সঙ্গী দাবাড়ুকে ঢাকায় ফেরত পাঠাল দিল্লি ইমিগ্রেশন, রানী হামিদ এখন একা
Published: 12th, June 2025 GMT
ভারতের দিল্লিতে আয়োজিত আন্তর্জাতিক দাবা প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে অপ্রত্যাশিত ও দুঃখজনক এক ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন বাংলাদেশের দুই দাবাড়ু—কিংবদন্তি গ্র্যান্ডমাস্টার রানী হামিদ ও রেটেড দাবাড়ু আছিয়া সুলতানা। দিল্লি পৌঁছানোর পর বিমানবন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে আছিয়াকে, যিনি রানী হামিদের একমাত্র সঙ্গী হিসেবে গিয়েছিলেন এ সফরে।
৬ জুন সন্ধ্যায় রানী হামিদ ও আছিয়া সুলতানা দিল্লিতে পৌঁছান। কিন্তু বিমানবন্দরেই আছিয়াকে ভারতীয় ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ আটকে দেয়। তাদের দাবি, আছিয়া আগেরবার মেডিকেল ভিসায় ভারতে গিয়ে চিকিৎসা না করিয়ে একটি দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছিলেন, যা ভিসার নিয়ম লঙ্ঘনের শামিল। ফলে এবার তাঁকে ভারতে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি।
সারা রাত দিল্লি বিমানবন্দরে থাকতে হয় আছিয়াকে। পরদিন শনিবার (ঈদুল আজহার দিন) সকালে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এতে একা হয়ে যান ৮০ বছর পার করা রানী হামিদ। বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনায় সফরে সাধারণত সঙ্গে কাউকে রাখতে চান রানী। আছিয়া সুলতানাই ছিলেন এ সফরে তাঁর ভরসা। কিন্তু আছিয়াকে ফেরত পাঠানোয় রানীর চলাফেরা ও খেলায় প্রভাব পড়ছে।
রানী হামিদ দিল্লিতে ভারতের টাইমস অব ইন্ডিয়াকে বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। আমার সঙ্গে যিনি ছিলেন, তাঁকে ঢুকতেই দেওয়া হয়নি। সারা রাত বিমানবন্দরে বসিয়ে রাখা হয়। ও তো কোনো অপরাধ করেনি। শুধু দাবা খেলেছে!’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি কখনো একা সফর করি না। এবার আছিয়া ছিল বলেই সাহস করে এসেছি। এখন আমি একা হয়ে গেছি।’
৩৬ বছর বয়সী আছিয়া সুলতানা বলেন, আগেরবার তিনি সত্যিই মেডিকেল ভিসায় গিয়েছিলেন। চেন্নাইয়ের এক হাসপাতালে চিকিৎসক দেখানোর পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু পরে জানা যায় ওই সময় তাঁর চিকিৎসক শহরে ছিলেন না। সে কারণে তিনি কাশ্মীরে একটি আন্তর্জাতিক দাবা টুর্নামেন্টে অংশ নেন। সেখান থেকে ফিরে চিকিৎসক দেখানোর সুযোগ না হওয়ায় তিনি ঢাকায় ফিরে আসেন।
আছিয়া আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি তো জানতাম না মেডিকেল ভিসায় গিয়ে দাবা খেলা যাবে না। তখন যদি কেউ সতর্ক করত বা নিষেধ করত, তাহলে আজ এই পরিস্থিতি হতো না। আমন্ত্রণপত্র ছিল। এবার যখন দিল্লি গেলাম, তখন জানলাম আমার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ আছে।’ তবে দাবা–সংশ্লিষ্টদের অনুমান, আছিয়ার বিরুদ্ধে কেউ হয়তো অভিযোগ করেছে। তার ভিত্তিতেই ইমিগ্রেশন থেকে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
ভারতে এখন ভিসাব্যবস্থা বেশ কড়াকড়ি। রানী ও আছিয়া এবার গিয়েছিলেন ‘সার্ক ভিসা’তে, যা সাধারণত সরকার অনুমোদিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশে তাঁরা এই ভিসা পান। তবু আগের ভিসা নীতি লঙ্ঘনের অভিযোগে আছিয়ার ভারত–প্রবেশ আটকে দেওয়া হয়। অনেক বাংলাদেশি দাবাড়ুই আগেও মেডিকেল বা অন্য ভিসায় ভারতে গিয়ে দাবা খেলেছেন, তখন কোনো সমস্যা হয়নি।
তবে আয়োজক দিল্লি দাবা সংস্থা তাঁকে যথেষ্ট সম্মান ও সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করেছে জানিয়ে রানী বলেন, ‘এখানে ভালোই আছি। আয়োজকেরা খুব সম্মান দিয়েছে। তবে একা হয়ে যাওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।’
