১৪০ টাকার বিরিয়ানি কিনতে ৩৮৫ টাকার ভাউচার
Published: 17th, June 2025 GMT
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলাধীন ডুরিং মডেল গ্রাম সমবায় সমিতির বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগ উঠে আসছে। ঋণসহায়তা ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে প্রশিক্ষণ প্রদান, উন্নত মানবসম্পদ গড়ে তোলাসহ সমিতির বিভিন্ন কার্যক্রমে এসব অনিয়ম হয়েছে বলে জানা গেছে। তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে এসব অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
শুধু তাই নয়, সমবায় সমিতির বিভিন্ন খাতে অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে সরকারি টাকা লুটপাটের নজির দৃশ্যমান। অথচ মডেল গ্রামের ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত সুবিধাপ্রাপ্তি নিশ্চিত হয়নি অনেকের ক্ষেত্রেই।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত সরকারের অনেক প্রশ্নবিদ্ধ কাজের মাঝেও এই মডেল গ্রাম প্রকল্পটি ছিল ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ। সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং ব্যবস্থাপনার কারণে
অধিকাংশ সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে তা কোনো কাজে আসেনি। বরং তাদের নাম ভাঙিয়ে সুবিধা নিয়েছে বিশেষ মহল।
পিছিয়ে পড়া প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে উন্নত জীবনধারায় তুলে আনতে বিগত সরকারের সময় একটি পাইলট প্রকল্প নেওয়া হয়। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের আটটি বিভাগ থেকে নির্বাচিত দশটি গ্রামকে মডেল গ্রাম হিসেবে প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের মূল দায়িত্ব ছিল সমবায় অধিদপ্তরের হাতে।
সার্বিক সহায়তা দিয়েছিল পরিকল্পনা কমিশনের পানিসম্পদ ও পল্লি প্রতিষ্ঠান বিভাগের স্টোর কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছিল এসব মডেল গ্রাম স্থানীয় জনগণের জন্য শহরের সব সুবিধাসহ জীবন যাপনের সুযোগ নিশ্চিত করা হবে।
এই দশটি গ্রামের একটি হচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার ডুংরিয়া গ্রাম। গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডুংরিয়া মডেল গ্রামে যে সমবায় সমিতি আছে তার সহায়তা পাচ্ছেন না অসচ্ছল ও নিম্ন আয়ের মানুষ। সম্পৃক্ততায় সে সুবিধা ভোগ করছেন স্থানীয় একাধিক সচ্ছল প্রভাবশালী ব্যক্তি।
সূত্র জানায়, সমিতিতে একজন সদস্যকে একাধিক দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে বঞ্চিত করা হয়েছে ন্যায্যভাবে যারা এই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য ছিলেন। শুধু তাই নয় অতিরিক্ত খাবার বিল দেখিয়ে প্রশিক্ষণে ব্যয় বাড়ানো ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ ছাড়াই ঋণ বিতরণ করার মতো অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট পর্যায় থেকে।
দায়িত্বশীলরা বলছেন, সমবায় সমিতির তৎকালীন সভাপতি, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেন পরিকল্পনামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। সে সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন তিনি। করেছেন প্রকাশ্য অনিয়ম।
জানা যায়, নূর হোসেন নামের এই আওয়ামী লীগ নেতা মডেল গ্রামের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে অনিয়ম আর দুর্নীতিতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর এই দুর্নীতি গিয়ে পৌঁছে ছিল খাবার প্যাকেটেও। সভা-সেমিনার প্রশিক্ষণে কেনা ১৪০ টাকা প্যাকেট বিরিয়ানি, ভাউচারে ৩৮৫ টাকা লেখা হতো তাঁর নির্দেশে, এ অতিরিক্ত অর্থ আদায় হতো সরকারের কাছ থেকে।
২০২৩ সালে ২ কোটি ৩২ লাখ ৫৭ হাজার ৭৯০ টাকা বাজেট নির্ধারণ করে শান্তিগঞ্জ উপজেলার সাবেক মন্ত্রীর নিজ গ্রাম ডুংরিয়ায় অবকাঠামো নির্মাণও শুরু করে এলজিইডি।
শুরুতেই কার্যনির্বাহী কমিটি গঠন করে সমিতির কার্যক্রম শুরু করা হয়। সাবেক এই মন্ত্রীর পরামর্শ নিয়ে কমিটির সদস্য ঠিক করা হয়। সেখানে সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নূর হোসেনকে সভাপতি করে ১২ সদস্য বিশিষ্ট ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়।
