গত কয়েক দশক ধরেই ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিরাজ করছে। ইসরায়েলকে ‘শত্রু রাষ্ট্র' মনে করা ইরান দেশটিকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চায়। পিছিয়ে নেই ইসরায়েলও। ইরানকে এই অঞ্চলে নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কি সবসময়ই এমন বৈরি ছিল? দুই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অবশ্য ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ইরান-ইসরায়েল যখন পরস্পরের বন্ধু
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। যেমন, ১৯৪৮ সালে যখন ইসয়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দেশটিকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ইরান। প্রতিষ্ঠার ওই সময়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে বৈরিতায় টিকে থাকতে ইরানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে ইসরায়েল। একইভাবে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইসরায়েলকে সাথে নিয়ে বৈরিতা মোকাবিলা করতে চায় ইরান।
মজার বিষয় হলো, সেই সময় বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুইদেশের সেসময়ের সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। যেমন ইরানে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো ইসরায়েল। তাছাড়া ইরানের আর্মড ফোর্স গঠনে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসারেও সহায়তা করতো ইসরায়েল। এর বিনিময়ে নতুন জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রটিকে জ্বালানি সহায়তা দেয় ইরান।
শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের বাইরে ইরানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইহুদি বসবাস করতেন। তবে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইহুদিদের একটি বড় অংশ ইরান ত্যাগ করে। বর্তমানে ইরানে বসবাসরত ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি।
সম্পর্কের পরিবর্তন
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে আয়াতউল্লাহ রুহোল্লা খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সঙ্গে আগের সব চুক্তি বাতিল করে ইরান। ক্ষমতায় এসে ‘ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের' জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেন খোমেনি।
এরপর ধীরে ধীরে ইসরায়েলের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে থাকে ইরান। এর লক্ষ্য ছিল আরব রাষ্ট্রগুলোর, কিংবা রাষ্ট্রগুলোর জনগণের সমর্থন আদায় করা। তাছাড়া এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী ছিল ইরান।
১৯৮২ সালে ইসরায়েল যখন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে চলমান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, ইরানের খোমেনি সরকার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থনে ইরানিয়ান রেভোলিউশনারি গার্ড সদস্যদের প্রেরণ করে। এই সমর্থনের মাধ্যমে তৈরি হয় হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সদস্যরা বর্তমানে লেবাননে ইরানের ‘প্রক্সি' হিসেবে পরিচিত।
ইরানের বর্তমান নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি পূর্বসূরীদের মতোই ইসরায়েলবিরোধী। উল্লেখ্য, খামেনি এবং ইরান সরকারের পুরো নেতৃত্ব জার্মানিতে হওয়া হলোকাস্টকে অস্বীকার করে এমন অভিযোগ রয়েছে।
ইরান কি অবস্থান পরিবর্তন করবে?
ইসরায়েলের বিষয়ে ইরান সরকারের অবস্থান যে দেশটির সাধারণ জনগণের সবাই সমর্থন করেন বিষয়টি এমন নয়। ২০২১ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আকবর হাশেমি রাফজানির মেয়ে ফায়েজেহ হাশেমি রাফসানজানি বলেন, ‘ইরানকে অবশ্যই ইসরায়েলের সাথে তাদের সম্পর্ককে পুনর্বিবেচনা করতে হবে, কারণ, এই সম্পর্ক সময়ের সাথে মানানসই নয়।’
এদিকে ২০২২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনীতি বিজ্ঞানী সাদেগ জিবাকালম বলেন,‘এই অবস্থান আন্তর্জাতিক বিশ্বে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।’
অবশ্য ইরানের বর্তমান সরকারের অবস্থানের সমর্থকও কম নয়। বিশ্লেষক আলি ফাথোল্লাহ-নেজাদের ২০২৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইরান সরকারের অনেক সমর্থক এবং এক্সিস অব রেজিসট্যান্সের সদস্যরা ইরান কেন গাজায় ইসরায়েলের হামলা, কিংবা ইরানে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইসরায়েলে পালটা হামলা চালাতে বিলম্ব করছে, তা নিয়ে বিরক্ত।’
