পাল্টা আক্রমণে ট্রাম্পকে তুলোধুনো করলেন মাস্ক
Published: 6th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধানের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর পর দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রকাশ্যে বিবাদে রূপ নিয়েছে। একে-অপরের প্রতি পাল্টাপাল্টি আক্রমণ ছুঁড়ে দিয়েছেন। সরকারি খরচ কমানোর জন্য বিশেষ সরকারি উপদেষ্টা পদে ছিলেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান ইলন মাস্ক। তার কর ও ব্যয়-সংক্রান্ত বাজেট বিল নিয়ে মতবিরোধকে কেন্দ্র করে বেশ কিছুদিন ধরেই ট্রাম্প ও মাস্কের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল।
ইলন মাস্ক গত সপ্তাহে ট্রাম্পের বিগ বিউটিফুল কর ও ব্যয় বিলকে ‘জঘন্য’ বলে সমালোচনা করে প্রশাসনিক পদ থেকে ইস্তফা দেন। ট্রাম্প বলছেন, ইলন মাস্কের কার্যকলাপে তিনি ‘হতাশ’। ওদিকে মাস্ক বলছেন, ট্রাম্প ‘অকৃতজ্ঞ’। ট্রাম্প সাংবাদিকদের কাছে মাস্কের তীব্র সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে, স্যোশাল মিডিয়া এক্সে একের পর এক পোস্টে ট্রাম্পকে পাল্টা তুলোধুনো করছেন মাস্ক। এমন প্রকাশ্য বাদানুবাদে তাদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র সফররত জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ ম্যার্ৎসের সঙ্গে বৈঠকের সময় মাস্ককে নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন ট্রাম্প। সাংবাদিকদের সামনে ট্রাম্প বলেন, ইলন মাস্কের সঙ্গে আমার দারুণ সম্পর্ক ছিল। সেটা আর থাকবে কি না আমি জানি না। আমি মাস্ককে নিয়ে খুবই হতাশ। আমি তাকে অনেক সাহায্য করেছি। তিনি এখানে অন্যদের চেয়ে বিগ বিউটিফুল বিলের ভেতরের বিষয়বস্তু সম্পর্কে ভালোভাবে জানতেন। এতে তার কোনো সমস্যা হওয়ার কথা ছিল না। হঠাৎই তার সমস্যা দেখা দিল। মাস্ক এই বিলের যে সমালোচনা করেছেন, তাতে ট্রাম্প বিস্মিত হয়েছেন বলে জানান।
প্রেসিডেন্টের এ মন্তব্যের পর স্যোশাল মিডিয়া এক্সে পাল্টা জবাব দিয়ে ইলন মাস্ক লেখেন, আমি না থাকলে ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে যেতেন। ডেমোক্র্যাটরা হাউজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিত। আর সিনেটে রিপাবলিকানদের সূক্ষ্ম ব্যবধান (৫১-৪৯) থাকত। অথচ ট্রাম্প এই ধরনের অকৃতজ্ঞতা দেখাচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ও তার দলের অন্যান্য রিপাবলিকানদের জন্য ২৭ কোটি ডলার খরচ করেছিলেন মাস্ক। সেইসূত্রে ট্রাম্পের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল ট্রাম্পের।
ট্রাম্প নির্বাচনে জয়ের পর মাস্কের জন্য আলাদা একটি দফতর তৈরি করেছিলেন। সেই সরকারি দক্ষতা বিষয়ক দপ্তর (ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি বা ডিওজিই)-এর কাজ ছিল প্রশাসনের অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কাটছাঁট করে অর্থনৈতিক সাশ্রয় করা।
গত মাসে কর ও ব্যয় সংক্রান্ত একটি বিল অনুমোদন করার পর ট্রাম্প এটিকে ‘ওয়ান বিগ বিউটিফুল বিল অ্যাক্ট’ নাম দেন। সেই বিল নিয়ে পরে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের মতবিরোধ প্রকাশ্যে চলে আসে।
মাস্কের দাবি ছিল, তিনি এবং তার সহকারীরা ট্রাম্প প্রশাসনে থেকে এতদিন ব্যয় কমাতে যে কাজ করে এসেছেন সবই ব্যর্থ হবে এই বিলের কারণে।
বিলটি তাকে দেখানোর আগেই ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে সেটি পাস করানোর জন্য পাঠিয়ে দিয়েছিলেন বলেও সমাজমাধ্যমে অভিযোগ করেন মাস্ক।
তবে বিলটির বিরোধিতায় মাস্কের ব্যক্তিগত কারণ থেকে থাকতে পারে বলেই ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। তিনি বলছেন, পর্যায়ক্রমিক কর ও ব্যয় সংক্রান্ত এই বিলের সরাসরি প্রভাব পড়ত মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি টেসলার উপর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক য ক তর ষ ট র ইলন ম স ক র জন য প রক শ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
২২ অনাথ কাশ্মীরি শিশুর পড়াশোনার দায়িত্ব নিলেন রাহুল গান্ধী
অপারেশন সিঁদুর চলাকালীন পাকিস্তানি গোলায় ভারত–নিয়ন্ত্রিত জম্মু–কাশ্মীরে যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, তাঁদের পরিবারের ২২ অনাথ শিশুর লেখাপড়ার পুরো দায়িত্ব নিয়েছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। ওই শিশুরা পুঞ্চ জেলার সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দা।
স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজে উঠে স্নাতক হওয়া পর্যন্ত ওই শিশুদের পড়াশোনার সব খরচ রাহুল গান্ধী বহন করবেন। সেই খরচের প্রথম কিস্তির টাকা বুধবার ওই পড়ুয়াদের স্কুলে পৌঁছে যাবে বলে জানিয়েছেন জম্মু–কাশ্মীরের কংগ্রেস সভাপতি তারিক হামিদ কাররা।
পেহেলগামে গত ২২ এপ্রিল পর্যটকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালিয়েছিল কয়েকজন জঙ্গি। সেই হামলায় নিহত হয়েছিলেন মোট ২৬ জন পর্যটক। প্রত্যাঘাতের জন্য ভারত শুরু করে অপারেশন সিঁদুর। চার দিনের সেই লড়াইয়ের সময় জম্মুর সীমান্তবর্তী এলাকায় প্রবল গোলাবর্ষণ করে পাকিস্তান। সেই হামলায় মারা গিয়েছিলেন ২৭ জন গ্রামবাসী। আহত হয়েছিলেন ৭০ জনের বেশি। যাঁরা নিহত হয়েছিলেন, ওই ২২ শিশু ওইসব পরিবারেরই সন্তান। তাদের কেউ বাবা, কেউ মা, কেউ–বা দুজনকেই হারিয়েছে। কারও পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
রাহুল গত মে মাসে ওইসব এলাকায় গিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। অনাথ শিশুদের স্কুলেও গিয়েছিলেন। ওই সময় তিনি দলীয় নেতাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন অনাথ শিশুদের তালিকা তৈরি করতে। সরকারি নথির সঙ্গে সেই নাম মিলিয়ে ২২ জনের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হয়। পুঞ্চ জেলা সফরের সময় রাহুল তাঁর ইচ্ছার কথা জানিয়ে বলেছিলেন, ওই শিশুদের স্নাতক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনার সব খরচ তিনি দেবেন।
পাকিস্তানের গোলার আঘাতে মারা গিয়েছিলেন ১২ বছরের দুই যমজ ভাই–বোন জাইন আলি ও উরবা ফতিমা। রাহুল তাঁদের স্কুলে গিয়েছিলেন। সেই স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। তাঁদের বলেছিলেন, তোমরা তোমাদের বন্ধুদের হারিয়েছ। সে জন্য তোমাদের মন খারাপ। ওই মৃত্যু আমাকেও দুঃখ দিয়েছে। তোমাদের দুঃখ আমি বুঝি। কিন্তু তোমাদের জন্য আমি গর্বিত। তোমরা ভয়কে জয় করেছ। রাহুল ওই শিশুদের বলেছিলেন, ভয়কে জয় করতে হবে। সুদিন আসবে। সব আবার স্বাভাবিক হবে।
ওই ২২ জনের জন্য বছরে কত খরচ হবে প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব তা জানাননি।