এক মাসের বেশি সময় ধরে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কার্যালয় নগর ভবন তালাবদ্ধ থাকলেও সরকারের পক্ষ থেকে তা খোলার কোনো উদ্যোগ নেই। ঈদের ছুটির পর প্রথম কর্মদিবসে বিএনপির নেতা ইশরাক হোসেন ঘোষণা দিয়েছেন, ‘প্রধান ফটকের তালা খোলা হবে না, এটা আন্দোলনের একটা প্রতীক। জনগণের দৈনন্দিন সেবা আমাদের তত্ত্বাবধানে চালু থাকবে।’
আদালতের রায়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়রের পদ ফিরে পাওয়ার পর শপথের মাধ্যমে দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ার প্রতিবাদে গত ১৪ মে থেকে নগর ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে আসছিলেন ইশরাক হোসেনের সমর্থকেরা। পরদিন এই কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও যুক্ত হন। ওই দিন নগর ভবনের মূল ভবনের সব ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ১৫ মে থেকে নগর ভবনের সব ধরনের নাগরিক সেবা প্রদান বন্ধ আছে।
১৯ মে স্থানীয় সরকারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া নিজের ফেসবুকে দেওয়া বার্তায় বলেছিলেন, ‘গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে বিএনপি আন্দোলন করছে।’ মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ না হওয়ার পেছনে ১০টি জটিলতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, ‘এসব জটিলতা নিরসন না করা পর্যন্ত শপথ গ্রহণ সম্ভব নয়।’
সর্বশেষ গতকাল সোমবার নগর ভবনে সংবাদ সম্মেলন করে ইশরাক হোসেন অভিযোগ করেছেন, মেয়র হিসেবে তাঁকে শপথ না পড়ানোর বিষয়টি বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। এ সময় ব্যানারে ইশরাক হোসেনের পদবি লেখা ছিল ‘মেয়র’। শপথ নেওয়ার আগে নামের আগে ‘মেয়র’ লেখা কোনো বিবেচনাতেই যৌক্তিক হতে পারে না। তাঁর অভিযোগ অনুযায়ী সরকার যদি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তাঁকে শপথ পড়িয়ে না থাকে, তবে তা আইনিভাবে মোকাবিলার পথ ধরতে হবে। কোনোভাবেই নিজের নামের আগে মেয়র পদবি বসিয়ে নয়।
অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, ‘উলুখাগড়া’ জনগণের প্রাণ যায়। এখানে কার বক্তব্য সঠিক বা বেঠিক, সেই বিতর্কের চেয়েও জরুরি কথা হলো, মাসাধিককাল ধরে নগর ভবন বন্ধ থাকতে পারে না। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় যে প্রায় এক কোটি নাগরিকের বাস, তাঁরা তো সেবা পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারেন না। উপদেষ্টার ভাষায় ইশরাক হোসেন যদি গায়ের জোরে নগর ভবন বন্ধ করে থাকেন, তাহলে সরকার কেন খোলার ব্যবস্থা করছে না? এ ক্ষেত্রে আন্দোলনকারীদেরও দায় আছে। তাঁরা সরকারকে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়ে লাখ লাখ মানুষকে জিম্মি করতে পারেন না।
ইশরাক হোসেন বলেছেন, তাঁদের ব্যবস্থাপনায় জন্মনিবন্ধনসহ জনগণের জরুরি সেবাগুলো দেওয়া হবে। এর অর্থ দেশের অন্যত্র অন্তর্বর্তী সরকারের শাসন কার্যকর থাকলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে সেটা থাকবে না। ইতিমধ্যে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, তঁাদের ব্যবস্থাপনায় জনগণ জরুরি সেবা পেলেও সিটি করপোরেশনের উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকবে। এই বর্ষা মৌসুমে ঢাকার রাস্তাঘাটের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। অর্থবছরের শেষে এসে উন্নয়নকাজ বন্ধ থাকায় জনগণ আরও বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। একজন দায়িত্বশীল রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এ ধরনের বক্তব্য প্রত্যাশিত নয়।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা যদি সরকার আলোচনা করে সমাধান করতে পারে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়ানো নিয়ে সৃষ্ট সমস্যার সমাধান কেন করতে পারবে না?
সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সরকারের রাজনৈতিক হিসাব–নিকাশ থাকে। কিন্তু গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকারের সেটি থাকার কথা নয়। তাদের প্রতিটি সিদ্ধান্ত হতে হবে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও পক্ষপাতহীন। নাগরিকদের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধের জায়গা থেকেই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নিয়ে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তার সুরাহা অবিলম্বে করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন নগর ভবন র জন ত ক সরক র র ন বন ধ ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
জনগণের ঐক্য থাকলে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকে কবর দিতে পারব: সাকি
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘যদি জনগণের ঐক্য থাকে, তাহলে এই দেশে ফ্যাসিবাদ যেমন পালিয়েছে, ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থাকেও আমরা কবর দিতে পারব। আর যে লুটপাটের রাজত্ব, দুর্নীতির রাজত্ব কায়েম হয়েছে, সেটাকেও আমরা কবর দিতে পারব।’
আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জুলাই গণসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। সমাবেশের আয়োজন করে গণসংহতি আন্দোলন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ জুলফিকার আহমেদ শাকিলের মা আয়েশা বেগম সমাবেশ উদ্বোধন করেন।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ‘লুটপাট, দুর্নীতি আমরা বন্ধ করতে না পারলে দেশে নতুন ক্ষমতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা হবে না। শহীদদের স্বপ্নপূরণে নতুন রাজনৈতিক এবং ক্ষমতাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ক্ষমতা দিয়ে টাকাপয়সা ধনসম্পদ আহরণ করা বাংলাদেশে গুম–খুন, অত্যাচার, ত্রাসের রাজত্বের ভিত্তি ছিল ফ্যাসিবাদী শাসন। ক্ষমতা দিয়ে টাকাপয়সা, ধনসম্পদ আহরণ করতে গিয়ে ব্যাংক, বিমা, ব্যবসা-বাণিজ্য, সব উন্নয়ন প্রকল্প—সব খেয়ে ফেলেছিল তারা।
এ সময় জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের পরিবার এবং আহতদের দায়িত্ব নিতে অন্তর্বর্তী সরকার কেন ব্যর্থ হয়েছে, তার ব্যাখ্যা ৫ আগস্টের মধ্যে জানানোর দাবি জানিয়েছেন জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক লক্ষণ দেখছি, যেন পুরোনো ব্যবস্থাই আবার আমাদের মধ্যে জায়গা করে নিচ্ছে। আমরা দেখলাম শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা এখনো হয়নি। আহতদের চিকিৎসা এখনো হয়নি।’
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে শহীদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। আজ শুক্রবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে