শিশুর রক্তস্বল্পতা কেন হয়, কী করবেন
Published: 15th, June 2025 GMT
শিশুর সুস্থতা ও পূর্ণাঙ্গ বিকাশে রক্তস্বল্পতা বা অ্যানিমিয়া একটি বড় সমস্যা। রক্তস্বল্পতা মানে রক্তে হিমোগ্লোবিন স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকা। এতে শরীরের বিভিন্ন অংশে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে বাধা তৈরি হয়। যার ফলে ক্লান্তি, দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৪২ শতাংশ শিশু শুধু আয়রনজনিত রক্তস্বল্পতায় ভুগছে।
রক্তস্বল্পতার কারণআয়রনের অভাব: আয়রন রক্তের হিমোগ্লোবিন তৈরির জন্য অপরিহার্য একটি খনিজ পদার্থ। যখন খাদ্যে পর্যাপ্ত আয়রন পাওয়া যায় না বা শরীর এটি শোষণ করতে পারে না, তখন রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
পুষ্টিহীনতা: শিশুর খাদ্যতালিকায় যদি ভিটামিন বি–১২, ফোলেট ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি থাকে, তাহলে রক্তস্বল্পতা হতে পারে।
পরজীবী সংক্রমণ: বিশেষ করে পেটের কৃমি শিশুদের শরীরে পুষ্টির শোষণ কমিয়ে দেয়, যা রক্তস্বল্পতার অন্যতম কারণ।
অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ: দুর্ঘটনা বা অন্য কারণে রক্তক্ষরণে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। মেয়েশিশুদের মাসিক ঋতুচক্রে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে অ্যানিমিয়া হতে পারে।
লক্ষণ ও উপসর্গশিশুদের রক্তস্বল্পতা শনাক্ত সব সময় সহজ হয় না। কারণ, অনেক সময় লক্ষণগুলো সাধারণ মনে হতে পারে। তবে কিছু বিশেষ লক্ষণ দেখে সতর্ক হওয়া উচিত। এগুলো হলো ত্বক ফ্যাকাশে বা হলুদাভ হওয়া, অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা, খেলাধুলা করলে শ্বাসকষ্ট বোধ করা, মনোযোগের অভাব, অল্পতেই হাঁপিয়ে যাওয়া ও হৃৎস্পন্দন দ্রুত হওয়া, অরুচি, ওজন হ্রাস, মাথা ঘোরানো ও মাথাব্যথা।
নির্ণয়রক্তস্বল্পতা নির্ণয়ে সবচেয়ে সাধারণ পরীক্ষা হলো সিবিসি। এতে রক্তের হিমোগ্লোবিন, রক্তকণিকার সংখ্যা ও আকার জানা যায়। প্রয়োজনে আয়রন, ভিটামিন বি–১২ ও ফোলেটের মাত্রা পরিমাপ করা যায়। কিছু ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া বা অন্যান্য রক্তজনিত রোগ শনাক্তে জিনগত (জেনেটিক) পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
চিকিৎসা ও প্রতিকাররক্তস্বল্পতার চিকিৎসা মূলত কারণ নির্ণয়ের ওপর নির্ভর করে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন, ওষুধ ও স্বাস্থ্যসম্মত অভ্যাসের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
পুষ্টি: শিশুদের খাদ্যতালিকায় আয়রনসমৃদ্ধ খাবার যেমন মাংস, মাছ, ডিম, ডাল, শাকসবজি, আমলকী, কমলা ও লেবু রাখা জরুরি।
আয়রন সাপ্লিমেন্ট: চিকিৎসকের পরামর্শক্রমে আয়রন ট্যাবলেট বা সিরাপ খাওয়ানো যেতে পারে।
কৃমিনাশক ওষুধ: পেটের কৃমি থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত কৃমি নির্মূল কর্মসূচি গ্রামীণ এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন: ভিটামিন বি–১২ ও ফোলেটের ঘাটতি থাকলে তা পূরণ করা দরকার।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?