নাটোরে হত্যার হুমকি দিয়ে বাগানের আম পাড়তে বাধা, জামায়াত কর্মী গ্রেপ্তার
Published: 14th, June 2025 GMT
নাটোরের বড়াইগ্রামে হত্যার হুমকি দিয়ে বাগানের আম পাড়তে বাধা দেওয়ার অভিযোগে আবদুল খালেক (৬৫) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আজ শনিবার সকালে তাঁকে থানা-পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে সেনাবাহিনী। বিকেলে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
গ্রেপ্তার আবদুল খালেকের বাড়ি বড়াইগ্রাম উপজেলার কায়েমকোলায়। তিনি জামায়াতের সক্রিয় কর্মী। গতকাল রাতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে আটক করে সেনাবাহিনী।
পুলিশ ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রাজ্জাক সরকারের কায়েককোলা মৌজার সাতটি দাগে ১৯ বিঘা জমি আছে। সেখানে তিনি যুগ যুগ ধরে আম ও লিচুগাছের বাগান করে ভোগদখল করে আসছেন। গত ৫ আগস্টের পর তাঁর দূর সম্পর্কের স্বজনেরা বাগান জবরদখলের পাঁয়তারা শুরু করেন। গতকাল শুক্রবার সকালে আবদুর রাজ্জাক তাঁর স্ত্রী-মেয়েকে নিয়ে বাগানে আম পাড়তে যান। এ সময় এলাকার আবদুল খালেক, আবদুল মালেক, মো.
ঘটনার পর আবদুর রাজ্জাক বিষয়টি সেনাবাহিনী ও পুলিশকে জানান। সেনাবাহিনী রাতে অভিযান চালিয়ে আবদুল খালেককে আটক করে আজ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। বিকেলে তাঁকে বড়াইগ্রাম আমলি আদালতে হাজির করা হয়।
আজ দুপুরে কায়েমকোলা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাজ্জাকের বাগানে সারি সারি আমগাছ। আমগুলো পরিপক্ব হওয়ায় রং ধরেছে। বাগানে ঘাস কাটতে আসা মরিয়ম বলেন, রাজ্জাকরা আমবাগানটি করেছেন। তবে আট মাস ধরে পলাশরা বাগানটি দখল করার চেষ্টা করছেন।
আবদুর রাজ্জাক সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি থেকে অবসরে এসেছি। আমার ছেলে সরকারি চাকরি করে। ৫ আগস্টের পর হঠাৎ জামায়াতের কর্মী আবদুল মালেকেরা আমার বাগান ও পুকুর দখল করার তৎপরতা শুরু করে। শুক্রবার সকালে ওরা আমার গলায় হাঁসুয়া ধরে আমাকে আম পাড়তে বাধা দেয়। আমি আমার হাতে লাগানো গাছের আম খেতে পারছি না। আমি ন্যায়বিচার চাই।’
অভিযুক্ত আবদুল মালেক বলেন, তিনি জুয়াড়ি ইউনিয়ন জামায়াতের সমাজকল্যাণ সেক্রেটারি। গ্রেপ্তার খালেক জামায়াতের সক্রিয় কর্মী ও তাঁর ভাই। তাঁদের পূর্বপুরুষ পরিজান বিবি, নবীর উদ্দিন ও মোহাম্মদ আলী পত্তন সূত্রে এসব জমি পান। তবে ভুলবশত এসএ, আরএস খতিয়ানে তাঁদের নাম ওঠেনি। তাই তাঁরা আদালতে মামলা করেছেন। মামলা নিষ্পত্তি না হতেই রাজ্জাক আম পাড়তে এলে বাগ্বিতণ্ডা হয়। অথচ মিথ্যা অভিযোগে তাঁর ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বড়াইগ্রাম থানার উপপরিদর্শক আলমগীর হোসেন বলেন, চাঁদাবাজি ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। মামলায় একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত অব্যাহত আছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ র র জ জ ক আবদ ল খ ল ক ত র কর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
ভারত চলতি সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে ব্যর্থ হলে দেশটির ওপর ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ট্রাম্প বলেন, “তারা (ভারত) ২৫ শতাংশ শুল্ক দেবে।”
বুধবার (৩০ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে প্রশ্ন করেন, চুক্তিতে পৌঁছালে ব্যর্থ হলে ভারত কি উচ্চ শুল্কের মুখোমুখি হবে? উত্তরে ট্রাম্প বলেন, “হ্যাঁ, আমার তাই মনে হয়।”
ভারতসহ আরো বেশ কয়েকটি দেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছানোর জন্য ১ আগস্ট পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নতুবা বর্ধিত শুল্কের মুখোমুখি হতে হবে।
