কোরবানি ঈদের পর প্রায় প্রতিটি ঘরেই মাংসের পর্যাপ্ত মজুত থাকে। এই মাংস দিয়ে তৈরি করে নিতে পারেন মুখরোচক খাবার, রেসিপি দিয়েছেন মিতা আজহার
মগজ ভুনা
উপকরণ: খাসির মগজ ১টি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা বাটা ১ চা চামচ, রসুন বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া ১ চা চামচ, দারচিনি ২-৩ টুকরা, এলাচ ৪টি, তেজপাতা ২টি, লবণ স্বাদমতো, তেল ৪ টেবিল চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে মগজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে রগগুলো বেছে নিন। চুলায় ফ্রাইপ্যান বসিয়ে তেল দিন। গরম হলে পেঁয়াজ কুচি দিয়ে বাদামি রং করে ভেজে নিন। সামান্য পানি দিয়ে নেড়েচেড়ে মগজ বাদে বাকি সব উপকরণ দিয়ে কষিয়ে রান্না করুন। মগজ একটু ভাঙা ভাঙা করে দিন। ভুনা ভুনা হলে নামিয়ে পরিবেশন করুন মজাদার মগজ ভুনা। ভাত ও পোলাওয়ের সঙ্গে খেতে খুব মজা।
খাসির
কলিজা ভুনা
উপকরণ: খাসির কলিজা ১টি, পেঁয়াজ কিউব করে কাটা ১ কাপ, আস্ত মেথি ১ চা চামচ, আদা বাটা ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, গরম মসলা গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, পানি পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে একটি হাঁড়িতে পানি ফুটিয়ে কলিজা টুকরা করে কেটে সেদ্ধ (অল্প সময়) করে নিন। ময়লা বের হলে ছাকনিতে ঢেলে নিন। এবার চুলায় প্যান বসিয়ে তেল দিন। গরম হলে আস্ত মেথি ফোড়ন দিন। এরপর পেঁয়াজ কাটা দিয়ে নেড়েচেড়ে কলিজা বাদে একে একে সব উপকরণ দিয়ে কষিয়ে রান্না করুন। পরে অল্প পানি দিয়ে ঢেকে দিন। মাখা মাখা হলে নামিয়ে নিন। পরোটা-পোলাওয়ের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
মাটন রোগান জোস
উপকরণ: খাসির মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ বেরেস্তা আধা কাপ, আদা গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ৪টি টকটকে লাল, দারচিনি ২ টুকরা, এলাচ ৪টি, লবঙ্গ ৫টি, হিং ১ চা চামচ, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, মৌরি গুঁড়া ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, টকদই এক কাপ, লবণ স্বাদমতো, পানি পরিমাণমতো, সরিষার তেল ১ কাপ, গোলমরিচ গুঁড়া আধা চা চামচ।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে চুলায় হাঁড়ি বসিয়ে সরিষার তেল দিন। গরম হলে দারচিনি, এলাচ, লবঙ্গ ও হিং দিয়ে নেড়েচেড়ে সুঘ্রাণ বের হলে খাসির মাংস দিয়ে একটু কষিয়ে আদার গুঁড়া, রসুন বাটা, ধনিয়া গুঁড়া, কাশ্মীরি মরিচ গুঁড়া, লবণের সঙ্গে অল্প পানি দিয়ে কষিয়ে নিয়ে ঢেকে রাখুন ১৫ মিনিট। শুকনা মরিচ ব্লেন্ডারে ব্ল্যান্ড করে নিন। দই ও মৌরি গুঁড়া মিশিয়ে কষানো মাংসের মধ্যে ঢেলে দিয়ে নেড়েচেড়ে গোলমরিচের গুঁড়া দিন। পরে মাংস সেদ্ধ হয়ে গেলে তেল ওপরে উঠে এলে নামিয়ে নিন। এবার সার্ভিং ডিশে পরিবেশন করুন মজাদার রোগান জোস। ভাত, পোলাও এবং পরোটার সঙ্গে খেতে দারুণ মজা।
বিফকারি
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি, পেঁয়াজ কুচি ১ কাপ, আদা বাটা ১ টেবিলে চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, হলুদ গুঁড়া ১ চা চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনিয়া গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা বাটা ১ চা চামচ, দারচিনি ৪ টুকরা, এলাচ ৪টি, লবঙ্গ ৪টি, তেজপাতা ২টি, টকদই ৩ টেবিল চামচ, তেল আধা কাপ, লবণ স্বাদমতো, চিনি সামান্য, পানি পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালি: প্রথমে মাংস ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন। একটি হাঁড়িতে মাংস, পেঁয়াজ, আদা, রসুন বাটা একে একে সব উপকরণ দিয়ে ভালোভাবে মেখে রেখে দিন আধা ঘণ্টা। এবার চুলায় আগুন দিয়ে মেখে রাখা মাংস হাঁড়িসহ ঢেকে জ্বাল দিন। মাঝেমধ্যে নেড়েচেড়ে দিন। কষানো হলে ২ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন। সেদ্ধ হয়ে তেল ভেসে উঠলে নামিয়ে নিন। পোলাও, পরোটা ও ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন মজাদার বিফকারি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: লবণ স ব দমত রস ন ব ট ন কর ন হল দ গ প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
