সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকার, নৌকা জব্দ
Published: 11th, June 2025 GMT
সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিষ দিয়ে মাছ শিকারের সময় দুইটি নৌকা, জাল ও মাছ জব্দ করেছে বন বিভাগ। ড্রোন ব্যবহার করে অবস্থান শনাক্তের পর বুধবার (১১ জুন) সকালে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাপসী এলাকার বয়ের সিংগার শিসা খাল থেকে এগুলো জব্দ করে তারা।
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম জানান, জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবনে সব ধরনের পারমিট বন্ধ থাকে এবং মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি থাকে। বন বিভাগের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কড়া নজরদারির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে কেউ অবৈধভাবে বনাঞ্চলে প্রবেশ করতে না পারে।
তিনি জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্মার্ট পেট্রোলিং টিম ড্রোনের মাধ্যমে চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাপসী এলাকার বয়ের সিংগার শিসা খালে নৌকা ও কয়েকজনকে অবস্থান করতে দেখে। বুধবার সকালে সেখানে গেলে বনরক্ষীদের উপস্থিতি টের পেয়ে অভিযুক্তরা পালিয়ে যায়। ঘটনাস্থলে থাকা দুটি নৌকায় তল্লাশি চালিয়ে বিষের বোতল, বিষ দিয়ে ধরা মাছ ও জাল উদ্ধার করা হয়।
আরো পড়ুন:
সুন্দরবনে প্রবেশে ৩ মাসের নিষেধাজ্ঞা
বাগেরহাটে জোয়ারে ভেসে আসা হরিণ শাবক অবমুক্ত
রেজাউল করিম বলেন, “সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের এই অভিযান চলমান থাকবে। ড্রোন প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধীদের শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় আনার কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।”
সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতি বছর জুন থেকে আগস্ট পর্যন্ত তিন মাস মাছ আহরণ, মধু সংগ্রহ ও বনজ সম্পদ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে বন বিভাগ।
ঢাকা/শহিদুল/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ন দরবন স ন দরবন
এছাড়াও পড়ুন:
সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে।
যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।
বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে।
রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”
তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।
শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’
ঢাকা/শহিদুল/এস