ঈদের তৃতীয় দিনেও ফাঁকা রাজধানীর সড়ক
Published: 9th, June 2025 GMT
এবার ঈদ উপলক্ষে ছুটি ১০ দিন হওয়ায় ঢাকা ছাড়া মানুষের সংখ্যা অন্য সময়ের তুলনায় বেশি। যার প্রভাব পড়ছে রাজধানীতেও। ঈদুল আজহার দুই দিন পেরিয়ে গেলেও তৃতীয় দিনে রাজধানীর সড়কগুলো এখনও অনেকটাই ফাঁকা।
সোমবার (৯ জুন) সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন ব্যস্ততম সড়ক ঘুরে দেখা যায়, ঈদের ছুটির রেশ ধরে অধিকাংশ মানুষ এখনও ঢাকার বাইরে অবস্থান করায় চিরচেনা যানজটের নগরী ঢাকা পরিণত হয়েছে এক শান্ত, নিরিবিলি শহরে। কয়েকজন পরিবহন চালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ফাঁকা সড়কে গাড়ি চালাতে পেরে তারা অনেকটাই স্বস্তিতে আছেন। তবে যাত্রী স্বল্পতার কারণে তাদের আয় কমে গেছে।
রাজধানীর অলিগলিতে রিকশাচালকদের অবস্থাও প্রায় একইরকম। যাত্রী না থাকায় রিকশাচালকদের অনেকেই অলস সময় পার করছেন। ফাঁকা সড়কের কারণে সাধারণ যাত্রী ও পথচারীরা স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারছেন।
আরো পড়ুন:
‘ছুটির দিন যেন অন্যরকম ঈদ’
ডিএনসিসি: ১৩১৭৪ মেট্রিক টন বর্জ্য অপসারণ
সোহেল আহমেদ নামের এক যুবক বলেন, “প্রতি বছর ঈদের সময় ঢাকার ফাঁকা রাস্তা দেখে মনটা জুড়িয়ে যায়। তাই ঈদের ছুটিতে বন্ধু ও পরিবার নিয়ে গাড়িতে ঘুরে বেড়াই। উত্তরা থেকে শাহবাগ মাত্র ২০ মিনিটে পৌঁছাতে পেরেছি। জ্যাম ছাড়া এত দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানো সম্ভব হবে, ভাবিনি।”
রাজধানীর বিভিন্ন মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও ফাঁকা সড়কের কারণে অনেকটাই নির্ভার। তবে তাদের কাজের চাপ কমলেও সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।
এদিকে ঈদুল আজহার তৃতীয় দিনেও স্বল্পসংখ্যক মানুষকে ঢাকা ছাড়তে দেখা গেছে। রফিকুল ইসলাম নামের বরিশালগামী এক যাত্রী বলেন, “বিভিন্ন কারণে এবার ঈদ ঢাকায় করতে হয়েছে। কিন্তু বাড়তি ছুটি থাকায় পরিবারের মানুষদের সাথে ঈদ আনন্দ উপভোগ করেত যাচ্ছি। আশা করছি ছুটি শেষ হওয়ার আগেই আবার ঢাকায় ফিরতে পারব।”
ঢাকা/হাসান/সাইফ
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গংগাচড়ায় হিন্দুদের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ, আতঙ্ক কাটেনি এখনও
রংপুরের গংগাচড়ায় ফেসবুকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ ঘিরে সহিংসতার শিকার হিন্দু পরিবারের ঘরবাড়ি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে প্রশাসন। তবে ঘটনার তিন দিন পরেও এলাকায় ফেরেনি অনেক পরিবার। আতঙ্কে এখনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে অনেকে।
গত ২৭ জুলাই রাতে ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে হামলার আগে এলাকায় মাইকিং করে লোকজন জড়ো করা হয়।
পুলিশ, প্রশাসন ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বলছেন, যারা হামলা করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে ছিলেন ‘বহিরাগত’। পাশের নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা থেকে লোকজন এসে হামলা চালিয়ে চলে যায়। হামলার সময় ২২টি ঘরবাড়ি তছনছ ও লুটপাট করা হয়।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এলাকায় অস্থায়ী সেনা ক্যাম্প বসানো হয়েছে, বাড়ানো হয়েছে পুলিশ টহল। প্রশাসন ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ঢেউটিন, কাঠ, চাল-ডাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করেছে এবং ঘরবাড়ি মেরামতের কাজও শুরু হয়েছে। তবু আতঙ্কিত পরিবারগুলো।
ক্ষতিগ্রস্তদের একজন অশ্বিনী চন্দ্র মোহান্ত বলেন, “সেদিনের ঘটনা ছিল এক ভয়াবহ। আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে ধর্ম অবমাননাকারী কিশোরকে থানা হেফাজতে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও ঘরবাড়ি রক্ষা হয়নি। স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি এবং কিছু মুরুব্বি আমাদেরকে অভয় দিয়েছিলেন, কিন্তু রক্ষা হয়নি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা নিজেরাই অভিযুক্ত কিশোরকে থানায় সোপর্দ করেছি। তারপরও মিছিল নিয়ে এসে দুই দফায় আমাদের ২০ থেকে ২৫টি ঘরবাড়ি তছনছ করে দিয়ে লুটপাট করেছে তারা। এদের মধ্যে অধিকাংশ লোকেই অপরিচিত।”
আরেক ভুক্তভোগী দেবেন্দ্র চন্দ্র বর্মন জানান, “প্রথমে অল্পসংখ্যক কম বয়সী কিছু ছেলে আসে। পরে হাজারো লোকজন এসে আমাদের বাড়িঘরে তাণ্ডব চালায়। অনেকেই এখনো আত্মীয়দের বাড়িতে। আমরা চরম আতঙ্কে আছি।”
রবীন্দ্র চন্দ্রের স্ত্রী রুহিলা রানী বলেন, “ছোট ছেলেটা যদি ভুল করে থাকে, আমরা তাকে থানায় দিয়েছি। কিন্তু তারপরও এমন ধ্বংসযজ্ঞ কেন? আমাদের গরু, সোনা-টাকা সব লুটে নিয়েছে। শুধু চাল-ডাল আর টিনে কি জীবন চলে?”
গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম ও সদস্য সচিব আনিসুর রহমান লাকুসহ একটি প্রতিনিধি দল। তারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে শাড়ি ও লুঙ্গি বিতরণ করেন এবং পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
গংগাচড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আল এমরান বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে কিশোরটিকে গ্রেপ্তার করে থানায় আনা হয় এবং পরে আদালতের মাধ্যমে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। এখন পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও পুলিশ প্রশাসন সর্বাত্মক নিরাপত্তায় নিয়োজিত।”
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহামুদ হাসান মৃধা বলেন, “অপরাধীদের ধরতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্তদের দেওয়া হচ্ছে সহায়তা। পুলিশ ও সেনাবাহিনী পুরো এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে।”
উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্যমতে, হামলায় ১৫টি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যাতে ২২টি পরিবার বসবাস করতেন। ঘর মেরামতের পর কিছু পরিবার ফিরলেও অভিযুক্ত কিশোর ও তার চাচার পরিবারের কেউ এখনো ফিরে আসেনি।
ঢাকা/আমিরুল/ইভা