কাউখালীতে নারী সমাবেশ থেকে ফেরার পথে শিক্ষকসহ তিনজনের ওপর হামলার অভিযোগ
Published: 13th, June 2025 GMT
কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৯তম বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত নারী সমাবেশ থেকে ফেরার পথে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ তিনজনের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতছড়ি এলাকায় তাঁদের ওপর হামলা হয়।
হামলার শিকার তিনজন হলেন ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) শিক্ষক অলিউর সান, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন ও লেখক মার্জিয়া প্রভা।
তাঁদের অভিযোগ, নারী সমাবেশে যাওয়ার কারণে কাউখালী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রদল সভাপতি মো.
বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘হিল উইমেনস ফেডারেশন নারী সমাবেশের আয়োজন করেছিল। সেখান থেকে বক্তৃতা দিয়ে আমরা ফিরছিলাম। আমরা তিনজন ছিলাম সিএনজিচালিত অটোরিকশায়। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে একটি মোটরসাইকেল এসে আমাদের অটোরিকশা থামান। তিনজন ছিলেন ওই মোটরসাইকেলে।’
নূজিয়া হাসিন বলেন, ‘মোটরসাইকেল থেকে নেমেই আমাদের ওপর হামলা শুরু করেন দুজন। আমাদের ইউপিডিএফ সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে চড়–থাপ্পড় মারা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, হামলাকারীদের দুজন স্থানীয় কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।’
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রদলের সভাপতি মো. ইমরান হোসেনের মুঠোফোনে কল করলে বন্ধ পাওয়া যায়। সাধারণ সম্পাদক মো. নাঈম হাসান দাবি করেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। ঘটনাটি তিনি আজ শুক্রবার সকালে জেনেছেন। ঘটনাস্থল থেকে তাঁর বাড়ি অনেক দূরে। তিনি সেখানে যাননি। আর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকসহ তিনজনকে তিনি চেনেন না।
এক প্রশ্নের জবাবে নাঈম বলেন, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটায় তিনি উপজেলাতেই ছিলেন। সভাপতি ইমরান হোসেনের ভাই অসুস্থ, হাসপাতালে ভর্তি। ফলে সভাপতিরও ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা নয় বলে দাবি করেন তিনি।
নূজিয়া হাসানের অভিযোগ, ‘হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পর আমরা কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামকে ফোনে ঘটনাটি জানাই। তাঁকে পুলিশ পাঠাতে অনুরোধ করি। ঘটনাটি তাঁর থানা এলাকায় ঘটেছে কি না, সেটি নিয়েও অনেকক্ষণ কথা হয়। পরে ঈদের ছুটির কথা বলে তিনি পুলিশ পাঠাননি। তবে আমাদের থানায় যাওয়ার কথা বলেন। আমরা নিরাপত্তাজনিত কারণে আর থানায় যাইনি। এরপর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আসাদুজ্জামানকে বিস্তারিত জানিয়েছি। তিনি অনলাইনে সাধারণ ডায়েরি ও পরে মামলা করার পরামর্শ দেন।’
এ ঘটনার বিষয়ে জানতে আজ বিকেল পাঁচটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি রাঙামাটি জেলার। তাঁর এলাকা চট্টগ্রাম। তিনি তাঁদের স্থানীয় থানায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
কাউখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম দাবি করেন, তাঁর থানা এলাকায় এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। ফলে তাঁর আইনিভাবে কিছুই করার নেই। অবশ্য একজন (মারজিয়া প্রভা) তাঁকে ফোন করেছিলেন। তিনি যে জায়গার নাম দেন, সেটি থানা থেকে তিন কিলোমিটার দূরে।
এরপর পাশের রাঙ্গুনিয়া থানায় যোগাযোগ করা হলে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কবির মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। এ ছাড়া ঘটনাটি যেখানে ঘটেছে, সেটি তাঁর থানায় পড়েছে কি না, এ বিষয়ে নিশ্চিত নন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯ শিক্ষকসহ ৩৯ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
ময়মনসিংহের ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯ জন শিক্ষক ও ২০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট কমিটি এই নোটিশ দেয়। তাঁদের কাছে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গণ-অভ্যুত্থানপরবর্তী সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটের সদস্যদের সমন্বয়ে তিনটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। প্রশাসনিক অনিয়ম ও দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি, একাডেমিক অনিয়ম ও দুর্নীতিসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি ও বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার তথ্য যাচাই-বাছাইসংক্রান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এসব কমিটির প্রধান হিসেবে আছেন সিন্ডিকেট সদস্য মাহবুবুর রহমান, জাকির হোসেন খান ও অধ্যাপক আকতার হোসেন মজুমদার। এসব কমিটির পক্ষ থেকে ১৯ জন শিক্ষক ও ২০ জন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘সিন্ডিকেট গঠিত তিনটি তদন্ত কমিটি বিভিন্ন জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছে। যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে এবং প্রাথমিকভাবে তথ্য–প্রমাণ মিলেছে, তাঁদের শোকজ করা হয়েছে। তাঁদের জবাব নেওয়ার পর এবং চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমাদের কাছে এলে বিস্তারিত বলা যাবে। এখন তদন্ত কমিটিতেই বিষয়গুলো আছে। তদন্ত কমিটির সুপারিশের আলোকে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
নোটিশ পাওয়া শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম জানতে চাইলে মিজানুর রহমান বলেন, ‘এগুলো আমার হাতে আসেনি। তদন্ত কমিটি সরাসরি সংশ্লিষ্টদের দিয়েছে।’