ফুটবলে তাদের ডাক নাম ‘লায়ন্স’। এটাই সিঙ্গাপুরে জাতীয় প্রতীক। বাংলাদেশ ফুটবল দলের অবশ্য এখন পর্যন্ত সেভাবে কোনো ডাক নাম নেই। ‘টাইগার্স’ নামটি ক্রিকেটের দখলে। তবে হামজা, ফাহমিদুল, শমিতদের আগমনে দলটি এখন বাঘের চেহারা নিতে যাচ্ছে। 

মঙ্গলবার এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে এই সিঙ্গাপুরের বিপক্ষেই ঘরের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ফিফা র‌্যাঙ্কিং বলে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। সিঙ্গাপুর যেখানে ১৬১, বাংলাদেশ সেখানে ১৮৩। কিন্তু এই র‌্যাঙ্কিং কি সব? সাম্প্রতিক হাওয়া বলছে দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই প্রতিপক্ষের চেয়ে বাংলাদেশ একেবারে পিছিয়ে নেই। সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে তিনটিতে, ড্র একটি, হার একটি। সেখানে সিঙ্গাপুর তাদের শেষ পাঁচ ম্যাচের দুটিতে জয়, একটি ড্র আর হার দুটি। এই বৃহস্পতিবার সিঙ্গাপুর তাদের নিজেদের মাঠে মালদ্বীপকে প্রীতি ম্যাচে ৩–১ গোলে হারিয়েছে। এই মালদ্বীপকে বাংলাদেশও গেল নভেম্বরে ২–১ গোলে হারিয়েছিল। সিঙ্গাপুর গেল মার্চে নেপালের কাছে ০–১ গোলে হেরেছিল। তারা শেষ জয়ের দেখা পেয়েছিল গেল ডিসেম্বরে ভিয়েতনামের সঙ্গে।

বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের ফুটবল ইতিহাসে মাত্র দুই বার মুখোমুখি হয়েছিল। প্রথমবার সেই ১৯৭৩ সালের ২ আগস্ট এশিয়ার প্রাচীন মারদেকা টুর্নামেন্টে। যেখানে কুলালামপুরে কাজী সালাউদ্দিনের গোলে সিঙ্গাপুরের সঙ্গে ১–১ গোলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। আর সর্বশেষ সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে ঢাকায় খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ দল ২০১৫ সালের ৩০ মে, স্বাগতিকরা হেরেছিল ১–২ গোলে। তবে প্রজন্মের সঙ্গে বদলে গেছে অনেক কিছুই। 

বাংলাদেশের এই দলটির মধ্যে গতি, শৌলী সবই বেড়েছে। ইংল্যান্ড, ইতালি, কানাডা, ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ডে খেলা ফুটবলাররা দেশের টানে জাতীয় দলের হয়ে মাঠে নেমেছে। সেখানে সিঙ্গাপুর দলটিতে বেশিরভাগ ফুটবলারই সেদেশের ঘরোয়া লিগে খেলে থাকেন। এর বাইরে থাইল্যান্ডের পাথুম ইউনাইটেডে খেলা দুই ফরোয়ার্ড ভাই ইকসান ফান্ডি আর ইহান ফান্ডি খেলে থাকেন সিঙ্গাপুর জাতীয় দলের হয়ে। এই ইকসান ফান্ডিই মালদ্বীপের বিপক্ষে শেষ ম্যাচটিতে জোড়া গোল করেছেন।

ইউরোপের লিথুনিয়ায় খেলা ডিফেন্ডার রায়ান স্টুয়ার্ট আছে দলটিতে। তবে বেশিরভাগ ফুটবলারই সিঙ্গাপুরের চ্যাম্পিয়ন ক্লাব লায়ন সিটি সেইলর্সের খেলোয়াড়। সেখানে আলাদা করে দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন বছর কুড়ির মিডফিল্ডার আমির সায়াফিজ। সিঙ্গাপুরের ক্লাব ইয়াং লাইন্স এফসির হয়ে দারুণ মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। সিঙ্গাপুরের শক্তির আরেকটি জায়গা তাদের জাপানি কোচ সুতোমু ওগোরা।

