শখ থেকে স্বপ্ন পূরণে সোনালী হরিণের খামার
Published: 17th, June 2025 GMT
ফরিদপুর শহরতলীর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে এক অনন্য উদ্যোগের জন্ম হয়েছে, যা এখন সারা জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছেন মো. ফরিদ শেখ, একজন মাদ্রাসা পরিচালক। যিনি শখের বশে শুরু করা হরিণ পালনকে একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক উদ্যোগে রূপান্তর করেছেন।
তার এই প্রচেষ্টা শুধু আয়ের নতুন পথই খোলেনি বরং এতিম শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়স্থলও গড়ে তুলেছে। ‘ফরিদাবাদ শেখ ফেলু দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা’র পাশে অবস্থিত ফরিদ শেখের হরিণের খামার এখন ফরিদপুরের গর্ব।
শখ থেকে বাণিজ্যিক সাফল্য
২০১৭ সালে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ফরিদ শেখ ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি হরিণ কেনেন। শুরুটা ছিল কেবল শখ দিয়ে। তবে আড়াই মাসের মধ্যেই হরিণ দুটি থেকে জন্ম নেয় একটি শাবক। ধীরে ধীরে তার খামারে হরিণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যখন হরিণের সংখ্যা ১২টিতে পৌঁছায়, তিনি শৌখিন লাইসেন্সকে বাণিজ্যিক লাইসেন্সে রূপান্তর করেন।
এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০টি হরিণ বিক্রি করেছেন, যার প্রতিটির দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এই আয় সরাসরি মাদ্রাসার তহবিলে যোগ হয়। যা দিয়ে এতিম শিশুদের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানো হয়।
হরিণ পালন সহজ ও লাভজনক
মো.
এই সহজ পদ্ধতি এবং কম খরচই তার উদ্যোগকে লাভজনক করে তুলেছে।
বন অধিদপ্তরের নিয়মকানুন
হরিণ পালনের জন্য বন অধিদপ্তর থেকে শৌখিন এবং বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। শৌখিন লাইসেন্সের জন্য বিভাগীয় বন অফিসে আবেদন করতে হয়। বন বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন করে জায়গার উপযুক্ততা যাচাই করে অনুমতি দেয়। হরিণের সংখ্যা ১১টির বেশি হলে বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। যার জন্য আগারগাঁও বন অফিসে আবেদন করতে হয়। এই লাইসেন্সে প্রতিটি হরিণের জন্য বছরে ১২০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।
হরিণ ছাড়াও এ খামারে আছে বৈচিত্র্য
ফরিদ শেখের উদ্যোগ শুধু হরিণ পালনেই সীমাবদ্ধ নয়। তার গরু, দুম্বা এবং বিশাল একটি মাছের খামারও রয়েছে। যেখান থেকে তিনি প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেন। খামারগুলোতে ৩০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, যা স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
খামার যখন পর্যটন কেন্দ্র
ফরিদপুরে হরিণ পালনের এমন উদ্যোগ আর কোথাও নেই। ফরিদ শেখের খামার এখন শুধু ব্যবসা নয়, একটি পর্যটন কেন্দ্রও। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই সোনালী হরিণগুলো দেখতে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হরিণদের লাফালাফি দেখে আনন্দ পায় এবং সময় পেলে তাদেরকে খাবারও খঅওয়ায়।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, এই খামার মাদ্রাসার পরিচিতি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীরা হরিণ দেখতে এসে ছবি তোলেন, খেলেন এবং এতিম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই খামার মাদ্রাসাটিকে ফরিদপুরের একটি অনন্য স্থানে পরিণত করেছে।
ফরিদ শেখের বক্তব্য
মো. ফরিদ শেখ বলেন, “আমার শখের শুরু ছিল এই হরিণ পালন। কিন্তু এটি এখন আমার জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খামার থেকে আয় দিয়ে আমি এতিম শিশুদের শিক্ষা ও জীবিকার ব্যবস্থা করছি। আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ় ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো শখকেও সফল ব্যবসায় রূপান্তর করা সম্ভব। আমি চাই, আমার এই উদ্যোগ অন্য তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করুক।”
