ডেঙ্গু প্রতিবছরই হানা দিচ্ছে। গত বছর দেখা গেছে কক্সবাজার জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এ বছর সেই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে দেশের আরেক প্রান্তে বরিশালের বরগুনায়। কি ডেঙ্গু, কি করোনাভাইরাস—কোনো সংক্রমিত রোগ হানা দেওয়ার আগে যে সতর্কতা থাকে, তা আমলে নেওয়া হয় না বললেই চলে। ফলে এর ভুক্তভোগী হতে হয় সাধারণ মানুষকে। এবার বরগুনার ক্ষেত্রেও সেটি দেখা গেল। আগাম সতর্কতা দেওয়ার পরও সেখানে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বৃষ্টি মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সারা দেশে বেড়ে গেছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে এবার সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হচ্ছে বরিশাল বিভাগে, বিশেষ করে বরগুনা জেলায়। পুরো দেশের মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ২৭ শতাংশ এই একটি জেলাতেই শনাক্ত হয়েছে। ফলে একটি জেলাতেই ডেঙ্গুর এই প্রকোপ অবশ্যই উদ্বেগজনক।
চলতি বছর এখন পর্যন্ত সারা দেশে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগেই রোগী ২ হাজার ৩৬৪ জন, যার ১ হাজার ৪৮৫ জনই আবার উপকূলীয় জেলা বরগুনার। জেলাটির চিত্র আরও করুণ, সেখানে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যাঁদের মধ্যে তিনজন নারী।
এই পরিস্থিতির পেছনে যে আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার গাফিলতি আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কীটতত্ত্ববিদেরা জানুয়ারিতে সতর্ক করেন, বরগুনায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে। সব জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এখন রীতিমতো ডেঙ্গুর হটস্পটে পরিণত হয়েছে জেলাটি। বরগুনা সদর হাসপাতালের চিকিৎসকেরা ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর চাপ সামাল দিতেই তাঁরা হিমশিম খাচ্ছেন, অন্য রোগীদের চিকিৎসা কার্যক্রমও কার্যত ব্যাহত হচ্ছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটিতেও মৃত্যু বেশি—এটাই দেখিয়ে দেয়, সমস্যা কেবল মশা নয়, বরং তা নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও অবহেলা। মার্চ থেকে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়লেও তেমন কার্যকর পদক্ষেপ ছিল না। সঠিক সময়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান, মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস, সচেতনতা কার্যক্রম—এই মৌলিক কাজগুলো অবহেলিত ছিল বলেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হলো। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের সব সিটি করপোরেশনে মশা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে যে তৎপরতা থাকা দরকার, তা দেখা যাচ্ছে না।
এখন বরগুনার দিকে আমাদের বিশেষ নজর দিতে হবে। জরুরি ভিত্তিতে বরগুনাসহ ঝুঁকিপূর্ণ জেলাগুলোতে ডেঙ্গু মোকাবিলায় বিশেষ মেডিকেল টিম, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, ওষুধ এবং আইসোলেশন বেড সরবরাহ করতে হবে। স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়েও মশা নিধন এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বরগ ন
এছাড়াও পড়ুন:
রংপুরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে গৃহবধূকে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে গ্রে
রংপুরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে রেজোয়ানা দিল আফরোজ (২২) নামে এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় নিহতের বাবা রেজাউল করিম বাদী হয়ে পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন।
শুক্রবার (১৩ জুন) রাতে ঢাকায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই গৃহবধূর মৃত্যু হয়।
পরিবারের দাবি, প্রায় ৩ বছর আগে রংপুর মহানগরীর ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ থানাধীন সরেয়ারতল এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে সঙ্গে রেজাউল করিমের মেয়ে রেজোয়ানা দিল আফরোজের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় বরপক্ষকে ৫ লাখ টাকার উপহার দেওয়া হয়েছিল।
আরো পড়ুন:
ঈদে বেরোবিতে বহিরাগতদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা, খোলা থাকবে হল
বেরোবিতে তারুণ্যের ভাবনা ও প্রত্যাশা নিয়ে সেমিনার
বিয়ের পর থেকেই রেজোয়ানা নির্যাতনের শিকার হন। গত ৫ জুন যৌতুকের জন্য স্বামীসহ পরিবারের সদস্যরা মারধর ও নির্যাতন করেন। পরে ৮ জুন বিকেল ৩টার দিকে স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও ননদের স্বামী মিলিত হয়ে রেজোয়ানার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন।
দগ্ধ অবস্থায় প্রথমে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তার মৃত্যু হয়।
নিহতের বাবা রেজাউল করিমের অভিযোগ, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় জামাই তার মেয়েকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। শ্বশুর-শাশুড়িরা আগুন নেভাতে না গিয়ে দরজা বন্ধ করে জানিয়ে দেয় তার মেয়ে আত্মহত্যা করেছে।
এ ঘটনায় মেয়ের স্বামী, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ ও ননদের স্বামীকে আসামি করে মামলা করেছেন তিনি।
রেজোয়ানার দেড় বছরের একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। পরিবারের সদস্যরা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের মাহিগঞ্জ থানার ওসি আব্দুল কুদ্দুস জানান, ঘটনার পর নিহত গৃহবধূর স্বামী, ননদ ও ননদের স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি নেওয়ার ক্ষেত্রে দেরি হলেও এখন তদন্ত চলছে।
ঢাকা/আমিরুল/মেহেদী