Samakal:
2025-11-02@07:52:27 GMT

এটি ভাগাড় নয়, একটি খাল

Published: 12th, June 2025 GMT

এটি ভাগাড় নয়, একটি খাল

প্রথম দৃষ্টিতে এটিকে ভাগাড়ই মনে হবে। অথচ এটি একটি খাল। দখল-দূষণে খালটির এই পরিণতি। দখলের ফলে এর পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। যতটুকু অংশ রক্ষা পেয়েছে, সেখানে আবর্জনার স্তূপ।
খালটি লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার রামগতি বাজারসংলগ্ন। ময়লা-আবর্জনার স্তূপে প্রায় মজে গেছে খালটি। এতে সামান্য বৃষ্টিতেই বাজারে জমে হাঁটুপানি। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা, দুর্ভোগে পড়েন ব্যবসায়ীরা। বছরের পর বছর এভাবে চলতে থাকায় খালের অস্তিত্বই হুমকির মুখে।
সম্প্রতি এ এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, রামগতি বাজারসংলগ্ন খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে দুই শতাধিক দোকান। দখলদারদের কবলে পড়ে খালে পানির প্রবাহ নেই। খালে ফেলা হচ্ছে বাজারের আবর্জনা। সেগুলো পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বাজারের পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা নেই। কিছু অংশে নালা থাকলেও তা মজে গিয়েও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই পানি উপচে পড়ে। বর্ষাজুড়েই জলাবদ্ধ থাকে এলাকাটি। এ সময় মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে। 
ব্যবসায়ীরা জানান, খালের ওপর দোকানপাট হওয়ায় পানি নিষ্কাশনের জায়গা নেই। যে যার মতো দখল নিচ্ছে। ফলে বাড়ছে জলাবদ্ধতা ও ভোগান্তি। এতে ব্যবসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। 
বড়খেরী ইউনিয়নের বাসিন্দা মো.

সাবিদ জানান, বর্ষা মৌসুমে রামগতি বাজারে আসতে ইচ্ছে করে না। কাদামাটির সঙ্গে বাজারের ময়লা-আবর্জনা মিশে চলাচল করাটা কঠিন হয়ে পড়ে।
বাজারের ব্যবসায়ী মতিলাল দাস জানান, বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় বাজার। দখলদারদের কারণে খাল উপচে পানি ঢুকে বাজারসহ আশপাশের দোকানগুলোতে। খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করে সংস্কার করার দাবি তাঁর।
ওষুধ ব্যবসায়ী বিপ্লব মজুমদার জানান, খালটি মজে যাওয়ায় বাজারের পানি নামতে পারে না। বৃষ্টি হলেই তাঁর দোকানে পানি ঢোকে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টির সময় তাদের দোকানের ভেতর দিয়ে পানি গড়িয়ে খালে প্রবেশ করে। 
খাল দখল করে দোকানঘর করা রুহুল আমিন জানান, তাঁর দোকানের কিছু অংশ খালের ওপর পড়েছে। সরকার চাইলে তিনি জায়গা ছেড়ে দেবেন।
রামগতি বাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য গরীব হোসেন রাসেল জানান, কলেজের সামনে থেকে রামগতি দক্ষিণ বাজার পর্যন্ত দুই শতাধিক দোকান প্রায় ১৮ বছর ধরে অবৈধভাবে খাল দখল করে আছে। নজরদারি না থাকায় এতগুলো দোকানের মালিক নিজেদের ইচ্ছেমতো সীমানা বাড়িয়ে নিয়েছেন। 
বড়খেরী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান ও বাজার উন্নয়ন কমিটির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান বলেন, অবৈধ দখলদারদের বারবার সতর্ক করা হয়েছে। উচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনকেও জানানো হয়েছে। উচ্ছেদ অভিযানও হচ্ছে না, খাল সংস্কারও হচ্ছে না। ফলে বাজারে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) ঝান্টু বিকাশ চাকমা বলেন, খালের ওপর দোকান নির্মাণের অনুমতি কাউকে দেওয়া হয়নি। খালের দখল করা ভূমি ইতোমধ্যে সরেজমিন দেখেছেন। দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউএনও সৈয়দ আমজাদ হোসেন বলেন, খাল দখলদারদের চিহ্নিত করা হয়েছে। শিগগির উচ্ছেদ অভিযান হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: খ ল র ওপর ব যবস য় র মগত

