বার বার বাড়ির লোকের কাছে একটাই প্রশ্ন করে যাচ্ছে ছোট্ট মেয়েটি, ‘মা কখন আসবে?’ কিন্তু কেউই তার উত্তর দিতে পারছেন না। উত্তর দেবেন কীভাবে! কারণ যার খোঁজ করে চলেছে মেয়েটি, তিনি ‘না ফেরার দেশে’ চলে গিয়েছেন। মেয়েটিকে মা বলে গিয়েছিল, কাজ শেষ হলেই তিনি ফিরে আসবেন। কিন্তু কাজ থেকে তার আর ফেরার উপায় নেই। কারণ বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে তার।

অপর্ণা মহাধিক, তিনি মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। এয়ার ইন্ডিয়ার উড়োজাহাজ (বোয়িং ৭৮৭-৮) এর কেবিন ক্র ছিলেন। বৃহস্পতিবার বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে অপর্ণার। বাড়িতে রয়েছে তার ছোট্ট মেয়ে। মাকে দেখতে না পেয়ে বার বার জিজ্ঞাসা করে চলেছে, মা কখন আসবে। এই উত্তর কারও জানা নেই। মেয়েটিও জানে না যে, তার মা আর বেঁচে নেই। তাকে জানাতেও সাহস পাচ্ছেন না বাড়ির লোকেরা।

অপর্ণার এক আত্মীয় জানান, মাকে ফোন করে চলেছে মেয়েটি। মা কখন ফোন তুলে ‘হ্যালো’ বলবে সেটা শোনার আশায় বার বার তার কথা জিজ্ঞাসা করছে। অপর্ণার স্বামী ইতিমধ্যেই অহমদাবাদে পৌঁছেছেন দেহ শনাক্ত করার জন্য। দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া বেশিরভাগ যাত্রীদের ক্ষেত্রেই তা করা হচ্ছে।

ভারতের আহমেদাবাদ থেকে বৃহস্পতিবার লন্ডনের গ্যাটউইক বিমানবন্দরের উদ্দেশে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই ভেঙে পড়ে। বিমানে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন। বেলা ১টা ৩৮ মিনিটের দিকে বিমানটি উড্ডয়নের পর তা ওপরের দিকে উঠতে ব্যর্থ হয় এবং দ্রুত নিচে নেমে আসে। এরপরই এটি বিস্ফোরিত হয়ে ভয়াবহ আগুনে পরিণত হয়। স্থানীয় কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, এই দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জনের মৃত্যু হয়েছে।

গুজরাটের উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বিধি চৌধুরী রয়টার্সকে বলেন, ‘দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯৪ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কিছু শিক্ষার্থী রয়েছেন, যারা মেডিকেল কলেজের ছাত্রাবাসে ছিলেন।’ সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ম ন ব ধ বস ত ন হত দ র ঘটন য় অপর ণ র

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