সকাল, বিকেল কিংবা রাত নয়, ভাটা হলেই জাল হাতে নদীতে নামেন। নদীর এ মাথা থেকে ও মাথা জাল টানেন। কোনো ঝুঁকিই তাঁর কাছে ঝুঁকি মনে হয় না। বড় আপন মনে হয় সুন্দরবনের এই মামুদো নদীকে। এই নদীতে যে তাঁর জীবন বাঁধা। স্বামী করিম গাজী বাঘের পেটে যাওয়ার পর এ নদীই তাঁকে দিয়েছে দিশা। সেখানে জাল টেনে চিংড়ি রেণু ধরে প্রায় ২২ বছর চলছে জুলেখা বিবির (৫২) বেঁচে থাকার নিরন্তর লড়াই।

জুলেখা বিবির বসবাস সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার সুন্দরবনের একেবারে পেটের মধ্যে গোলাখালী গ্রামে। হঠাৎ করে দেখলে মনে হবে এ তো গ্রাম নয়, সুন্দরবন। তিন দিক দিয়ে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রেখেছে সুন্দরবন, একদিকে ধনচিখালী নদী। এখানে ৭৮টি পরিবারের পাঁচ শতাধিক মানুষের বসবাস। আধুনিক কোনো সুযোগ–সুবিধা এখানকার মানুষকে স্পর্শ করেনি। সবার একমাত্র বেঁচে থাকার অবলম্বন সুন্দরবন আর সুন্দরবন–সংলগ্ন নদীগুলো।

সাতক্ষীরা শহর থেকে গোলখালী গ্রাম প্রায় ১০০ কিলোমিটার। সম্প্রতি ভাঙচোরা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হয় জুলেখা বিবির সঙ্গে। সকাল তখন সাড়ে ১০টা। গোলাখালী গ্রামের মানুষ নদীতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। জুলেখা বিবিও প্রস্তুতি নিচ্ছেন নদীতে নামার।

জুলেখা বলে চলেন তাঁর জীবনের গল্প, ‘তখন আমার বয়স ২৯ কিংবা ৩০ হবে। তিন মেয়ে ও এক ছ্যালের মা আমি। কুলে সাবর ছোট সাবাল (ছেলে) মোস্তাফা কামাল। বয়স তাঁর বছর পেরুয়ে সবে। একদিন সুকালে ওর বাপ করিম গাজী ও একই এলাকার নওসাদ সরদার, গণি সরদার, ইউসুফ মোল্যাসহ পাঁচ-ছয় জন সুন্দরবনে গিইলো মাছ মারতি। পরের দিন ২০০১ সালের ২৭ মে খবর এল আমার স্বামীকে বাঘে খাইছে। এক দিন পরে দুপুরে ওর বাপের লাশ এল। চিনতে পারিনি ক্ষতবিক্ষত দেহ। কবর দিলাম এই গোলাখালী গেরামে।’

স্বামীকে হারানোর পর কয়েক দিন নির্বাক হয়ে গিয়েছিলেন চার সন্তানের মা জুলেখা। কীভাবে সংসার চলবে, তা নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে এক বছরের মোস্তফাকে বাড়িতে রেখে নদীতে নামেন রেণু ধরতে।

গোলাখালী গ্রামে পাঁচ কাঠা জমি কিনে মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন জুলেখা বিবি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন দরবন

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী

অবৈধভাবে ভারতীয় জলসীমায় প্রবেশের অভিযোগে ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ।

বিএসএফ সূত্রে জানানো হয়েছে, সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের উত্তাল নদীতে দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে তাদের আটক করা হয়।  ধৃত মৎসজীবীরা বাংলাদেশের বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলার পুরালিয়া গ্রামের বাসিন্দা। মাছ ধরার ট্রলার ও জালসহ তাদেরকে আটক করা হয়। 

আরো পড়ুন:

কলকাতায় সম্মিলিত সেনা সম্মেলন উদ্বোধন নরেন্দ্র মোদির

অবৈধ অভিবাসীদের প্রতি নরম হওয়ার দিন শেষ: ট্রাম্প

বিএসএফ জানায়, রবিবার সীমান্তের সুন্দরবন অংশে রুটিন টহল দেয়ার সময় গোসাবা রেঞ্জের বাঘমারি জঙ্গল এলাকায় বাংলাদেশি অবৈধ ট্রলারের উপস্থিতি নজরে আসে বিএসএফ জওয়ানদের। বিএসএফ জওয়ানদের পেট্রোল বোট ট্রলারটির কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ট্রলারটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। দ্রুততার সঙ্গে ট্রলারের পিছু ধাওয়া করা হয়। দীর্ঘক্ষণ ধাওয়া করে পরবর্তীতে পাকড়াও করা হয় বাংলাদেশি ট্রলারটিকে। অবৈধ অনুপ্রবেশ এর অভিযোগে আটক করা হয় এতে থাকা ১৯ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে। বাজেয়াপ্ত করা হয় ট্রলারটি।

বিএসএফ আরো জানায়, আটকের পর দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগের বিপরীতে কোনো যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখাতে পারেনি। ফলে জিজ্ঞাসাবাদের পরে তাদের স্থানীয় সুন্দরবন কোস্টাল থানার পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আজ সোমবার তাদের আলিপুর আদালতে তোলা হবে।

ঢাকা/সুচরিতা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘ছুটে গিয়ে দেখি, একটি হরিণ ঝুলছে শিকারির ফাঁদে’
  • সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের বিএসএফের হাতে আটক ১৯ বাংলাদেশি মৎস্যজীবী