হামজাদের প্রতিপক্ষ সিঙ্গাপুর দলটা কেমন
Published: 7th, June 2025 GMT
ফুটবলে তাদের ডাক নাম ‘লায়ন্স’। এটাই সিঙ্গাপুরে জাতীয় প্রতীক। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অবশ্য এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো ডাক নাম নেই। ‘টাইগার্স’ নামটি ক্রিকেটের দখলে। তবে হামজা, ফাহমিদুল, শমিতদের আগমনে দলটি এখন বাঘের চেহারা নিতে যাচ্ছে।
মঙ্গলবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেই ঘরের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফিফা র্যাঙ্কিং বলে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সিঙ্গাপুর যেখানে ১৬১, বাংলাদেশ সেখানে ১৮৩। কিন্তু এই র্যাঙ্কিং কি সব? সাম্প্রতিক হাওয়া বলছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই প্রতিপক্ষের চেয়ে বাংলাদেশ একেবারে পিছিয়ে নেই। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে, ড্র একটি, হার একটি। সেখানে সিঙ্গাপুর তাদের শেষ পাঁচ ম্যাচের দুটিতে জয়, একটি ড্র আর হার দুটি। এই বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর তাদের নিজেদের মাঠে মালদ্বীপকে প্রীতি ম্যাচে ৩–১ গোলে হারিয়েছে। এই মালদ্বীপকে বাংলাদেশও গেল নভেম্বরে ২–১ গোলে হারিয়েছিল। সিঙ্গাপুর গেল মার্চে নেপালের কাছে ০–১ গোলে হেরেছিল। তারা শেষ জয়ের দেখা পেয়েছিল গেল ডিসেম্বরে ভিয়েতনামের সঙ্গে।
বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ফুটবল ইতিহাসে মাত্র দুই বার মুখোমুখি হয়েছিল। প্রথমবার সেই ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট এশিয়ার প্রাচীন মারদেকা টুর্নামেন্টে। যেখানে কুলালামপুরে কাজী সালাউদ্দিনের গোলে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর সর্বশেষ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ঢাকায় খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ দল ২০১৫ সালের ৩০ মে, স্বাগতিকরা হেরেছিল ১–২ গোলে। তবে প্রজন্মের সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছুই।
বাংলাদেশের এই দলটির মধ্যে গতি, শৌলী সবই বেড়েছে। ইংল্যান্ড, ইতালি, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডে খেলা ফুটবলাররা দেশের টানে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেছে। সেখানে সিঙ্গাপুর দলটিতে বেশিরভাগ ফুটবলারই সেদেশের ঘরোয়া লিগে খেলে থাকেন। এর বাইরে থাইল্যান্ডের পাথুম ইউনাইটেডে খেলা দুই ফরোয়ার্ড ভাই ইকসান ফান্ডি আর ইহান ফান্ডি খেলে থাকেন সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের হয়ে। এই ইকসান ফান্ডিই মালদ্বীপের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে জোড়া গোল করেছেন।
ইউরোপের লিথুনিয়ায় খেলা ডিফেন্ডার রায়ান স্টুয়ার্ট আছে দলটিতে। তবে বেশিরভাগ ফুটবলারই সিঙ্গাপুরের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব লায়ন সিটি সেইলর্সের খেলোয়াড়। সেখানে আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বছর কুড়ির মিডফিল্ডার আমির সায়াফিজ। সিঙ্গাপুরের ক্লাব ইয়াং লাইন্স এফসির হয়ে দারুণ মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। সিঙ্গাপুরের শক্তির আরেকটি জায়গা তাদের জাপানি কোচ সুতোমু ওগোরা।
মালদ্বীপকে হারানোর পর তিনিই ঘোষণা দিয়েছেন ইনজুরি কাটিয়ে ইকসানে ম্যাচে ফেরা কতটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছে তাকে। ‘ইকসান ৬০ মিনিট খেলতে পেরেছে এবং গোল করেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এটাই দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে। তবে মালদ্বীপের বিপক্ষে যতগুলো সুযোগ আমরা নষ্ট করেছি, সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে হলে সমস্যায় পরতে হতে পারে আমাদের।’ ইকসান ফেরাতে সিঙ্গাপুরের জাপিন কোচ এখন ৪–৫–১ ফরেমশনে মাঠ সাজাচ্ছেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে মারাত্মক সংকটে তিস্তা নদী
আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। আর প্রস্তাবিত তিস্তা প্রকল্প নিয়েও কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না।
রোববার রাজধানীর প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশে (পিআইবি) ‘সংকটে তিস্তা নদী: সমাধানের পথ কী?’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্ক (বেন) যৌথভাবে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
মতবিনিময় সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাপার সহসভাপতি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জমান। প্রবন্ধে তিনি উল্লেখ করেন, ভারতের সঙ্গে কোনো পানিবণ্টন চুক্তি না থাকায় এবং আন্তর্জাতিক নিয়ম না মেনে উজানে বাঁধ ও জলবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ফলে তিস্তা নদী মারাত্মক সংকটে পড়েছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে আর বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীন পানিনির্গমনের ফলে বাংলাদেশ অংশে বন্যা ও ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে।
মতবিনিময় সভায় বিশেষজ্ঞরা তিস্তা সমস্যার সমাধানে ভারতের সঙ্গে গঠনমূলক সম্পৃক্ততা, আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ এবং প্রকল্পে স্থানীয় জনগণের মতামত গ্রহণের ওপর জোর দেন। তাঁরা তিস্তা মহাপরিকল্পনা সম্পর্কে স্বচ্ছতা ও পুনর্মূল্যায়নের দাবি জানান।
অর্থনীতিবিদ আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘সরকারের কাছে তিস্তা মহাপরিকল্পনার কোনো তথ্য নেই। বিগত বছরগুলোতে উন্নয়নের নামে দেশের নদীগুলোকে সংকুচিত করা হয়েছে। আমরা আর সংকুচিত করার উন্নয়ন চাই না। নদীকে নদীর মতোই রাখতে হবে।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, দেশের উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে ব্যক্তিস্বার্থকে উপেক্ষা করে দেশের স্বার্থকে বড় করে দেখতে হবে। যেসব প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদি, সেসব প্রকল্প গ্রহণের আগে অবশ্যই জনগণের মতামত নিতে হবে।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব সামর্থ্য অনুযায়ী প্রকল্প নেওয়া উচিত। নদীকে রক্ষা করতে হবে কিন্তু তাকে খালে পরিণত করে নয়। এই প্রকল্প পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।
বাপার প্রতিষ্ঠাতা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘বাপা কখনো উন্নয়নবিরোধী নয়। আমরাও চাই দেশের উন্নয়ন হোক। কিন্তু সেই উন্নয়ন হতে হবে দেশের প্রাণপ্রকৃতি, পরিবেশ ও নদীকে ঠিক রেখে। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে কেউ খোলামেলা কথা বলতে চাইছেন না। সরকার ও বিরোধী দল উভয়ই চীন-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে সংবেদনশীল হওয়ায় এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে।’
বাপার সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, পরিবেশবিদ, গবেষক ও তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা অংশ নেন।