ছবি তোলা ও দাম জানায় আগ্রহ, গাবতলীর হাটে ‘প্রিন্স মামুনের’ দাম ৩০ লাখ
Published: 5th, June 2025 GMT
‘মরুভূমির জাহাজ’ নামে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিত প্রাণী উট। রাজধানী ঢাকার মতো শহরে উট কোরবানি খুবই বিরল। কেউ যদি সেই উট কোরবানি দেন, তা নিয়ে আলোচনা হয়।
এ বছর ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে চারটি উট আনা হয়েছে। উট যেখানে রাখা হয়েছে, এর আশপাশে আগ্রহী সাধারণ মানুষের ভিড় রয়েছে। তবে এমন ভিড় শুধু ছবি-সেলফি তোলা কিংবা ভিডিও বানানোর জন্যই। অনেকে আবার কত টাকায় এসব উট বিক্রি হবে, সে দামটাও আগ্রহ নিয়ে জানতে চাইছেন। কিন্তু কেনার মতো আগ্রহী ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানান বিক্রেতারা।
গাবতলী হাটের উত্তর প্রান্তে মূল হাটের অংশে ভিন্ন দুজন ব্যবসায়ী ওই উট চারটি এনেছেন। এর মধ্যে এক ব্যবসায়ী এনেছেন তিনটি। আরেকটি এনেছেন অন্য এক ব্যবসায়ী। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত ওই চারটি উটের একটিও বিক্রি হয়নি, এমনটি আগ্রহী কোনো ক্রেতা দরদামও করেননি বলে জানালেন ওই ব্যবসায়ীরা।
পাবনার কাশীনাথপুর থেকে নিজের খামারে পালা একটি উট হাটে বিক্রির জন্য এনেছেন আমজাদ হোসেন। পাঁচ বছর পালা এ উটের জন্য দাম হাঁকাচ্ছেন ৩০ লাখ টাকা। উটটি আলোচনায় আনতে এর নামও দিয়েছিলেন ‘প্রিন্স মামুন’। কিন্তু হাটে এসে কোনো ক্রেতা এখনো উটটির জন্য কোনো দাম বলেননি বলে জানান খামারি আমজাদ।
প্রথম আলোকে আমজাদ হোসেন বলেন, ‘হাটে আসার পর উট ও এর দাম নিয়ে অসংখ্য সাংবাদিক ও ইউটিউবারের সঙ্গে কথা বলেছি। কিন্তু এখনো কোনো ক্রেতা এসে উট কেনার জন্য দরদাম করেনি। মানুষ আসে, উট দেখে, দাম জানতে চায়; কিন্তু কেনার ইচ্ছা নিয়ে কেউ দাম বলে না।’ উটটি বিক্রি করতে পারবেন কি না—এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন বলেও জানান তিনি।
আমজাদ হোসেন আরও বলেন, মোবাইলে যোগাযোগ করে কয়েকজন ২০-২২ লাখ টাকা দাম বলেছেন। কিন্তু মোবাইলে যোগাযোগকারীরা কেউ এখনো হাটে এসে উটটি দেখেননি। তাই শেষ পর্যন্ত তাঁরা এসে কিনবেন কি না, সেটার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে যশোরের বেনাপোলের ফিরোজ আল মামুন ডেইরি ফার্ম থেকে তিনটি উট গাবতলী হাটে এনেছেন আশিকুর রহমান। মানুষের কাছে উটগুলোর দাম বলতে বলতে তিনি ক্লান্ত হয়ে গেছেন বলে জানান। এর সঙ্গে মানুষের উৎসাহ, ছবি তোলার হিড়িক—এসবও তাঁকে সামাল দিতে হচ্ছে।
বেলা তিনটার দিকে বেশ কিছু অনলাইন নিউজ পোর্টালের সাংবাদিক আশিকুর রহমানকে ভিডিও সাক্ষাৎকারের জন্য অনুরোধ করেন। আশিকুর তখন সবেমাত্র দুপুরের খাওয়া সেরে মুখে পান চিবোতে চিবোতে আয়েশ করে উটগুলোর পাশে রাখা একটি চেয়ারে বসেছিলেন। সাংবাদিকদের অনুরোধে পাল্টা অনুরোধ জানিয়ে আশিকুর বলেন, ‘ভাই কথা কইতে কইতে আমি ক্লান্ত। আমারে মাফ করেন। আপনেরা ৫-১০ মিনিট দাঁড়ান। আমার সঙ্গে আরেকজন আছেন, তিনি খাইতে গেছেন। তিনি এলে তাঁর কথা নেন।’
আশিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উট তিনটা দুই বছর তাঁদের খামারে পালা হয়েছে। একেকটি উটের জন্য দাম চাইছেন ৩৫ থেকে ৪০ লাখ টাকা। কিন্তু এখনো কোনো ক্রেতা দাম বলেননি।
উটকে ঘিরে উৎসুক মানুষের ভিড়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবস য় এন ছ ন দ ম বল র জন য আমজ দ গ বতল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’
আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে