মা-বাবার সঙ্গে কি সম্পর্ক ছিন্ন করা যায়, কী বলছে পশ্চিমা গবেষণা
Published: 6th, June 2025 GMT
আধুনিক সমাজে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে, যৌথ পরিবারগুলো একক পরিবারে পরিণত হচ্ছে। এখন পরিবার বলতে আমরা শুধু মা-বাবা, ভাই-বোনকে বুঝি। একক পরিবারেও কখনো কখনো বিচ্ছিন্নতা দেখা যাচ্ছে।
মা-বাবার সঙ্গে সন্তানের বিচ্ছিন্নতা কি সম্ভব? এ বিষয়ে বৃহৎ পরিসরে তেমন কোনো গবেষণা এখনো হয়নি। তবে এখন পর্যন্ত যেসব গবেষণার তথ্য হাতে আছে, সে অনুযায়ী মা-বাবা ও সন্তানের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা আশ্চর্যজনকভাবে খুব সাধারণ ঘটনা।
নিজের ২১তম জন্মদিনের কয়েক দিন পর মায়ের সঙ্গে ফোনে তুমুল ঝগড়া হয় সারাহর। রাগে, ক্ষোভে প্রথমবারের মতো মায়ের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন এই তরুণী। সারাহ (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার খুব রাগ হয়েছিল।’
সারাহর রাগের কারণ তাঁর জন্মদিন উদ্যাপনে মা-বাবার অংশ না নেওয়া। কারণ হিসেবে তাঁরা অতিরিক্ত ব্যস্ততার কথা বলেছিলেন, যা মেনে নিতে পারেননি সারাহ। তবে এটাই তাঁর ক্ষোভের একমাত্র কারণ নয়।
সবকিছুর প্রতি মায়ের অনীহা, আত্মকেন্দ্রিকতা এবং মেয়ের জীবনের প্রতি চরম অনাগ্রহ প্রকাশের ফলে মায়ের ওপর ভীষণ বিরক্ত হয়ে পড়েছিলেন সারাহ। সারাহর মা তাঁর শিক্ষাগ্রহণকে অপ্রয়োজনীয় ও তুচ্ছ করে দেখাতেন এবং পারিবারিক খামারের কাজে সাহায্য করার জন্য সারাহকে নিয়মিত চাপ দিতেন।
সারাহর রাগের কারণ, অতিরিক্ত ব্যস্ততার কথা বলে তাঁর জন্মদিন উদ্যাপনে মা-বাবার অংশ না নেওয়া, যা মেনে নিতে পারেনি সারাহ। তবে এটাই তাঁর ক্ষোভের একমাত্র কারণ নয়।তবে মায়ের যে বিষয়টি সারাহকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিত, তা হলো, কর্তৃত্ববাদী ও মাঝেমধ্যে নির্যাতনকারী হয়ে ওঠা বাবার হাত থেকে তাঁকে রক্ষা করতে মায়ের ব্যর্থতা।
দুই থেকে তিন বছর সারাহ তাঁর মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ একেবারেই বন্ধ রেখেছিলেন। সারাহর মা-ও তাঁর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ রাখেননি। সে সময়ের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে সারাহ বলেন, ‘আমার মুক্তি পাওয়ার অনুভূতি হয়েছিল।’
তবে সারাহ যখন বিদেশে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তিনি সবকিছু তিক্ততার মধ্যে ফেলে যেতে চাননি। তাই তিনি মা-বাবার সঙ্গে আবার যোগাযোগ করেন। কিন্তু এত দিন পর মেয়ের ফিরে আসা নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো আবেগের বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাননি বলে জানান সারাহ।
সারাহ বলেন, তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনা ছিল না, এমনকি তাঁদের আচরণে মনে হয়েছে যেন কিছুই ঘটেনি। পরের দুই–তিন দশকে আরও কয়েক দফা মা-বাবার সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন ছিলেন সারাহ।
সমাজে এখনো এটা একটি ট্যাবু। এটা বেশ ভয়জাগানিয়া একটি প্রসঙ্গ, যা নিয়ে মানুষ কথা বলতে চায় না। তাঁদের ধারণা, এটা কেবল অন্যদের সঙ্গেই ঘটে।লুসি ব্লেক, ওয়েস্ট অব ইংল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষকঅনেকেই মনে করেন যে পরিবারে সদস্যদের মধ্যে বিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। কিন্তু এটা প্রমাণ করার মতো তথ্য পাওয়া কঠিন।
তবে যেসব তথ্য পাওয়া যায়, সেসব তথ্য অনুযায়ী বিষয়টি আশ্চর্যজনকভাবে সাধারণ ঘটনা। অথচ নিজের মা–বাবার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করা নিঃসন্দেহে একটি কঠিন সিদ্ধান্ত।
সন্তানকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় ব্যাখ্যা দিন, ভালোমন্দ দিকগুলো তুলে ধরুন.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব চ ছ ন নত পর ব র
এছাড়াও পড়ুন:
জামালপুর শহরে সামান্য বৃষ্টিতেই ঘরে ঢোকে পানি, দুই শতাধিক পরিবারের ভোগান্তি
জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রার পলাশতলা এলাকায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসনের দাবিতে মানববন্ধন হয়েছে। আজ বুধবারবেলা দুইটার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, জলাবদ্ধতায় দুই শতাধিক পরিবার চরম দুর্ভোগে আছেন।
‘পলাশতলার সর্বস্তরের জনগণ’-এর ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেন। জামালপুর শহরের হাটচন্দ্রা রেলক্রসিংয়ের সামনে পলাশতলা এলাকাটির অবস্থান। জামালপুর-দেওয়ানগঞ্জ মহাসড়ক থেকে একটি সংযোগ সড়ক এলাকাটির দিকে ঢুকেছে। ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের ভাষ্য, বর্ষা মৌসুমে তাঁদের বানভাসির মতো বসবাস করতে হয়। এলাকার সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে জনপ্রতিনিধি ও পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি চান তাঁরা।
স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, এলাকাটিতে সামান্য বৃষ্টি হলে আঙিনা উপচে কয়েকটি ঘরে পানি ঢোকে। পানি মাড়িয়ে যাবতীয় কাজ সারতে হয়। যেকোনো কাজে বাইরে গেলে নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি মাড়িয়ে আসা-যাওয়া করতে হয়। ফলে তাঁরা পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। প্রায় চার বছর ধরে এমন অসহনীয় জলাবদ্ধ পরিস্থিতির মধ্যে তাঁদের বসবাস করতে হচ্ছে।
শহিদুল্লাহ নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, গত চার বছর ধরে প্রায় দুই শতাধিক পরিবার বানভাসির মতো বসবাস করছেন। জলাবদ্ধতার সমস্যা নিয়ে বহুবার পৌরসভাসহ স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায়, অনেকের হাত-পায়ে পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে।
দ্রুত সময়ের মধ্যে পলাশতলার জলাবদ্ধতা নিরসনে কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন জামালপুর পৌরসভার প্রশাসক এ কে এম আবদুল্লাহ-বিন-রশিদ। তিনি বলেন, ‘ওই এলাকায় আমি নিজে গিয়ে দেখে আসছি। যেসব স্থানে পানি আটকে আছে, সেগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকার পানি সরাতে ইতিমধ্যে পৌরসভার অন্য কর্মকর্তারা কাজ করছেন।’