এছাড়াও পড়ুন:

ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার বাবুডাইং গ্রামে কোল জনগোষ্ঠীর পাঁচটি পরিবারকে যেভাবে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা খুবই অমানবিক। যে আইনি প্রক্রিয়ায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাদের ঘরবাড়ি একেবারে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে আইনি আদেশ পালন করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানবিকতার প্রতিটি শর্তকে এক্সকাভেটরের আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের জন্য তাদের জমি বিক্রি বা হস্তান্তরের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের অনুমতি নিতে হয়। অভিযোগ ওঠে, সেই প্রক্রিয়া এড়াতে দখলদার চক্র জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। উচ্ছেদের শিকার কোল পরিবারের সদস্যদের দাবি, এই জমির আসল মালিক ছিলেন তাঁদেরই ‘জাত-ভাই’। অথচ তাঁদের হিন্দু সাজিয়ে জাল দলিল তৈরির মাধ্যমে এই জমির মালিকানা হাতিয়ে নিয়েছে ভূমি দখলদার চক্র। এরপর গরিব কোল পরিবারগুলো যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে না পারায় আদালতের একতরফা রায় যায় দখলদার চক্রের পক্ষে। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবারগুলোকে গত সোমবার উচ্ছেদ করা হয়।

কয়েক দশক ধরে বসবাস করে আসা পরিবারগুলো ভিটা ছাড়তে মাত্র দুই ঘণ্টা সময় চেয়েও পায়নি। কিন্তু উচ্ছেদকারী দল, আদালতের প্রতিনিধি ও পুলিশের উপস্থিতিতে সেই মানবিক আবেদন উপেক্ষা করা হয়েছে। ফলে গরু বিক্রির অর্থ, আসবাব, এমনকি রান্না করা খাবারও চাপা পড়েছে মাটির নিচে। পরবর্তী সময়ে ঘরবাড়ি হারিয়ে পরিবারগুলো বাঁশঝাড়ের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

আদালত প্রতিনিধির বক্তব্য অনুযায়ী, বাদীপক্ষ সমঝোতায় রাজি হয়নি। কিন্তু রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে উচ্ছেদকারী দলের নৈতিক দায়িত্ব ছিল কেবল দখল বুঝিয়ে দেওয়া নয়, বরং মানবিক বিপর্যয় এড়ানো। একটি গরিব ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর পরিবারকে অভুক্ত অবস্থায় মশার কামড় খেতে বাঁশঝাড়ের নিচে ফেলে আসা কোনোভাবেই সভ্য সমাজের আইন প্রয়োগ হতে পারে না।

উচ্ছেদের দুই দিন পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে জানান, এই উচ্ছেদ অভিযান সম্পর্কে তাঁকে জানানোই হয়নি। ফলে এখানে আইনি আদেশের স্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক সমন্বয়ের অভাব নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে। কেন স্থানীয় প্রশাসনকে এ উচ্ছেদ অভিযান নিয়ে অন্ধকারে রাখা হলো? উপজেলা প্রশাসন ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে চাল ও অল্প অর্থসহায়তা দিয়েছে। তাদের পুনর্বাসনের আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু সেটি তো সময়সাপেক্ষ। পরিবারগুলো নারী ও শিশুদের নিয়ে এখন কোথায় যাবে?

সমতলের ভিন্ন নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর ভূমি সংরক্ষণের দায়িত্ব রাষ্ট্রের। আইনকে অপব্যবহার করে যে চক্র পরিবারগুলোকে উদ্বাস্তু করে দিল, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ আমলে নিয়ে গোটা বিষয়টি তদন্ত করা হোক। আমরা আশা করব, কোল পরিবারগুলোকে তাদের জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান
  • ভূমি দখলদার চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন