বাংলাদেশে বন্য হাতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশে মাত্র ২৬৮টি হাতি টিকে আছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় রয়েছে ৩৫-৪০টি। অথচ গত ১০ বছরে শুধু বাঁশখালীতেই ১৭টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। এখানে আমাদের বন ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। হাতি রক্ষায় বন বিভাগ কার্যকর কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বিষয়টি হতাশাজনক।
হাতি মৃত্যুর কারণগুলো নতুন কিছু নয়। রোগব্যাধিতে মৃত্যু হওয়া ছাড়াও অবৈধ বিদ্যুতের ফাঁদ পাতাসহ নানাভাবে শিকার করা হচ্ছে হাতি। করিডর সংকুচিত হয়ে যাওয়া, খাদ্যের অভাব এবং হাতির আবাসস্থলে জনবসতি গড়ে ওঠায় হাতির মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বন বিভাগ এসব মৃত্যুর পর কেবল মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করেই নিজেদের দায় সারছে। নেই কার্যকর কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, নেই প্রশিক্ষিত জনবল বা চিকিৎসাব্যবস্থা।
২০১৩-১৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) যে ১২টি হাতির করিডর চিহ্নিত করেছিল, সেগুলোর অধিকাংশই এখন বাধাগ্রস্ত। চুনতি-সাতগড় করিডর প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কারণে। করিডরের মধ্যে গড়ে উঠেছে বসতি, হয়েছে চাষাবাদ, এমনকি কিছু স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। হাতির প্রাকৃতিক চলাচল ব্যাহত হওয়ায় একই স্থানে হাতির প্রজননেও সংকট তৈরি হয়েছে।
যেখানে হাতি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল, সেখানে বন বিভাগ বছরের পর বছর ধরে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সম্প্রতি ‘হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প’ অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানানো হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের আগপর্যন্ত বন্য হাতি রক্ষার কী হবে? প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তার বাস্তবায়ন হবে কি না এবং কার্যকারিতা কতটুকু হবে—তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
প্রতিটি হাতি হত্যার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, এ ব্যাপারে আর কোনো অবহেলা আমরা দেখতে চাই না। তবে এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা দরকার। হাতি চলাচলের করিডরগুলোর পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। হাতির আক্রমণ ঠেকাতে এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে স্থায়ী রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে। হাতি রক্ষায় ইতিবাচক ধারণা দিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারণা চালাতে হবে এবং সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা, খাদ্য উপযোগী বনায়ন ও জলাধার তৈরি করতে হবে, যাতে হাতি লোকালয়ে না আসে। পাশাপাশি বনের মধ্যে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির মতো পরিবেশবিরোধী গাছ কেটে ফেলতে হবে। এসব গাছের কারণে হাতি খাদ্যসংকটে পড়েছে। আশা করি, হাতি সুরক্ষায় বন বিভাগের বোধোদয় হবে এবং তারা আরও বেশি তৎপর হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বন বিভাগের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়
বাংলাদেশে বন্য হাতির অস্তিত্ব সংকটাপন্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। ২০১৬ সালের জরিপ অনুযায়ী, সারা দেশে মাত্র ২৬৮টি হাতি টিকে আছে, যার মধ্যে চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়ায় রয়েছে ৩৫-৪০টি। অথচ গত ১০ বছরে শুধু বাঁশখালীতেই ১৭টি হাতির অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটেছে। এখানে আমাদের বন ব্যবস্থাপনার অদক্ষতা ও অবহেলার বিষয়টি উঠে এসেছে। হাতি রক্ষায় বন বিভাগ কার্যকর কোনো ভূমিকাই রাখতে পারছে না। বিষয়টি হতাশাজনক।
হাতি মৃত্যুর কারণগুলো নতুন কিছু নয়। রোগব্যাধিতে মৃত্যু হওয়া ছাড়াও অবৈধ বিদ্যুতের ফাঁদ পাতাসহ নানাভাবে শিকার করা হচ্ছে হাতি। করিডর সংকুচিত হয়ে যাওয়া, খাদ্যের অভাব এবং হাতির আবাসস্থলে জনবসতি গড়ে ওঠায় হাতির মৃত্যু আরও ত্বরান্বিত হচ্ছে। বন বিভাগ এসব মৃত্যুর পর কেবল মামলা বা সাধারণ ডায়েরি করেই নিজেদের দায় সারছে। নেই কার্যকর কোনো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, নেই প্রশিক্ষিত জনবল বা চিকিৎসাব্যবস্থা।
২০১৩-১৬ সালের মধ্যে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘ (আইইউসিএন) যে ১২টি হাতির করিডর চিহ্নিত করেছিল, সেগুলোর অধিকাংশই এখন বাধাগ্রস্ত। চুনতি-সাতগড় করিডর প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন স্থাপনের কারণে। করিডরের মধ্যে গড়ে উঠেছে বসতি, হয়েছে চাষাবাদ, এমনকি কিছু স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে শিল্পপ্রতিষ্ঠান। হাতির প্রাকৃতিক চলাচল ব্যাহত হওয়ায় একই স্থানে হাতির প্রজননেও সংকট তৈরি হয়েছে।
যেখানে হাতি রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার ছিল, সেখানে বন বিভাগ বছরের পর বছর ধরে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে এসেছে। সম্প্রতি ‘হাতি সংরক্ষণ প্রকল্প’ অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে বলে জানানো হলেও প্রকল্প বাস্তবায়নের আগপর্যন্ত বন্য হাতি রক্ষার কী হবে? প্রকল্প অনুমোদন পেলেও তার বাস্তবায়ন হবে কি না এবং কার্যকারিতা কতটুকু হবে—তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে।
প্রতিটি হাতি হত্যার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে, এ ব্যাপারে আর কোনো অবহেলা আমরা দেখতে চাই না। তবে এই মুহূর্তে জরুরি ভিত্তিতে কিছু কাজ করা দরকার। হাতি চলাচলের করিডরগুলোর পুনরুদ্ধার ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। হাতির আক্রমণ ঠেকাতে এবং সাধারণ মানুষকে সচেতন করতে স্থায়ী রেসপন্স টিম গঠন করতে হবে। হাতি রক্ষায় ইতিবাচক ধারণা দিতে স্থানীয়ভাবে প্রচারণা চালাতে হবে এবং সচেতনতা তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎ লাইনের নিরাপত্তা, খাদ্য উপযোগী বনায়ন ও জলাধার তৈরি করতে হবে, যাতে হাতি লোকালয়ে না আসে। পাশাপাশি বনের মধ্যে ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণির মতো পরিবেশবিরোধী গাছ কেটে ফেলতে হবে। এসব গাছের কারণে হাতি খাদ্যসংকটে পড়েছে। আশা করি, হাতি সুরক্ষায় বন বিভাগের বোধোদয় হবে এবং তারা আরও বেশি তৎপর হবে।