Prothomalo:
2025-11-02@04:22:20 GMT

বরগুনায় বিশেষভাবে নজর দিন

Published: 14th, June 2025 GMT

ডেঙ্গু প্রতিবছরই হানা দিচ্ছে। গত বছর দেখা গেছে কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ বছর সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশের আরেক প্রান্তে বরিশালের বরগুনায়। কি ডেঙ্গু, কি করোনাভাইরাস—কোনো সংক্রমিত রোগ হানা দেওয়ার আগে যে সতর্কতা থাকে, তা আমলে নেওয়া হয় না বললেই চলে। ফলে এর ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এবার বরগুনার ক্ষেত্রেও সেটি দেখা গেল। আগাম সতর্কতা দেওয়ার পরও সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বৃষ্টি মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বেড়ে গেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে এবার সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে বরিশাল বিভাগে, বিশেষ করে বরগুনা জেলায়। পুরো দেশের মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ২৭ শতাংশ এই একটি জেলাতেই শনাক্ত হয়েছে। ফলে একটি জেলাতেই ডেঙ্গুর এই প্রকোপ অবশ্যই উদ্বেগজনক। 

চলতি বছর এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগেই রোগী ২ হাজার ৩৬৪ জন, যার ১ হাজার ৪৮৫ জনই আবার উপকূলীয় জেলা বরগুনার। জেলাটির চিত্র আরও করুণ, সেখানে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে তিনজন নারী। 

এই পরিস্থিতির পেছনে যে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গাফিলতি আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কীটতত্ত্ববিদেরা জানুয়ারিতে সতর্ক করেন, বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। সব জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন রীতিমতো ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে জেলাটি। বরগুনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর চাপ সামাল দিতেই তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন, অন্য রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রমও কার্যত ব্যাহত হচ্ছে। 

ঢাকা দক্ষিণ সিটিতেও মৃত্যু বেশি—এটাই দেখিয়ে দেয়, সমস্যা কেবল মশা নয়, বরং তা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অবহেলা। মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ ছিল না। সঠিক সময়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস, সচেতনতা কার্যক্রম—এই মৌলিক কাজগুলো অবহেলিত ছিল বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে তৎপরতা থাকা দরকার, তা দেখা যাচ্ছে না। 

এখন বরগুনার দিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বরগুনাসহ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ মেডিকেল টিম, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, ওষুধ এবং আইসোলেশন বেড সরবরাহ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও মশা নিধন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বরগ ন

এছাড়াও পড়ুন:

একাই মাসে শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তৈয়বুর

সুনামগঞ্জে জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে যাঁদের নাম প্রথমেই মনে আসে, তাঁদের একজন তৈয়বুর রহমান (২৬)। তিনি নিজে নিয়মিত রক্ত দেন, রক্ত সংগ্রহ করে দেন এবং মানুষকে স্বেচ্ছায় রক্তদানে উৎসাহিত করেন। রক্তের টানে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতেই তাঁর আনন্দ।

একটি বেসরকারি ব্যাংকে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রক্তদানের এই মানবিক কাজকে নিজের করে নিয়েছেন তিনি। কয়েক বছর আগে একাই মানুষের জন্য রক্ত জোগাড় করতেন। এখন তিনি ব্লাড লিংক সুনামগঞ্জ নামের স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। ফলে কাজের পরিধি বেড়েছে কয়েক গুণ। মাসে একাই শতাধিক ব্যাগ রক্তের ব্যবস্থা করে দেন তিনি। সংগঠনে যুক্ত হওয়ার পর থেকে আড়াই হাজারের বেশি রোগীর জন্য রক্ত জোগাড় করে দিয়েছেন। তাঁর কাছে আছে প্রায় এক হাজার রক্তদাতার ঠিকানা, রক্তের গ্রুপ ও যোগাযোগের তালিকা। সুনামগঞ্জে স্বেচ্ছায় রক্তদাতা সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী ও সংগঠকেরাও তাঁকে সহযোগিতা করেন।

তৈয়বুর রহমানের বাড়ি সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার লক্ষ্মণশ্রী ইউনিয়নের বাহাদুরপুর গ্রামে। তিনি ইসলামী ব্যাংক সুনামগঞ্জ শাখায় নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করেন। রক্তের প্রয়োজনে মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, পরিবহন বা দৌড়ঝাঁপ—সবকিছুর ব্যয়ই মেটান নিজের স্বল্প বেতন থেকে।

রক্তদানের শুরুর স্মৃতি বলতে গিয়ে তৈয়বুর রহমান জানান, ২০২০ সালে তিনি তখন নারায়ণগঞ্জে কর্মরত ছিলেন। এক সহকর্মীর অনুরোধে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর জন্য রক্ত দিতে ছুটে যান চাষাড়া এলাকায়। কিন্তু ওজন কম থাকায় রক্ত দিতে পারেননি। পরে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত এক শিশুর জন্য আবার হাসপাতালে যান এবং এবার রক্ত দিতে সক্ষম হন। প্রথমে কিছুটা ভয় ভয় ছিল তাঁর। পরে এটা কেটে যায়।

সুনামগঞ্জে বদলি হয়ে ফিরে এসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষের জন্য রক্ত সংগ্রহ করতে থাকেন বলে জানান তৈয়বুর রহমান। নিজের এলাকায় রক্তের গ্রুপ পরীক্ষার আয়োজন ও সচেতনতা ক্যাম্পেইনও করেছেন। এখন পর্যন্ত তিনি ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন। অধিকাংশই থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য। ঈদের দিনও রক্ত দিয়েছেন তিনি। জেলা সদর হাসপাতাল ও শহরের সব বেসরকারি ক্লিনিকেই তাঁর নম্বর আছে। কোনো রোগীর জরুরি রক্তের প্রয়োজন হলে সেখান থেকে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তবে তাঁর সবচেয়ে বড় ভূমিকা হলো রোগীর জন্য উপযুক্ত রক্তদাতা খুঁজে বের করা।

তৈয়বুর রহমান বলেন, রক্তদানের পর কিছু পরিবার এখনো তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ রাখে, খবর নেয়। আবার কেউ কেউ রক্ত সংগ্রহে একটু দেরি হলে মনঃক্ষুণ্ন হন। কেউ রক্ত পেয়ে ধন্যবাদ দেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেন না। তবু মন খারাপ করেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে তাহিরপুর উপজেলার এক প্রসূতি বোনকে রক্ত দিয়েছিলাম। এখনো ওই পরিবার যোগাযোগ রাখে। সময়-অসময় খোঁজ নেয়। এটা ভালো লাগে, এটা অন্য রকম রক্তের সম্পর্ক। এই কাজ করে আনন্দ পাই, তৃপ্তি পাই। যত দিন পারি, এই কাজ করে যাব।’

এখন পর্যন্ত ১৭ বার রক্ত দিয়েছেন তৈয়বুর রহমান

সম্পর্কিত নিবন্ধ