বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় গাবতলী থেকে আরাফাত পরিবহনের বাসে রওনা দিয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে নেমেছেন বিকেল ৫টায় আসাদুল হক। পুরো ১৯ ঘণ্টা লেগেছে ৮ ঘণ্টার রাস্তা যেতে। সমকালকে শুক্রবার সন্ধ্যায় এমনটাই জানিয়েছেন একটি বেসরকারি ডেভেলপার কোম্পানিতে ব্যবস্থাপক হিসেবে চাকরিরত আসাদুল। যানজটে নাকাল তিনি। শুধু যমুনা সেতুর আগেই যানজটে আটকে ছিলেন ৮ ঘণ্টা। পরে সিরাজগঞ্জ মোড়, বগুড়া, পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ এলাকাতেও যানজট ছিল।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কেরও বিভিন্ন অংশে প্রায় কাছাকাছি অভিজ্ঞতা অনেক যাত্রীর। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঠিক একইরকম না হলেও যাত্রীদের এ দুদিনের অভিজ্ঞতা খুব সুখকর নয়। বরিশালমিুখী যাত্রাও তেমন স্বস্তিকর ছিল না। সব মিলিয়ে বলা যায় এবারের ঈদযাত্রা মানুষকে গত বছর বা তার আগের প্রায় সব বছরের দুঃসহ স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছে।

অথচ এবার এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। অন্তত গত রোজার ঈদের প্রায় মসৃণ ঈদযাত্রার কথা ধরলে ঈদুল আজহায়ও তার ধারাবাহিকতা থাকার কথা ছিল। ওই ঈদে বেশ লম্বা ছুটি দেওয়া হয়েছিল। গ্রাম ও মফস্বল শহরে বসবাসরত প্রিয়জনদের সঙ্গে উৎসবের আনন্দ ভাগাভাগি করতে যারা ঢাকা বা বড় শহরগুলো ছেড়েছিলেন তারা বেশ স্বস্তি বোধ করেছিলেন। সম্ভবত সেই অভিজ্ঞতা থেকেই, সরকারি সিদ্ধান্তের বদৌলতে, ঈদুল আজহায়ও, এবার টানা ১০ দিন ছুটি পেয়েছেন সরকারি-বেসরকারি কর্মীরা। কিন্তু এক যাত্রায় ভিন্ন হলো, অন্তত কোনো রুটেই যে গত ঈদের মতো স্বস্তি পাননি যাত্রীরা তা তো বলাই যায়।

গত কয়েক বছর বিশেষ করে উত্তরবঙ্গ রুটে ঈদ মৗসুমে যানজটের কারণ খোঁজা হতো টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জসহ কয়েকটি অংশে চার লেনের সড়ক নির্মাণ কাজ চলমান থাকার মধ্যে। গত রোজার ঈদ বা ঈদুল ফিতরে কাজগুলো সম্পন্ন হয়েছিল বলে জানানো হয়। সেটাও ছিল স্বস্তিকর ঈদযাত্রার অন্যতম কারণ। কিন্তু ওই সমস্যা তো এ ঈদেও নেই। তারপরও পুরনো যানজট ফিরে এল কেন?

এটা ঠিক, ছুটিটা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার থেকে। একইসঙ্গে প্রায় সবার ছুটি হওয়ায় সড়কে ঘরমুখো মানুষের চাপ বেড়েছে, যা গত বছর বা তার আগের বছর গুলোর প্রায় সাধারণ দৃশ্য ছিল। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাও তাই অতীতের মন্ত্রীদের মতো একসঙ্গে অনেক মানুষের বাড়িমুখো হওয়াকে বর্তমান পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছেন। কিন্তু তাতে গল্পটা কি একই হয়ে গেল না? 