ঢাকা/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এত ম শ শ দ র ফর দ শ খ র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
শখ থেকে স্বপ্ন পূরণে সোনালী হরিণের খামার
ফরিদপুর শহরতলীর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের শ্যামসুন্দরপুর গ্রামে এক অনন্য উদ্যোগের জন্ম হয়েছে, যা এখন সারা জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। এই উদ্যোগের কেন্দ্রে রয়েছেন মো. ফরিদ শেখ, একজন মাদ্রাসা পরিচালক। যিনি শখের বশে শুরু করা হরিণ পালনকে একটি সমৃদ্ধ বাণিজ্যিক উদ্যোগে রূপান্তর করেছেন।
তার এই প্রচেষ্টা শুধু আয়ের নতুন পথই খোলেনি বরং এতিম শিশুদের জন্য একটি আশ্রয়স্থলও গড়ে তুলেছে। ‘ফরিদাবাদ শেখ ফেলু দাখিল মাদ্রাসা ও এতিমখানা’র পাশে অবস্থিত ফরিদ শেখের হরিণের খামার এখন ফরিদপুরের গর্ব।
শখ থেকে বাণিজ্যিক সাফল্য
২০১৭ সালে মাত্র দেড় লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ফরিদ শেখ ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে দুটি হরিণ কেনেন। শুরুটা ছিল কেবল শখ দিয়ে। তবে আড়াই মাসের মধ্যেই হরিণ দুটি থেকে জন্ম নেয় একটি শাবক। ধীরে ধীরে তার খামারে হরিণের সংখ্যা বাড়তে থাকে। যখন হরিণের সংখ্যা ১২টিতে পৌঁছায়, তিনি শৌখিন লাইসেন্সকে বাণিজ্যিক লাইসেন্সে রূপান্তর করেন।
এখন পর্যন্ত তিনি প্রায় ৫০টি হরিণ বিক্রি করেছেন, যার প্রতিটির দাম এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এই আয় সরাসরি মাদ্রাসার তহবিলে যোগ হয়। যা দিয়ে এতিম শিশুদের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার খরচ মেটানো হয়।
হরিণ পালন সহজ ও লাভজনক
মো. ফরিদ শেখ বলেন, “হরিণ তৃণভোজী প্রাণি। নেপিয়ার ঘাস, কলমি, ছোলা, ভুসি, বাঁধাকপি, মিষ্টি কুমড়া ও লাউ খেতে দেই হরিণদের। প্রতিটি হরিণের পেছনে দৈনিক খরচ মাত্র ১০০-১৫০ টাকা। অন্যান্য প্রাণির তুলনায় হরিণের রোগবালাই কম, তাই ওষুধ বা ভ্যাকসিনের খরচও প্রায় নেই।”
এই সহজ পদ্ধতি এবং কম খরচই তার উদ্যোগকে লাভজনক করে তুলেছে।
বন অধিদপ্তরের নিয়মকানুন
হরিণ পালনের জন্য বন অধিদপ্তর থেকে শৌখিন এবং বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়া হয়। শৌখিন লাইসেন্সের জন্য বিভাগীয় বন অফিসে আবেদন করতে হয়। বন বিভাগ সরেজমিনে পরিদর্শন করে জায়গার উপযুক্ততা যাচাই করে অনুমতি দেয়। হরিণের সংখ্যা ১১টির বেশি হলে বাণিজ্যিক লাইসেন্স প্রয়োজন হয়। যার জন্য আগারগাঁও বন অফিসে আবেদন করতে হয়। এই লাইসেন্সে প্রতিটি হরিণের জন্য বছরে ১২০০ টাকা ভ্যাট দিতে হয়।
হরিণ ছাড়াও এ খামারে আছে বৈচিত্র্য
ফরিদ শেখের উদ্যোগ শুধু হরিণ পালনেই সীমাবদ্ধ নয়। তার গরু, দুম্বা এবং বিশাল একটি মাছের খামারও রয়েছে। যেখান থেকে তিনি প্রতি বছর মোটা অঙ্কের টাকা উপার্জন করেন। খামারগুলোতে ৩০ জনেরও বেশি শ্রমিক কাজ করেন, যা স্থানীয় বেকার যুবকদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
খামার যখন পর্যটন কেন্দ্র
ফরিদপুরে হরিণ পালনের এমন উদ্যোগ আর কোথাও নেই। ফরিদ শেখের খামার এখন শুধু ব্যবসা নয়, একটি পর্যটন কেন্দ্রও। প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ ছুটে আসেন এই সোনালী হরিণগুলো দেখতে। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হরিণদের লাফালাফি দেখে আনন্দ পায় এবং সময় পেলে তাদেরকে খাবারও খঅওয়ায়।
মাদ্রাসার শিক্ষকরা জানান, এই খামার মাদ্রাসার পরিচিতি বাড়িয়েছে। দর্শনার্থীরা হরিণ দেখতে এসে ছবি তোলেন, খেলেন এবং এতিম শিশুদের সঙ্গে সময় কাটান। এই খামার মাদ্রাসাটিকে ফরিদপুরের একটি অনন্য স্থানে পরিণত করেছে।
ফরিদ শেখের বক্তব্য
মো. ফরিদ শেখ বলেন, “আমার শখের শুরু ছিল এই হরিণ পালন। কিন্তু এটি এখন আমার জীবনের একটি বড় অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই খামার থেকে আয় দিয়ে আমি এতিম শিশুদের শিক্ষা ও জীবিকার ব্যবস্থা করছি। আমি বিশ্বাস করি, দৃঢ় ইচ্ছা আর পরিশ্রম থাকলে যেকোনো শখকেও সফল ব্যবসায় রূপান্তর করা সম্ভব। আমি চাই, আমার এই উদ্যোগ অন্য তরুণদেরও অনুপ্রাণিত করুক।”
ঢাকা/এস