যে কাজ করলে বড় ভাই বাবার হাতে মার খেত, সেই কাজ আমি করতাম না
Published: 16th, June 2025 GMT
বিকেল সাড়ে পাঁচটা। দুই ভাই মেঝেতে শুয়ে টিভি দেখছি। ছোট ভাইটা তখনো স্কুলে ভর্তি হয়নি, পাশের ঘরে মায়ের সঙ্গে সে আছে। গ্রীষ্মের গরমে শীতলপাটি বিছিয়ে মেঝেতে শুয়ে থাকার মধ্যে একটি আলাদা আরাম আছে। হঠাৎ কলবেলের আওয়াজ। বড় ভাই আমার হাতে রিমোটটা গছিয়ে দিয়ে পাটি গোটাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল। আমি রিমোট হাতে শত চেষ্টার পরও দেখলাম, তা কাজ করছে না। অগত্যা টিভির মেইন সুইচ বন্ধ করে দিয়ে চলে এলাম পড়ার টেবিলে। শুরু হলো বিকট চিৎকারে পড়াশোনা, সদর দরজার ওপারে যিনি বেল বাজাচ্ছেন, তিনি যেন বুঝতে পারেন, তাঁর ছেলেরা পড়ছে। বাধ্য হয়ে মাকেই দরজা খুলে দিয়ে আসতে হলো। কারণ, তিনি বুঝে গেছেন, আজ আমরা পড়ালেখার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পৌঁছে গিয়েছি, সেখান থেকে দরজা খুলে দেওয়ার মতো তুচ্ছ কাজে আমরা নামছি না। অনেকটা এমনই ছিল আমাদের শৈশবের রোজকার চিত্র।
বাবাকে খুব ভয় পেতাম। বাবার হাতের মার খুব যে বেশি খেয়েছি, তা নয়। আবার একদম কম খেয়েছি, তা–ও নয়! মেজ ছেলে হওয়ায় বড় ভাইকে দেখে অনেক কিছু শিখতাম। যে কাজ করলে বড় ভাই মার খেত, তা থেকে নিজেকে বিরত রাখতাম। তবে একদিনের মার খাওয়ার ঘটনা আজও মনে আছে। ছোটবেলায় কবুতর পোষার শখ ছিল। বারান্দায় কাঠের ঘর বানিয়ে আমি আর আমার ভাই মিলে দুই জোড়া কবুতর পালতাম। একদিন দুই ভাইয়ের মনে জেগে উঠল তুমুল পাখিপ্রেম। মনে হলো, আহা, বন্দিজীবন পাখিদের জন্য না জানি কত কষ্টের! দুই ভাই মিলে কবুতরগুলোকে মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা করলাম। চিন্তা করলাম, যদি বারান্দার একটি গ্রিল কেটে যাতায়াতের ব্যবস্থা করা যায়, তবে দিনের বেলা মুক্ত আকাশে উড়ে-ঘুরে সন্ধ্যায় পাখি তার নীড়ে ফিরে ঘুমাবে।
আরও পড়ুনআমার পড়াশোনার জন্য বাবা জমি বিক্রি করেছেন, হালের গরু বিক্রি করেছেন, ঋণ নিয়েছেন, তবু আমাকে হারতে দেননি১৪ জুন ২০২৫পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করা হলো। মা-বাবা দুজনই সেদিন বাড়ির বাইরে থাকায় পরিকল্পনাটি সহজেই বাস্তবায়ন করা গেল। পরীক্ষামূলকভাবে একটি পাখিকে ওড়ার সুযোগ দেওয়া হলো। তবে আমাদের পরিকল্পনা তো আর পাখিদের জানার কথা নয়। পাখি উড়ে গেল কিন্তু সন্ধ্যা পেরোনোর পরও সে আর ফিরে এল না। ঘটনা জানাজানি হতে বেশি সময় লাগল না। বাবা দুই ভাইকে আচ্ছামতো পেটালেন। না, কবুতর ছেড়ে দেওয়ার অপরাধে নয়। ভাড়া বাসায় গ্রিল কেটে পরের বাড়ির সম্পদ নষ্ট করার অপরাধে।
আমার পড়াশোনার জন্য বাবা ঠিক কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, তখন বুঝতে পারিনি। আজ বুঝতে পারি। ঢাকা শহরের মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান মানুষ করার সংগ্রামে আমার বাবাও নাম লিখিয়েছিলেন। মনে পড়ে, অষ্টম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণিতে উঠেছি। বিভাগ বাছাইয়ের বছর। স্বাভাবিকভাবেই বিজ্ঞান বিভাগ প্রথম পছন্দ। কিন্তু বিজ্ঞান ও গণিতের সমন্বিত ফলাফল বিজ্ঞান বিভাগ পাওয়ার জন্য নির্ধারিত নম্বরের চেয়ে আমার নম্বর কিছুটা কম। স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিল, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হতে হবে। বাবা স্কুলে গেলেন। প্রধান শিক্ষককে একবার সুযোগ দেওয়ার অনুরোধ করলেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক রাজি হলেন না কিছুতেই। সাফ জানিয়ে দিলেন, এ স্কুলে নয়, বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে চাইলে অন্য স্কুলে ভর্তি হতে হবে। বাবা দুঃখ পেলেন। বের হয়ে এসে আমার কাঁধে হাত রাখলেন। বললেন, পড়াশোনা নিজের কাছে। কমার্সে ভর্তি হও।
আরও পড়ুনবাবা হারানো সেই আরিফুলের লেখা, ‘আব্বার সঙ্গে শেষ স্মৃতিটা কোনো দিন ভুলতে পারব না’১৪ জুন ২০২৫বাবার সেই আহত মুখ আর ততোধিক দৃঢ় নির্দেশ এখনো মনে পড়ে। সেদিন প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, কমার্সেই পড়ব। প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে পাওয়া বাবার সেই অনুরোধের প্রত্যাখ্যান আমাকে যেন কৈশোরেই বাতলে দিয়েছিল জীবনের গতিপথ। বাবার মর্যাদা রক্ষার জন্য, বাবার মুখে হাসি ফোটানোর জন্য কমার্স থেকেই ভালো ফল করার এক তীব্র জেদ চেপেছিল আমার ভেতর। কেবলই মনে হতো, বাবার ত্যাগের প্রতিদান দিতে না পারি, তাঁকে অন্তত মানসিক স্বস্তিটুকু যেন দিতে পারি। সেই জেদের কারণেই হয়তো এখন আমি বিসিএস প্রশাসন সার্ভিসে কর্মরত আছি।
যে মানুষটাকে নিয়ে কথা বলছি, আজ তাঁর বয়স ৭০ বছর। বয়সী বৃক্ষের মতো অনেকটাই স্থির। স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতা তাঁর দেহে বাসা বেঁধেছে। আগের সেই রাগ নেই। শারীরিক শক্তিও নেই আগের মতো। তবে আগের মতোই আমাদের পুরো পরিবার ঘুরছে তাঁকে কেন্দ্র করে।
আরও পড়ুনবাবা থাকলে জীবন কেমন হতো জানি না, তবে মা আমার সব শূন্যতা পূরণ করে দিয়েছেন১০ মে ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বড় ভ ই র জন য ক জ কর
এছাড়াও পড়ুন:
খামেনিকে হত্যায় সংঘাত বাড়বে না, বরং অবসান ঘটাবে: নেতানিয়াহু
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার আশঙ্কার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরানি শীর্ষ নেতার হত্যায় ‘সংঘাত বাড়বে না, বরং অবসান ঘটাবে’।
তিনি বলেন, ‘ইরানি নেতার হত্যার সম্ভাব্য পরিকল্পনা ইরান ও ইসরায়েল মধ্যকার চলমান সংঘাতকে ‘আরও বাড়িয়ে তুলবে না, বরং সংঘাতের অবসান ঘটাবে’।
এবিসি নিউজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহুকে প্রশ্ন করা হয়, খামেনিকে হত্যার লক্ষ্যবস্তু করার চিন্তা আছে কিনা। প্রশ্নের জবাবে নেতানিয়াহু বলেছেন, ইরান দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে। ইরান ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চায় এবং ইসরায়েলে পরমাণু যুদ্ধের কিনারায় নিয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, ইসরায়েল এই আগ্রাসন ঠেকাচ্ছে। এটা ঠেকাতে হলে অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই হবে। আমরা যা প্রয়োজন, তাই করছি।
ইরানের সঙ্গে সংঘর্ষে ইসরায়েল বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে বলেও দাবি করেছেন বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। সোমবার ইসরায়েলি বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনে গিয়ে তিনি বলেন, আমরা বিজয় অর্জনের পথে। এর আগে, তেহরানের আকাশ ‘পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন’ করার দাবি করেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী কর্মকর্তারা। সেইসঙ্গে, ইরানের মিসাইল লঞ্চার বা ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ যন্ত্রের ‘এক-তৃতীয়াংশ ধ্বংস'’করে দেওয়ারও দাবি করেন তারা।
সেই দাবিই পুনর্ব্যক্ত করে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আমাদের দু'টি লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। পারমাণবিক হুমকি নির্মূল এবং ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি নির্মূল করা।
ইসরায়েলের বেসামরিক নাগরিকদেরকে ইরান হামলার লক্ষ্যবস্তুে পরিণত করেছে বলে অভিযোগ করেন নেতানিয়াহু। বিমান ঘাঁটি পরিদর্শনের সময় সেখানে উপস্থিত সেনাদের উদ্দেশে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের ধন্যবাদ। সৃষ্টিকর্তার সাহায্যে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করবো এবং সফল হব। বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত আমরা (যুদ্ধ) চালিয়ে যাব।’