দলকে চ্যাম্পিয়ন করে বড় লাফ মার্করামের
Published: 18th, June 2025 GMT
আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৩৬ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলেন এইডেন মার্করাম। তাঁর সেই ইনিংস দক্ষিণ আফ্রিকাকে টেস্টের রাজদণ্ড এনে দেয়। ২৭ বছর পর জেতা এই বৈশ্বিক ট্রফি প্রোটিয়াদের ‘চোকার্স’ কলঙ্কটাও মুছে দেয়।
লর্ডসে স্মরণীয় ইনিংসটি খেলে ম্যাচসেরাও হন মার্করাম। ৩০ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান এবার শুনলেন আরেকটি সুসংবাদ। টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে তিনি শীর্ষ দশের দুয়ারে পৌঁছে গেছেন। সাত ধাপ এগিয়ে উঠছেন ১১ নম্বরে।
আজ বুধবার হালনাগাদ র্যাঙ্কিং প্রকাশ করেছে আইসিসি। নতুন র্যাঙ্কিং অনুযায়ী বর্তমানে মার্করামের রেটিং পয়েন্ট ৭২৩। দশে থাকা নিউজিল্যান্ডের ড্যারিল মিচেলের চেয়ে মাত্র ২ রেটিং পয়েন্ট কম।
ফাইনালে দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ২০ রান করা অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড র্যাঙ্কিংয়ে চার ধাপ পিছিয়ে ১২ নম্বরে নেমে গেছেন। এই সুযোগে ম্যাচ না খেলেও দুই ধাপ এগিয়ে শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন মিচেল।
ব্যাটসম্যানদের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ সাতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা আছেন ছয়ে। চূড়ায় আছেন ইংল্যান্ডের তারকা ব্যাটসম্যান জো রুট।
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সেরা অবস্থানে আছেন লিটন দাস। এক ধাপ এগিয়ে ইংল্যান্ডের জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে যৌথভাবে ৩৭ নম্বরে আছেন লিটন। দুজনেরই রেটিং পয়েন্ট ৫৭১। মুশফিকুর রহিমও এক ধাপ এগিয়েছেন। তিনি আছেন ৩৯ নম্বরে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চলমান গল টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরির আশায় আছেন মুশফিক। আজ দুপুরে বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ হওয়ার আগে লিটন অপরাজিত ছিলেন ৬১ রানে।
দারুণ ব্যাটিং করায় এই টেস্ট শেষে স্বাভাবিকভাবেই রেটিং পয়েন্ট বাড়ার কথা মুশফিক ও লিটনের। ছন্দ ধরে রাখতে পারলে পরবর্তী হালনাগাদ র্যাঙ্কিংয়ে হয়তো আরও ওপরে উঠে আসবেন।
লর্ডসে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১০ রানে ৯ উইকেট নেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেসার কাগিসো রাবাদা, যা বৈশ্বিক আসরের ফাইনালে কোনো বোলারের সেরা বোলিং। এমন পারফরম্যান্সের পর টেস্ট বোলারদের র্যাঙ্কিংয়ে দুই নম্বর স্থান ধরে রেখেছেন রাবাদা। যথারীতি শীর্ষে আছেন ভারতের যশপ্রীত বুমরা।
টেস্টে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সেরা অবস্থানে আছেন তাইজুল ইসলাম (১৬ নম্বর)। বাঁহাতি এই স্পিনারের অবস্থানের নড়চড় হয়নি।
অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ পাঁচের দুজনই বাংলাদেশি। মেহেদী হাসান মিরাজ দুইয়ে ও সাকিব আল হাসান পাঁচে আছেন। যথারীতি চূড়ায় ভারতের রবীন্দ্র জাদেজা।
বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে অপরাজিত ফিফটিসহ ৫৯ রান করেন মিচেল স্টার্ক। দুই ইনিংস মিলিয়ে নেন ৫ উইকেটে। সেটির পুরস্কার হিসেবে অলরাউন্ডারদের র্যাঙ্কিংয়ে তিন ধাপ এগিয়ে দশে উঠে এসেছেন তিনি।
দলীয় র্যাঙ্কিংয়েও পরিবর্তন এসেছে। দুই বছরের জন্য টেস্টের রাজদণ্ড পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকা দুইয়ে উঠে এসেছে। ইংল্যান্ড নেমে গেছে তিনে। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে হেরেও এক নম্বরে আছে অস্ট্রেলিয়া। বাংলাদেশ আছে নয়ে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব য টসম য ন ম র কর ম ফ ইন ল
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প-ইরানের সম্ভাব্য চুক্তিতে নতুন মধ্যপ্রাচ্যের দিশা
১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে মার্কিন-ইরান সম্পর্কে সবচেয়ে অন্ধকার সময় ছিল। তারপরও বিচক্ষণ পর্যবেক্ষকরা কখনও এটা বুঝতে পারেননি যে, উভয়ের মধ্যকার তীব্র বিভেদ অপূরণীয়ভাবে হারিয়ে যাওয়া ধ্বংসাবশেষের চেয়ে বরং পুনর্মিলনের জন্য কাতর একটি বিচ্ছিন্ন সম্পর্কের মতো ভাঙা ছিল। যদি পুনর্মিলনে এত সময় লাগে তবে এর কারণ ছিল এটি এমন এক সম্পর্ক, যেখানে স্মৃতি আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মিশে ছিল।
এ কারণেই ২২ জুন ফরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্র ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা ফেলার পর থেকে যে নাটকীয়তা শুরু হয়েছিল, তা এক পরাবাস্তব চেহারা ধারণ করে, যেখানে ছবিগুলো অদ্ভুতভাবে পরস্পর মিশে গিয়েছিল, যেমনটা স্বপ্নে ঘটে। যদি কেউ এই জটিল বিষয়কে কল্পনা থেকে বাস্তবে টেনে আনতে পারেন, তিনি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একবার ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ নামে একটি রিয়েলিটি শোর আয়োজন করেছিলেন, যা ২০০৪ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এনবিসিতে ১৫টি মৌসুমজুড়ে বিভিন্ন ধরনে প্রচারিত হয়েছিল। এতে উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্যবসায়ীরা অংশগ্রহণ করেছিলেন, যারা ট্রাম্পের এক সম্পত্তির পক্ষে প্রচার চালাতে ২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের বিনিময়ে এক বছরের চুক্তির জন্য প্রতিযোগিতা করেছিলেন।
আজ যে সম্পত্তি প্রস্তাব করা হচ্ছে তা হলো গাজা রিভেরা। দ্য অ্যাপ্রেন্টিসের মতো যার ২০টি স্থানীয় সংস্করণ ছিল; গাজা রিভেরাও একটি বহুমুখী জিনিস যেখানে ইরানম ইসরায়েলসহ সবার জন্য কিছু না কিছু আছে। কিন্তু সেটা ছিল এক প্রকার অন্ধকারে ঝাঁপ দেওয়া।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, মিডনাইট হ্যামার (ইরানে সাম্প্রতিক মার্কিন অভিযানের নাম) কী অর্জন করেছিল? খুব কমই কেউ লক্ষ্য করেছে যে, ট্রাম্প ইরানের পক্ষ থেকে একটি প্রাচীন ভুলের প্রতিশোধ নিয়েছে। এর সৌন্দর্য হলো, ইরানের জিম্মি সংকটের পর্দা নামাতে ৪৪৪টি যন্ত্রণাদায়ক দিন লেগেছিল। আর ট্রাম্পের সেই অন্ধকার অধ্যায়টি চূড়ান্তভাবে বন্ধ করতে এবং টাইম মেশিনকে মার্কিন-ইরান সম্পর্কের একটি অগ্রাধিকারমূলক ইতিহাসে নিয়ে যেতে এক ঘণ্টারও কম সময় লেগেছিল।
এই মুহূর্ত থেকে ট্রাম্পের পক্ষে ইরানের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ সম্পর্কের জন্য মার্কিন অবস্থান উল্টে দেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। ইরানভীতি এখন ভালোভাবেই সমাহিত হচ্ছে। এটিই প্রথম জিনিস।