ঈদুল ফিতরে যানজটমুক্ত মহাসড়ক দেখে অনেকেই তাকে সরকারের ম্যাজিক নাম দিয়েছিলেন। সাংবাদিকেরা এ ম্যাজিকের উৎস জানতে চাওয়ায় স্বরাষ্ট উপদেষ্টা পরামর্শ দিয়েছিলেন অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার আশ্রয় নিতে। কিন্তু মাত্র দু মাসের মাথায় মনে হচ্ছে সেই ম্যাজিকটা কাজ করছে না। যানজটের কারণ নিয়ে সমকালকে দেওয়া বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার বক্তব্য শুনলে তা বোঝা যায়।

যেমন: যমুনা সেতু পশ্চিম থানার অফিসার-ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান জামান শুক্রবার দুপুরে বলেছেন, ‘ঢাকা ও উত্তরাঞ্চল অভিমুখে উভয়দিকেই চাপ রয়েছে।  সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ও টোল আদায় কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ রাখায় মাঝেমধ্যে ঢাকা অভিমুখে যান চলাচলে অসুবিধা হয়েছে।’ 

যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে ট্রাফিক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আসাদউদ্দিন বলেন, যমুনা সেতুর ওপরে ৭ নম্বর পিলারের কাছে গাড়ি হঠাৎ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। যে কারণে উত্তরবঙ্গ-ঢাকাগামী লেনটি বন্ধ হয়ে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।’

হাইওয়ে পুলিশ বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজির পদোন্নতিপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শহিদ উল্লাহ বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা থেকে উত্তর-দক্ষিণাঞ্চল অভিমুখে প্রায় ৬৪ হাজার ২শ ৮৩টি যানবাহন পারাপার হয়। যা ধারণ ক্ষমতার প্রায় চার গুণ। হঠাৎ করে এত সংখ্যক যানবাহন পারাপার হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে দুরূহ হয়ে পড়ে।’ 

হাইওয়ে পুলিশ রংপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘সাসেক-২ প্রকল্পের কারনে গোবিন্দগঞ্জ-পলাশবাড়ীতে দুই পাশে সিঙ্গেল লাইন দিয়ে বর্তমানে যান চলাচল করছে। উত্তরাঞ্চলগামী চার লাইনের গাড়ি যখন এক লাইনে ঢুকে যায় তখন চালক যাত্রীদের কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতেই হয়। এর কোন বিকল্প নেই। চারশ গাড়ি আসছে, ঢুকতে পারবে একশ, আর বাকি তিন শো তখন যানজট তৈরি করে।’ 

সওজের সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল কোঅপারেশন (সাসেক-২) প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ড.

ওয়ালিউর রহমান দুপুরে বলেন, ‘পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জে প্রকল্পের নির্মাণ কাজের কারণে দুইদিকে নির্মাণাধীন সার্ভিস রাস্তা সরু হয়ে গেছে। এছাড়া সড়কের পাশে যত্রতত্র ঝুপড়ি মুদি দোকান ও শত শত ব্যাটারিচালিত রিকশার অবৈধ দখলও যানজটের অন্যতম কারণ।

অর্থাৎ ঈদের সময় যানজটে নাকাল মানুষদের প্রবোধ দিতে সংশ্লিষ্ট কর্মর্তাদের মুখে সেই পুরনো গল্পগুলোই ফিরে এসেছে। সড়ক যতই চার লেন-ছয় লেন হোক, সড়ক ব্যবস্থাপনা ঠিক না হলে এ গল্প থেকে মুক্তি নেই, এটাই সত্য। সেখানে উন্নতির কী হলো?

তবে শেষ কথা হিসেবেও সেই পুরোনো কথাটাই বলা যায়। আসাদুল যেমন বলেছেন, ‘শেষ পর্যন্ত যে বাড়ি আসতে পারছি, এটাই অনেক।’ এটাও বলা যায়, গত বছর তো উত্তরবঙ্গেরই অনেককে পথেই ঈদের নামাজ পড়তে হয়েছে, এবার অন্তত তা হয়নি, ঈদের আগে একদিন ছুটি বেশি থাকার কারণে। আর সব ভোগান্তি পুরোনো হলেও, অন্তত ঈদের নামাজ যে পথে পড়তে হয়নি, তার জন্য সরকার ধন্যবাদ পেতেই পারে।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট ঈদয ত র ঈদয ত র স বস ত সরক র য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