মালদ্বীপকে হারানোর পর তিনিই ঘোষণা দিয়েছেন ইনজুরি কাটিয়ে ইকসানে ম্যাচে ফেরা কতটা আত্মবিশ্বাস দিয়েছে তাকে। ‘ইকসান ৬০ মিনিট খেলতে পেরেছে এবং গোল করেছে। বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে এটাই দলকে আত্মবিশ্বাস জোগাবে। তবে মালদ্বীপের বিপক্ষে যতগুলো সুযোগ আমরা নষ্ট করেছি, সেটা বাংলাদেশের বিপক্ষে হলে সমস্যায় পরতে হতে পারে আমাদের।’ ইকসান ফেরাতে সিঙ্গাপুরের জাপিন কোচ এখন ৪–৫–১ ফরেমশনে মাঠ সাজাচ্ছেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ফ টবল ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকার দুই সিটিতে সাড়ে ১৯ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ) এলাকায় সাড়ে ১৯ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বেলা একটার দিকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় (সন্ধ্যা সাতটা) দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ড এলাকা থেকে মোট ১১ হাজার ৮৬৬ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ।

এদিকে বর্জ্য অপসারণ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাটটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এতে তিনি জানান, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ড এলাকা থেকে ৭ হাজার ৮০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তরে এ পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে পাঁচ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে। বেলা দুইটার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছিল।

এ বছর ঈদুল আজহায় দুই সিটিতে ২০ হাজার টন করে মোট প্রায় ৪০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। দক্ষিণ সিটি জানিয়েছিল, তারা কাজ শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঈদের দিনের কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ রাতের মধ্যেই কোরবানির সব বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল।

সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত যে পরিমাণ কোরবানির বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে, এর প্রায় ৮৫ শতাংশের বেশি অপসারণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক এলাকায় গরু-খাসি কোরবানি দেওয়া হয়েছে, যা বর্জ্য অপসারণে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মতো। তবে বর্জ্য অপসারণের কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে এ বছর ঢাকাবাসীর আচরণগত অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক এলাকায় নিজেরা বর্জ্য সংগ্রহ করে করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে এগিয়ে আসার জন্য ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রশাসক বলেন, গুরুত্ব দিয়ে পচনশীল কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ করা হয়েছে। আজ রোববার রাস্তাগুলো জীবাণুনাশক ছিটিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হবে; যাতে ঈদে নগরবাসীর বেড়ানো স্বাচ্ছন্দ্যের হয়।

মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা বা পরিষ্কার করার কথা বলা যাবে না। তবে এটা বলা যায় যে রাস্তার কোথাও কোরবানির বর্জ্য পড়ে থাকবে না। এ ছাড়া হাটের বর্জ্য ঈদের দুই দিন পর পরিষ্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে ঈদের দিনই কিছু কিছু হাটের বর্জ্য প্রায় অপসারণ করে শেষ করা হয়ে গেছে।

সর্বশেষ কত পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা করেছে, এ নিয়ে রাত আটটা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। তাদের দেওয়া ১২ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রাত একটার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ করার কথা। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানান, তাঁদের হিসাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১১ হাজার ৮৬৬ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। রাতে কাজ চলমান রয়েছে।

এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির অনেক এলাকায় ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এ সময় রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কমলাপুর, আরামবাগ, মতিঝিল, টিকাটুলী, ওয়ারী, গুলিস্তান, বকশীবাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শংকর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, টেকনিক্যাল, মিরপুর পাইকপাড়া, মিরপুর-৬ ও মিরপুর-১১ ঘুরে দেখা হয়।

এ সময় প্রধান ও বড় সড়কগুলোর পাশে কিছু স্থানে কোরবানির বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার অলিগলি রাস্তাতেও বর্জ্য ফেলে রাখতে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় বর্জ্য জমে না থাকলেও পশুর রক্ত, পয়োবর্জ্য জমে থাকতে দেখা গেছে। মালিবাগ, ওয়ারী, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর-৬ নম্বর বাজারসংলগ্ন জায়গায় বড় রাস্তার পাশেও কোরবানির বর্জ্য জমে থাকতে দেখা গেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