দ্বিতীয়ত, ট্রাম্প ২২ জুন মধ্যরাতে ইরানের পারমাণবিক সমস্যার সমাধান করেন, যখন তিনি দেশটির পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ‘নিশ্চিহ্ন’ করে দেন। ট্রাম্পের এই ঘোষণা তাঁর বিরোধীদের একটি সম্পূর্ণ নতুন শিল্পকে ঝুঁকিতে ফেলে দেয়, যারা জোর দিয়ে বলে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এখনও জীবিত এবং সক্রিয়, যার মধ্যে আইএইএর মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রোসিও ছিলেন। কিন্তু ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে অটল থাকেন। এক ধাক্কায় তিনি মার্কিন-ইরান স্বাভাবিকীকরণ প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের হস্তক্ষেপের যে কোনো সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছেন।
৮ জুলাই মঙ্গলবার ট্রাম্প ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, মিডনাইট হ্যামারকে ‘আক্রমণ’ বলে গর্ব করার আর কোনো কারণ নেই। সোমবার হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও প্রশিক্ষিত পেশাজীবী মনোবিজ্ঞানী স্ত্রী সারার জন্য আয়োজিত এক নৈশভোজে ট্রাম্পের মন্তব্যে তার দ্বিধা ক্ষণিকের জন্য স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
ট্রাম্পের স্বজ্ঞাত জ্ঞান ও আত্মবিশ্বাস এতটাই প্রবল, তিনি আসলে নেতানিয়াহুকে মিডিয়ার সামনে কথা বলতে দিতে পছন্দ করেছিলেন, যাতে তিনি মার্কিন-ইরান আলোচনা ফের শুরু করার মূল কারণ ব্যাখ্যা করতে পারেন। নেতানিয়াহু যখন স্পষ্ট ভাষায় বক্তব্য রাখছিলেন, তখন ট্রাম্পের অভিব্যক্তিহীন মুখ দেখাটা বেশ আনন্দদায়ক ছিল।
কিন্তু যখন একজন সাংবাদিক নেতানিয়াহুকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসরায়েল এখনও ইরানে শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন চায় কিনা; তখন তিনি সংক্ষিপ্ত উত্তর দিয়েছিলেন, এটি ইরানি জনগণের সিদ্ধান্ত! ট্রাম্প স্টিভ উইটকফকে এ ঘোষণা দিতে উৎসাহিত করেন যে, আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকেই মার্কিন-ইরান আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে। তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, আলোচনায় একটি নথি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরিত হতে পারে এবং ইরানের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির প্রশংসা করেন।
তৃতীয়ত, তেহরান সময় নষ্ট না করে স্বীকার করে যে, আমেরিকার সঙ্গে আলোচনার বিষয়টি বিবেচনাধীন। অবশ্য তেহরান দাবি করেছে, এই উদ্যোগ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এসেছে। ইরানি গণমাধ্যম দাবি করেছে, ‘এ প্রসঙ্গে ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মার্কিন দাবির প্রয়োজনীয়তা, বৈধতা ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের মাত্রা নির্ধারণ এবং আরোপিত ১২ দিনের যুদ্ধের ক্ষতিপূরণ পেতে কীভাবে নতুন দফা আলোচনা করা যায়, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে।’
কঠিন আলোচনার আগে কূটনীতিতে কিছুটা ঝগড়াঝাঁটি অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে ট্রাম্পের মতো ইরানের বাগাড়ম্বরও এখন বন্ধ। তাই মার্কিন-ইরান আলোচনা ফের শুরু করতে উভয় পক্ষের সম্মতিকে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত এবং একটি নতুন মধ্যপ্রাচ্য গঠনের পথে বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা উচিত।
এম কে ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম