সকালে মুষলধারে বৃষ্টি, চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা
Published: 18th, June 2025 GMT
সকালের ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের কিছু কিছু এলাকায় পানি জমেছে। আজ বুধবার ভোর থেকে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। এতে নগরের কয়েকটি এলাকায় পানি জমে যায়। জলাবদ্ধতার কারণে স্থানীয় বাসিন্দারাসহ কর্মস্থলের উদ্দেশে বের হওয়া মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও এর আশপাশের এলাকায় লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় রয়েছে। এ কারণে মঙ্গল থেকে শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।
সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয় জানায়, আজ সকাল ৯টার আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামে ৬৮ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় আজ সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টার মধ্যে।
ভারী বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়, কাপাসগোলা, কাতালগঞ্জ, শুলকবহর, আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকা, হালিশহর আবাসিক এলাকায় পানি জমে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। এসব এলাকায় গোড়ালি থেকে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে। আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত পানি জমে ছিল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অফিস বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের। তিনি বলেন, বাসা থেকে অফিসের দিকে এসে বিপদে পড়েন। অফিসে যাওয়ার রাস্তায় হাঁটু পরিমাণ পানি। তা ডিঙিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। পরে বাড়তি রিকশাভাড়া দিয়ে পানিতে ডুবে যাওয়া রাস্তা পার হতে হয়েছে। নগরের বহদ্দারহাট এলাকার বাসিন্দা ইফতেখার উদ্দিনের অফিস প্রবর্তক মোড় এলাকায়। তিনি বলেন, বাসা থেকে অফিসে আসার পথে দুই জায়গায় পানিতে রাস্তা তলিয়ে গেছে।
চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪ হাজার ৩৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ে চারটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে তিন সংস্থা। এর মধ্যে সিডিএ দুটি এবং সিটি করপোরেশন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি করে প্রকল্পের কাজ করছে। প্রকল্পগুলোর কাজ চলছে ৫ থেকে ১১ বছর ধরে। ইতিমধ্যে খরচ হয়েছে ৮ হাজার ৩১২ কোটি টাকা। প্রকল্পগুলোর কাজ এখন প্রায় শেষ পর্যায়ে।
চট্টগ্রাম নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে অন্তর্বর্তী সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ঢাকা ও চট্টগ্রামে অন্তত পাঁচটি সভা হয়েছে। এসব সভায় নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে চট্টগ্রামের সেবা সংস্থাগুলোর করণীয় নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে চলমান প্রকল্পগুলোর কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
