ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে যমুনা সেতুর পূর্বপ্রান্তের গোল চত্বর থেকে করটিয়া পর্যন্ত থেমে থেমে যানবাহন চলছে। আজ শনিবার ভোর থেকে কয়েকটি ছোট ছোট সড়ক দুর্ঘটনা ও অতিরিক্ত যানবাহনের চাপের কারণে মহাসড়কে প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকায় ধীরগতিতে যানবাহন চলছে। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। 

এদিকে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের সিরাজগঞ্জের যমুনা সেতুর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১৭ কিলোমিটার যানজট সৃষ্টি হয়েছে। আজ শনিবার ভোর পৌনে ৬টা থেকে বাড়তে থাকে যানবাহনের চাপ। ঝাউল ওভারব্রিজের অদূরে এনডিপি অফিসের সামনে আমবোঝাই ট্রাকসহ কয়েকটি যানবাহন বিকল হলে এ যানজট তৈরি হয়।

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত থেকেই মহাসড়কে যানবাহনের চাপ বাড়তে থাকে। এছাড়া গভীর রাতে যমুনা সেতুর ওপর দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনাকবলতি গাড়ি রেকার দিয়ে সরাতে কিছুটা সময় লাগে। এ সময় হাজার হাজার গাড়ির গতি থেমে যায়। এছাড়াও টোল আদায়ে ধীর গতির কারণে যানবাহনের সারি বেড়ে যায়। সেতুর পূর্বপ্রান্তের গোল চত্বর থেকে করটিয়া পর্যন্ত প্রায় ৩০ থেমে থেমে যানবাহন চলছে। 

এ ব্যাপারে যমুনা সেতু পূর্ব থানার ওসি ফয়েজ আহমেদ জানান, সেতুর ওপর সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। কেউ হতাহত না হলেও সারা রাত সেতু দিয়ে যানবাহন ধীর গতিতে চলাচল করে। সকাল হলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়। আবার এলেঙ্গা, শহর বাইপাস রাবনা ও করটিয়ার করাতিপাড়ায় আজ দুপুর ১২টার দিকে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যানবাহনের স্বাভাবিক গতি আবার থেমে যায়। মহাসড়কে কোথায় যানবাহনের স্বাভাবিক গতি থাকলেও আবার কিছুদূর গিয়েই গতি থেমে যাচ্ছে। তবে উত্তরবঙ্গের দিকে স্বাভাবিক গতিতেই যানবাহন চলছে। 

এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ শরীফ বলেন, অতিরিক্ত যানবাহনের চাপ ও কয়েকটি সড়ক দুর্ঘটনার কারণে যানবাহন ধীরগতিতে ঢাকার দিকে যাচ্ছে। তবে যানজট নেই। যানজট যাতে না হয়; সেজন্য পুলিশ সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট সড়ক দ র ঘটন য নজট

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য, ভালো উদ্যোগ নিলেও বিরোধিতা আসে

লন্ডনে শুক্রবার যে বৈঠক হয়ে গেল, তা দেশের রাজনীতি ও সাধারণ মানুষের জন্য আশাজাগানিয়া। এর জন্য আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান– উভয় নেতাকে অভিনন্দন জানাতে পারি। তারা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছেন। 

বৈঠকটির অন্যতম একটি দিক হলো, বিএনপির সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের দূরত্ব সৃষ্টি করতে একটি মহল যে ক্রমাগত প্ররোচনা ও উস্কানি দিয়েছে, তা দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তাই দেশের জন্য লন্ডন বৈঠক মঙ্গলজনক হয়েছে। 

আলোচনায় ঐকমত্যে পৌঁছানো গেছে, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদিও অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন প্রস্তুতি সাপেক্ষে। তবু সামনে আরও সাত মাস সময় রয়েছে। সরকার যেহেতু এরই মধ্যে ১০ মাস কাজ করেছে, বহু কিছু এগিয়ে গেছে। বাকি সাত মাসে নির্বাচনের অন্য প্রস্তুতিগুলোও শেষ করা সম্ভব। 

সাত মাস কম সময় নয়। জনপ্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে ঢেলে সাজানো, পুলিশ বাহিনীকে পেশাদারিত্বের ভিত্তিতে সাজিয়ে তোলা, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়নসহ নির্বাচনী প্রস্তুতির কাজগুলো এখন জোরেশোরে করা দরকার। এবারের নির্বাচনে আরও একটি বিষয় আলোচনায় এসেছে তা হলো, প্রবাসীদের ভোটাধিকার। তাদেরও ভোটার তালিকা করতে হবে। এসব কাজের পর্যাপ্ত সময় এখনও হাতে আছে।

আমার মনে হয়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যে সন্দেহ-অবিশ্বাস তৈরি হয়েছিল, তা লন্ডন বৈঠকের মাধ্যমে অপসারিত হবে। যারা নানা রকম উস্কানি দিচ্ছিল, যারা দেশের ভালো চায় না, তারা হতাশ হবে।

আরেকটি বিষয় খুব জরুরি তা হলো, সংস্কার ও জুলাই গণহত্যার বিচার। বাকি যে সাত মাস আছে, সে সময় এ দুটি কাজ গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিতে হবে। এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মামলার বিচার অন্তত সম্ভব। সরকার, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং সেনাপ্রধান জুলাই গণহত্যার বিচারের প্রতিশ্রুতি জনগণকে দিয়েছেন। তাই বিচার সম্পন্ন করা গেলে দেশের মানুষের মনোবেদনা দূর হবে।

সংস্কারের কাজ চলছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে। কিছু কিছু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিছু কিছু বিষয়ে হয়নি। জনগণের প্রত্যাশা, সংস্কারের কাজ দ্রুত শেষ করে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হবে। জুলাই গণহত্যার বিচার করা হবে। সরকার, প্রধান উপদেষ্টা, বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই বিচারের প্রশ্নে অনড় ও অটল থাকবেন। জনগণের এসব প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে। 

বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করে জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় ঘোষণা করায় জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) অসন্তুষ্ট হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনও। যদিও বৈঠককে ইতিবাচক উল্লেখ করে স্বাগত জানিয়েছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), এবি পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ১২ দলীয় জোট, বাংলাদেশ এলডিপি, খেলাফত মজলিসসহ কয়েকটি দল। বাংলাদেশের দুর্ভাগ্য হচ্ছে, যখন কোনো ভালো উদ্যোগ নেওয়া হয়, তখনও বিরোধিতা আসে। লন্ডন বৈঠকে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ চূড়ান্ত বা দিনক্ষণ ঠিক করে ফেলা হয়নি। একটা সম্ভাব্য সময় ঠিক করা হয়েছে। যেসব দল এর সমালোচনা করছে, তারা বলুন, এই সময়টা তাদের অপছন্দনীয় কিনা? তারা তাদের বক্তব্য স্পষ্ট করুন। সমালোচনা না করে মূল কথাটা বললেই তো হয় যে, তারা কবে নির্বাচন চান।

লেখক : শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