কুষ্টিয়ায় প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে আসা দুইজন কোভিড পজিটিভ রোগী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন। জ্বর, সর্দি ও কাশি নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেক রোগী।

এদিকে, কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। করোনার বিস্তার নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ ছড়ানোর মধ্যে কুষ্টিয়ার একমাত্র পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রপাতি চুরির খবর জনমনে ক্ষোভ তৈরি করেছে।

সম্প্রতি জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে, ২০ জনের বেশি নারী-পুরুষ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ওয়ার্ডে চিকিৎসাসেবা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি নার্সরা তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার মাহফুজুর রহমান বলেছেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও চিকিৎসাসেবা দিতে সবকিছু প্রস্তুত করা হয়েছে। আইসোলেশন ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে দুইজন করোনা পজিটিভ রোগী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদের সঙ্গে সঙ্গে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তারা তা না করে চলে গেছেন। এভাবে কোভিড ছড়ালে তা মহামারির আকার ধারণ করতে পারে। 

কুষ্টিয়ার জেনারেল হাসপাতালের পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রাংশ চুরির বিষয়টি এক মাস আগে টের পায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল কুষ্টিয়ায় করোনা শনাক্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি একতলা ছোট ভবনে পিসিআর ল্যাবের যাত্রা শুরু হয়। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এক বছর আগে পিসিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট দুইজন কর্মচারীকে ল্যাব দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম বলেছেন, করোনা রোগীর চিকিৎসায় ওয়ার্ডগুলো প্রস্তত রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। 

পিসিআর ল্যাবের যন্ত্রপাতি চুরির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, “পিসিআর ল্যাবের সব যন্ত্রাংশ চুরি হয়ে গেছে। এটা এক দিনে হয়নি। ধারণা করছি, গত চার মাস ধরে চুরি করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক মাস আগে বিষয়টি টের পেয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি রিপোর্টও জমা দিয়েছে।” 

ল্যাব বন্ধের পর দেখভালের জন্য যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তারা দায়িত্ব পালনে চরম অবহেলা করেছেন বলে অভিযোগ এ চিকিৎসকের।

২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে এ পর্যন্ত কুষ্টিয়ায় করোনায় মারা গেছেন ৮৫৫ জন। আক্রান্ত হন ৪ হাজারের মতো।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন অফিসের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের জুলাই মাসে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী মারা যান। ওই মাসে কুষ্টিয়ায় ৩৪২ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়। আগস্টের পর থেকে মৃত্যুর হার কমতে থাকে। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সংকটে হাসপাতালেই অনেকর প্রাণ ঝড়েছে।

ঢাকা/কাঞ্চন/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প স আর ল য ব র য র প স আর ল য ব র

এছাড়াও পড়ুন:

তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ

সম্পূরক বৃত্তি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণাসহ তিন দফা দাবিতে অনশনে বসা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্যে দুজন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে অনশন শুরু করেন তাঁরা।

এর আগে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) পক্ষ থেকে অনশন কর্মসূচি শুরুর কথা জানানো হয়।

তিন দফা দাবির অন্যটি হলো ক্যাফেটেরিয়ায় ভর্তুকি প্রদান ও স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করা এবং কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা চালু।

আজ বুধবার দুপুরে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে তিন দফা দাবিতে অনশন চালিয়ে যেতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের অনশনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাঁদের খোঁজখবর নিতে দেখা যায়।

অনশনে বসা পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন উদ্ভিদবিজ্ঞানের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী এ কে এম রাকিব, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল মুরাদ ও ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ফেরদৌস শেখ, ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শাহীন মিয়া এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের অপু মুন্সী।

অনশনকারীদের মধ্যে ফয়সাল মুরাদ ও এ কে এম রাকিব অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তাঁদের পেটে ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অনশনকারী অপু মুন্সী বলেন, পারিবারিক কারণে তাঁকে গ্রামে চলে যেতে হয়েছে। তাই গতকাল রাতে তিনি অবস্থান করতে পারেননি।

আজ অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে অনশনকারীদের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দুপুরে বিক্ষোভ মিছিল করবেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ কারণে শিক্ষার্থীদের ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হতে আহ্বান জানানো হয়েছে।

অনশনে অংশ নেওয়া শাহীন মিয়া বলেন, প্রশাসন আগের মতোই বাহানা করে যাচ্ছে। হচ্ছে, হবে এ বক্তব্য থেকে বের হতে পারেনি প্রশাসন। আর কোনো টালবাহানা তাঁরা শুনবেন না। তাঁদের দাবি অবশ্যই মানতে হবে। তা না হলে প্রশাসনকে দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে।

আরেক অনশনকারী ফয়সাল মুরাদ বলেন, প্রায় ২৪ ঘণ্টা ধরে অনশন চলছে, কিন্তু প্রশাসন এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। ইতিমধ্যে তিনিসহ আরও একজন অনশনকারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

অনশনকারী এ কে এম রাকিব প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অবস্থানসহ বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করেছি, কিন্তু তাতে প্রশাসন কর্ণপাত করেনি। তাই অনশনে যেতে বাধ‍্য হয়েছি। এ ছাড়া আমাদের উপায় ছিল না। এই নখদন্তহীন প্রশাসন হয়তো আমাদের দাবি মেনে নেবে, নয়তো তাদের নিজেদের রাস্তা মাপতে হবে।’

আরও পড়ুনসম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী১৯ ঘণ্টা আগে

যতক্ষণ তিন দফা দাবি আদায় না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত অনশন চলবে জানিয়ে এ কে এম রাকিব আরও বলেন, যতক্ষণ শরীরে শেষ রক্তবিন্দু আছে ততক্ষণ তাঁরা অনশন চালিয়ে যাবেন। ক্লাস-পরীক্ষা শেষ করে অনেকেই এসে সংহতি প্রকাশ করছেন। সকাল থেকে এ সংখ্যা বাড়ছে।

এদিকে গতকাল রাতে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা ভাষাশহীদ রফিক ভবনের নিচে উপস্থিত হন। এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক রেজাউল করিম ডিসেম্বরের মধ্যে জকসু নির্বাচন আয়োজনের এবং জানুয়ারি মাস থেকে সম্পূরক বৃত্তি দেওয়ার আশ্বাস দেন।

তবে সুস্পষ্ট রূপরেখা ছাড়া ও প্রশাসন থেকে লিখিত না পাওয়া পর্যন্ত অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে উপাচার্যকে জানিয়েছেন অনশনকারী শিক্ষার্থীরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • তিন দাবিতে ২৪ ঘণ্টা ধরে ৫ শিক্ষার্থীর অনশন, দুজন অসুস্থ
  • সম্পূরক বৃত্তি ও জকসু নির্বাচনের রূপরেখাসহ তিন দাবিতে অনশনে ৫ শিক্ষার্থী