আরো পড়ুন:
পুতিনকে এবার ১০ দিনের আল্টিমেটাম দিলেন ট্রাম্প
নিউ ইয়র্কে গুলিতে নিহত রতনের কুলাউড়ার বাড়িতে শোকের ছায়া
ভারতীয় ও আমেরিকান কর্মকর্তারা গত কয়েক মাস ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা করছেন, তবে এখনও কাঙ্ক্ষিত বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদিত হয়নি। সোমবার মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার সিএনবিসি-কে বলেন, “ভারত তাদের বাজারের কিছু অংশ খুলে দিতে চাচ্ছে, আমরা আলোচনায় আগ্রহী। তবে কতটা অগ্রসর হতে তারা প্রস্তুত- সেটি আরো আলোচনা দরকার।’
ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করে আসছেন। তার অভিযোগ, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের ভালো বন্ধু, কিন্তু বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় ভারত মার্কিন পণ্যে সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপ করে।
ট্রাম্প বলেন, “এখন আমি দায়িত্বে আছি, তাই ভারত তা করতে পারবে না।” তিনি ভারতকে ‘শুল্কের রাজা’ ও বাণিজ্য সম্পর্কের ‘বড় অপব্যবহারকারী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ভারতীয় পণ্যে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যা পরে স্থগিত করা হয়। তবে নতুন করে তিনি আবারো কড়া অবস্থান নিচ্ছেন।
উভয় পক্ষই বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছে, কর্মকর্তারা আলোচনাকে কখনো ‘ইতিবাচক’, আবার কখনোবা ‘পরিমিত’ বলে বলে মনে করছেন।
মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি জেমিসন গ্রিয়ার স্বীকার করেছেন যে- যদিও তিনি আগে বলেছিলেন ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি ‘আসন্ন’, কিন্তু “এটি বোঝা উচিত যে, দিল্লির বাণিজ্য নীতি ‘অনেক দিন ধরেই সুরক্ষাবাদী’ এবং তাদের অভ্যন্তরীণ বাজারকে দৃঢ়ভাবে রক্ষা করার’ ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।”
গ্রিয়ার জানান, ট্রাম্প এমন চুক্তি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করছেন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যান্য দেশের বাজারকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্মুক্ত করবে।
উভয় দেশের জন্যই কৃষি ও দুগ্ধ খাত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওয়াশিংটন ভারতের কৃষি খাতে আরো বেশি প্রবেশাধিকারের জন্য চাপ দিচ্ছে। কিন্তু ভারত দুগ্ধ ও কৃষিখাতে বড় পরিসরে বাজার উন্মুক্ত করতে অনাগ্রহী। আমদানির ওপর কঠোর বিধিনিষেধ দিয়ে মোদি সরকার সংবেদনশীল কৃষি খাত রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে, কারণ এই খাতে বিপুলসংখ্যক ভারতীয়ের জীবিকা জড়িত।
গত সপ্তাহে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল সিএনবিসিকে বলেন, কৃষিক্ষেত্র ভারতের জন্য সংবেদনশীল এবং সরকার কৃষকদের স্বার্থ ‘ভালোভাবে সুরক্ষিত’ নিশ্চিত করবে।
গোয়েল আরো বলেন, ভারত শিগগির ওয়াশিংটনের সঙ্গে একটি চুক্তি করার বিষয়ে আশাবাদী।
যুক্তরাষ্ট্র ভারতের বৃহত্তম বাণিজ্য অংশীদার। ২০২৪ সালে দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ১৯০ বিলিয়ন ডলার। ট্রাম্প এবং মোদি এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি করে ৫০০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।
ভারত ইতিমধ্যেই বোর্বন হুইস্কি ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক কমিয়েছে, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখনও ভারতের সঙ্গে ৪৫ বিলিয়ন ডলার বাণিজ্য ঘাটতি চালিয়ে যাচ্ছে, যা ট্রাম্প কমাতে আগ্রহী।
ঢাকা/ফিরোজ