চা শ্রমিকদের ক্লান্তি দূর করে ‘পাতিচখা’
চায়ের সবুজ বাগানে গাছ থেকে পাতা কুঁড়ি তোলার কাজ সবচেয়ে বেশি করেন নারী শ্রমিকরা। রোদে পুড়ে এবং বৃষ্টিতে ভিজে চায়ের বাগানের টিলায় পাতা কুঁড়ি সংগ্রহ করতে হয় তাদের।
ক্লান্ত দুপুরে নিজ হাতে তৈরি ‘পাতিচখা’ বা কাঁচা চা পাতির ভর্তা খেয়ে দুর্বল স্নায়ুকে আবার সবল করেন তারা। এরপর আবারো শুরু করেন কর্মযজ্ঞ। পড়ন্ত বিকেলে ওজন ধারের কাছে তোলা পাতার হিসাব দিয়ে ঘরে ফেরেন এই নারীরা।
চা সংশ্লিষ্টরা জানান, চায়ের কাঁচা পাতায় রয়েছে ক্যাফেইন নামক উপাদান। হাতের মলায় ক্যাফেইন তৈরি হয়। যা খেলে শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। পাতিচখা বা চা পাতির ভর্তা চা শ্রমিকদের প্রিয় খাবার। দুপুর হলেই তারা গাছের ছায়ায় গোল হয়ে বসে চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদানের সঙ্গে চা পাতার কচি কুঁড়ি দিয়ে হাতের তালুতে ডলে তৈরি করেন পাতিচখা।
আরো পড়ুন:
পিয়াইন নদীতে নিখোঁজ বালু শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার
গাজীপুরে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের মহাসড়ক অবরোধ
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) মৌলভীবাজারের বিভিন্ন চা বাগান গিয়ে শ্রমিকদের পাতিচখা খাওয়ার দৃশ্য চোখে পড়ে।
কথা হলে চা শ্রমিকরা জানান, নারী শ্রমিকদের সর্দারনি সবার কাছ থেকে রুটি, পেঁয়াজ, মুড়ি, রসুন, চানাচুর, সিদ্ধ আলুসহ পাতিচখার উপকরণ সংগ্রহ করেন। একটি পাত্রে সব উপকরণ জমা করে সব শেষে চা পাতার কচি কুঁড়ি হাতের তালুতে ডলে সবাই মিলে তৈরি করেন পাতিচখা। সর্দারনি আবার সকলের হাতে হাতে তা বন্টন করেন।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার করিমপুর চা বাগানের নারী শ্রমিক বাসন্তি মুন্ডার বলেন, “আমরা ক্লান্তি দূর করার জন্য পাতিচখা খাই। এটা আমাদের নিজস্ব খাবার।”
বসন্তি মুন্ডার কাছে বসে থাকা অপর নারী শ্রমিক সুমা কর্মকার বলেন, “ক্লান্ত দুপুরে গাছের শান্ত ছায়ায় বসে আমরা পাতিচখা খেয়ে কাজে যায়। আমরা এ থেকে শক্তি পাই।”
বাগানের শ্রমিক উর্মিলা তাপসী বলেন, “আমাদের দুপুরের নাস্তা পাতিচখা খেলে শক্তি আসে।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, চা জনগোষ্ঠীর আদি পেশা হলো কৃষি। কৃষি কাজ করে তাদের জীবন চলত। ১৮৪০ সালের দিকে ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে চায়ের চাষ বৃদ্ধি পায়। কর্মক্ষেত্র ক্লান্তি দূর করায় চায়ের কদর বাড়তে থাকে।
বাংলাদেশের চট্টগ্রামে প্রথম কর্ণফুলী চা বাগানের মাধ্যমে চায়ের চাষাবাদ শুরু হয়। মাটি, আবহাওয়া ও জলবায়ু অনুকূলে থাকায় সিলেট ও চট্টগ্রামে চা বাগান গড়ে ওঠে। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে চা গাছ পরিচর্যার জন্য এখানে শ্রমিক আনা হয়। কাজের ক্লান্তি দূর করার জন্য মধ্যাহ্ন বিরতিতে রুটি খাওয়া ছিল তাদের পুরানো প্রথা। মনের খেয়ালে চা-গাছের কচি পাতা হাতের তালুতে ডলে রুটির সঙ্গে খেতে শুরু করেন তারা।
শরীরে উদ্দীপনা সৃষ্টি হওয়ার পর থেকে তারা দুপুরে রুটির সঙ্গে চায়ের কচি পাতা খাওয়ার প্রথা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, রসুনসহ অন্যান্য উপাদান। শ্রমিকদের ভাষায় চাপাতি ভর্তা। এর বর্তমান নাম পাতিচখা।
চা বাগানের শ্রমিকদের সকাল থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাগানে কাজ করতে হয়। দুপুরে ঘরে ফেরার সুযোগ নেই তাদের।
কথা হলে করিমপুর চা বাগানের শ্রমিক নেতা জাবেদ খান বলেন, “নারী শ্রমিকরা দুপুরে খাবার জন্য দুইটি রুটি সঙ্গে নিয়ে যান। এর সঙ্গে যোগ হয় চানাচুর, সিদ্ধ করা আলু, মরিচ, চায়ের কচি পাতা রসুন, পেঁয়াজসহ অন্যান্য উপাদান। ভর্তা খাওয়ার প্রথা আদিকাল থেকে চলে আসছে।”
ওই চা বাগানের সাবেক পঞ্চায়েত সভাপতি ৮০ বছর বয়সী কতুব আলী বলেন, “পাতিচখা এটি আদিকাল থেকে চলে আসছে। নাস্তা খাওয়ার পর শরীরে এনার্জি আসে, সেটি খেয়ে আবার কাজে মন দেন শ্রমিকরা।”
ঢাকা/মাসুদ