ইসরায়েলের দানবীয় রূপ কেবল ইরানের জন্যই হুমকি নয়
Published: 17th, June 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী নরওয়েজিয়ান সরকারের স্কলারশিপে ইউনিভার্সিটি অব বার্গেন থেকে এমফিল এবং অস্ট্রেলিয়ান সরকারের স্কলারশিপে ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইংল্যান্ড থেকে হাইব্রিড পিসবিল্ডিংয়ে পিএইচডি সম্পন্ন করেন। তাঁর গবেষণাকর্ম জাতিসংঘ-সম্পৃক্ত সংস্থা ও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন প্রকাশনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। গবেষণার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে হাইব্রিড পিসবিল্ডিং, সিকিউরিটোলজি, শরণার্থী অধ্যয়ন এবং আন্তঃরাষ্ট্রীয় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। তিনি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থার সঙ্গে গবেষণা ও নীতিগত পরামর্শমূলক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে যুক্ত। পাশাপাশি তিনি সংবাদমাধ্যমে সামাজিক-রাজনৈতিক বিষয়ে বিশ্লেষণ ও মতামত দিয়ে থাকেন। সমকালের পক্ষ থেকে তাঁর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন সহসম্পাদক ইফতেখারুল ইসলাম।
সমকাল: ইরান-ইসরায়েলের চলমান উত্তেজনার পেছনের কারণ কী বলে মনে করেন?
সাজ্জাদ হোসেন সিদ্দিকী: এই উত্তেজনার পেছনের সব কারণ সমানভাবে দৃশ্যমান নয়। কিছু কারণ রয়েছে, যেগুলো আমাদের আবেগ, বিশ্বাস ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ দ্বারা প্রভাবিত হয়। কিন্তু প্রকৃত, মৌলিক কারণগুলো অনেক গভীরে লুক্কায়িত থাকে, যেগুলো অনুধাবনের জন্য দরকার বিশ্লেষণী দৃষ্টিভঙ্গি ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সঠিক বোঝাপড়া। আমরা সাধারণত যা দেখি, শুনি কিংবা যা আমাদের সামনে পরিবেশিত হয়, তাকেই ‘সত্য’ বলে ধরে নিই। কিন্তু ইসরায়েল-ফিলিস্তিন-ইরান তথা মধ্যপ্রাচ্য সংকটকে শুধু মুসলিম বনাম অমুসলিম দ্বৈত বিভাজনে বা ‘বাইনারি’ আকারে দেখলে বাস্তবতা ধরা পড়বে না। বরং এর পেছনে রয়েছে উন্নয়নশীল ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর ভঙ্গুর, অন্তঃসারশূন্য, ও অগণতান্ত্রিক রাষ্ট্রীয় কাঠামো।
সমকাল: বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করবেন?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: এই সংকট বিশ্লেষণে ইতিহাসের দিকে তাকানো জরুরি। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৭৯ সালে ইরানে যখন রেজা শাহ পাহলভির শাসনের পতন ঘটে এবং তিনি দেশত্যাগে বাধ্য হন, তখন তিনি একা পালিয়ে যাননি। তাঁর সঙ্গে পালিয়েছিল একটি গোটা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক বলয়। এই বলয় পরবর্তীকালে পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে আঁতাতের ভিত্তিতে পারস্পরিক সুবিধা আদান-প্রদান শুরু করে। গোয়েন্দা কার্যক্রমসহ নানা ধরনের প্রভাব ও হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো চেয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট যেন কখনোই পুরোপুরি স্থিতিশীল না হয়। এই পলাতক বলয় এবং পশ্চিমা শক্তি যে এখনও সক্রিয়, তার প্রমাণ আমরা বর্তমান ঘটনাবলিতে দেখতে পাচ্ছি। শাহ বংশের উত্তরসূরিরা আজও বিভিন্নভাবে এই পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। ইরানের ক্ষয়ক্ষতিতে তাদের উল্লাস করতে দেখছি। অর্থাৎ ইরানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দুর্বলতা, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভঙ্গুরতা এবং জনগণের শাসন ব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্নতা– এ সবকিছু মিলেই এই সংকট গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী করেছে।
