গাজায় মানবিক সহায়তা বন্ধ ‘লজ্জাজনক কেলেঙ্কারি’: ম্যাক্রোঁ
Published: 10th, June 2025 GMT
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ গাজা উপত্যকায় মানবিক সাহায্য প্রবেশে ইসরায়েলি অবরোধকে ‘একটি লজ্জাজনক কেলেঙ্কারি’ ও ‘নিন্দনীয় ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, গাজায় অবিলম্বে মানবিক সহায়তার পথ উন্মুক্ত করতে হবে এবং সেখানে যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে হবে।
সোমবার (৯ জুন) ফ্রান্সের দক্ষিণাঞ্চলীয় নিসে-তে জাতিসংঘ মহাসাগর সম্মেলনের ফাঁকে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ম্যাক্রোঁ গত তিন মাস ধরে গাজায় সাহায্য সরবরাহে বাধা সৃষ্টিকারী চলমান বিধিনিষেধের সমালোচনা করেন।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, “গাজায় এটি একটি কেলেঙ্কারি, যা চলছে। মার্চের শুরু থেকে যা ঘটছে তা লজ্জাজনক।” তিনি যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং মানবিক অবরোধ তুলে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ প্রেমিক হিসেবে কেমন?
চমক রেখে নেশনস লিগের সেমিফাইনালের দল ঘোষণা ফ্রান্সের
তিনি অবরোধ ভেঙে গাজায় সাহায্য পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করার সময় ইসরায়েলের হাতে আটক বেসামরিক জাহাজ ম্যাডলিনের পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলেন।
ত্রাণবাহী জাহাজটিতে ১২ জন আন্তর্জাতিক অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন, যার মধ্যে সুইডিশ জলবায়ুকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এবং ফরাসি-ফিলিস্তিনি ইউরোপীয় সংসদের সদস্য রিমা হাসান এবং অন্যান্য ফরাসি নাগরিকও ছিলেন।
ম্যাক্রোঁ বলেন, “ফ্রান্স জাহাজে থাকা তার নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়ে ‘সতর্ক’ ছিল এবং তাদের কনস্যুলার সুরক্ষা ও নিরাপদ প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে কাজ করেছে।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টতই ইসরায়েলকে বার্তা পৌঁছে দিয়েছি যাতে তাদের কনস্যুলার সুরক্ষা দেওয়া হয় এবং তারা ফ্রান্সের মাটিতে ফিরে যেতে পারেন।”
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জিন-নোয়েল ব্যারোটও একটি বিবৃতি জারি করে বলেছেন, ফ্রান্স শুরু থেকেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো ঘটনা না ঘটে।
ব্যারোট উল্লেখ করেন, “আমরা অ্যাক্টিভিস্টদের প্রকল্প (গাজায় ত্রাণ নিয়ে যাওয়া) সম্পর্কে জানার পরপরই ঝুঁকি সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করেছিলাম। আমরা ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছি।”
তিনি আরো বলেন, “অ্যাক্টিভিস্টদের গ্রেপ্তার করে ইসরায়েল তাদের ভূখণ্ডে নিয়ে যাওয়ার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ইসরায়েলকে অনুরোধ করেছি, যাতে তাদের কনস্যুলার সহায়তা প্রদান করে এবং তাদের দ্রুত প্রত্যাবর্তন সহজতর করে।”
ইসরায়েলি অবরোধ উপেক্ষা করে ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের উদ্যোগে ত্রাণবাহী জাহাজ ম্যাডলিন গত ১ জুন ইতালির সিসিলির কাতানিয়ার সান জিওভানি লি কুটি বন্দর থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল। গতকাল সোমবার (৯ জুন) জাহাজটিতে থাকা ১২ জন অ্যাক্টিভিস্টকে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী।
জাহাজটি গাজার জনগণের জন্য জরুরিভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বহন করছিল, যার মধ্যে ছিল শিশুর ফর্মুলা, আটা, চাল, ডায়াপার, নারীদের স্যানিটারি পণ্য, পানি বিশুদ্ধকরণের কিট, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ক্রাচ এবং শিশুদের প্রস্থেটিক্স।
মার্চের শুরু থেকে ইসরায়েল গাজায় খাবার, পানি, ওষুধসহ সব ধরনের সহায়তা প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। এতে চরম মানবিক সংকটের মুখে পড়েছে গাজার বাসিন্দারা। সাহায্য সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, গাজার ২৪ লাখ বাসিন্দা দুর্ভিক্ষের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল ইসর য় ল অবর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
রবীন্দ্র কাছারি বাড়িতে দর্শনার্থী প্রবেশে অনির্দিষ্টকালের নিষেধ
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারি বাড়িতে অনির্দিষ্টকালের জন্য দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। ঈদের ছুটিতে শাহনেওয়াজ নামের এক প্রবাসী দর্শনার্থীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অপ্রীতিকর ঘটনার পর উদ্ভুত পরিস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বুধবার (১১ জুন) অনিবার্য কারণবশত কাছারি বাড়িতে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষিদ্ধের বিষয়টি কাস্টোডিয়ান হাবিবুর রহমান নিশ্চিত করে জানান, বিষয়টি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সরাসরি তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
এর আগে ঈদের পরের দিন (৮ জুন) শাহনেওয়াজ নামের এক প্রবাসী দর্শনার্থী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কাছারিবাড়ি পরিদর্শনে গেলে পার্কিং ফি নিয়ে গেটের এক কর্মচারীর সঙ্গে তাঁর কথা-কাটা কাটি হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
সেসময় ওই দর্শনার্থীকে অফিসকক্ষে আটকে রেখে শারীরিকভাবে নির্যাতন করা হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনায় গত (১০ জুন) দুপুরে স্থানীয়রা মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করে। বিক্ষুব্ধ জনতা উত্তেজিত হয়ে কাছারিবাড়ির অডিটোরিয়ামে ভাঙচুর চালায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয় এবং শাহজাদপুরের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মুশফিকুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
শাহজাদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম আলী জানান, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছারি বাড়িতে ভাঙচুরর ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রসঙ্গত, ঈদের পরদিন (৮ জুন) বিকালে শাহনেওয়াজ নামের এক দর্শনার্থী স্ত্রী ও ভাতিজাকে নিয়ে কাছারি বাড়ি ঘুরতে আসেন। কাছারি বাড়িতে প্রবেশ মূল্য নিয়ে টিকেট নেন। মোটরসাইকেল পার্কিংয়ের জন্য টাকা নেওয়া হলেও তাকে কোনো টোকেন দেয়নি কর্তৃপক্ষ।
পরিদর্শন শেষে বের হওয়ার সময় মোটরসাইকেলের টিকেট দেখতে চান মেইন গেইটে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মচারী। টিকেট দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় শাহনেওয়াজের সঙ্গে ওই কর্মচারীর কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে কাস্টোডিয়ানসহ কাছারি বাড়ির অন্যান্য কর্মচারী মিলে তাকে অফিসের মধ্যে আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন চালায়।
পরে শাহনেওয়াজের অভিভাবক এবং স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় শাহনেওয়াজ ওই দিন রাতেই শাহজাদপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। দুই দিন পরও ওই ঘটনায় পুলিশ কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় দোষীদের শাস্তির দাবিতে শাহজাদপুরের সর্বস্তরের জনতার ব্যানারে মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা কাছারি বাড়ির অডিটোরিয়ামে হামলা চালিয়ে দরজা, জানালা ও আসবাবপত্র ভাঙচুর করে জনতা।
ঢাকা/রাসেল/এস