মডেল গ্রাম সমবায় সমিতির নীতিমালা অনুযায়ী, সমিতির সদস্যদের দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণ,
ঋণ বিতরণের সুপারিশ করবে ব্যবস্থাপনা কমিটি। এই নীতিমালার সুযোগ নিয়ে নুর হোসেন একেকজন সদস্যকে একাধিক দক্ষতা উন্নয়নে প্রশিক্ষণের সুযোগ করে দেন। ঋণও পছন্দের ব্যক্তিদের মাঝে বিতরণ করেন। ইতোমধ্যে ২৪৬ জন সদস্যের মাঝে ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে সমিতি থেকে।
জেলা সমবায় অফিসের তথ্য মতে, প্রতি সদস্যের কাছ থেকে শুরুতে ১ হাজার ৪০০ টাকা করে আদায় করা হয়েছে। এই টাকার মধ্যে, ৫০০ টাকা শেয়ার, ৫০০ টাকা সঞ্চয়, ভর্তি ফিস ২০০ ও বিবিধ খাতে জমা হয়েছে ২০০ টাকা। এতে মোট ৫৮০ জন সদস্যের কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে ৮ লাখ ১২ হাজার টাকা। সমিতির ব্যাংক হিসাবে বর্তমানে জমা রয়েছে ৪ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। বাকি ৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকার মধ্যে কমিটির তৎকালীন সভাপতি নুর হোসেন খরচ দেখিয়েছেন ১ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। সেই হিসাবে ১ লাখ ৭৯ হাজার টাকা ঘাটতি রয়েছে, যার খরচ দেখাতে পারেননি নুর হোসেন। তিনি প্রায় তিন বছর দায়িত্বে থেকেছেন। গেল বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে হওয়া নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত নতুন কমিটি আগের ঘাটতির টাকার দায় নিতে চায়নি বলে জানা গেছে।
প্রকল্পটি চালুর পরে গাভি পালন, মৎস্য চাষ, সবজি চাষ, গরু মোটাতাজাকরণ, ছাগল-ভেড়া ও হাঁস-মুরগি পালন বিষয়ে মোট দশটি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়। তিন দিন মেয়াদি দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করা কমিটির সদস্যদের ১ হাজার ৫০০ টাকা সম্মানী ও ৬০০ টাকা যাতায়াত ভাতা দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রতিটি প্রশিক্ষণের বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। অন্যান্য খরচের মধ্যে সেখানে খাবার বাবদ ব্যয় ধরা হয়েছে জনপ্রতি ৫০০ টাকা। অভিযোগ উঠেছে, প্রশিক্ষণে দুপুরে বিরিয়ানি খাওয়ালেও রেস্টুরেন্টের সাদা ভাউচার সংগ্রহ করে অতিরিক্ত টাকা খরচ দেখিয়েছেন কর্মকর্তারা।
এরকম একটি ভাউচার এসেছে সমকালের এই প্রতিবেদকের হাতে। তাতে দেখা যায়, শান্তিগঞ্জের রাজধানী রেস্টুরেন্টের ২০২২ সালের এই ভাউচারে দুপুরের খাবার বাবদ জনপ্রতি খরচ ধরা হয়েছে ৩৮৫ টাকা। সে হিসাবে ৪৫ জনের দুপুরের খাবার বিল ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৩২৫ টাকা।
এ বিষয়ে রাজধানী রেস্টুরেন্টের মালিক শ্যামল দেব বলেন, তাদের ৪টি প্রশিক্ষণে বিরিয়ানি সরবরাহ করেছিলেন তিনি। বিরিয়ানির দাম এখন নেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা। ২০২২ সালে ১৪০ টাকা করে বিরিয়ানি দেওয়া হয়েছে। কর্মসূচি চলাকালে সাদা ভাউচারও নিয়েছেন তারা। এখন দেখি ভাউচারে ৩৮৫ টাকা লেখা রয়েছে। এই ভাউচারে লেখা ও স্বাক্ষর তাঁর নয়।
ডুংরিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো.
সমবায় সমিতির সদস্য মো. নুরুল ইসলাম বলেন, ‘সমিতির সদস্য হতে প্রথমে ১৪০০ টাকা দিয়েছি। এরপর দক্ষতা উন্নয়নের কোনো প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করতে ডাকা হয়নি। দুই দিন দুটি
সভায় উপস্থিত ছিলাম। পরে ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করি। ৬ মাস পর থেকে কিস্তির মাধ্যমে সে ঋণ পরিশোধ করেছি।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব র য় ন ব তরণ জন সদস য মন ত র র ৫০০ ট ক ব যবস থ প রকল প র সদস য সরক র র অন য ম গঠন ক উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
ওয়ানডের যে ১০টি রেকর্ড (হয়তো) ভাঙবে না কোনো দিন
রেকর্ড নাকি হয়ই ভেঙে যাওয়ার জন্য। তারপরও কিছু রেকর্ড থাকে, যা কোনো দিন ভাঙবে বলে বিশ্বাস হতে চায় না। ওয়ানডে ক্রিকেটের এমন সব রেকর্ড থেকে ১০টি বেছে নিয়েছেন উৎপল শুভ্র।১. শচীন টেন্ডুলকারের ১৮,৪২৬ রানওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক শচীন টেন্ডুলকার