সমকাল: এর বাইরে আর কোনো গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে কি?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সাধারণত মুসলিম বিশ্ব একতাবদ্ধ হলেও মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান শক্তিগুলো, যেমন সৌদি আরব, আবুধাবি ও দুবাই প্রত্যক্ষভাবে জোট বাঁধে না বা বিরোধিতাও করে না। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন। এবার শুধু মুসলিম দেশ নয়, বরং গ্রেটা থুনবার্গসহ বহু ইসরায়েলবিরোধী শক্তি মধ্যপ্রাচ্যের বাইরেও সক্রিয়। এটি কাকতালীয় নয়, বরং একটি কারণভিত্তিক বাস্তবতা। অতীতে ইসরায়েল- বিরোধিতা মূলত মুসলিম দেশগুলোতে সীমাবদ্ধ থাকলেও, এবার তার প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বহু অমুসলিম দেশে। এটিই এ মুহূর্তের আন্তর্জাতিক রাজনীতির একটি নতুন মাত্রা।
সমকাল: এই পরিস্থিতি কি শুধু মধ্যপ্রাচ্যেই সীমাবদ্ধ?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: না, একেবারেই না। বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপালসহ অনেক অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রেও এর প্রতিফলন দেখা যায়। এসব দেশে যখন কোনো সংকট মুহূর্তে শাসকগোষ্ঠী দেশত্যাগে বাধ্য হয়, তখন তুলনামূলক শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলো সেই শূন্যতাকে কাজে লাগিয়ে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে সক্রিয় হয়। পালিয়ে যাওয়া নেতারাও অনেক সময় পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে আঁতাত করে দেশে ফিরে ক্ষমতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালান। এতে দুর্বল রাষ্ট্রগুলো চিরস্থায়ীভাবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বৈদেশিক প্রভাবের মধ্যে আবর্তিত হতে থাকে।
সমকাল: তাহলে কি আপনি বলছেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাত অনিবার্য ছিল?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: অবশ্যই। এর পেছনে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট যেমন আছে, তেমনি সাম্প্রতিক ঘটনাবলিও এই সংঘাতকে অনিবার্য করে তুলেছে। তত্ত্বীয় দৃষ্টিকোণ থেকে একে বলা যায় ‘কনফ্লিক্ট ইজ ইনেভিটাবল’। যেমনটি আমরা হিন্দু-মুসলিম, আস্তিক-নাস্তিক, ইহুদি-অইহুদি, ইসলামিস্ট-নন ইসলামিস্ট বাইনারি বিরোধে দেখতে পাই। বর্তমান আন্তর্জাতিক রাজনীতিও এই ধাঁচের বাইনারি বিভক্তির ফাঁদে পড়েছে। একদিকে ঐতিহাসিক বিভাজন, অন্যদিকে ফিলিস্তিনের পক্ষে মানবাধিকারপক্ষের শক্তির সংগঠিত হওয়া– এই দুইয়ের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল ইরানকে হুমকি মনে করছে। সেই হুমকি ঠেকাতে ইসরায়েল আগাম হামলা চালায়; বিশেষ করে যখন তারা বুঝতে পারে ইরান, পাল্টা জবাব দেবে এবং প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হবে।
সমকাল: ইসরায়েল কেন এমন দানব হয়ে উঠেছে?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: মার্কিন অর্থনীতিবিদ ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ডব্লিউ.
