সিলেটে প্রবাসীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত যুবদল নেতাকে বহিষ্কার
Published: 14th, June 2025 GMT
সিলেটের ওসমানীনগরে প্রবাসীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জেলা যুবদলের সদস্য এবং উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আহবাবুল হোসেনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে যুবদলের সহদপ্তর সম্পাদক মিনহাজুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে সিলেট জেলা যুবদলের সদস্য ও ওসমানীনগর উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আহবাবুল হোসেনকে প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবদুল মোনায়েম (মুন্না) ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নুরুল ইসলামের যৌথ স্বাক্ষরে গঠনতন্ত্র মোতাবেক এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বহিষ্কৃত নেতার কোনো অপকর্মের দায়দায়িত্ব সংগঠন নেবে না। পাশাপাশি যুবদলের সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীকে বহিষ্কৃত নেতার সঙ্গে সাংগঠনিক সম্পর্ক না রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের খাদিমপুর যুক্তরাজ্যপ্রবাসী গোলাম রব্বানীর বাড়িতে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় যুবদল নেতা আহবাবুলসহ ২১ জনের নামে শুক্রবার থানায় মামলা করা হয়।
যুবদল নেতা আহবাবুল হোসেনকে বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করে জেলা যুবদলের সভাপতি মোমিনুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, দলীয় নেতা-কর্মীদের সাংগঠনিক শৃঙ্খলা মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। কারও ব্যক্তিগত কর্মকাণ্ডের দায় সংগঠন নেবে না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চা বাগানের ন্যাড়া টিলায় নীল-লেজ সুইচোরাদের কোলাহল
মৌলভীবাজার জেলার রাজনগর উপজেলার ইটা ও করিমপুর চা বাগানের মধ্যখানে লালচে রঙের ন্যাড়া টিলা। মাটি কেটে নেওয়ায় বির্পযস্ত সেই টিলার গা জুড়ে গর্ত করে আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছে নীল-লেজ সুইচোরা পাখিরা।
নানা অঙ্গভঙ্গি প্রদর্শণ করে দিনভর চলে উড়াউড়ি আর বেলা-অবেলাজুড়ে চলে নানা সুরের মনমতানো গান। গ্রীষ্মকালে এ এলাকায় বেড়াতে আসা পাখিদের মধ্যে অন্যতম এই নীল-লেজ সুইচোরা পাখি।
টিলার পাশে দাঁড়িয়ে একটু গভীর দৃষ্টিতে তাকালেই দেখা যায় টিলার গায়ে ছোট ছোট অসংখ্য গর্ত। গর্তগুলোর প্রতিটিই একেকটি বাসা, সুইচোরা পাখির বাসা। কোন কোন বাসায় বাচ্চা রয়েছে। আবার কোন বাসায় বসে ডিম তা দিচ্ছে স্ত্রী সুইচোরা।
বিকেলের পড়ন্ত রোদে টিলার গায়ের উঁচু গাছটির মরা ডালগুলোতে সরু, লম্বা ঠোঁট ও নীল লেজের কয়েকটি সুইচোরাকে বসে থাকতে দেখা গেল। কিছুক্ষণ পরপর তারা উড়ে গিয়ে শূন্য থেকে শৈল্পিক ভঙ্গিমায় পোকা ধরে নিয়ে আবারও গাছের ডালে গিয়ে বসছে। মা পাখিরা পোকা ধরে বাসায় নিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছে।মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত প্রজননের জন্য নিরাপদ ও উপযুক্ত স্থানে বসবাস করে সুইচোরা পাখিরা। এরা আমাদের দেশীয় পাখি হলেও সব সময় একই অঞ্চলে বসবাস করে না এরা। তাই এদের অনেকে পরিযায়ী বলেন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, এরা পরিযায়ী বা আবাসিক পাখি নয়। এরা আমাদের স্থানীয় পাখি।
প্রকৃতি প্রেমি মুরাদ হোসেন বলেন, “এরা এদেশের আবাসিক ‘নীল-লেজ সুইচোরা’। ইংরেজী নাম Blue-tailed Bee-eater. Meropidae নাম এই পরিবারের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Merops Philippinus.”
স্থানীয়রা এদের ‘নীল চড়ুই’ বলে জানেন। তবে সবসময় এদের দেখা মেলে না। কেবল গ্রীষ্মকালেই কোথা থেকে যেন ঝাঁক বেঁধে চলে আসে এরা।
করিমপুর চা বাগানের বাসিন্দা আইয়ুব আলী বলেন, “বাগানের পাশে পরিত্যাক্ত ন্যাড়া টিলার পেটে গর্ত করে গত তিনমাস ধরে পাখিগুলো বসবাস করছে। আগে ফি-বছর তারা আসলেও এখন আর আগেরমতো আসে না। মাঝে মাঝে এদের দেখা মেলে।”
ওই বাগানের বাসিন্দা দিপঙ্কর ঘোষ বলেন, “পাখি তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে বসবাস শুরু করে। কোন বাধা বিপত্তি এলে তারা চলে যায়। ৩/৪ বছর পর এদের দেখা মিলল। এরা এখানে নিরাপদে প্রজনন করতে পারছে। জুন মাসের শেষে তারা আবার চলে যাবে।”
শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টার গাজীপুরের পাখি বিশেষজ্ঞ আল্লামা শিবলী সাদিক বলেন, ‘‘নীল-লেজ সুইচোরা পাখিদের পরিযায়ী বা আবাসিক বলা যাবে না। এরা আমাদের দেশীয় পাখি। প্রজননের সময় তারা নিরাপত্তার স্বার্থে বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থান করে বলে এদের অনেকেই মনে করেন তারা পরিযায়ী বা আবাসিক। মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত তাদের প্রজনন সময়। এরা পাহাড়ি টিলার নরম মাটিতে গর্ত করে বসবাস করে। গর্তের মধ্যেই বাসা তৈরি করে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটায়। পরে বাচ্চাদের নিয়ে অন্য স্থানে চলে যায়।”
প্রাপ্তবয়স্ক এই পাখির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০ সেন্টিমিটার, ওজন ৩৮ থেকে ৫০ গ্রাম। নীল-সবুজ পালক বিশিষ্ট পাখিটির পেছনের অংশ ও লেজ নীল। গলা খয়েরি, বুকের ওপরটা বাদামি, চোখে কাজল টানা এবং পেট আপেলের মতো সবুজ।
চোখ লালচে বাদামি থেকে গাঢ় লাল। কোমর, লেজ ও লেজের নিচের অংশ নীল। লেজের আগায় লম্বা নীল সুই বা পালক রয়েছে।
এদের ঠোঁট সরু, লম্বা ও কালো। নিচের দিকে খানিকটা বাঁকানো। পা ও পায়ের পাতা কালচে বাদামি। অপ্রাপ্তবয়স্ক নীললেজ সুইচোরার দেহের রং অনুজ্জ্বল ও ফ্যাকাশে। স্ত্রী ও পুরুষ একই রকম দেখতে।
এদের আয়ুষ্কাল প্রায় ছয় বছর। মার্চ থেকে জুন এদের প্রজননকাল। এসময় পাহাড়ের গায়ে বা নদী ও খালপাড়ে প্রায় দুই মিটার লম্বা সুড়ঙ্গ খুঁড়ে বাসা বানায় এরা। সেখানে ৫-৬টি ডিম পাড়ে, ডিমের রং সাদা। ২১-২৬ দিনে ডিম ফোটে এবং ২০-২৭ দিন পরে বাচ্চারা উড়তে শেখে।
ঢাকা/আজিজ/এস