বরগুনায় ডেঙ্গু এত বৃদ্ধির পেছনে ‘ভিন্ন’ একটি কারণ, কী সেটা
Published: 18th, June 2025 GMT
শীতের মধ্যে বরগুনায় এডিস মশার লার্ভার মাত্রাতিরিক্ত উপস্থিতি চিন্তিত করেছিল গবেষকদের। শুধু বরগুনায় নয়, বরিশাল বিভাগের নানা স্থানে এডিসের উপস্থিতি পাওয়া যায় জরিপের সময়। জরিপ হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে।
ওই জরিপে থাকা এক গবেষক বলেন, লার্ভা পাওয়ার স্থানগুলো ছিল ভিন্ন ধরনের। ডেঙ্গুর বিস্তারের ক্ষেত্রে সেটা একটা নতুন দিক উন্মোচন করেছে বলা যায়।
এডিস মশার অবস্থা বুঝতে দেশে সাধারণত তিন দফা জরিপ হয়। বর্ষার আগে, বর্ষার সময় এবং পরে। জরিপে এডিস মশার ঘনত্ব দেখে আগাম ধারণা পাওয়া যায়, ডেঙ্গুর প্রকোপ কতটুকু হবে। এসব জরিপ হয় মূলত ঢাকার দুই সিটিসহ বিভিন্ন সিটি করপোরেশনে। অন্য স্থানেও হয় কখনো কখনো। এবার প্রাক্–বর্ষা জরিপ হয় সিটি করপোরেশনগুলোর পাশাপাশি দেশের অন্যত্রও। বিশেষ করে বরগুনাসহ বরিশাল বিভাগের কয়েকটি স্থানে জরিপ হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময় এ জরিপ শেষ করেছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনির্ণয় ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সংক্রামক রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা (সিডিসি)।
আরও পড়ুনবরগুনায় ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে, নার্সদের ডেস্কের পেছনে, ওয়ার্ডের বারান্দায়১ ঘণ্টা আগেআইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা.মুশতাক হোসেন
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বরগ ন য়
এছাড়াও পড়ুন:
‘বরগুনায় ডেঙ্গুর বিস্তার বড় সংকটের ইঙ্গিত’
দক্ষিণের জেলা বরগুনায় চলতি বছর ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তার ভাবাচ্ছে জনস্বাস্থ্যবিদ, চিকিৎসক, গবেষক ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর ব্যক্তিদের। এই জেলায় ডেঙ্গুর বিস্তার এবার এত কেন, তা জানতে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) একদল গবেষক গত রোববার সেখানে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। আর এর প্রায় অর্ধেক বা তার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বরিশাল বিভাগে। বরগুনা এ বিভাগেরই একটি জেলা।
এই বিভাগের আবার অর্ধেক বা তার বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বরগুনায়।
শেষ ২৪ ঘণ্টায় (রোববার সকাল থেকে গতকাল সোমবার সকাল পর্যন্ত) দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪৩ জন। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগে ১১৯ জন। আর বরগুনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬৫।
বরগুনায় ডেঙ্গুর বিস্তার নিছক সংখ্যার আধিক্যের বিষয় নয় বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদ বে-নজীর আহমেদ। তিনি গতকাল বলেন, ‘ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে আমাদের কৌশলগত লড়াইয়ের সীমাবদ্ধতার দিকটিও তুলে ধরছে বরগুনার বর্তমান পরিস্থিতি। আমরা অনেক আগে থেকেই বলছিলাম, ডেঙ্গু শুধু ঢাকার নয়, এর বিস্তার ঘটতে পারে সারা দেশে। এখন তা–ই ঘটছে। বরগুনায় ডেঙ্গুর বিস্তার বড় সংকটের ইঙ্গিত দিচ্ছে।’
