দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আলোচিত চরমপন্থী সংগঠন গণমুক্তি ফৌজের শীর্ষ নেতা জাহাঙ্গীর কবির ওরফে লিপটনকে তিন সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের দুর্বাচারা গ্রামে জাহাঙ্গীর কবিরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

কাগজে–কলমে জাহাঙ্গীর কবির নাম হলেও তিনি পুলিশের তালিকা ও এলাকায় লিপটন (৪৮) নামে পরিচিত। দুর্বাচারা গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে তিনি। গতকাল রাতে সেনাবাহিনী তাঁর বাড়িতে পাঁচ ঘণ্টা অভিযান চালায়। এ সময় আশপাশের এলাকার কয়েক শ নারী-পুরুষ ওই বাড়ির সামনে হাজির হয়ে লিপটনের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। অভিযানে ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ দেশি–বিদেশি অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে সেনাবাহিনী।

গ্রেপ্তার হওয়া অন্যরা হলেন একই গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে মোহাম্মদ রাকিব (৩৮), জহির ইসলামের ছেলে লিটন হোসেন (২৬) ও আবদুল মজিদের ছেলে সনেট হাসান (৪৫)।

সেনা, পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে সেনাবাহিনীর ৩০–৪০ জন সদস্য লিপটনের বাড়িতে অভিযানে অংশ নেন। তাঁদের সঙ্গে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানা-পুলিশের একটি দলও পরে যোগ দেয়। রাত থেকে শুরু হওয়া অভিযান চলে আজ শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত। এর মাঝে তিন সহযোগীসহ আটক করা হয় লিপটনকে। এ সময় তাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৬টি বিদেশি পিস্তল, ১টি লং ব্যারেলগান, ১০টি ম্যাগাজিন, ১৪০টি গুলি, ৮টি শিল্ড, ৬টি বল্লমসহ অন্যান্য সরঞ্জাম।

পুলিশ জানিয়েছে, ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর পালিয়ে বিদেশে অবস্থান করছিলেন জাহাঙ্গীর কবির লিপটন। এরপর গোপনে আবার দেশে ফিরে আসেন।

পুলিশ ও সেনা সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাহবুবউল আলম হানিফ ও সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের ছত্রচ্ছায়ায় নানা অপকর্ম করে আসছিলেন লিপটন। সরকার পতনের পর কিছুদিন গা ঢাকা দেন তিনি। এর মধ্যে নিজের এলাকায় বাড়ি জেলা বিএনপির এক নেতার সঙ্গে ‘মামা সম্পর্ক’ স্থাপন করে সখ্য গড়ে তোলেন। ওই নেতার নাম ভাঙিয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন লিপটন। এসব অভিযোগে কয়েক মাস ধরে তাঁর গতিবিধির ওপর নজর রাখছিল সেনাবাহিনীর একটি গোপন দল। গতকাল রাতে বাড়িতে অবস্থান করছেন, এমন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মেহেদী হাসান বলেন, লিপটন পুলিশের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী। তাঁর নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, চাঁদাবাজির ঘটনায় মামলা আছে। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক জিডি আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসল ম ল পটন গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