ছোট্ট সন্তানের লাশ নিয়ে বাবার বিলাপ, ‘ও আমার আয়েশা তুই কোথায় গেলিরে’
Published: 6th, June 2025 GMT
ছোট্ট শিশুটির নাম আয়েশা, বয়স মাত্র দুই বছর। গায়ে সাদা ফ্রক। পরনে নীল হাফ প্যান্ট। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে বাবার কোলে ঘুমিয়ে আছে সে। কিন্তু কাছে যেতেই দেখা গেল শিশুটি নিথর। ছোট্ট মাথাটি ফেঁটে গড়িয়ে পড়ছে রক্ত। সেই রক্তে লাল হয়ে যাচ্ছে বাবার টি-শার্ট। এক হাতে শিশুটিকে বুকে নিয়ে হাঁটছেন তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে। আর মুখে সজোরে বলছেন, ‘আল্লাহু আকবর। আল্লাহু আকবর’।
পরে রাত তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে ডাক্তার মৃত ঘোষণা করেছে শিশুটিকে।
সন্তানকে মৃত ঘোষণার পর মধ্যরাতে হাসপাতালের বারান্দায় দাঁড়িয়েই জোরে জোরে বিলাপ করছেন আয়েশার বাবা সাজ্জাদুন নূর। বলছেন, ‘ও আমার আয়েশা, তুই কোথায় গেলিরে! আমার মেয়ে তো কিছুই বুঝতো না। তার কি দোষ ছিল? তাকে কেন নিয়ে গেল আল্লাহ।’
এসময় পাশেই ছিলেন সাজ্জাদের স্ত্রী জুবাইদা ফেরদৌস। তিনিও বিলাপ করছিলেন। এসময় বেশ কয়েকবার জ্ঞানও হারান তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুর পূর্ব প্রান্তে বোয়ালখালী উপজেলায় কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা পর্যটক এক্সপ্রেসের ধাক্কায় কয়েকটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। এ ঘটনায় শিশু আয়েশাসহ তিনজন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন।
চমেক হাসপাতালে এসেছেন ছোট্ট আয়েশার এক আত্মীয় ওয়াহিদ। তিনি সমকালকে বলেন, আয়েশার বাবা সাজ্জাদের বাড়ি বোয়ালখালীর মুন্সিপাড়া এলাকায়। পরিবারটি ঈদ করতে চট্টগ্রাম শহরে যাচ্ছিল। কিন্তু ঈদের আগেই প্রাণ গেল তাদের শিশু সন্তানের।
এদিকে নিহত আরও এক জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি হলেন উত্তর গোমদন্ডী ২নং ওয়ার্ড বাংলা পাড়ার মুহাম্মদ আবুল মনসুরের একমাত্র ছেলে মুহাম্মদ তুষার।
আহতদের মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- আসিফ উদ্দিন বাপ্পি, আসমা আহমেদ ও আঞ্জু আরা। আহত পাঁচজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ট র ন দ র ঘটন ন হত
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে হাতির তাণ্ডব
রাঙামাটির কাপ্তাই উপজেলার কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে সীতা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ওয়াগ্গাছড়া চা বাগানে বিগত এক মাস ধরে অবস্থান করছেন একদল বন্যহাতি। ১৭ (সতের) দলের এই বন্যহাতির তাণ্ডবে এরইমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগান শ্রমিকদের ঘরবাড়ি, গাছপালা এবং বাগানের অভ্যন্তরে অবস্থিত কাঁচা সড়ক।
এদের তাণ্ডবে বাগানের ২নং সেকশনে বসবাসকারী চা শ্রমিকরা এরইমধ্যে নিজ নিজ বসতবাড়ি ছেড়ে কর্ণফুলি নদীর উত্তর পাড়ে অবস্থান নিয়েছে। এই সেকশনে থাকা বহু ঘর হাতির আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ওয়াগ্গা টি লিমিটেডের পরিচালক খোরশেদুল আলম কাদেরী বলেন, “হাতির তাণ্ডবে মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ৩টায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগানের নিজস্ব বোট চালক সানাউল্লাহর বসতবাড়ি। এসময় তিনিসহ তার স্ত্রী-সন্তানেরা ঘর হতে বের হয়ে কোনরকমে প্রাণে রক্ষা পেয়েছে।”
বোট চালক সানাউল্লাহ বলেন, “সোমবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে আমি হাতির গর্জন শুনতে পাই। এসময় একটি বড় হাতি আমার ঘর ভাঙার চেষ্টা চালায়। আমি হতবিহ্বল হয়ে যাই। সেসময় স্ত্রী-পুত্রকে নিয়ে ঘরের পেছন দিয়ে কোন রকমে পালিয়ে বোটে করে এপারে চলে আসি।”
চা বাগানের টিলা বাবু চাথোয়াই অং মারমা বলেন, “বিগত এক মাস ধরে ১৭টি হাতির একটি দল বাগানে অবস্থান করছে। মাঝে মাঝে দলটি সীতা পাহাড়ে চলে গেলেও হঠাৎ বাগানে চলে এসে আসে এবং বাগানের গাছপালা, বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত করে। আমাদের চা শ্রমিকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।”
ওয়াগ্গা চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক আমিনুর রশীদ কাদেরী বলেন, “বিগত এক মাস ধরে হাতির একটি দল ওয়াগ্গা চা বাগানে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দলে সদস্য সংখ্যা সতেরো ১৭টি। সম্প্রতি দুটি নতুন শিশু জন্ম নিয়েছে। শিশু হস্তী শাবককে আশীর্বাদ করার জন্য সীতা পাহাড়ের গভীর অরণ্য থেকে আরো একদল হাতি যোগদান করেছে।”
হাতি খুবই শান্তিপ্রিয় জীব। নিরিবিলি পরিবেশ পছন্দ করে। অনেকে বলে থাকেন, মামারা বেরসিক বাদ্য বাজনা, বাঁশির সুর, গলাফাটা গান, গোলা বারুদ, ড্রামের শব্দ পছন্দ করে না। তারা কোলাহল এড়িয়ে চলে।
গতকাল সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) স্বচক্ষে দেখা হলো। আমাদের টিলা বাবু চাই থোয়াই অং মারমা শ্রমিকদের নিয়ে পাহাড়ের উপর বাঁশির সুর তুলেছে। সুর ও বাদ্য বাজনা এড়িয়ে মামারা (হাতি) চা বাগান পেরিয়ে সদলবলে বাঁশবনের গভীর থেকে গভীরে হারিয়ে গেলো। হয়তো আবার ফিরে আসবে।
কাপ্তাই বন বিভাগের কাপ্তাই রেঞ্জ অফিসার ওমর ফারুক স্বাধীন বলেন, “দিন দিন হাতির আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার ফলে হাতি খাবারের সন্ধানে প্রায়ই লোকালয়ে এসে হানা দিচ্ছে। আমাদের উচিত হাতির আবাসস্থল ধ্বংস না করা।”
ঢাকা/রাঙামাটি/এস