নগরের আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় সড়কে পানি জমে থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আজ সকালে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প ক এল ক এল ক য় ন রসন নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
আছে তো হাতখানি...
বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস আমাদের সবাইকে বন্ধুত্বের শক্তিকে মনে করিয়ে দেয়, সেই সঙ্গে বুঝিয়ে দেয় যে মানবতা আমাদের সবার এবং বন্ধুত্বের মাধ্যমেই একটি শান্তিপূর্ণ ও সংযুক্ত বিশ্ব গড়ে তোলা সম্ভব। আজ থেকে ১৪ বছর আগে ২০১১ সালে জাতিসংঘ প্রথম ৩০ জুলাইকে বিশ্ব বন্ধুত্ব দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। তারপর থেকে প্রতিবছরই পৃথিবীর বহু দেশে এ দিনটি নিয়মিতভাবে উদ্যাপিত হচ্ছে। এ ছাড়া পৃথিবীর অনেক দেশে আগস্টের প্রথম রোববার বন্ধু দিবস হিসাবে পালিত হয়।
কাকে বলব বন্ধুত্ব—ব্যক্তিগত জীবনে, সমাজে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, দেশে দেশে, জাতিতে জাতিতে? বেশ কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুদের আড্ডায় বন্ধুত্বের কথা উঠেছিল—উঠেছিল সেই সনাতন প্রশ্নও, কাকে বলব বন্ধুত্ব। একজন বলেছিল, বন্ধুত্ব মানে হচ্ছে, যাকে সব কিছু বলা যায়। যেখানে কোনো রাখঢাক থাকে না। আরেক জন বলেছিল, বন্ধুত্ব মানে হচ্ছে একদিন সারা দিন দেখা ও কথা বলার পরেও মনে হয়, দেখা বা কথা ফুরায়নি। কাল আবার দেখা আর কথা শুরু করতে হবে। তৃতীয় বন্ধুটি বলেছিল, বন্ধুত্ব মানে একটি নির্ভরতার কাঁধ আর হাত, যে কাঁধে মাথা রাখা যায়, যে হাতে হাত রাখা যায়।
আমাদের এক তার্কিক বন্ধু বলেন, ও সবই কৈশোরের বা যৌবনের কথা। আজ পড়ন্ত বেলায় এসে আছে কি আমাদের সেই উদ্দাম বন্ধুত্ব? ওর কথা শুনতে শুনতে আনমনা হয়ে পড়লাম। মনে পড়ল দীর্ঘদিনের সেই বন্ধুটির কথা—৫০ বছরের সখ্য, সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রথম থেকেই। সে সময়ে আমাদের কথার কোনো চিহ্নিত পরিধি ছিল না—না বিষয়বস্তু সম্পর্কে, না সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে। আলোচনা চলত অনর্গল নানান বিষয়ে, তুঙ্গ বিতর্কে কেটে যেত ঘণ্টার পর ঘণ্টা, তারুণ্যের ঝাপটায় আমরা তখন উদ্দীপ্ত।
তারপর আমাদের দুজনেই ব্যস্ত হয়ে গেলাম পেশাগত বলয়ে, পারিবারিক জীবন নিয়ে। যৌবনের সে বন্ধুর সঙ্গে নিত্য দেখা হয় না, সাক্ষাৎ পাই মাঝেমধ্যে। মুখোমুখি দেখায় কিংবা দূরালাপনীতে খোঁজখবর নিই। আলোচনা আর যৌবনের বিষয়ে ফিরে যায় না, তারা এখন মোড় নেয় পেশাগত আশা-হতাশার বিষয়ে, ছেলে-মেয়েদের পড়া-শোনা সম্পর্কে। টের পাই পরিবর্তনটি।
দিনবদলের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের কথাবার্তার ছায়াও অন্যদিকে সরে গেল। আমাদের কথোপকথনের আলো স্থির হয়ে থাকে ছেলে-মেয়েদের সাফল্য-ব্যর্থতার কাহিনিতে, নিজেদের শরীর-স্বাস্থ্য বিষয়ে। তারপর কেমন করে যেন কোন এক অমোঘ দিবসে আমরা আলোচনা শুরু করি কার কার শরীর ঠিক নেই, কে কে অসুস্থ, কে কে চলে গেল। ভাবলাম, জীবনের বদলের সঙ্গে সঙ্গে অর্ধশতাব্দীর বন্ধুত্বের মানুষটির সঙ্গে আমার কথোপকথন কেমন করে বদলে গেল। যেন একটি পূর্ণ বৃত্ত ঘুরে সেখানেই কথা বলা ফিরে এল, যেখানে চলে যাওয়াটাই মুখ্য আলোচনার বিষয়। বেশ কিছুদিন আগে সব কথা শেষ করে দিয়ে সে–ও চলে গেল।
পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, অঞ্চলে অঞ্চলে মানুষের সঙ্গে মানুষের মূল ভিত্তিই তো ছিল এ আত্মিক বন্ধন। তাই খিদে পেলে পাড়ার যেকোনো বাড়িতেই পাত পেতেছি, মহল্লায় অন্যায় দেখলে যেকোনো বয়োজ্যেষ্ঠ যেমন যেকোনো বয়োকনিষ্ঠকে শাসন করেছেন, তেমনি অঞ্চলে বিপদ হলে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছেন একসঙ্গে।সম্বিত ফিরে পেলাম আমাদের দার্শনিক বন্ধুটির উচ্চারণে, চাণক্যের সেই চিরায়ত কথায়, ‘উৎসবে, বিপদে, দুর্ভিক্ষে, শত্রুর সঙ্গে সংগ্রামকালে, রাজদ্বারে এবং শ্মশানে যে সঙ্গে থাকে, সে-ই প্রকৃত বন্ধু।’ হয়তো–বা; কিন্তু আমার সব সময়েই মনে হয়েছে, বন্ধুতে বন্ধুতে সময় কাটানো হচ্ছে সাহচর্যের, আনন্দের ও সান্নিধ্যের। চূড়ান্ত বিচারে আমরা সে সাহচর্যের, আনন্দের আর সান্নিধ্যের হিরণ্ময় স্মৃতিটুকুই হৃদয়ে ধারণ করি, আর সব তুচ্ছ হয়ে যায়। ভালোবাসার সময়, মমতার সময়, গল্পের সময়, কাছে বসে থাকার সময়, নির্ভরতার সময়, আড্ডার সময়—এটাই বন্ধুত্বের মূল ভিত্তি।
একজন বন্ধু আরেকজনের কাছে সময়টাই শুধু চায় নিজের কথা বলতে, বন্ধুর গল্প শুনতে, দুঃখ আর আনন্দ ভাগ করে নিতে; কিন্তু প্রায়ই এটা আমরা বিস্মৃত হই। আজকের যুগে বন্ধুকে আমরা ‘মুখোমুখি বসিবার’ সময়টুকুই দিতে পারি না। আমাদের আত্মকেন্দ্রিকতা, আমাদের স্বার্থচিন্তা নিয়ে ‘আমি আমাকেই’ নিয়ে মত্ত—বন্ধুকে সময় দেব কখন। তাই বন্ধুত্বের বন্ধন ঢিলা হয়ে যায়, বন্ধুত্বের রং ফিকে হয়ে পড়ে, বাড়ে দূরত্বের মাইলফলক। সংযোগ হয়তো থাকে তথ্যপ্রযুক্তির কল্যাণে; কিন্তু হৃদয়ের যোগাযোগ?
আমাদের সমাজ অঙ্গনে বন্ধুত্বের সহমর্মিতা একসময় বড় দৃঢ় ছিল। সেই সব গল্প আমরা আজও শুনি—পারিবারিক বলয়ে একটি শক্ত সহমর্মিতার বন্ধনে মানুষ ভালোবাসা, মায়া আর মমতার বন্ধনে আবদ্ধ ছিল। বৃহত্তর পরিবারে সে বন্ধন, সেই একাত্মতা ছড়িয়ে গিয়েছিল এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে। ঝগড়াঝাঁটি কি ছিল না, ছিল না কি মনোমালিন্য? অবশ্যই ছিল; কিন্তু তা সহমর্মিতার ওই মানবিক বন্ধনকে নষ্ট করতে পারেনি। দিনের শেষে মানুষ ওই পারিবারিক সৌহার্দ্যের কাছেই মানুষ ফিরে গেছে হাসিতে-আনন্দে, দুঃখ-কষ্ট, বিপদে-আপদে। পরিবারই তো ছিল মানুষের সবচেয়ে বড় রক্ষাকবচ।
সময়ের সুতায় আমাদের সমাজে মানুষের সঙ্গে মানুষের দুই ধরনের সম্পর্ক ছিল— একটি আত্মিক, একটি ব্যবসায়িক। আত্মিক সম্পর্কটি ছিল বন্ধুত্বের ও সৌহার্দ্যের; ব্যবসায়িক সম্পর্কটি কাজের; আত্মিক সম্পর্কটি মমতা ও মানবিকতার, ব্যবসায়িক সম্পর্কটি অর্থের ও স্বার্থের। ব্যবসায়িক সম্পর্কে লাভ-অলাভের কথা উঠেছে, অংশ-ভগ্নাংশ নিয়ে বিতর্ক চলেছে, চুলচেরা হিসাব-নিকাশ কষা হয়েছে; কিন্তু দিনের শেষে এ সবকিছু ছাপিয়ে অখণ্ড সত্য হিসেবে সর্বদাই বড় হয়ে দাঁড়িয়েছে সমাজে বন্ধুত্বের সম্পর্ক।
বন্ধুরা মিলে ঘুড়ি ওড়ানো শেষে বাড়ি ফেরা। খুলনার বিএল কলেজ মাঠ।