সমকাল: মধ্যপ্রাচ্যে এই দীর্ঘস্থায়ী সংকটের মূল কারণ কী?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: ইসরায়েলি সংকটকে ঐতিহাসিক ‘ইগো’র বহিঃপ্রকাশ বলা যায়। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি এমন– ‘আমি এখানে ছিলাম, বিতাড়িত হয়েছিলাম, আবার ফিরে আসব।’ এখানে জাতিসংঘ কী বলছে, জাতিরাষ্ট্রের ধারণা কী– সেসব তাদের কাছে গৌণ। একসময় সাম্রাজ্য বিস্তার ছিল বৈধতার আওতায়। কিন্তু ওয়েস্টফেলিয়া চুক্তি, জাতিসংঘ ও জাতিরাষ্ট্রের ধারণার কারণে পৃথিবী সেই সময় পেরিয়ে এসেছে। ইসরায়েল এখন সেই পুরোনো সাম্রাজ্যবাদী বিশ্ব ফিরিয়ে আনতে চাইছে। আধুনিক আন্তর্জাতিক আইন, ন্যায়বিচার, মানবিক মূল্যবোধ– সবকিছুই তারা পদদলিত করছে। তাদের আদর্শিক ভিত্তি হচ্ছে থিওডর হার্জলের সেই স্বপ্ন, যেখানে একটি একক ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। সেই পথেই তারা এগিয়ে যাচ্ছে– ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে, দখল করে এবং আধুনিক মানবতাবোধকে অগ্রাহ্য করে।
সমকাল: মধ্যপ্রাচ্যের এই সংকট অনেকে ধর্মীয় বলে মনে করেন। আপনার মত কী?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু শুধু ধর্মীয় কিংবা সাম্প্রদায়িক দ্বন্দ্বের প্রশ্ন নয়; বরং এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ও ভূরাজনৈতিক সমস্যার প্রতিফলন, যা মূলত রাষ্ট্রীয় সক্ষমতা, অংশগ্রহণমূলক শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং বাইরের শক্তির হস্তক্ষেপের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে। এই সংকট নিরসনে দরকার একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই রাজনৈতিক বন্দোবস্ত, যা দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত। ইসরায়েলের দানবীয় রূপ, পশ্চিমা পক্ষপাতদুষ্ট নেতৃত্ব এবং আমাদের নিজস্ব চিন্তার দৈন্য– সব মিলিয়ে এই সংকট আরও গভীর করছে। গোটা বিশ্বব্যবস্থাকেই নাজুক করে তুলেছে। এটা কেবল ফিলিস্তিন কিংবা ইরানের জন্য হুমকি নয়, বরং গোটা বিশ্বের জন্য। প্রযুক্তি ও অর্থনীতি দিয়ে সাময়িকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা গেলেও মানবতার পক্ষ না নিলে এই দানবীয় ধারা থামানো যাবে না। তবে এই সংঘাত একটি নিয়ন্ত্রিত উত্তেজনার জন্ম দিচ্ছে, যা স্বল্প মেয়াদে অর্থনীতি ও কূটনীতিতে প্রভাব ফেললেও দীর্ঘ মেয়াদে মানবাধিকারের প্রশ্নে বিশ্বকে একটি নতুন অবস্থানের মুখে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে।
সমকাল: বিশ্বনেতৃত্ব গাজা যুদ্ধ থামাতে ব্যর্থ কেন?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: কারণ বিশ্বনেতৃত্ব এখন অন্তর্ভুক্তিমূলক নয়। এটি একটি ন্যাটোকেন্দ্রিক ব্লকে পরিণত হয়েছে, যারা পশ্চিমা আদর্শ ও স্বার্থের পৃষ্ঠপোষক। তারা যুক্তরাষ্ট্রের ছায়ায় কাজ করে। যেমন যুক্তরাষ্ট্র যখন ইরাক আক্রমণের ঘোষণা দেয়, তখন ব্রিটেন দৌড়ে সৈন্য পাঠায়। এই নেতৃত্ব কখনও ন্যায়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা ‘ক্ল্যাশ অব সিভিলাইজেশন’ তত্ত্বে অনুপ্রাণিত, যেখানে প্রাচ্যের সংস্কৃতি ও চিন্তাভাবনাকে তারা এখনও অপূর্ণাঙ্গ মানব বা ‘সাব-হিউম্যান’ বিবেচনা করে। এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে প্রাচ্যের কোনো জনগোষ্ঠী আক্রান্ত হলে সেটাকে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে স্বীকার করে না। বরং তাদের বোঝাপড়ায় এক ধরনের সাংস্কৃতিক কুসংস্কার রয়ে গেছে। এ কারণেই বিশ্বনেতৃত্ব পক্ষপাতদুষ্ট এবং আগ্রাসন ও আধিপত্যবাদকে প্রশ্রয় দেয়।