কেমন হতে পারে সেই বড় সংকট? উত্তরে বে-নজীর আহমদ বলেন, রাজধানীতে সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা, বড় বড় হাসপাতাল, আইইডিসিআরের উপস্থিতি আছে। এডিস নিয়ন্ত্রণে সীমাবদ্ধতার পরও দুই সিটির কর্মীদের এডিস নিয়ন্ত্রণে দক্ষতা বা কারিগরি জ্ঞানও আছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে এমন অবস্থা কোথাও নেই। বরগুনার মতো অঞ্চলে তো নেই-ই। এভাবে দেশের প্রত্যন্ত এলাকায় ডেঙ্গুর বিস্তার হলে পরিস্থিতি ভয়ানক হয়ে উঠতে পারে।
এ পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যু হয়েছে ৩০ জনের। এর মধ্যে বরগুনাতেই মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। বরিশাল বিভাগে মৃত্যু আটজনের। ডেঙ্গুতে দেশের এক–পঞ্চমাংশ মৃত্যু হচ্ছে একটি জেলায়, বরগুনায়।
এ জেলায় ডেঙ্গুর এত বিস্তার কেন, তা জানতে এ পর্যন্ত আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নতুন কোনো সেরোটাইপ সক্রিয় কি না, সেটা জানা খুব জরুরি বলে মনে করেন আইসিডিডিআরবির বিজ্ঞানী মোহাম্মদ শফিউল আলম।
সরকারের কি তেমন কোনো তৎপরতা আছে? আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক তাহমিনা শিরিন গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘সমস্যা হলো, আমরা মূলত ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালের নমুনা পাই। আর তার ওপর ভিত্তি করেই কাজ করি। বরগুনা বা অন্য অঞ্চলে নতুন কোনো সেরোটাইপে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে কি না, তা জানার প্রক্রিয়া আসলে আমাদের নেই।’
ডেঙ্গুর চারটি ধরন বা সেরোটাইপ আছে। এর মধ্যে গত বছর পর্যন্ত সেরোটাইপ-২ প্রাধান্যশীল ছিল। কোনো বছরে কোনো সেরোটাইপ প্রাধান্যশীল থাকলে পরের বছরে নতুন কোনো সেরোটাইপ সেই স্থান না নিলে রোগের বিস্তার সাধারণত হয় না। কিন্তু নতুন সেরোটাইপ এলে রোগীর বিস্তার যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়ে মৃত্যুর আশঙ্কা।
দেশে গত বছরের শেষ দিকে প্রাধান্যশীল সেরোটাইপ-২–এর পাশাপাশি ৪–এর বিস্তারও লক্ষ করা গেছে। বরগুনায় নতুন কোনো সেরোটাইপ আছে কি না, তার উত্তর সরকারের কাছে নেই।
বরগুনার সদর হাসপাতালটি ২৫০ শয্যার। ডেঙ্গু বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ৫০টি শয্যা কেবল ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত সদর হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ২০০। আর ডেঙ্গু রোগীর জন্য খুব প্রয়োজনীয় স্যালাইনের সংকটের কথা স্বীকার করেন জেলার সিভিল সার্জন মো. আবু ফাত্তাহ।
সিভিল সার্জন অফিসের তথ্যমতে, স্যালাইনসংকটে এগিয়ে এসেছে স্থানীয় দুটি বেসরকারি সংগঠন। ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় সদর হাসপাতালে ছয়জন নতুন চিকিৎসক যোগ দিয়েছেন বলেও জানান সিভিল সার্জন। ওই কার্যালয়ের এক চিকিৎসক প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গুর এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যেও ডাবের খোসাসহ পানি ধরে রাখতে পারে এমন নানা কনটেইনার যত্রতত্র হাসপাতালের পাশেই ফেলছে মানুষজন। শহরের অন্যত্রও ময়লা–আবর্জনার কমতি নেই।
সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে অপরিহার্য। কিন্তু পৌরসভাসহ নানা স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান এখন জনপ্রতিনিধিশূন্য। এ পরিস্থিতি সংকট আরও বাড়াতে পারে বলে শঙ্কা বে-নজীর আহমদের। তিনি বলেন, ডেঙ্গুর দেশময় বিস্তার ঘটছে। কিন্তু ঢাকার বাইরে পুরো বাংলাদেশ একে মোকাবিলায় অপ্রস্তুত। ভয়ানক পরিস্থিতি সামনে আছে বলেই মনে হচ্ছে।