শোলাকিয়ায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় ঈদের নামাজ আদায়
Published: 7th, June 2025 GMT
সর্বোচ্চ নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শোলাকিয়া মাঠে ঈদের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৭ জুন) সকাল ৯টায় শুরু হয় নামাজ। এতে ইমামতি করেন ইমাম মুফতি আবুল খায়ের মুহাম্মদ ছাইফুল্লাহ।
নামাজ শেষে মোনাজাতে দেশের উন্নয়ন ও সমৃদ্ধি এবং মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনা দোয়া করা হয়। এটি ছিল শোলাকিয়া ময়দানে ১৯৮তম জামাত।
ঈদের জামাতকে সুশৃঙ্খল ও নিরাপদ রাখতে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয় শোলাকিয়া ও আশাপাশের এলাকা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরাপত্তাবেষ্টনী পার হয়ে মুসল্লিদের ঢুকতে হয় ঈদগাহে।
আরো পড়ুন:
রাজধানীর অলিগলির রাস্তায় পশু কোরবানি
গোর-এ-শহীদ ময়দানে লক্ষাধিক মুসল্লির ঈদের নামাজ আদায়
মাঠের নিরাপত্তা নিশ্চিতে দুই প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব, আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। ছিল সাদা পোষাকে পুলিশ ও গোয়েন্দাদের নজরদারি। মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে ছিল সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ তল্লাশি করা হয় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে। ছিল পাঁচটি আর্চওয়ে। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি।
আকাশ মেঘলা থাকলেও আজ ভোর থেকেই শোলাকিয়া ঈদগাহ মাঠের দিকে যেতে থাকেন মুসল্লিরা। কেউ গাড়িতে চড়ে, কেউ ইজিবাইকে, কেউ সাইকেলে, কেউবা পায়ে হেঁটে যান ঈদগাহে। প্রতিবারের মতো এবারো মুসল্লিদের যাতায়াতের সুবিধায় দুইটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করে রেল কর্তৃপক্ষ। এর একটি ভৈরব থেকে ও অন্যটি ময়মনসিংহ থেকে কিশোরগঞ্জে যায়।
মুসল্লিদের সার্বিক সেবা দিতে ঈদগাহ এলাকায় কয়েকটি মেডিক্যাল টিম ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল মোতায়েন ছিল। স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্বে ছিল বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য।
নামাজ শুরুর আগে মুসল্লিদের স্বাগত জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- ঢাকা রেঞ্জের পুলিশ সুপার (অর্থ ও প্রশাসন) কাজেম উদ্দীন।
শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ উপলক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোড়ন। রাস্তার দুই পাশে টাঙানো হয় রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার। সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জে ছিল বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ।
জনশ্রুতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।
এদিকে, নারীদের জন্য কিশোরগঞ্জ শহরের সরযূবালা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে পৃথক ঈদ জামাতের আয়োজন করা হয়। সেখানেও বহু নারী ঈদ জামাতে অংশ নেন।
ঢাকা/রুমন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ঈদ উৎসব ঈদ র ন ম জ ক শ রগঞ জ ঈদগ হ
এছাড়াও পড়ুন:
সেকালের ‘বকরি ঈদ’: সমাজ, সাহিত্য ও সাময়িকীতে প্রতিধ্বনি
‘আসিয়াছে ফের দুনিয়ার বুকে
খুসির বকরি ঈদ
সারাটি রজনী কাসেমের আজ
আসেনি নয়নে নিদ।’
কবিতার পঙ্ক্তিতে (এম. করিম–এর ‘কার ঈদ’) এমনিভাবে প্রকাশ পেয়েছে বকরি ঈদের জন্য বাঙালি মুসলমানের উন্মুখ প্রতীক্ষা। ‘ঈদুজ্জোহা’, ‘ঈদ-উল-বকর’ বা ‘ঈদ-উল-আযহা’ তথা কোরবানির ঈদ সামাজিক ইতিহাসের পরতে পরতে ‘বকরি ঈদ’ নামে অভিহিত। ‘বকরিদ’ বা ‘বকর ঈদ’ নামেও পরিচিত এই ঈদ। পত্রিকা, সাময়িকী ও সরকারি নথিপত্রে ‘ঈদ-উল-আদহা’ নামেও আখ্যায়িত হয়েছে কোরবানির ঈদ। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে আরব বণিকেরা যখন এ দেশে আসতে শুরু করলেন তখন ঈদুল আজহার সময় তাঁরা বকরি (ছাগল) কোরবানি দিতেন বলে ‘ঈদুল আজহা’, ‘বকরি ঈদ’ নামেই সর্বাধিক পরিচিত পায়।
জেমস টেলরের বিবরণ অনুযায়ী, ১৮৩৮ সালে ঢাকা শহরের বণিকদের মধ্যে হিন্দুরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিলেন; মুসলমান ও খ্রিষ্টান ছিলেন মাত্র চার-পাঁচজন করে। সে সময় আজকের মতো প্রতিটি ঘরে কোরবানি দেওয়ার সামর্থ্য মুসলমান সমাজে ছিল না। অধ্যাপক আবদুল গফুর তাঁর আত্মজৈবনিক গ্রন্থ ‘আমার কালের কথা’য় লিখেছেন, ‘কোরবানির ঈদ বা অন্য কোন বিশেষ উপলক্ষ ছাড়া সাধারণত গরু বা বকরি জবাই করা হতো না। হাট–বাজারে গরু বা ছাগলের মাংসও এভাবে বিক্রি হতো না তখন। বাড়িতে মেহমান এলে সাধারণত মুরগী জবাই করেই তাদের আপ্যায়ন করা হতো।’
হিন্দু জমিদারপ্রধান এই অঞ্চলে গরু কোরবানি নিয়ে একটি বৈরী মনোভাব বিদ্যমান ছিল। ফলে মুসলমানদের প্রায়ই ছাগল (বকরি) কোরবানির দিকেই ঝুঁকতে হতো। রাষ্ট্রীয়ভাবে মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব তখন ততটা গুরুত্ব পেত না। তার একটি দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় ১৮৯০ সালের ঢাকা প্রকাশ-এ ছাপা সরকারি ছুটির তালিকায়—যেখানে হিন্দু, মুসলমান ও খ্রিষ্টান—এই তিন সম্প্রদায়ের জন্য ঘোষিত মোট ১৮ দিনের ছুটির মধ্যে মুসলমানদের ভাগে এসেছিল মাত্র ৩ দিন: মহররম উপলক্ষে দুই দিন এবং ঈদুল আজহা উপলক্ষে এক দিন।
সাপ্তাহিক ঢাকা প্রকাশ পত্রিকা, ০২ ফেব্রুয়ারি ১৮৯০