ঢাকা ছেড়ে তৃণমূলে যাত্রা এনসিপিকে কত দূর নেবে
Published: 5th, June 2025 GMT
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা তরুণ নেতাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও গণমাধ্যমের কল্যাণে সারা দেশের মানুষ একনামে চিনলেও তাঁদের অধিকাংশকেই দেশের প্রান্তিক জনগণ কখনো সামনাসামনি দেখার সুযোগ পায়নি।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখসারির নেতাদের নিয়ে রাজনৈতিক দল হিসেবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বিপুল জনসমাগমের মধ্য দিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরুর পর গত কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও দলটির কার্যক্রম ছিল কেবল রাজধানী ঢাকাকেন্দ্রিক।
এ নিয়ে এনসিপি নিয়ে নানা সমালোচনা ওঠে, দলটি তৃণমূলের জনগণের কাছে পৌঁছাতে পারছে না। প্রান্তিক মানুষের কাছে যাওয়া, তাদের কথা শোনা—এ ছাড়া একটি রাজনৈতিক দল দাঁড়াবে কী করে?
তবে সাম্প্রতিক সময়ে আমরা দেখতে পেলাম সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে জনসংযোগ ও পথসভা শুরু করেছেন দলটির নেতারা। এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহর নেতৃত্বে খোলা পিকআপে চেপে রোদ–বৃষ্টি উপেক্ষা করে দলের নেতা–কর্মীরা চট্টগ্রামের সব কটি উপজেলায় পথসভা করেছেন। সঙ্গে ছিলেন দলের সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা.
স্কুল, বাজার-ঘাটে মানুষের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে তাঁরা এতখানিই মিশতে পেরেছেন যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে মানুষ প্রেসক্রিপশন ফাইল হাতে নিয়ে এসেছে ডা. তাসনিম জারাকে দেখাতে।
সাবেক উপদেষ্টা এবং দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম প্রতিকূল আবহাওয়ায় প্রবল বৃষ্টি উপেক্ষা করে মোহাম্মদপুর থেকে তাঁর প্রথম জনসংযোগ শুরু করেছেন। হাঁটুপানি ভেঙে অবহেলিত জেনেভা ক্যাম্প পর্যন্ত গণসংযোগ করেছেন তিনি। দলের উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তাঁর সাংগঠনিক টিমসহ সফর করেছেন নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের প্রতিটি উপজেলা।
ঢাকা ছেড়ে এনসিপির এই জনযাত্রা দলের জন্য অবশ্য প্রয়োজনীয় ছিল। ঐতিহাসিকভাবেই কোনো রাজনৈতিক প্রান্তিক জনসাধারণের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া ছাড়া নিজের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়নি। ১৯৩৫ সালের আগস্টে কার্যকর হয় ভারত শাসন আইন। ১৯৩৭ সালের জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে এই আইনে ব্রিটিশ ভারতের প্রদেশগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনকে সামনে রেখে কংগ্রেস নেতা জওহরলাল নেহরু ১৯৩৬ সালের শেষ দিক থেকে ১৯৩৭ সালের শুরুর সময়টিতে ভারতব্যাপী রাজনৈতিক সফরে বের হন।
গণ-অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে ছাত্রনেতাদের প্রতি দেশের জনগণের যে অভূতপূর্ব আস্থা ও ভরসা তৈরি হয়েছে, সে আস্থা ও ভরসার প্রতি সম্মান রেখে এনসিপি নেতাদের উচিত, জনগণের দ্বারে দ্বারে পৌঁছে যাওয়া। বাংলামোটর থেকে বটতলায় জড়ো হওয়া কৃষক আর মজুরের কাছে পৌঁছে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা নিয়েই তাঁদেরকে এগোতে হবে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, অনুযোগ, আবদার শুনতে হবে।উপমহাদেশের রাজনীতির অন্যতম এই পুরোধা ব্যক্তিত্ব তাঁর ‘ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া’ বইয়ে সেই সফরের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করেছেন। এ সফরের পুরো সময় সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত একের পর এক জনসভা ও প্রচার সভায় বক্তব্য দিয়েছেন। গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছেন।
নেহরু লিখেছেন, তিনি গাড়িতে, রেলপথে, বিমানে এ যাত্রা করলেও কখনো কখনো স্টিমার, বাইসাইকেল চেপে, প্যাডেল বোট, ডিঙি, উট, ঘোড়া এমনকি হাতিতে চড়েও অনেক জায়গায় তাঁকে যেতে হয়েছে। পায়েও হেঁটেছেন অনেক। ১৯৩৭ সালের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে কর্ণাটক সফরকালে তিনি কেবল এক দিনে ২৩ ঘণ্টা জনসভা ও প্রচারণায় অংশ নিয়েছিলেন এবং পাড়ি দিয়েছিলেন ৪১৫ মাইল পথ।
সাড়ে পাঁচ কোটি সদস্যের প্রাচীন ও অন্যতম বৃহত্তম রাজনৈতিক দল কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী তাঁর প্রপিতামহের লেখা বই নিশ্চয়ই পড়েছিলেন। কিন্তু দুই দশকের রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিকে তিনি তা উপেক্ষা করেছেন। ভোটের সময় রুটিন জনসভা, সংসদীয় বিতর্ক আর টিভি উপস্থিতিতেই সীমাবদ্ধ ছিলেন তিনি। সেই তিনিই গত লোকসভা নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দেউলিয়াত্ব থেকে কংগ্রেসকে বাঁচাতে প্রায় ১৪৪ দিনের বেশি পায়ে হেঁটে কন্যাকুমারী থেকে ভারত-জোড়ো যাত্রা শুরু করে প্রায় চার হাজার কিলোমিটার পায়ে হেঁটে পৌঁছেছিলেন শ্রীনগর।
সাবেক উপদেষ্টা এবং দলের আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের মোহাম্মদপুরে জনসংযোগ।উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক দ কর ছ ন এনস প
এছাড়াও পড়ুন:
‘আইনত আমি মেয়র’, জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন করে বললেন ইশরাক
নিজেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, ‘স্পষ্টত বলে দিয়েছি, আইনত আমি এখনো মেয়র। আগামী মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ না করা পর্যন্ত। তারা শপথ গ্রহণ করাল নাকি করাল না, এটি তাদের সমস্যা।’
আজ শুক্রবার সকালে পবিত্র ঈদুল আজহার প্রধান জামাতের জন্য জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন ।
এ সময় ইশরাক হোসেন বলেন, ‘নগর ভবনে কোনো প্রশাসক বসবে না, কোনো উপদেষ্টা বসবে না। সেখানে যদি কোনো ধরনের প্রশাসনিক সমস্যা হয়, তখন আমরা ৭৫ ওয়ার্ড থেকে যারা সাবেক কমিশনার ও কাউন্সিলর ছিলাম, ভোটার, গণ্যমান্য ব্যক্তি ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রিন্সিপালদের নিয়ে প্রয়োজনে “বিপ্লবী ঢাকা কাউন্সিল” টাইপের (ধরন) কিছু করে সেখানে সাময়িকভাবে নিয়োগ দিয়ে নগর ভবন চালাব। কিন্তু এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। হার মানার কোনো সুযোগ নেই।’
নির্বাচন কমিশনেও শপথ পড়ানোর ব্যবস্থা থাকা উচিত বলে মনে করেন ইশরাক হোসেন। তিনি বলেন, ‘শপথরুম একটি নির্বাচন কমিশনেও থাকতে পারত। সেটি (শপথ) নির্বাচন কমিশনেই পড়া যেত। কিন্তু আইনে সেই এখতিয়ার তাদের দেওয়া নেই। এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলা দরকার রয়েছে ভবিষ্যতে।’
জাতীয় ঈদগাহ ময়দান পরিদর্শনের বিষয়ে ইশরাক হোসেন বলেন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচিত এবং সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরে ঘোষিত মেয়র হিসেবে এখানে এসেছি। এটা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। আগামীকালও পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের সঙ্গে মাঠে থাকব।
অনেকেই তাঁর বিষয়ে ভুল ধারণা করছেন উল্লেখ করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আজ অনেকটা ভুল বোঝা হচ্ছে আমাকে। কিন্তু রাজনীতি এমন একটি জিনিস, এখানে যখন মাঠের বাস্তবতা চলে আসে এবং আপনি যখন রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করবেন, তখন আর আপনার রাজনৈতিকভাবে কর্মসূচি পালন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় থাকে না। যার কারণে কিছু জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে।’
ইশরাক হোসেন বলেন, ‘আমিও (মেয়রের চেয়ারে) বসতে পারতাম, যদি তাদের (উপদেষ্টা) সঙ্গে আলোচনায় বসে কোনো একটা কম্প্রোমাইজে (আপসে) যেতাম। যেটির সম্ভাবনাও আমার কাছে নিয়ে আসা হয়েছিল। স্পষ্ট বলে দিয়েছি, এ ধরনের শপথ আমার বাসার সামনে এসে নিচে দাঁড়িয়ে থাকলেও আমি পড়ব না। আমি দেশ, জনগণ ও দলের সঙ্গে বেইমানি করব না। যেটা নিয়ম, সেটি আইনিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেটি দিতে তাদের অসুবিধা কোথায়? এমনও তো হতে পারত, আমি ওখানে গিয়ে এক ঘণ্টা পর নিজেই ছেড়ে দিতাম।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁকে ভিলেন বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে দাবি করে ইশরাক হোসেন বলেন, ‘এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার জাতীয় ভিলেনে পরিণত হয়ে গিয়েছি আমি একপ্রকার। কিন্তু আমার বিশ্বাস, একদিন সাধারণ জনগণ আমার পদক্ষেপ বা ভূমিকাটা বুঝতে পারবে যে কেন আমি আজ এই পদক্ষেপ নিয়েছিলাম।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ তাঁদের নিরপেক্ষতা হারিয়েছে দাবি করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন বলেন, এই পরিষদ বহাল থাকা অবস্থায় কোনোভাবেই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে না। উপদেষ্টাদের যদি রাজনীতি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে পদত্যাগ করে রাজনৈতিক দলে যোগ দিতে পারে।