সমকাল: ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা কি এই নির্যাতনের পক্ষে?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: মানুষের পক্ষে একেবারে নিরপেক্ষ থাকা সম্ভব নয়। কেউ জুলুমের পক্ষে, কেউ মজলুমের। মাঝামাঝি কোনো অবস্থান নেই। আপনি যদি অন্যায়ের প্রতিবাদ না করে চুপ থাকেন, সেটাকে নিরপেক্ষতা বলা যায় না; বরং তা হলো জুলুমকারীকে মৌন সমর্থন। এটি শুধু পাশ্চাত্যে নয়, আমাদের দেশেও সত্য। যেমন গ্রামশি বলেছিলেন, সমাজের মধ্যবিত্ত বা শিক্ষিত শ্রেণি অনেক সময় সচেতনভাবে অন্যায়ের পক্ষ নেয়। বাংলাদেশেও এই অবস্থা প্রকট। আমাদের সিভিল সোসাইটি বা শিক্ষিত সমাজের বড় অংশই সমাজকে গভীরভাবে বোঝার দিক থেকে পিছিয়ে।
দায়িত্ব পেয়ে চেয়ারে বসলেই এক ধরনের ক্ল্যাসিস্ট পশ্চিমা আধিপত্যবোধ তাদের আচরণে চলে আসে। তারা নিজেদের মধ্যে একটি গভীর সাংস্কৃতিক উপনিবেশ বহন করে, যা মানবাধিকার ও ন্যায়ের প্রশ্নে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকৃত করে তোলে। সৌদি আরবসহ ২১টি মুসলিম দেশ ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা জানালেও এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকা ঐতিহাসিক ভুল হিসেবেই চিহ্নিত হবে।
সমকাল: বিশ্ব পরিস্থিতিতে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কী ধরনের প্রভাব ফেলছে বলে আপনি মনে করেন?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক অর্থনীতির ওপর এই সংঘাতের কিছুটা ধাক্কা লাগবে নিঃসন্দেহে, তবে সেটা হবে সীমিত এবং সাময়িক। যুদ্ধটি যদি বৃহৎ আকারে না ছড়ায়, যা এখনই সম্ভাব্য বলে মনে হচ্ছে না, তাহলে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন না-ও আসতে পারে। তবে তেলের বাজারে কিছুটা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে, যার প্রভাবে শ্রমবাজারে (বিশেষত প্রবাসী কর্মীদের ক্ষেত্রে) কিছু চাপ আসবে। এর ফলে বাংলাদেশের রেমিট্যান্সনির্ভর অর্থনীতি সাময়িক সংকটে পড়তে পারে এবং বাজেট ঘাটতি বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। সুতরাং সামগ্রিকভাবে এটি একটি নিয়ন্ত্রিত কিন্তু দৃষ্টিগোচর প্রভাব ফেলতে পারে।
সমকাল: বাংলাদেশে এই সংঘাতের প্রতিক্রিয়া কীভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: প্রাথমিকভাবে প্রবাসী কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। নতুনভাবে অভিবাসনের সুযোগ কিছুদিনের জন্য কমে আসতে পারে এবং কিছু দেশে অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর প্রবণতাও দেখা দিতে পারে। এতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে কিছুটা ব্যাঘাত ঘটবে এবং তা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রধান দেশগুলো একটি নীতিগত দ্বিধার মুখোমুখি হবে। তারা কি পশ্চিমা প্রভাব-আধিপত্যের পক্ষে থাকবে, নাকি মানবাধিকার ও যুদ্ধবিরোধী অবস্থানের পক্ষে একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে? এসব দেশের সরকার এই নৈতিক ও কূটনৈতিক সংকটে চাপের মধ্যে পড়বে বলে মনে করি।
সমকাল: এই সংঘাত ভবিষ্যতে কী রূপ নিতে পারে বলে আপনি মনে করেন?