গাবতলীতে পরিবহন সঙ্কট, ঘরমুখো মানুষের ভিড়

একদিন পরেই পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে শেষ সময়ে রাজধানী ছাড়ছে হাজার হাজার মানুষ। ঢাকার বাইরে মহাসড়কে যানজট হওয়ায় যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ফিরে আসা যানবাহনের সংখ্যা কম। তাই গাবতলীতে পরিবহন সঙ্কট দেখা গেছে।

বাসস্ট্যান্ডে গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে অংসখ্য মানুষকে। বৈরি আবহাওয়ার কারণেও ভোগান্তি বেড়েছে।

গাবতলীতে সকাল থেকে উত্তরবঙ্গগামী যাত্রীর চাপ ছিল বেশি। শ্যামলী পরিবহন, এস আর পরিবহন, শাহ ফতেহ আলী পরিবহন, সুপার সনিসহ বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে যাত্রীদের গাড়ির জন্য বসে থাকতে দেখা গেছে। টিকিট কেটেও ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাউন্টারে অপেক্ষা করতে হচ্ছে দূর-দূরান্তের যাত্রীদের।

আরো পড়ুন:

টাঙ্গাইলে ট্রেন ও বাসের ছাদ থেকে পড়ে ২ জন নিহত

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ২ ট্রাকের সংঘর্ষ, আহত ১০

বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা জানান, লম্বা ছুটির কারণে এবার ঘরমুখো যাত্রীর চাপ তুলনামূলক বেশি। গত দুই দিনে বহু মানুষ ঢাকা ছেড়েছেন। বিশেষ করে বৃহস্পতিবার (৫ জুন) বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি মানুষ বাড়ির উদ্দেশে গেছেন। তবে আজ শুক্রবার (৬ জুন) সকাল থেকেও যাত্রীর চাপ আছে।

শাহজাদপুর ট্রাভেলসের কাউন্টার ম্যানেজার কামাল হোসেন বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গের প্রচুর গাড়ি গেছে। আমাদের আধা ঘণ্টা, ১৫ মিনিট পরপর বাস যায়। যাত্রীর চাপ আছে কিন্তু সিডিউল রাখা যাচ্ছে, না কারণ বাস ফিরে আসছে কম।’’

অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ, সড়কে একাধিক দুর্ঘটনা ও যানবাহন বিকল হওয়ায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের করটিয়া থেকে সেতু পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটারে থেমে থেমে যানজট সৃষ্টি হয়। শুক্রবার (৬ জুন) ভোরেও মহাসড়কে ২৫ কিলোমিটারে যানজটের সৃষ্টি হয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যানজট পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।

যানজট না থাকলেও ঢাকা-আরিচা সড়কেও গাড়ির চাপ রয়েছে বলে জানিয়েছেন বাস কাউন্টার সংশ্লিষ্টরা।

যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক আছে। গাবতীয় টার্মিনালের প্রবেশমুখে রয়েছে পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম। একইসঙ্গে গাবতলী সড়কের যানজট নিরসনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের ভূমিকা রাখতে দেখা গেছে। টার্মিনালের মাইকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করলে অভিযোগের আহ্বান ও পরিবহন কাউন্টার থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করতে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে।

ঢাকা/হাসান/বকুল 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঈদযাত্রায় পুরোনো গল্পে নতুন মাত্রা
  • যানজটে নাভিশ্বাস উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের, ৮ ঘণ্টার গন্তব্যে লাগছে ১৯ ঘণ্টা
  • গাবতলীতে পরিবহন সঙ্কট, ঘরমুখো মানুষের ভিড়
  • ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক: ২৫ কিলোমিটার যানজট, যমুনা সেতু দিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ৬৪ হাজার যানবাহন পারাপার
  • মহাসড়কে গাড়ির চাপ, যমুনা সেতু এলাকায় ২৫ কিলোমিটার যানজট
  • গাজীপুরে মহাসড়কে যানবাহনের চাপ, চলছে ধীর গতিতে
  • ঈদের ছুটির শুরুতে মহাসড়কে ধীরগতি
  • সাভারে যাত্রীর অপেক্ষায় দূরপাল্লার পরিবহন