যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ধনকুবের ইলন মাস্কের তীব্র বিবাদের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট মুছে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) ইলন মাস্কের দেওয়া একটি আলোচিত পোস্টও রয়েছে।

ওই পোস্টে মাস্ক দাবি করেছেন, প্রয়াত ধনকুবের ও যৌন অপরাধী জেফরি এপস্টেইন-সংশ্লিষ্ট নথিতে ট্রাম্পের নাম রয়েছে। তাঁর ভাষ্য অনুযায়ী, এ কারণেই এসব নথি এখনো পুরোপুরি প্রকাশ করা হয়নি। তবে তিনি এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ উপস্থাপন করেননি।

বৃহস্পতিবার নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন মাস্ক। কিন্তু শনিবার ভোর থেকে মাস্কের এপস্টেইন-সম্পর্কিত পোস্টটি আর দেখা যাচ্ছে না। এক্স ব্যবহারকারীরা পোস্টটির জায়গায় দেখতে পান, ‘দুঃখিত, এই পোস্টটি মুছে ফেলা হয়েছে।’

এটাই মাস্কের মুছে ফেলা একমাত্র পোস্ট নয়। ওই দিনই আরেকটি উসকানিমূলক পোস্টে তিনি ‘হ্যাঁ’ লিখে সমর্থন জানিয়েছিলেন। সেখানে বলা হয়েছিল, ‘ট্রাম্প অভিশংসিত হওয়া উচিত’ এবং ‘ভ্যান্সকে (ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স) তাঁর জায়গায় আসা উচিত’। তবে সে পোস্টটিও এখন আর এক্স-এ দেখা যাচ্ছে না।

এসব পোস্ট মুছে ফেলার ঘটনাকে অনেকে ট্রাম্প ও মাস্কের মধ্যে চলমান বিরোধ কিছুটা কমে আসার ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

মাস্কের পোস্টগুলো এমন সময় দেওয়া হয়েছিল, যখন ট্রাম্পও কটাক্ষ করেছেন এবং মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের সঙ্গে যুক্ত সরকারি অর্থায়ন ও চুক্তি বাতিল করে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।

ট্রাম্প ও ইলন মাস্কের এই বিরোধের সূচনা হয় ট্রাম্পের ‘বিগ, বিউটিফুল বিল’ নিয়ে মাস্ক যখন ক্ষোভ উগরে দেন। বর্তমানে বিলটি সিনেটের বিবেচনায় রয়েছে। টেসলার প্রধান নির্বাহী এই বিলকে ‘জঘন্য’ হিসেবে অভিহিত করেন। নিজের কোটি অনুসারীকে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আপনার সিনেটরকে ফোন করুন, কংগ্রেসম্যানকে ফোন করুন; এই বিল আটকে দিন।’

আরও পড়ুনমার্কিন ধনকুবের এপস্টেইন: আত্মহত্যা না খুন?১১ আগস্ট ২০১৯

শুক্রবার রাতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তিনি মাস্কের সঙ্গে কথা বলবেন কি না, যিনি কিছুদিন আগেও তাঁর প্রশাসনের ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট ইফিসিয়েন্সি’র (ডিওজিই) নেতৃত্বে ছিলেন।

এয়ার ফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেন, ‘না, আমার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই; আমি এ নিয়ে ভাবিও না। আমি আসলে এসবে আগ্রহী নই। আমি দেশের কথা ভাবছি, সমস্যা সমাধানের কথা ভাবছি।’

২০১৯ সালে যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগে জেফরি এপস্টেইন গ্রেপ্তার হওয়ার পর ওভাল অফিসে ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, ‘তাঁর (এপস্টেইনের) সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। গত ১৫ বছরে আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলিনি। আমি তাঁর ভক্ত ছিলাম না, এটুকু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি।’

আরও পড়ুনএপস্টেইনের যৌন কেলেঙ্কারি: নথিতে এবার হিলারি ক্লিনটনের নাম০৭ জানুয়ারি ২০২৪.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লস অ্যাঞ্জেলেসে মুখোমুখি অবস্থানে বিক্ষোভকারী ও ন্যাশনাল গার্ড সদস্য

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ও পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। তারা ন্যাশনাল গার্ড সদস্য ও পুলিশের বিপরীতে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন সাইনবোর্ড তুলে ধরেছেন। কোথাও কোথাও বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা সব জায়গায় সেনা মোতায়েন করবো।...দেশ ও নাগরিকদের জন্য কোনো হুমকি দেখলে আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব।’

ক্যাম্প ডেভিডে যাওয়ার আগে লস অ্যাঞ্জেলেসে সংঘর্ষের পর সেখানে সেনা পাঠানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এসব কথা বলেন।

আরও পড়ুনবিক্ষোভে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী, ডেমোক্র্যাটদের ক্ষোভ৪ ঘণ্টা আগে

টানা দুই দিন বিক্ষোভ ও সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লস অ্যাঞ্জেলেসে ন্যাশনাল গার্ডের দুই হাজার সদস্য মোতায়েনের ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তবে এ সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের ডেমোক্র্যাট দলীয় গভর্নর গ্যাভিন নিউসাম।

লস অ্যাঞ্জেলেসে শনিবার দ্বিতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ ও সংঘর্ষ হয়। বিশেষ করে লাতিন-অধ্যুষিত একটি ডিস্ট্রিক্টে অভিযানে গেলে স্থানীয় লোকজন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্টের (আইসিই) সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। সেখানকার প্যারামাউন্ট ডিস্ট্রিক্টে বিক্ষুব্ধ মানুষদের সরাতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়া হয়, লাঠিপেটা করা হয়।

আইসিইর অভিযানে এক সপ্তাহে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ১১৮ জন অনিবন্ধিত অভিবাসীকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৪ জন আটক হয়েছেন গত শুক্রবার। ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম এ অভিযানকে ‘নিষ্ঠুর’ বলে নিন্দা জানান।

আরও পড়ুনঅভিবাসীদের আটকের প্রতিবাদে উত্তাল লস অ্যাঞ্জেলেস, ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন ট্রাম্পের১৬ ঘণ্টা আগে

এ ঘটনায় হোয়াইট হাউস থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এসব অভিযান যুক্তরাষ্ট্রে ‘অবৈধ অপরাধীদের’ অনুপ্রবেশ বন্ধ ও তাঁদের প্রতিহত করার জন্য অপরিহার্য। এই সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে ক্যালিফোর্নিয়ার ‘ব্যর্থ’ ডেমোক্র্যাট নেতারা তাঁদের নাগরিকদের সুরক্ষার দায়িত্ব পুরোপুরি ছেড়ে দিয়েছেন।

এমন দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে দেওয়া অরাজক পরিস্থিতিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দুই হাজার ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েনের আদেশে সই করেছেন বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

অভিযান চলাকালে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করায় কয়েকজনকে আটকের কথা জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার (এফবিআই) উপপরিচালক ডন বনগিনো। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স পোস্টে বিক্ষোভকারীদের সতর্ক করে তিনি লেখেন, ‘আপনি অরাজকতা করলে আমরা আটক করব। আইনশৃঙ্খলা বজায় থাকবে।’

আটক হওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা ডেভিড হুয়ের্তা রয়েছেন। তাঁকে শুক্রবার আটক করা হয়। হুয়ের্তা সার্ভিস এমপ্লয়িজ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়নের (এসইআইইউ) ক্যালিফোর্নিয়া শাখার সভাপতি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