারেশন যেন এক কল্পনার স্বর্গে বাস করছে। জাতীয় দলের ম্যাচ মানেই ফ্ল্যাশ, গান, উৎসব, চাকচিক্য, খেলোয়াড়দের ফুলেল সংবর্ধনা—সবকিছুতেই আছে বাহ্যিক চমক। কিন্তু ভেতরের হাল?

জাতীয় দলে হামজা, জামাল, তারিকরা আলোর রেখা আনছেন; সন্দেহ নেই। কিন্তু সেই আলো কি পৌঁছায় টংদোকানে চা বিক্রি করা সেই তরুণটির পায়ে, যে বিকেলে স্থানীয় মাঠে খেলে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে? ‘দেশে ফুটবল বাঁচে ক্লাবে’—এই সত্যকে ভুলে গেলে চলবে না। বাংলাদেশে ফুটবল ক্লাবকেন্দ্রিক ছিল, আছে, থাকবেও। কিন্তু আজকে প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবগুলোর অভ্যন্তরীণ হালচাল শুনলে ফুটবলের ভেতরের দৈন্য বড্ড বেশি চোখে পড়ে।

ফুটবল বাঁচাতে হলে মাঠে ফিরতে হবে দেশকে। এখন সময়, প্রবাসী-দেশি নয়, দেশি-প্রবাসী মিলিয়ে একটি টেকসই পথনকশা তৈরি করার। ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় নিয়মিত লিগ চালু করতে হবে। বাফুফের দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা জরুরি। জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে মাঠ সংস্কার ও কোচিং অবকাঠামো উন্নয়ন জরুরি।  ক্লাবগুলোর জন্য পেশাদার লাইসেন্সিং আরও কঠোর  করতে হবে। রেফারি, কোচ, সংগঠকদের জন্য যথাযথ সম্মান ও পারিশ্রমিক নিশ্চিত করা সময়ের দাবি। ফুটবলের গ্ল্যামারের বাইরের অন্ধকারেও চোখ ফেলতে হবে।

আলো না ছড়ালে আঁধার ঘনীভূত হয়। এই মুহূর্তে দেশের ঘরোয়া ফুটবলের দশা এমন। অনেক জেলার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনই নিষ্ক্রিয়। মাঠ নেই, খেলা নেই, তদারকি নেই। লিগ মানে শুধু নামমাত্র আয়োজন, কোনো প্রতিযোগিতা বা মান নেই। যুব লিগ, অনূর্ধ্ব-১৪ বা ১৬ লিগ পুরোপুরি অনিয়মিত।

আপনারা জানেন কি, দেশের ফুটবল রেফারিরা এখন নিয়মিত ধর্মঘট করছেন? সময়মতো পারিশ্রমিক পান না। প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। পেশাদার মর্যাদা নেই। ম্যাচ পরিচালনার মতো আধুনিক অবকাঠামো নেই। এ–ই যদি হয় অবস্থা, তাহলে মাঠের ন্যায্যতা কোথা থেকে আসবে?

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন যেন এক আত্মসন্তুষ্ট রাজ্য! বড় ম্যাচ এলেই পোস্টার, ব্যানার, সামাজিক প্রচারণা। কিন্তু মাঠের নিচে ফুটবলের শরীরটা ক্রমেই নিস্তেজ।
এর মধ্যেই যখন প্রবাসীদের জয়জয়কার হয়, তখন ভয় লাগে—আমরা কি এক মরীচিকার পেছনে ছুটছি না? যাতে জাতীয় দলের সাময়িক উন্মাদনার পেছনে লুকানো ঘরোয়া ফুটবলের দুঃসহ সংকট সামনে আসে।

বাংলাদেশ ফুটবলের সম্ভাবনা বিশাল। হামজারা সেই সম্ভাবনার ঝলক দেখিয়েছেন মাত্র। কিন্তু যদি ভিত শক্ত না হয়, তাহলে এই আলোও হবে সাময়িক, আরেকটি ভেসে যাওয়া বিস্ময়। ফুটবলের ভবিষ্যৎ গড়ে উঠবে মাঠে, প্রক্রিয়ায়, কাঠামোতে—স্ট্যাটাস আর সেলফিতে নয়।

এই সত্য যত দ্রুত বুঝি, ততই ভালো।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল দ শ র ফ টবল জ ত য় দল র ফ টবল র ভ অবক ঠ ম ব স তবত প রব স দ র আল র জন য দরক র

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