ঈদুল আজহার উপহার তিনি আগেই দিয়েছেন, ভুটানের বিপক্ষে গোল করে। এবার হামজা চৌধুরী নিজে ঈদ উদযাপন করলেন সতীর্থদের সঙ্গে। শনিবার সকাল সাতটায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল সংলগ্ন চাঁদ মসজিদে ঈদের জামাতে অংশ নেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের মুসলিম ধর্মাবলম্বী সদস্যরা। বাফুফে থেকে দেওয়া সবার জন্য সাদা পাঞ্জাবি পরে এদিন মসজিদে যান হামজারা। নামাজ আদায় শেষে মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন বাংলাদেশ দলের ফুটবলাররা।
হোটেল ফিরে সেমাই মুখ করেন সবাই। একে অন্যের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। নাস্তার মেনুতে ঈদের জন্যই সেমাই রাখা হয়েছিল আজ। এর আগে পরিবারের সঙ্গেই বেশিরভাগ ঈদ কেটেছে হামজার, তবে এবার তার ঈদ ছিল কিছুটা ভিন্নরকম, জাতীয় দলের সতীর্থদের সঙ্গে। হোটেলে এসে অনেকের সঙ্গেই সেলফি তুলেন হামজা।
মঙ্গলবার সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ। দেশের জন্য দায়িত্ব পালনে তাই ক্যাম্প ছেড়ে কেউ যাননি। তবে দুপুরে দিকে কেউ কেউ বের হয়েছিল ঢাকায় থাকা পরিবার ও আত্মীয়ের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর জন্য। হামজাও বের হয়েছিলেন কিছুক্ষণের জন্য। দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন হামজা। জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে জিততে পারলে সেটাই হবে তার সত্যিকারের ঈদ আনন্দ।
এদিন টিম হোটেল শমিত সোমের সঙ্গে তার কাকা দেখা করতে এসেছিলেন। আসার কথা ছিল ফাহমিদুলের মায়েরও। ঈদের দিন হলেও অনুশীলন কিন্তু বন্ধ রাখেননি কেউ। দুপুরে একসঙ্গে খাবার খেয়ে বিকেলে তাদের অনুশীলন করার কথা। তবে সেটা ‘ক্লোজড ডোর’ ট্রেনিং, কৌশলগত কারণে যেখানে-সেখানে ক্যামেরার অনুমতি নেই।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।