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: এই যুদ্ধ সম্পূর্ণরূপে বিস্তৃত হবে– এমনটা এখনও সম্ভাব্য নয়। বরং দুই পক্ষই একে অপরকে চাপে রাখতে পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়ে যাবে এবং মধ্যবর্তী সময়ে নিজেদের আন্তর্জাতিক মিত্রদের পাশে টানার চেষ্টা করবে। যেমন ইরান রাশিয়া, উত্তর কোরিয়া এবং পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রাখবে। অন্যদিকে ইসরায়েলও বড় আক্রমণের আগে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে কৌশল নির্ধারণ করবে। তবে বিগত অভিজ্ঞতা বলে, তারা বড় হুমকি দিলেও সেভাবে বড় মাত্রার সামরিক অভিযানে যায় না। কারণ ব্যাপক সংঘর্ষ হলে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি এসে যায় এবং সেখানেই আন্তর্জাতিক সিভিল সোসাইটি ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর চাপ কাজ করতে শুরু করে। এই চাপের ফলে যুদ্ধ নিয়ন্ত্রণের একটি স্বাভাবিক প্রবণতা দেখা দেয়।
সমকাল: আপনাকে ধন্যবাদ।
সাজ্জাদ সিদ্দিকী: সমকালকেও ধন্যবাদ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র ইসর য় ল র র জন ত ক এই স ঘ ত ন র জন য পর স থ ত ব যবস থ অবস থ ন আম দ র র একট ধরন র সমক ল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
বলিউড বাদশা শাহরুখ খান। অভিনয় গুণে কোটি কোটি ভক্তের হৃদয়ে দোলা দিয়েছেন তিনি। দীর্ঘ অভিনয় ক্যারিয়ারে যশ-খ্যাতি যেমন পেয়েছেন, তেমনি আয় করেছেন মোটা অঙ্কের অর্থও। রবিবার (২ নভেম্বর) ৬০ বছর পূর্ণ করে একষট্টিতে পা দেবেন এই তারকা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অনেক নায়িকার সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন শাহরুখ খান। তাদের মধ্যে অন্যতম জুহি চাওলা। ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’, ‘রামজানে’, ‘ডর’, ‘ইয়েস বস’, ‘ডুপ্লিকেট’সহ আরো কিছু জনপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন এই জুটি। একসঙ্গে অভিনয় ছাড়াও, এই দুই তারকা বাস্তব জীবনে খুবই ভালো বন্ধু। কেবল তাই নয়, ব্যবসায়ীক অংশীদারও তারা।
আরো পড়ুন:
শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?
পাকিস্তানের সন্ত্রাসী তালিকায় সালমান খান কেন?
বন্ধু শাহরুখের জন্মদিন উপলক্ষে হিন্দুস্তান টাইমসের সঙ্গে কথা বলেছেন জুহি। এ আলাপচারিতায় স্মৃতিচারণ তো করেছেনই, পাশাপাশি শাহরুখের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছেন এই অভিনেত্রী।
শাহরুখের সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “আমি যখন প্রথম ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হই, তখন সহপ্রযোজক বিবেক ভাসওয়ানি আমাকে বলেছিলেন, ‘আমার নায়ক দেখতে আমির খানের মতো।’ আমি শাহরুখকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছিলাম। দেখি, শাহরুখের চুল চোখের ওপরে নেমে এসেছে। আর সে একেবারেই আমার কল্পনার সেই ‘চকলেট বয়’ নয়! যখন কাজ শুরু করি, তখন বুঝতে পারি, সে একদম নতুন অভিনেতাদের মতো নয়, সে পরিশ্রমী, দিনে তিন শিফটে কাজ করছে।”
একটি ঘটনা বর্ণনা করে জুহি চাওলা বলেন, “আমার মনে আছে, ‘ইয়েস বস’ সিনেমার শুটিংয়ের সময়, কোনো দৃশ্য ঠিকমতো লেখা না থাকলে পরিচালক আজিজজি (আজিজ মির্জা) বলতেন, ‘শাহরুখ আসুক, সব ঠিক হয়ে যাবে।’ রোমান্স আর মজার মিশেলে থাকা দৃশ্যগুলো আমাদের সবচেয়ে ভালো ছিল। সেই সূত্রেই আমরা অনেকগুলো সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছি।”
