রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন (ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ) এলাকায় সাড়ে ১৯ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ঈদের দিন শনিবার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত এ পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বেলা একটার দিকে কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। পরবর্তী ছয় ঘণ্টায় (সন্ধ্যা সাতটা) দক্ষিণ সিটির ৭৫টি ওয়ার্ড এলাকা থেকে মোট ১১ হাজার ৮৬৬ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সংস্থাটির জনসংযোগ বিভাগ।

এদিকে বর্জ্য অপসারণ নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে সাটটার দিকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ। এতে তিনি জানান, সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর সিটির ৫৪টি ওয়ার্ড এলাকা থেকে ৭ হাজার ৮০০ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। ঢাকা উত্তরে এ পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে পাঁচ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে। বেলা দুইটার দিকে ঢাকা উত্তর সিটি এলাকায় বর্জ্য অপসারণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করা হয়েছিল।

এ বছর ঈদুল আজহায় দুই সিটিতে ২০ হাজার টন করে মোট প্রায় ৪০ হাজার টন কোরবানির বর্জ্য অপসারণে প্রস্তুতির কথা জানানো হয়েছে। দক্ষিণ সিটি জানিয়েছিল, তারা কাজ শুরুর ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঈদের দিনের কোরবানির বর্জ্য অপসারণ করবে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্তৃপক্ষ রাতের মধ্যেই কোরবানির সব বর্জ্য অপসারণের ঘোষণা দিয়েছিল।

সন্ধ্যার সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা উত্তর সিটির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘সন্ধ্যা পর্যন্ত যে পরিমাণ কোরবানির বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে, এর প্রায় ৮৫ শতাংশের বেশি অপসারণ করা হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক এলাকায় গরু-খাসি কোরবানি দেওয়া হয়েছে, যা বর্জ্য অপসারণে অনেকটাই চ্যালেঞ্জের মতো। তবে বর্জ্য অপসারণের কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে। তবে এ বছর ঢাকাবাসীর আচরণগত অনেক পরিবর্তন এসেছে। অনেক এলাকায় নিজেরা বর্জ্য সংগ্রহ করে করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাকর্মীদের কাছে দেওয়া হচ্ছে। এভাবে এগিয়ে আসার জন্য ঢাকাবাসীকে ধন্যবাদ জানাই।’
প্রশাসক বলেন, গুরুত্ব দিয়ে পচনশীল কোরবানির বর্জ্য অপসারণের কাজ করা হয়েছে। আজ রোববার রাস্তাগুলো জীবাণুনাশক ছিটিয়ে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলা হবে; যাতে ঈদে নগরবাসীর বেড়ানো স্বাচ্ছন্দ্যের হয়।

মোহাম্মদ এজাজ আরও বলেন, শতভাগ বর্জ্য অপসারণ করা বা পরিষ্কার করার কথা বলা যাবে না। তবে এটা বলা যায় যে রাস্তার কোথাও কোরবানির বর্জ্য পড়ে থাকবে না। এ ছাড়া হাটের বর্জ্য ঈদের দুই দিন পর পরিষ্কারের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। তবে ঈদের দিনই কিছু কিছু হাটের বর্জ্য প্রায় অপসারণ করে শেষ করা হয়ে গেছে।

সর্বশেষ কত পরিমাণ বর্জ্য অপসারণ করা করেছে, এ নিয়ে রাত আটটা পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্তৃপক্ষ। তাদের দেওয়া ১২ ঘণ্টায় বর্জ্য অপসারণের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক রাত একটার মধ্যেই বর্জ্য অপসারণের কাজ শেষ করার কথা। সংস্থাটির জনসংযোগ কর্মকর্তা সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে মুঠোফোনে জানান, তাঁদের হিসাবে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত ১১ হাজার ৮৬৬ টন বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে। রাতে কাজ চলমান রয়েছে।

এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির অনেক এলাকায় ঘুরে দেখেছেন প্রথম আলোর এই প্রতিবেদক। এ সময় রাজধানীর মালিবাগ, মগবাজার, কমলাপুর, আরামবাগ, মতিঝিল, টিকাটুলী, ওয়ারী, গুলিস্তান, বকশীবাজার, আজিমপুর, নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, জিগাতলা, ধানমন্ডি, শংকর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, শ্যামলী, টেকনিক্যাল, মিরপুর পাইকপাড়া, মিরপুর-৬ ও মিরপুর-১১ ঘুরে দেখা হয়।

এ সময় প্রধান ও বড় সড়কগুলোর পাশে কিছু স্থানে কোরবানির বর্জ্য জমে থাকতে দেখা যায়। পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকার অলিগলি রাস্তাতেও বর্জ্য ফেলে রাখতে দেখা গেছে। অনেক জায়গায় বর্জ্য জমে না থাকলেও পশুর রক্ত, পয়োবর্জ্য জমে থাকতে দেখা গেছে। মালিবাগ, ওয়ারী, নিউমার্কেট, মোহাম্মদপুর ও মিরপুর-৬ নম্বর বাজারসংলগ্ন জায়গায় বড় রাস্তার পাশেও কোরবানির বর্জ্য জমে থাকতে দেখা গেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: হ জ র টন ক য় বর জ য পর ম ণ এল ক য় ঈদ র দ

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

ভারত চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “তারা (ভারত) ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।” 

বুধবার (৩০ জুলাই)  ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, চুক্তিতে পৌঁছালে ব্যর্থ হলে ভারত কি উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।”

ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা বর্ধিত শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।

আরো পড়ুন:

পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প

নিউ ইয়র্কে গুলিতে নিহত রতনের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া 

ভারতীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তারা গত কয়েক মাস ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসি-কে বলেন, “ভারত তাদের বাজারের কিছু অংশ খুলে দিতে চাচ্ছে, আমরা আলোচনায় আগ্রহী। তবে কতটা অগ্রসর হতে তারা প্রস্তুত- সেটি আরো আলোচনা দরকার।’

ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন। তার অভিযোগ, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু, কিন্তু বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভারত মার্কিন পণ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে।

ট্রাম্প বলেন, “এখন আমি দায়িত্বে আছি, তাই ভারত তা করতে পারবে না।” তিনি ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ ও বাণিজ্য সম্পর্কের ‘বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা পরে স্থগিত করা হয়। তবে নতুন করে তিনি আবারো কড়া অবস্থান নিচ্ছেন।

উভয় পক্ষই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, কর্মকর্তারা আলোচনাকে কখনো ‘ইতিবাচক’, আবার কখনোবা ‘পরিমিত’ বলে বলে মনে করছেন।

মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার স্বীকার করেছেন যে- যদিও তিনি আগে বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ‘আসন্ন’, কিন্তু “এটি বোঝা উচিত যে, দিল্লির বাণিজ্য নীতি ‘অনেক দিন ধরেই সুরক্ষাবাদী’ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।”

গ্রিয়ার জানান, ট্রাম্প এমন চুক্তি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যান্য দেশের বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্মুক্ত করবে।

উভয় দেশের জন্যই কৃষি ও দুগ্ধ খাত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ভারত দুগ্ধ ও কৃষিখাতে বড় পরিসরে বাজার উন্মুক্ত করতে অনাগ্রহী। আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মোদি সরকার সংবেদনশীল কৃষি খাত রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এই খাতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয়ের জীবিকা জড়িত।

গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সিএনবিসিকে বলেন, কৃষিক্ষেত্র ভারতের জন্য সংবেদনশীল এবং সরকার কৃষকদের স্বার্থ ‘ভালোভাবে সুরক্ষিত’ নিশ্চিত করবে।

গোয়েল আরো বলেন, ভারত শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী।

যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এবং মোদি এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

ভারত ইতিমধ্যেই বোর্বন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের সঙ্গে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি চালিয়ে যাচ্ছে, যা ট্রাম্প কমাতে আগ্রহী।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