কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার চেয়ে ফেরার পথে হামলার অভিযোগ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নিন্দা
Published: 13th, June 2025 GMT
হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী কল্পনা চাকমার অপহরণকারীদের বিচার চেয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে ফেরার পথে কয়েকজনের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। এ হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে তারা।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়। বিবৃতিটি গণমাধ্যমে পাঠিয়েছেন কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, চিকিৎসক হারুন-অর-রশীদ, সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও নারীনেত্রী সীমা দত্ত।
বিবৃতিতে বলা হয়, কল্পনা চাকমার অপহরণের ২৯ বছর উপলক্ষে রাঙামাটি জেলা শহরের আশিকা কনভেনশন হলে বৃহস্পতিবার সকালে আলোচনা সভার আয়োজন করে পার্বত্য চট্টগ্রাম মহিলা সমিতি ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন। সেখানে সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মার্জিয়া প্রভা এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউল্যাবের শিক্ষক অলিউর রহমান সান।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির অভিযোগ, আলোচনা শেষে চট্টগ্রামে ফেরার পথে তাঁদের ওপর হামলা করে কতিপয় দুর্বৃত্ত। এ হামলার আগে আলোচনা সভাস্থলে আসা বিভিন্ন এলাকার বাসগুলোর বাঙালি চালকদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ হামলা ও নির্যাতনের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে দায়ী ব্যক্তিদের বিচার দাবি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। বিবৃতিতে বলা হয়, জুলাই অভ্যুত্থানের মূল স্লোগান ছিল একটি বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জবাবদিহিমূলক বাংলাদেশ। কিন্তু রাঙামাটির এ ঘটনা প্রমাণ করে, সেই স্বপ্ন আজও অধরা।
গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি মনে করে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাংবিধানিক অধিকার ও মানবাধিকারের প্রশ্নে রাষ্ট্রের উদাসীনতা ও আক্রমণাত্মক মনোভাব বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের জন্য শহীদদের আত্মদানের সঙ্গে বেইমানি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কিছুদিন আগে ঢাকায় ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের মিছিলে হামলার ঘটনার কোনো কার্যকর বিচার এখনো হয়নি উল্লেখ করে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি বলেছে, প্রতিনিয়ত নানা স্থানে নারীসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর পরিকল্পিত সংঘবদ্ধ আক্রমণ চলছে। এসব থামাতে রাষ্ট্রের উদাসীনতা অগণতান্ত্রিক শক্তির অপতৎপরতা বৃদ্ধিতে শক্তি জোগাচ্ছে।
কল্পনা চাকমার অপহরণসহ সব খুন-গুমের বিচার দাবি করেছে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটি। একই সঙ্গে দেশের সব জনগোষ্ঠীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করতে সবাইকে সচেতনভাবে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
উল্লেখ্য, ১৯৯৬ সালের ১১ জুন মধ্যরাতে রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার লাইল্যাঘোনায় নিজ বাড়ি থেকে অপহৃত হন কল্পনা চাকমা। পরদিন কল্পনার বড় ভাই কালিন্দী কুমার চাকমা বাদী হয়ে বাঘাইছড়ি থানায় অপহরণের মামলা করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, যৌথ বাহিনীর অভিযানে উদ্ধার
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে জহির উদ্দিন মিন্টু (৪৯) নামে সাবেক এক যুবলীগ নেতাকে অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবির ঘটনা ঘটেছে। খবর পেয়ে অপহরণের শিকার ওই নেতাকে উদ্ধার করেছে যৌথ বাহিনী। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে উপজেলার কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেট এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বুধবার রাত ৯টার দিকে উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকা থেকে তাকে অপহরণ করা হয়।
অপহরণের শিকার জহির উপজেলার নলুয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মৃত আবদুল কাদেরের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি বলে জানিয়েছেন বর্তমান ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি শাহাদাত হোসেন লিটন।
যুবলীগ নেতা জহিরের সঙ্গে তার ছোট ভাই মো. সোহেলকেও (৩৫) অপহরণ করা হয়। পরে তাকে বাড়ি থেকে মুক্তিপণের টাকা আনার জন্য ছেড়ে দেয় অপহরণকারীরা।
সোহেল বলেন, ‘আমার ভাই মিন্টু ডলু নদী থেকে বৈধ ইজারাকৃত জায়গা থেকে ড্রেজার মেশিনে বালু উত্তোলন করে ভিটা ও গর্ত ভরাটের কাজ করেন। বুধবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমার ভাইকে মোবাইল ফোনে কল করে এক ব্যক্তি। ওই ব্যক্তি বালু ভরাটের কথা বলে এওচিয়া ইউনিয়নের বইক্যারপাড়া এলাকায় ভাইকে যেতে বলে। সে অনুযায়ী, আমি ও আমার ভাই মোটরসাইকেলে অপহরণকারীদের বলা জায়গায় গেলে তারা আমাদের মারধর শুরু করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘একপর্যায়ে তারা আমাদের কাছ থেকে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। দাবির টাকা দিতে আমার এক প্রতিবেশীর মোবাইল ফোনে কথা বলি। এ টাকা না দিলে তারা আমাদের হত্যার ভয় দেখায়। একপর্যায়ে তারা আমাকে ছেড়ে দিয়ে ভাইকে অজ্ঞাতস্থানে নিয়ে যায়। অপহরণকারী দলের সদস্য সংখ্যা ৭-৮ জন হবে। তারা সবাই অস্ত্রধারী। তবে তাদেরকে আমরা চিনতে পারিনি। পরে মুক্তিপণের টাকা দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশকে ঘটনাটি জানাই। বিষয়টি জানতে পেরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে কাঞ্চনা ইউনিয়নের স্লুইস গেইট এলাকা থেকে আজ ভোরে আমার ভাইকে উদ্ধার করে।’
সাতকানিয়া সেনাবাহিনী ক্যাম্পে দায়িত্বরত ক্যাপ্টেন পারভেজ বলেন, অপহরণকারীরা ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করেছিল। মু্ক্তিপণ দেওয়ার আগেই সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে জহির উদ্দিন মিন্টুকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলমান রয়েছে।
সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. তফিকুল আলম বলেন, অপহরণের বিষয়ে পরিবারের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার পরপরই যৌথ বাহিনী অভিযান শুরু করে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ সাড়ে ৮ ঘণ্টার অভিযান চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।