শাহরুখের পাশে অবস্থান করলে সাবধান থাকার কথার কথা বলেছেন জুহি। হাসতে হাসতে এ অভিনেত্রী বলেন, “শাহরুখের আশেপাশে থাকলে সাবধানে থাকবেন। কারণ সে কথা দিয়ে আপনাকে যেকোনো কিছু করাতে রাজি করিয়ে ফেলতে পারে। ওর কথাবলার ভঙ্গি এমন যে, আপনি ‘না’ বলতেই পারবে না। আমি ‘ডুপ্লিকেট’ সিনেমা করতে চাইছিলাম না, কারণ সেখানে আমার তেমন কিছু করার ছিল না। আমরা তখন আরেকটি সিনেমার শুটিং করছিলাম, আর শাহরুখ আমাকে সিঁড়িতে বসিয়ে দুই ঘণ্টা বোঝায় এবং আমি সিনেমাটিতে চুক্তিবদ্ধ হই। সে আপনাকে যেকোনো কিছু করতে রাজি করাতে পারে, তাই সাবধানে থাকবেন।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের বিষয়ে জুহি চাওলা বলেন, “অফস্ক্রিনে আমাদের সম্পর্কেও উত্থান-পতন রয়েছে। কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কোনো না কোনোভাবে আমাদের যুক্ত রেখেছেন, এমনকি আইপিএলের মাধ্যমেও। আমাদের বন্ধন কোনো পরিকল্পনার ফল নয়, এটা একেবারেই ভাগ্যের ব্যাপার।”
শাহরুখ খানের সঙ্গে আইপিএল দল কলকাতা নাইট রাইডার্সের (কেকেআর) সহ-মালিক জুহি ও তার স্বামী জয় মেহতা। এই দলের পেছনে জুহি বিনিয়োগ করেছেন ৬২৯ কোটি রুপি। বর্তমানে এই দলটির মূল্য আছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি রুপি। শাহরুখ খানের সঙ্গে ‘রেড চিলিস গ্রুপ’ প্রতিষ্ঠা করেন জুহি।
১৯৬৫ সালে ২ নভেম্বর ভারতের নয়াদিল্লিতে এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শাহরুখ খান। তার শৈশবের প্রথম পাঁচ বছর কেটেছে ম্যাঙ্গালুরুতে। শাহরুখের দাদা ইফতিখার আহমেদ স্থানীয় পোর্টের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যার কারণে সেখানে বসবাস করেন তারা। শাহরুখের বাবার নাম তাজ মোহাম্মদ খান, মা লতিফ ফাতিমা।
দিল্লির হংসরাজ কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন শাহরুখ খান। তারপর জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়াতে গণযোগাযোগ বিষয়ে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু অভিনয় জীবন শুরু করার কারণে পড়াশোনা ছেড়ে দেন তিনি। তবে বলিউডে ক্যারিয়ার শুরুর দিকে দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামা-তে ভর্তি হন এই শিল্পী।
১৯৯২ সালে ‘দিওয়ানা’ সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন শাহরুখ খান। রোমান্টিক ঘরানার এ সিনেমায় অভিনয় করে নজর কাড়েন তিনি। সিনেমাটিতে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের কারণে সেরা নবাগত অভিনেতা হিসেবে ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
একই বছর ‘চমৎকার’, ‘দিল আসনা হে’ ও ‘রাজু বান গায়া জেন্টলম্যান’ সিনেমায় অভিনয় করেন শাহরুখ। তার পরের বছর ‘ডর’ ও ‘বাজিগর’ সিনেমায় অভিনয় করে নিজের জাত চেনান শাহরুখ। তার অভিনয়ের জাদুতে মুগ্ধ হন কোটি ভক্ত; পৌঁছে যান সাফল্যের চূড়ায়। তার অভিনয়ের খ্যাতি আরো বাড়তে থাকে যশরাজ ফিল্মসের সিনেমায় ধারাবাহিকভাবে অভিনয় করে। একের পর এক হিট সিনেমা দিয়ে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে অবস্থান করেন শাহরুখ। যদিও তার এই সফলতার জার্নির গল্প মোটেও সহজ ছিল। আর সে গল্প সবারই জানা।
অভিনয় ক্যারিয়ারে অসংখ্য সম্মাননা পেয়েছেন শাহরুখ খান। তার মধ্যে মোট পনেরোবার ফিল্মফেয়ার পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। এর মধ্যে আটবার সেরা অভিনেতা হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। হিন্দি সিনেমায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০০২ সালে তাকে পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করে ভারত সরকার। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করেছেন মোট পাঁচবার। তবে শাহরুখ খানের ৩৩ বছরের অভিনয় ক্যারিয়ারে অধরা ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। চলতি বছর ‘জওয়ান’ সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতা বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন শাহরুখ।
ঢাকা/শান্ত