বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ঝালকাঠির নলছিটিতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। পৌরসভা এলাকা ও বেশিরভাগ ইউনিয়নে অকেজো হয়ে পড়ে আছে হাজারের বেশি গভীর নলকূপ। পানির চাহিদা মেটাতে পৌরসভার দুটি পানি সাপ্লাই ইউনিট থাকলেও তাদের পানি সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন নয়। এ কারণে পানি তুলতে সাবমারসিবল পাম্পের দিকে ঝুঁকছেন বাসিন্দারা।
গ্রাহকদের সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন দুইবার পানি সরবরাহ করার কথা থাকলেও নিয়ম মানছে না পৌর কর্তৃপক্ষ। গ্রাহকদের অভিযোগ, পৌরসভার নান্দিকাঠি এলাকার সারফেস ওয়াটার টিটমেন্ট প্লান্ট সুগন্ধা নদীর পানি শোধনাগারে পরিষ্কার করে পরিবেশন করবে, কিন্তু সেই পানির সঙ্গে যাচ্ছে কাঁদা-ময়লা। এতে সাপ্লাইয়ের পানির সংযোগ নিতে আগ্রহী হচ্ছেন না পৌরবাসী। এমতাবস্থায় তীব্র পানি সংকটের আছেন উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার প্রায় ২ লাখ মানুষ।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগে যেখানে মাটির ৭০০-৮০০ ফুট গভীরে মিলত বিশুদ্ধ পানি, এখন তা এক হাজার ফুট গভীর থেকেও তোলা যাচ্ছে না। পুকুর ও খালের দূষিত পানি ব্যবহার করায় পাল্লাদিয়ে বাড়ছে পানিবাহিত নানা রোগ।
নলছিটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গত এক সপ্তাহের তথ্যে জানা গেছে, হাসপাতালে ধারণ ক্ষমতার দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হয়ে পানিবাহিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) দুপুরে উপজেলার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দপদপিয়া ইউনিয়ন ও পৌরসভা এলাকার কয়েকটি বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, নলকূপগুলোতে পানি উঠছে না। যাদের আর্থিক সচ্ছলতা রয়েছে তারা সবাই সাবমারসিবল বসিয়ে পানি তুলছেন। দরিদ্র মানুষজন কলস ও বালতি নিয়ে সাবমারসিবল পাম্পে ভিড় করেছেন পানি নিতে।
নলছিটি পৌরসভার মালিপুর এলাকার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “আগে মাটির ৭০০ থেকে ৮০০ ফুট গভীরে পানি মিলত। এখন এক হাজার ফুট গভীর থেকেও পানি তোলা যাচ্ছে না। দিন দিন যেন মাটির গভীরে পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। পৌরসভার সাপ্লাইয়ের পানি মানসম্মত না। পানিতে কাদা ও ময়লা থাকে।”
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে উপজেলার নাচনমহল ও মোল্লারহার ইউনিয়নের ১২৫৭টি পরিবারকে উপকূলীয় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এই উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের জনগুরুত্বপূর্ণ হাট-বাজারগুলোতে ৩ হাজর লিটার ধারণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ ১৮টি কমিউনিটি টিউবওয়েল স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
নান্দিকাঠি এলাকার গৃহবধূ রহিমা বেগম বলেন, “নলকূপে পানি না উঠায় আমরা পুকুর ও খালের পানি রান্না-খাওয়ার জন্য ব্যবহার করি। গত এক মাসে শিশুরা ডায়রিয়াসহ নানা ধরনের পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়েছে। আমরা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছি।”
নলছিটি উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৗশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী আবদুস সোবাহান বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এ কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা প্রায়ই গভীর নলকূপে পানি উঠেছে না এমন অভিযোগ পাচ্ছি। নির্বিঘ্নে পানি পেতে হলে সাবমারসিবল বসাতে হবে। বর্ষা মৌসুমে এ অবস্থার কিছুটা পরিবর্তন হবে।”
জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার এরশাদুজ্জামান মৃদুল বলেন, “অপরিকল্পিত নলকূপ স্থাপনের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অবস্থায় সাপ্লাই, বৃষ্টির পানি ও পুকুর জলাশয়ের পানি ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে বিকল্প ব্যবহারে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।”
নলছিটি উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ২ লাখ। এই জনসংখার প্রায় ৫০ ভাগ মানুষ সরকারিভাবে বসানো চার হাজার ও ব্যক্তি উদ্যোগে বসানো ৬ হাজার গভীর নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। বাকিরা পৌর সাপ্লাই, নদী, খাল ও পুকুরের পানি ফুটিয়ে পান করেন।
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর প ন র স তর ন উপজ ল র প রসভ র ব যবহ র এল ক র নলক প নলছ ট
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