ভারতীয় নারী জাতির ক্ষমতায়নের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ১৭ জন অসম সাহসী ব্যতিক্রমীর নাম, যাঁরা ২০২৫ সালের ৩০ মে মহারাষ্ট্রের পুনের ন্যাশনাল ডিফেন্স একাডেমি (এনডিএ) থেকে স্নাতক হলেন। ৩১৯ জন পুরুষ সহপাঠীর সঙ্গে ‘পাসিং আউট প্যারেড’, যার পোশাকি নাম ‘অন্তিম পাগ’, তাতে অংশ নিলেন ভারতের তিন প্রতিরক্ষা বাহিনীর এই ১৭ জন হবু নারী কর্মকর্তা।

এনডিএর ৭৬ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম পুরুষদের সঙ্গে পায়ে পা ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একই সঙ্গে একই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে শামিল হতে চলেছেন এই নারীরা। কিছুকাল আগেও যে অধিকার দেশের নারীদের ছিল না, যা ছিল তাঁদের কল্পনার অতীত, ৩০ মে তা ধরা দিল।

নারী ‘অর্ধেক আকাশ’ হলেও ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে পুরুষের মতো তাঁদের সমান অধিকার ছিল না পাঁচ বছর আগেও। ২০২০ সালে সুপ্রিম কোর্ট সেই অধিকার তাঁদের অর্পণ করেন। তত দিন পর্যন্ত স্নাতক হওয়ার পর নারীরা চেন্নাইয়ের ‘অফিসার্স ট্রেনিং একাডেমিতে’ এক বছরের ‘কোর্স’ করে সেনাবাহিনীতে কর্মকর্তা হতে পারতেন। কিন্তু স্কুলের গণ্ডি টপকানোর পর এনডিএতে পুরুষদের মতো তিন বছরের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর স্নাতক হয়ে সেনাবাহিনীতে স্থায়ী কমিশন পদে নিযুক্তি পেতেন না। সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর ওই ১৭ জন নারী সেই অধিকার অর্জন করলেন।

কতটা কঠিন সেই প্রশিক্ষণ? একটা ছোট্ট উদাহরণ হলো, পুরুষদের সঙ্গে তাঁদের মতো ১৪ কিলোমিটার দৌড়নোর পর লিখিত পরীক্ষা দিতে বসা। এ দিনটির কথা কল্পনা করেই সম্ভবত ২০২১ সালে ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল এম এম নরবনে সে বছরের অন্তিম পাগের সমাবর্তনের আসরে বলেছিলেন, ‘আজ থেকে ৪০ বছর পর হয়তো দেখা যাবে, আজ আমি যেখানে দাঁড়িয়ে, কোনো নারী সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে অভিবাদন গ্রহণ করছেন।’

সে বছরেই এনডিএর দরজা প্রথমবারের মতো নারীদের জন্য খোলা হয়েছিল। ৩০ মে সেই নারীরা স্নাতক হওয়ার পর জেনারেল নরবনে সংবাদমাধ্যমে নিজের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘সেনাবাহিনীতে লিঙ্গের সাম্যতা অর্জনে এটাই প্রথম পদক্ষেপ। এঁরাই একদিন সামনে থেকে বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে আমাদের গর্বিত করবেন।’

পরিবর্তন শুধু সামাজিক ও মানসিক স্তরে নয়, এতকালের বন্ধ দরজা নারীদের জন্য উন্মুক্ত করতে এনডিএকেও অনেক বদলাতে হয়েছে। এযাবৎ নারীবর্জিত শিক্ষাকেন্দ্রে নারীদের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান ও শৌচালয়ের বন্দোবস্ত করতে হয়েছে। বদলাতে হয়েছে নিরাপত্তা প্রটোকল। নতুন নিয়মাবলি ও বিধিমালা তৈরি করতে হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন এক নারী ক্যাডেট–৩০ মে, পুনে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র দ র জন য বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