গত কয়েক দশক ধরেই ইরান এবং ইসরায়েলের মধ্যে বৈরি সম্পর্ক বিরাজ করছে। ইসরায়েলকে ‘শত্রু রাষ্ট্র' মনে করা ইরান দেশটিকে মানচিত্র থেকে মুছে দিতে চায়। পিছিয়ে নেই ইসরায়েলও। ইরানকে এই অঞ্চলে নিজেদের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ বলে বিবেচনা করে ইসরায়েল। কিন্তু এই দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কি সবসময়ই এমন বৈরি ছিল? দুই দেশের রাজনৈতিক ইতিহাস অবশ্য ভিন্ন ইঙ্গিত দিচ্ছে।

ইরান-ইসরায়েল যখন পরস্পরের বন্ধু
১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামিক বিপ্লবের আগ পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। যেমন, ১৯৪৮ সালে যখন ইসয়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন দেশটিকে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল ইরান। প্রতিষ্ঠার ওই সময়ে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে বৈরিতায় টিকে থাকতে ইরানকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে ইসরায়েল। একইভাবে আরব রাষ্ট্রগুলোর সাথে ইসরায়েলকে সাথে নিয়ে বৈরিতা মোকাবিলা করতে চায় ইরান।

মজার বিষয় হলো, সেই সময় বর্তমানে প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুইদেশের সেসময়ের সম্পর্ক ছিল বেশ ঘনিষ্ঠ। যেমন ইরানে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করতো ইসরায়েল। তাছাড়া ইরানের আর্মড ফোর্স গঠনে প্রযুক্তিগত জ্ঞানের প্রসারেও সহায়তা করতো ইসরায়েল। এর বিনিময়ে নতুন জন্ম নেওয়া রাষ্ট্রটিকে জ্বালানি সহায়তা দেয় ইরান।

শুধু তাই নয়, ইসরায়েলের বাইরে ইরানে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ইহুদি বসবাস করতেন। তবে ইসলামিক বিপ্লবের পর ইহুদিদের একটি বড় অংশ ইরান ত্যাগ করে। বর্তমানে ইরানে বসবাসরত ইহুদিদের সংখ্যা ২০ হাজারেরও বেশি।  

সম্পর্কের পরিবর্তন
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে আয়াতউল্লাহ রুহোল্লা খোমেনি ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের সঙ্গে আগের সব চুক্তি বাতিল করে ইরান। ক্ষমতায় এসে ‘ফিলিস্তিন ভূখণ্ড দখলের' জন্য ইসরায়েলের তীব্র সমালোচনা করেন খোমেনি।

এরপর ধীরে ধীরে ইসরায়েলের বিষয়ে কঠোর অবস্থানে যেতে থাকে ইরান। এর লক্ষ্য ছিল আরব রাষ্ট্রগুলোর, কিংবা রাষ্ট্রগুলোর জনগণের সমর্থন আদায় করা। তাছাড়া এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে আগ্রহী ছিল ইরান।

১৯৮২ সালে ইসরায়েল যখন লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে চলমান গৃহযুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে, ইরানের খোমেনি সরকার লেবাননের রাজধানী বৈরুতে শিয়া মিলিশিয়াদের সমর্থনে ইরানিয়ান রেভোলিউশনারি গার্ড সদস্যদের প্রেরণ করে। এই সমর্থনের মাধ্যমে তৈরি হয় হিজবুল্লাহ। হিজবুল্লাহ মিলিশিয়ার সদস্যরা বর্তমানে লেবাননে ইরানের ‘প্রক্সি' হিসেবে পরিচিত।

ইরানের বর্তমান নেতা আয়াতোল্লাহ আলি খামেনি পূর্বসূরীদের মতোই ইসরায়েলবিরোধী। উল্লেখ্য, খামেনি এবং ইরান সরকারের পুরো নেতৃত্ব জার্মানিতে হওয়া হলোকাস্টকে অস্বীকার করে এমন অভিযোগ রয়েছে। 

ইরান কি অবস্থান পরিবর্তন করবে?
ইসরায়েলের বিষয়ে ইরান সরকারের অবস্থান যে দেশটির সাধারণ জনগণের সবাই সমর্থন করেন বিষয়টি এমন নয়। ২০২১ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আলি আকবর হাশেমি রাফজানির মেয়ে ফায়েজেহ হাশেমি রাফসানজানি বলেন, ‘ইরানকে অবশ্যই ইসরায়েলের সাথে তাদের সম্পর্ককে পুনর্বিবেচনা করতে হবে, কারণ, এই সম্পর্ক সময়ের সাথে মানানসই নয়।’

এদিকে ২০২২ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রাজনীতি বিজ্ঞানী সাদেগ জিবাকালম বলেন,‘এই অবস্থান আন্তর্জাতিক বিশ্বে ইরানকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলছে।’

অবশ্য ইরানের বর্তমান সরকারের অবস্থানের সমর্থকও কম নয়। বিশ্লেষক আলি ফাথোল্লাহ-নেজাদের ২০২৪ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘ইরান সরকারের অনেক সমর্থক এবং এক্সিস অব রেজিসট্যান্সের সদস্যরা ইরান কেন গাজায় ইসরায়েলের হামলা, কিংবা ইরানে ইসরায়েলের হামলার জবাবে ইসরায়েলে পালটা হামলা চালাতে বিলম্ব করছে, তা নিয়ে বিরক্ত।’

বার্লিনভিত্তিক সেন্টার ফর মিডল ইস্ট অ্যান্ড গ্লোবাল অর্ডার থিঙ্কট্যাংকের এই গবেষক আরও বলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের আন্দোলনের মূল রক্ষাকর্তা হিসেবে বিশ্বাসযোগ্যতা কমে আসার কারণে এবং সরাসরি ইসরায়েলের মুখোমুখি হতে দ্বিধার কারণে ইরানের প্রতি নৈরাশ্য (দেশের ভেতরে) বাড়ছে।’ সূত্র: ডয়েচে ভেলে

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ষ ট রগ ল ইসর য় ল র ন সরক র র অবস থ ন

এছাড়াও পড়ুন:

শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা

বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।  

অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা। 

আরো পড়ুন:

শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?

পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?

বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।  

শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।” 

একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।” 

শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।” 

শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি। 

১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা। 

দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী। 

১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ। 

একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা। 

অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