ভারতের দিল্লিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশের দুই দাবাড়ু—কিংবদন্তি গ্র্যান্ডমাস্টার রানী হামিদ ও রেটেড দাবাড়ু আছিয়া সুলতানা। দিল্লি পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে আছিয়াকে, যিনি রানী হামিদের একমাত্র সঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন এ সফরে।

৬ জুন সন্ধ্যায় রানী হামিদ ও আছিয়া সুলতানা দিল্লিতে পৌঁছান। কিন্তু বিমানবন্দরেই আছিয়াকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। তাদের দাবি, আছিয়া আগেরবার মেডিকেল ভিসায় ভারতে গিয়ে চিকিৎসা না করিয়ে একটি দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন, যা ভিসার নিয়ম লঙ্ঘনের শামিল। ফলে এবার তাঁকে ভারতে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।

সারা রাত দিল্লি বিমানবন্দরে থাকতে হয় আছিয়াকে। পরদিন শনিবার (ঈদুল আজহার দিন) সকালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এতে একা হয়ে যান ৮০ বছর পার করা রানী হামিদ। বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সফরে সাধারণত সঙ্গে কাউকে রাখতে চান রানী। আছিয়া সুলতানাই ছিলেন এ সফরে তাঁর ভরসা। কিন্তু আছিয়াকে ফেরত পাঠানোয় রানীর চলাফেরা ও খেলায় প্রভাব পড়ছে।

রানী হামিদ দিল্লিতে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন, তাঁকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। সারা রাত বিমানবন্দরে বসিয়ে রাখা হয়। ও তো কোনো অপরাধ করেনি। শুধু দাবা খেলেছে!’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো একা সফর করি না। এবার আছিয়া ছিল বলেই সাহস করে এসেছি। এখন আমি একা হয়ে গেছি।’

৩৬ বছর বয়সী আছিয়া সুলতানা বলেন, আগেরবার তিনি সত্যিই মেডিকেল ভিসায় গিয়েছিলেন। চেন্নাইয়ের এক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানোর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে জানা যায় ওই সময় তাঁর চিকিৎসক শহরে ছিলেন না। সে কারণে তিনি কাশ্মীরে একটি আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নেন। সেখান থেকে ফিরে চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ না হওয়ায় তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।

আছিয়া আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো জানতাম না মেডিকেল ভিসায় গিয়ে দাবা খেলা যাবে না। তখন যদি কেউ সতর্ক করত বা নিষেধ করত, তাহলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না। আমন্ত্রণপত্র ছিল। এবার যখন দিল্লি গেলাম, তখন জানলাম আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে।’ তবে দাবা–সংশ্লিষ্টদের অনুমান, আছিয়ার বিরুদ্ধে কেউ হয়তো অভিযোগ করেছে। তার ভিত্তিতেই ইমিগ্রেশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ভারতে এখন ভিসাব্যবস্থা বেশ কড়াকড়ি। রানী ও আছিয়া এবার গিয়েছিলেন ‘সার্ক ভিসা’তে, যা সাধারণত সরকার অনুমোদিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তাঁরা এই ভিসা পান। তবু আগের ভিসা নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে আছিয়ার ভারত–প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়। অনেক বাংলাদেশি দাবাড়ুই আগেও মেডিকেল বা অন্য ভিসায় ভারতে গিয়ে দাবা খেলেছেন, তখন কোনো সমস্যা হয়নি।

তবে আয়োজক দিল্লি দাবা সংস্থা তাঁকে যথেষ্ট সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করেছে জানিয়ে রানী বলেন, ‘এখানে ভালোই আছি। আয়োজকেরা খুব সম্মান দিয়েছে। তবে একা হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’

২১তম দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টারস চেস টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে ৭ জুন। টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি ৫১ লাখ রুপি। আছিয়া ও রানী হামিদ এর আগে একসঙ্গে তিনবার বিদেশে সফর করেন। সর্বশেষ যান শ্রীলঙ্কায়। আছিয়া শুধু দাবাড়ু নন, আন্তর্জাতিক ক্যারম খেলোয়াড়ও।

তিনি বলেন, ‘আমি যাব বলেই হয়তো রানী আপা এই বয়সে সাহস করে দিল্লি গেছেন। বিমানবন্দরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, “একা কীভাবে থাকব?” তাঁর কথা শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।’

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল

বগুড়ার কাহালু উপজেলায় দিনব্যাপী ঐতিহ্যবাহী জামাই মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার পৌর এলাকার পাল্লাপাড়া গ্রাম উন্নয়ন কমিটির আয়োজনে কাহালু সরকারি মডেল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এ আয়োজন করা হয়। মেলার প্রধান আকর্ষণ ছিল ঐতিহ্যবাহী লাঠি ও পাতা খেলা। শিশু-কিশোরদের জন্য ছিল নাগরদোলা ও নৌকাদোল।

মেলা উপলক্ষে নতুন জামাই ও আত্মীয়দের নিমন্ত্রণ জানানো হয় আশপাশের কয়েকটি গ্রামে। বাড়িতে বাড়িতে অতিথি আপ্যায়নের ধুম পড়ে। এলাকার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে বেড়াতে আসেন মেয়েজামাই। তারা একসঙ্গে কেনাকেটা করেন। বাঁশ, মাটি ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনার পসরা সাজিয়ে বসেন বিক্রেতা। ছিল নারীদের প্রসাধনীর দোকানও।

এদিন অতিথি আপ্যায়নে মিষ্টির দোকানগুলোয় ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। হরেক রকমের মিষ্টি তৈরি করে বিক্রি করছেন দোকানি। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল, তালের শাঁসসহ বিভিন্ন ফল বিক্রি করতে দেখা যায়। চটপটি, বারোভাজা ও ফুসকার দোকানেও ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

এ মেলা ঘিরে আশপাশের এলাকায় উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। শিশু-কিশোরদের বাজানো বাঁশির শব্দ ছিল পুরো এলাকায়। মেলায় কথা হয় পাল্লাপাড়া গ্রামের জামাই মোরশেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, এক বছর আগে বিয়ে করেছেন এলাকায়। কয়েকদিন আগে ঈদের দাওয়াতে এসেছিলেন শ্বশুরবাড়ি। এদিন আসেন জামাই মেলা উপলক্ষে।

মেলায় সকালে মাছ ও মাংসের দোকান বসে। বিকেলে ভ্যাপসা গরম উপেক্ষা করেই মানুষের ঢল নামে। শিশু-কিশোরদের হাত ধরে মেলায় ঘুরতে আসেন অভিভাবকসহ স্বজনরা। শিশুদের বায়না মেটাতে হিমশিম খেতে হয় অনেককে।

আয়োজকদের অন্যতম সাবেক কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক বলেন, ৩৫ বছর থেকে এ মেলার আয়োজন করা হচ্ছে। এলাকার জামাইদের দাওয়াত করা হয় বলে এটি ‘জামাই মেলা’ হিসেবে পরিচিত। এ মেলা এখন এলাকার ঐতিহ্য। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