বার্লিনভিত্তিক সেন্টার ফর মিডল ইস্ট অ্যান্ড গ্লোবাল অর্ডার থিঙ্কট্যাংকের এই গবেষক আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের মূল রক্ষাকর্তা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা কমে আসার কারণে এবং সরাসরি ইসরায়েলের মুখোমুখি হতে দ্বিধার কারণে ইরানের প্রতি নৈরাশ্য (দেশের ভেতরে) বাড়ছে।’ সূত্র: ডয়েচে ভেলে
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ষ ট রগ ল ইসর য় ল র ন সরক র র অবস থ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ইরান অনড়, ইসরায়েল কঠোর
ইসরায়েল হামলা চালাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমান দিয়ে। পাল্টা হামলায় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে ইরান। এতে উভয় পক্ষে বাড়ছে প্রাণহানি, ক্ষয়ক্ষতি। বিধ্বস্ত হচ্ছে সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। ইরান তেল আবিবে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবনে হামলা চালিয়েছে। ইসরায়েল আবারও ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাকে লক্ষ্যে পরিণত করেছে। এ অবস্থায় দুই দেশের রাজনীতিকরা ছুড়ছেন বাক্যবাণ। তারা সমঝোতা বা শান্তির বাণী না শুনিয়ে দীর্ঘ ও আরেকটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের বার্তা দিচ্ছে। ইরান কিংবা ইসরায়েল– কেউ কারও অবস্থান থেকে একচুল নড়ছে না।
ইরানের সামরিক-পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলের আঘাতের পর গত শুক্রবার রাতভর ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র পাল্টা হামলা চালায় ইরান। পাঁচ দশকের মধ্যে সবচেয়ে বড় ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় মুহুর্মুহু কেঁপে ওঠে ইসরায়েলের প্রধান শহর তেল আবিব। হাজার হাজার মানুষ ভূগর্ভের বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়। নিহত হয় তিনজন। আহতের সংখ্যা ৭০।
ইরানের কয়েকটি প্রদেশে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলও। এর মধ্যে দেশটির বুশের প্রদেশে হামলায় জ্বালানি তেল পরিশোধনাগার ও একটি গ্যাসক্ষেত্রে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায়। পরে এ আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ইরান। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে বলে শঙ্কা রয়েছে।
তেহরানের দাবি, তারা ইসরায়েলের তিনটি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমানসহ ১০টি বিমান ভূপাতিত করেছে। পাশাপাশি দু’জন ইসরায়েলি পাইলটকে আটক করেছে। ইরানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করে, সর্বশেষ গতকাল শনিবার ভূপাতিত করা হয় একটি যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া গত শুক্রবার দুটি ভূপাতিত করা হয়। তিন যুদ্ধবিমানের পাইলটদের মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্য দু’জন ইরানের হেফাজতে আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান এবারই প্রথম কোনো যুদ্ধে অংশ নিল। রাডার ফাঁকি দিতে পারা এসব বিমান ভূপাতিত করা প্রায় অসম্ভব বলেই বর্ণনা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্য নিউইয়র্ক টাইমস জানায়, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ভবনে আঘাত হেনেছে। এতে ভবনটির একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এ নিয়ে ইসরায়েলের গণমাধ্যমে কোনো উল্লেখ নেই।
গতকাল শনিবার দ্বিতীয় দিনে নতুন করে ইরানের কয়েকটি প্রদেশে হামলা চালায় ইসরায়েল। এর মধ্যে রয়েছে– পূর্ব আজারবাইজান, লোরেস্তান, কারমানশাহ। এতে পূর্ব আজারবাইজানের চারটি এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বার্তা সংস্থা ফার্স জানায়, লোরেস্তান প্রদেশের খুররমাবাদে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। একটি ভিডিওতে পূর্ব আজারবাইজানের তাবরিজ শহরে ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। পশ্চিম ইরানের আসাদাবাদে অন্তত দু’জন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। এসব এলাকায় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়েছে।
ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দিয়ে ইসরায়েলের আঘাতের জবাব দেয় ইরান। এ হামলায় তেল আবিবসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এর মধ্যেই উত্তেজনার বারুদে আগুন দিচ্ছেন দুই দেশের রাজনীতিকরা। ইরান ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা হামলা চালিয়ে যাবে। আর ইসরায়েল বলেছে, এভাবে হামলা চালালে (তাদের হামলায়) তেহরান পুড়বে। এ অবস্থায় গাজাকে দ্বিতীয় পর্যায়ে নিয়ে ইরানকে প্রথম যুদ্ধলক্ষ্য ঘোষণা করেছে ইসরায়েল।
শনিবার ভোরে চালানো ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের সাত সেনা আহত হয়। ক্ষেপণাস্ত্রটি আঘাত হানে মধ্য ইসরায়েলে। এর আগে গত শুক্রবার রাতটি ছিল ইসরায়েলের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু তাঁর প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে নিয়ে ভূগর্ভের কেন্দ্রে আশ্রয় নেন। ধুনক থেকে ছোড়া তীরের গুচ্ছের মতো এগোতে থাকে ক্ষেপণাস্ত্র। মুহুর্মুহু বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। বেশ কিছু শূন্যে ঠেকিয়ে দিলেও কয়েকটি আঘাত হানে। ইসরায়েলের বিরোধী দলের নেতা ইয়ার লাপিদ বলেন, রাতটি ছিল ইসরায়েলের জন্য কঠিন।
সিএনএন জানায়, হামলা হয়েছে তেল আবিবের দক্ষিণে রিশোন লেজিওন এলাকায়। সেখানে ইরানের রকেট হামলায় অন্তত একজন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২০ জন। ওই অঞ্চলের জরুরি সেবা বিভাগের উপপরিচালক রামি মুশার বলেন, ‘এটি এক কঠিন ও জটিল পরিস্থিতি।’ ভবনগুলোর ভেতর আর কোনো হতাহত আছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে আমরা এখনও কাজ করে যাচ্ছি। ছবি ও ফুটেজে বিধ্বস্ত ভবন দেখা গেছে।
ইরানের এক কর্মকর্তা ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে তাদের পাল্টা হামলা এখনই থামছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তা ফার্সকে বলেন, শুক্রবার রাতের সীমিত পদক্ষেপে এ সংঘাত শেষ হচ্ছে না। ইরানের হামলা চলতে থাকবে। এ প্রতিক্রিয়া আগ্রাসনকারীদের জন্য অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও পরিতাপের হবে। আর ইরান সরকারের মুখপাত্র ফাতেমাহ মোহাজেরানি বলেছেন, ‘আমাদের জাতীয় গৌরব পুনরায় অর্জন ও জনগণের ন্যায়সংগত অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্য শাস্তিমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি।’
অন্যদিকে গতকাল শনিবার বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ইরানের প্রতিটি স্থাপনায় হামলা চালানো হবে। এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমরা ইরানের প্রধান পারমাণবিক স্থাপনায় কঠোর আঘাত হেনেছি।’ এএফপি জানায়, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানকে নতুন হামলা নিয়ে হুঁশিয়ার করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরান যদি ইসরায়েলে আরও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়, তাহলে পাল্টা হামলা চালিয়ে তেহরানকে পুড়িয়ে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, যদি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি ইসরায়েলের ভূখণ্ড লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে যেতে থাকেন, তাহলে তেহরান জ্বলেপুড়ে যাবে।
হামলা-উত্তেজনার মধ্যে ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে লেবানন, জর্ডান ও সিরিয়া শনিবার থেকে তাদের আকাশসীমা আবার খুলে দিয়েছে।
কোনো ধরনের উস্কানি ছাড়াই গত শুক্রবার ভোরে ইরানের পারমাণবিক, সামরিক স্থাপনা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধানদের লক্ষ্য করে নজিরবিহীন হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে শীর্ষ চার জেনারেল, ছয় পরমাণু বিজ্ঞানীসহ অন্তত ৮০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে ২০ শিশুও রয়েছে। আহত হন ২৩০ জন। রাতেই শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে পাল্টা আঘাত হানে ইরান।
যুক্তরাষ্ট্র-ইরান পারমাণবিক আলোচনা স্থগিত ঘোষণা করেছে মধ্যস্থতাকারী দেশ ওমান। ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর বন্দর আব্বাসে হামলা হয়েছে। ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে ফোনে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানিয়েছেন কাতারের শেখ তামিম। আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) জানিয়েছে, ইরানের ইস্পাহান পারমাণবিক স্থাপনায় হামলায় চারটি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
ইরানে হামলা চলমান বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। দক্ষিণ ইরানে তেল শোধনাগারে ইসরায়েলি ড্রোন হামলার পর আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় পূর্ব আজারবাইজানে ৩০ সামরিক ও একজন রেড ক্রিসেন্ট কর্মী নিহত হয়েছেন। প্রদেশটির ১৯ স্থানে হামলা হয়েছে।
পুতিন ও ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা নিয়ে ৫০ মিনিট ফোনালাপ করেছেন। ক্রেমলিন জানিয়েছে, পুতিন ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা করেছেন। দুই নেতা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনায় ফিরে আসার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেননি। এ সময় ট্রাম্প মন্তব্য করেন, ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ থেমে যাওয়া উচিত।
সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ‘গুরুতর উদ্বেগজনক পরিস্থিতি’ নিয়ে আলোচনা করেছেন। স্টারমার জানিয়েছেন, যুক্তরাজ্য একটি কূটনৈতিক সমাধানে আসতে তার মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে প্রস্তুত।
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ তাঁর ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিকে ফোনে বলেছেন, মস্কো ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বলপ্রয়োগের নিন্দা করে এবং মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করতে প্রস্তুত। ইরানের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ। তিনি ইরানকে পারমাণবিক আলোচনায় ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
শনিবার ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় হামাদান প্রদেশে ইসরায়েলি হামলায় আসাদাবাদ পাবলিক সিকিউরিটি পুলিশের প্রধান মেজর হাবিবুল্লাহ আকবরিয়ান নিহত হয়েছেন।
আমরা সবই জানতাম– বললেন ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ইরানে ইসরায়েলের হামলার আগে তারা জানতেন। রয়টার্সের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি বলেন, ‘আমরা সবই জানতাম। আমি ইরানের অপমান ও মৃত্যু ঠেকাতে চেয়েছি। আমি তাদের রক্ষায় যথেষ্ট চেষ্টা করেছি। কারণ, চুক্তি কাজ করছে– এমনটা আমি দেখতে চাই।’ তিনি বলেন, তারা এখনও চাইলে চুক্তি করতে পারে।
হামলার পর পারমাণবিক আলোচনা অর্থহীন– বলছে ইরান
ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইসমাইল বাকাই বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতাতেই ইসরায়েল ইরানে হামলা চালিয়েছে। তাঁর দাবি, ওয়াশিংটনের সম্মতি না থাকলে এ হামলা কখনোই হতো না। ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার লক্ষ্যে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় তেহরান ও ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা চলছিল। সে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে বাকাই বলেন, ‘অন্য পক্ষ (যুক্তরাষ্ট্র) এমনভাবে আচরণ করেছে, যা আলোচনাকে অর্থহীন করে তুলেছে।’ ইরানের পাল্টা হামলাকে স্বাগত জানিয়েছে ফিলিস্তিনের গাজার সশস্ত্র সংগঠন হামাস।
রাতে পাঁচবার জায়গা বদল করেন মার্কিন দূত
ইসরায়েলে নিযুক্ত মার্কিন দূত মাইক হাকাবি গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত পাঁচবার নিরাপদ জায়গায় স্থানান্তর হন। সিএনএন জানায়, ইসরায়েলে ইরানের পাল্টা ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে তিনি বারবার জায়গা বদল করেন। শনিবার সকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া পোস্টে ইসরায়েলে অবস্থানরত হাকাবি এসব কথা জানান। তিনি লিখেন, ‘ইসরায়েলে এক কঠিন রাত কাটল।’
ইরানকে হুঁশিয়ারি মার্কিন কর্মকর্তার
বিবিসি জানায়, ইরানে হামলার আগে যুক্তরাষ্ট্রকে এ ব্যাপারে জানিয়েছিল ইসরায়েল। তারা যুক্তরাষ্ট্রকে বলেছিল, আত্মরক্ষার্থে এ হামলা অপরিহার্য। যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক সংস্থাবিষয়ক ব্যুরোর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ম্যাকয় পিট জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে এসব কথা বলেছেন। নিরাপত্তা পরিষদে পিট বলেন, দেশটি যদি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক, ঘাঁটি কিংবা অবকাঠামোর ওপর হামলা চালায়, তবে পরিণতি হবে শোচনীয়।
কেউ যেন কারও অস্তিত্ব হুমকিতে না ফেলে– বললেন পোপ লিও
ইরান ও ইসরায়েলের উত্তেজনার মধ্যে শান্তির বার্তা দিয়েছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ লিও। তিনি বলেন, দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে পারমাণবিক হুমকিমুক্ত বিশ্ব গড়তে হবে। কেউ যেন কারও অস্তিত্বের জন্য হুমকি না হয়ে ওঠে। প্রতিটি দেশের কর্তব্য হবে শান্তি ও পুনর্মিলনের পথ অন্বেষণ এবং সমাধান খুঁজে বের করা।
ভূরাজনৈতিকভাবে একাকী ইরান– বলছেন বিশ্লেষক
তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক হামেদ মুসাভি আল বলেন, ইরান তুলনামূলক ভূরাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ইসরায়েলের যুদ্ধযন্ত্র থামাতে পারে না। ইরানের প্রতি কিছু আরব-মুসলিম দেশ, রাশিয়া ও চীনের প্রতীকী সমর্থন আছে। তবে কারও কাছ থেকে খুব বেশি অস্ত্র পাচ্ছে না। অন্যদিকে ইসরায়েলিদের প্রতি মার্কিন সমর্থন রয়েছে, যারা তাদের সবচেয়ে উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করছে। তাদের বার্ষিক ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি সহায়তা দিচ্ছে।