‘স্কিন কেয়ার’ বা ত্বকের যত্নে প্রতিনিয়তই যুক্ত হচ্ছে নতুন সব কায়দা-কানুন। কিশোর ও তরুণ; অর্থাৎ জেন-জি, ১৩ থেকে ২৮–এর কোঠায় যাঁদের বয়স, তাঁরা ত্বক সুন্দর রাখতে প্রতিনিয়তই আয়ত্ত করছেন নতুন নতুন ট্রিকস অ্যান্ড টিপস। জেনারেশন এক্সদের কথা বাদই দিলাম, জেনারেশন ওয়াই বা মিলেনিয়ালরাও কয়েক বছর ত্বকের যত্নের ওপর মনোযোগ বাড়িয়েছেন। সেদিক থেকে চিন্তা করলে জেন-জিরা কিন্তু এখন থেকেই সচেতন। ত্বকের যত্নের রুটিনে একের পর এক জুড়ে নিচ্ছেন নতুন নতুন পণ্য। আর এতেই বাধছে বিপত্তি!
ত্বকের ব্যাপারে জেন–জিদের আরও একটু ধীরস্থির হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অরোরা স্কিন অ্যান্ড এসথেটিকসের চেয়ারম্যান, ত্বকবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসক অধ্যাপক সৈয়দ আফজালুল করিম এবং সৌন্দর্যসেবা কেন্দ্র রেডের প্রতিষ্ঠাতা ও রূপবিশেষজ্ঞ আফরোজা পারভীন। এই বয়সে ফিটফাট ত্বক পেতে তাঁদের থেকেই পাওয়া গেল কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ।
ত্বকের যত্নে বয়সের গুরুত্বশিশুর মসৃণ ত্বক কৈশোরে অন্য রকম দেখাবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে উঁকি দিতে শুরু করে ত্বকের নানা সমস্যা। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ত্বক কেমন হবে, কতটা সুস্থ থাকবে, এটা ব্যক্তির জিনগত বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভর করলেও ঠিকঠাক যত্নে ত্বক এমনিতেই ভালো থাকে, জানান আফজালুল করিম। তিনি বলেন, ত্বকের যত্নের পুরো বিষয়টাই বয়সনির্ভর। কিশোর বয়সের ত্বকের সমস্যা প্রাপ্তবয়স্কদের উপযুক্ত কোনো পণ্য ব্যবহার করে সমাধান করা যাবে না। প্রাপ্তবয়স্করা যেভাবে ত্বকের যত্ন নেবেন এবং যা ব্যবহার করবেন, কিশোর বয়সীদের সেগুলো থেকে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে। ত্বকের সমস্যা বোঝার পাশাপাশি বয়স অনুযায়ী ত্বকের যত্ন নিতে হবে। কোন বয়সের ত্বকের চর্চা কেমন হবে, বুঝতে হবে। বিশেষ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন স্কিনকেয়ার ট্রেন্ড বা রূপচর্চার চলতি ধারা দেখে ত্বকচর্চা থেকে বিরত থাকতে হবে। না হলে পরে ত্বক আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে।
এ বয়সে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
জীবন বাঁচাতে রক্ত দিন
বাংলাদেশ রক্ত পরিসঞ্চালন আইন ২০০২ অনুসারে রক্তদাতার বয়সের সীমারেখা হচ্ছে ১৮ থেকে ৬০ বছর। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে ৬০ শতাংশ জনগোষ্ঠী প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান; ১৮ থেকে ৬৬ বছর বয়সের সীমারেখার মধ্যে সে দেশের মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গণ্য করা হয় বং তাঁদের মধ্যে ১০ শতাংশ লোক রক্তদানে অভ্যস্ত। সুইজারল্যান্ডসহ উন্নত বিশ্বের আরও অন্যান্য দেশেও বিষয়টি পরিলক্ষিত হয়।
অনুন্নত বিশ্বে এ রক্তদাতার হার ১ ভাগের কম। বাংলাদেশে এ রক্তদানের সংক্ষেপ চিত্র হচ্ছে, প্রতিবছর বিভিন্ন হাসপাতালের প্রয়োজন ১০ লাখ ইউনিট এবং স্বাস্থ্যবান সক্ষম নিরাপদ রক্তদাতাদের থেকে সংগৃহীত হয় ৪ লাখ ৫০ হাজার ইউনিট।
সাধারণত অধিকাংশ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ, যাঁদের বয়স ১৮ থেকে ৬০ বছর, যাঁরা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী, যাঁদের কোনো কঠিন রোগ নেই এবং যাঁরা কোনো মারাত্মক ব্যাধি অন্যের দেহে সঞ্চালনের আশঙ্কা বহন করেন না, বিশেষ করে এইচআইভি ভাইরাস; তাঁদের রক্তদাতা হিসেবে উপযোগী বলে গণ্য করা হয়।
রক্তদাতা হওয়া উচিত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত ও বিনা মূল্যে জীবন রক্ষাকারী মহাকল্যাণকামী দানের প্রতি আস্থাশীল। বিনা মূল্যে দানের রক্ত, অর্থের মাধ্যমে কেনা রক্তের চেয়ে অনেক নিরাপদ। বিভিন্ন দেশে রক্ত পরিসঞ্চালন সেবায় রক্তদাতা নির্বাচনে রক্তদাতা ও গ্রহীতার নিরাপত্তা বিধানে আইন প্রণীত হয়েছে। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ বছর বয়সী মানুষকে রক্তদাতা হিসেবে গ্রহণ করা হয় এবং ডেনমার্কসহ কিছু দেশে ৭০ বছর বয়সেও রক্তদাতা নির্বাচিত হন, কিছু দেশ মা–বাবার সম্মতি ব্যতিরেকে ১৬ বছর বয়সী মানুষকেও রক্তদাতা হিসেবে নির্বাচিত করে।
রক্তের শিরা ছিদ্রকরণ (ভেনিসেকশন) পদ্ধতির একটি চিকিৎসা আইনসম্মত বিধান থাকা উচিত। একজন রক্তদাতা রক্তদানের পর অসুস্থ হলে রক্তদাতা নিজে বা তার নিকটাত্মীয়রা রক্তদানের কারণে অসুস্থ হয়েছেন বলে একটি বিরূপ ধারণার জন্ম নিতে পারে বলেই একজন সক্ষম রক্তদাতা অবশ্যই ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে হবে এবং তাদের এমন কোনো অসুস্থতা থাকবে না যাতে সে সাধারণ রক্তদাতা হিসেবে নিগৃহীত হতে পারে। যেমন রক্তশূন্যতা, যক্ষ্মা, ক্যানসার, স্ট্রোক, এপিলেপসি, ডায়াবেটিস, লিভার সিরোসিস, কার্ডিয়াক, রেসপিরেটরি অথবা রেনাল ডিজিজ। উচ্চ রক্তচাপের ব্যক্তিদের রক্তদাতা ও রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ উভয়েই নির্দ্বিধায় বলতে পারে যে রক্তদানের মাধ্যমে উভয় পক্ষই একটি বিপদমুক্ত মহৎ কাজ করছে।
রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ রক্তদানে ইচ্ছুক লোকজনের মাঝে রক্তদানের তথ্যবহুল কাগজপত্র সরবরাহ করলে এ রকম একটি কঠিন কাজ অনেক সহজ হতে পারে। স্বেচ্ছায় রক্তদাতারা বোনম্যারো দানের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, সে জন্য অনেক রক্ত সংগ্রহকারী কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে অনেক রেকর্ড সংরক্ষণ করে ম্যারোদাতা নিযুক্ত করতে সহায়তা করে। বিশ্ব মেরুডোনারস অ্যাসোসিয়েশনের (Buskard,1991) বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায় যে প্রায় চার লাখ বোনম্যারো ডোনার তাঁদের কাছে মজুত আছে, যাঁদের এইচএলএ প্রকারভেদও সম্পন্ন করা আছে।
প্রতিটি রক্তদান ও সংগ্রহের সামগ্রিক তথ্য রেকর্ড করা এবং বছরের পর বছর সংরক্ষণ করা উচিত। পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য যেমন রক্তের গ্রুপ রক্তদানে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়ার তথ্য, অণুজীব অ্যান্টিবডি উপস্থিতি, হঠাৎ বেহুঁশ বা পড়ে যাওয়ার ইতিহাস পরবর্তী সেশনের রক্তদানে অনেক সহায়তা করে। চলতি ও পূর্ববর্তী রক্তদানের বিভিন্ন তথ্য–সংবলিত বিশালসংখ্যক রক্তদাতার প্যানেল কম্পিউটারে সংগ্রহ করা বর্তমানকালের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
সমাজের সব স্তরের, সব ধর্মের, সব পেশার লোকজনকে আহ্বান জানাচ্ছি—
১. ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়স্ক সব সুস্থ নারী-পুরুষ, যাঁদের ওজন ১০০ পাউন্ড বা তার বেশি, তাঁরা প্রতি চার মাস অন্তর নিয়মিত রক্তদান করুন।
২. পরিচিতজনদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করুন।
৩. স্বেচ্ছা রক্তদাতা তৈরির আয়োজনে সক্রিয় সহযোগিতা করুন।
৪. স্ক্রিনিং ছাড়া রক্ত নেবেন না, এমনকি আপনজনের হলেও নয়; কারণ তার রক্তেও সুপ্ত থাকতে পারে সংক্রামক ঘাতক ব্যাধির জীবাণু।
৫. কখনো পেশাদার রক্তদাতার রক্ত কিনবেন না।
৬. রক্তদানে শরীরের কোনো ক্ষতি হয় না এবং বোনম্যারো নতুন রক্তকণিকা তৈরির জন্য উদ্দীপ্ত হয়।
৭. রক্তদান জীবনদান, তাই নিয়মিত রক্তদানের অভ্যাস গড়ে তুলুন।
পরিবেশ বাঁচাতে বনায়ন যেমন পূর্বশর্ত। জীবন বাঁচাতে তেমনি দরকার নিরাপদ রক্ত।
ডা. মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ। উপদেষ্টা, ব্লাড ট্রান্সফিউশন সোসাইটি অব বাংলাদেশ।