২১তম দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল ওপেন গ্র্যান্ডমাস্টারস চেস টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছে ৭ জুন। টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি ৫১ লাখ রুপি। আছিয়া ও রানী হামিদ এর আগে একসঙ্গে তিনবার বিদেশে সফর করেন। সর্বশেষ যান শ্রীলঙ্কায়। আছিয়া শুধু দাবাড়ু নন, আন্তর্জাতিক ক্যারম খেলোয়াড়ও।
তিনি বলেন, ‘আমি যাব বলেই হয়তো রানী আপা এই বয়সে সাহস করে দিল্লি গেছেন। বিমানবন্দরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলছিলেন, “একা কীভাবে থাকব?” তাঁর কথা শুনে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জকসুতে এআই ব্যবহারে থাকবে শিথিলতা, তবে অপব্যবহার করা যাবে না: নির্বাচন কমিশন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনে এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা) ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে। তবে এর অপব্যবহার করা যাবে না বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য জুলফিকার মাহমুদ।
রোববার উপাচার্যের সভাকক্ষে রাজনৈতিক ও সক্রিয় সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত জকসু ও হল সংসদ নির্বাচন-২০২৫-এর আচরণবিধিবিষয়ক মতবিনিময় সভায় তিনি এ কথা বলেন।
ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদের এক দাবির জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এর আগে ফয়সাল মুরাদ বলেন, ‘নির্বাচনী আচরণবিধির ৭–এর ঘ ধারায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারণায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই ব্যবহার করা যাবে না। আমরা যারা ছোট সংগঠন, আমাদের তহবিল সীমিত। আমরা নির্বাচনী প্রচারের জন্য এআই ব্যবহার করে দু-এক মিনিটের ভিডিও বানিয়ে প্রচার কার্যক্রম চালাতে চাই। আমাদের দাবি, এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন যেন শিথিল নীতি গ্রহণ করে।’
মুরাদ আরও বলেন, বিগত চারটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কিছু ত্রুটি লক্ষ করা গেছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনকে স্বচ্ছ, সুষ্ঠু ও বিতর্কমুক্ত রাখার জন্য যতগুলো ভোটকক্ষ থাকবে, সব কটি সিসিটিভি ফুটেজের আওতায় রাখতে হবে। সবার জন্য সেই সিসিটিভি ফুটেজ উন্মুক্ত রাখতে হবে। ভোট গ্রহণকে স্বচ্ছ রাখার জন্য ভোটকক্ষের ভেতরে জাতীয় গণমাধ্যমকে সরাসরি সম্প্রচার করার অনুমতি দেওয়ার কথা বলেন তিনি।
দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জকসুর নির্বাচন কমিশনার জুলফিকার মাহমুদ বলেন, ‘এআই ব্যবহার করে বিভিন্নজনের চরিত্র হনন করা হয়, অপপ্রচার চালানো হয়। সেদিক থেকে চিন্তা করে এআই ব্যবহার নিষিদ্ধ রেখেছিলাম। তোমাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এআই ব্যবহারে শিথিলতা থাকবে প্রচার–প্রসারে, তবে অপব্যবহার করা যাবে না। আর সরাসরি সম্প্রচারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে আলোচনা করে।’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোস্তফা হাসানের সভাপতিত্বে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য রেজাউল করিম, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ ও হল শিক্ষার্থী সংসদ নির্বাচন ২০২৫–এর নির্বাচন কমিশনার ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়াশীল সংগঠন ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতারা।