তথ্য এখন জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত অস্ত্র: পরিবেশ উপদেষ্টা
Published: 18th, June 2025 GMT
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, “জাতীয় নিরাপত্তা এখন কেবল অস্ত্রের ওপর নির্ভর করে না, এটি জনমতের ওপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। বিভ্রান্তিকর তথ্য একটি মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র; এটি মোকাবিলায় চাই সত্য, আস্থা এবং তথ্যভিত্তিক সচেতনতা।”
বুধবার (১৮ জুন) মিরপুরের ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজে (এনডিসি) অনুষ্ঠিত ‘অ্যাডভান্সিং ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট: ইউজ অফ ইনফরমেশন এজ এ পাওয়ারফুল স্ট্রাটেজিক টুল’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করে এনডিসি এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ (বিপিএসএস)।
আরো পড়ুন:
বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে অবদানের জন্য পুরস্কার পাচ্ছে ৪ ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান
রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিদর্শনে পরিবেশ উপদেষ্টা
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ আমাদের ইতিহাসে এক ট্র্যাজেডি। ৫০ হাজার সৈন্য নিয়ে পরাজয়ের অন্যতম কারণ ছিল ভুল তথ্য ও ষড়যন্ত্র। আজকের দিনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো গুজব ঠিক তেমনি জাতীয় নিরাপত্তা ও উন্নয়নকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
তিনি বলেন, “তথ্যের স্বপ্রণোদিত প্রকাশ নিশ্চিত না হলে জনগণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, ফলে গুজবই সমাজে চালিকা শক্তি হয়ে ওঠে। রাষ্ট্রের প্রকল্পের খরচ জনগণের টাকায়। তাই জনগণের উচিত সেই প্রকল্প সম্পর্কে জানার অধিকার থাকা।”
উপদেষ্টা জলবায়ু সংকটকে বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত করে বলেন, “বৈশ্বিক উষ্ণতা ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি আমাদের এক-তৃতীয়াংশ ভূখণ্ডকে ডুবিয়ে দিতে পারে। তথ্য শুধু প্রযুক্তি দিয়ে নয়, লোকজ জ্ঞান দিয়েও গঠিত। অনেক ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষদের পূর্বাভাস মডেলের চেয়েও বেশি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে।
উপদেষ্টা জানান, যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে স্যাটেলাইটভিত্তিক তথ্য ও প্রশিক্ষণ সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এখন প্রয়োজন সেই তথ্য বিশ্লেষণের সক্ষমতা গড়ে তোলা এবং তা সাধারণ মানুষের কাছে সহজভাবে পৌঁছে দেওয়া।
তিনি বলেন, “তথ্য যদি গোপন রাখা হয়, সত্য যদি দমন করা হয়, তাহলে আমরা টেকসই উন্নয়ন ও নিরাপত্তা দুটোই হারাব। এই আলোচনার মাধ্যমে আমরা যেন একটি তথ্যভিত্তিক, সুরক্ষিত ও অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশ গড়ার পথে আরও একধাপ এগিয়ে যেতে পারি।”
অন্যদের মাঝে বক্তব্য দেন, ন্যাশনাল ডিফেন্স কলেজের কমান্ড্যান্ট লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোহাম্মদ শাহীনুল হক। এছাড়া চারজন অংশগ্রহণকারী মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
এতে ঊর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তা, কূটনীতিক, শিক্ষাবিদ, অংশগ্রহণকারী এবং উন্নয়ন পেশাদাররা উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/মেহেদী
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর পর ব শ উপদ ষ ট
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচিত সরকার না হলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আসবে না। সবাই একটা নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে ‘রংপুর বিভাগের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের রাজনৈতিক অধিকার’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় আমীর খসরু এ কথা বলেন।
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে চেম্বার ভবনে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশ থেকে যারা আসে তারা আমাদের জিজ্ঞেস করে, আপনাদের নির্বাচনটা কবে হবে। সব কথা শোনে, শোনার পর বলে, নির্বাচন কবে হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে এত বড় কমিটমেন্টে কেউ যাবে না। তাদের স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগ করে। এটা কোনো অন্তর্বর্তী সরকারের কাজ নয়। সুতরাং সবাই বসে আছে হাত গুটিয়ে। সবাই অপেক্ষা করছে একটা নির্বাচনের জন্য।’
‘এক একটা দিন আমরা নষ্ট করছি ও পিছিয়ে যাচ্ছি’—এমন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছি। এখন সবাইকে শক্তিশালীভাবে বলতে হবে, আমরা নির্বাচিত সরকার চাই, যারা জনগণের কাছে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধ। এর বাইরে অন্য কোনো সরকারের জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা নেই।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ও জনগণের মধ্যে সেতুবন্ধ হলো নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। যে কারণে কেউ কাজ করছে না। পুলিশ কাজ করছে না, সরকারি কর্মকর্তারা কাজ করছে না। কোনো জায়গায় কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়া হচ্ছে না, হবে না।’
নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জনগণের মালিকানার প্রতিফলন ঘটাতে যার জন্য গত ১৭ বছর যুদ্ধ করেছি। শেখ হাসিনার পলায়নের পর দেশের রাজনীতিতে একটি মানসিক পরিবর্তন এসেছে। এখন আমাদের প্রত্যাশা ও দায়িত্ব বাড়ছে। আমরা যদি রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পাই, তবে জনগণের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করব।’
রংপুরের অর্থনীতি প্রসঙ্গে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘রংপুরের হস্ত ও তাঁতশিল্পের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্ভব। কামারের পণ্য রপ্তানিযোগ্য হলেও তা রপ্তানি হচ্ছে না। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের লক্ষ্য রংপুরে কলকারখানা, স্কিল ডেভেলপমেন্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় উদ্যোক্তা তৈরি করা। আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে উদ্যোক্তাদের আর্থিক সুবিধা ও কাঁচামাল সরবরাহ নিশ্চিত করা। বিদেশে সোনার অলংকার রপ্তানি এবং ডায়মন্ড কাটিং সেক্টরেও কাজ করার পরিকল্পনা আছে।’
রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এমদাদুল হোসেনের সভাপতিত্বে সভায় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবীব, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জিয়াউদ্দিন হায়দারসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা ও ব্যবসায়ী নেতারা বক্তব্য দেন।
এ ছাড়া সভায় রংপুর অঞ্চলের ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রাজনৈতিক প্রতিনিধি ও সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন। রংপুরের পিছিয়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙা করতে করণীয়, শিল্প-বাণিজ্য প্রসার, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করেন ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতারা।