সাইবার হামলা থেকে রক্ষা পেতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের পাশাপাশি ই-মেইল ও কম্পিউটারের জন্য আমরা সবাই একাধিক পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে থাকি। কিন্তু দুর্বল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করলে সাইবার অপরাধীরা সহজেই অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ব্যক্তিগত বা গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চুরি করতে পারে। এমনকি তথ্য চুরির পর সেগুলো আবার ব্যবহারের সুযোগ দিতে অর্থও দাবি করে তারা। তাই অনলাইনে নিরাপদ থাকতে ই-মেইল, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড নিরাপদ রয়েছে কি না, তা জানা প্রয়োজন। ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলোর পাসওয়ার্ড হ্যাকড হয়েছে কি না, তা সঠিকভাবে চিহ্নিত করার পাশাপাশি নিরাপদ থাকার কৌশল জেনে নেওয়া যাক।

অস্বাভাবিক কার্যকলাপ

অ্যাকাউন্টে কোনো অস্বাভাবিক কার্যকলাপ শনাক্ত হলে, সেটি অবহেলা করা উচিত নয়। ই–মেইল না পড়লেও সেগুলো ‘রিড’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেলে অথবা গোপনে কোনো বার্তা পাঠানোর পাশাপাশি হঠাৎ কোনো অ্যাকাউন্ট লগ আউট হয়ে গেলে বুঝতে হবে আপনার অ্যাকাউন্টের পাসওয়ার্ড ফাঁস হয়ে গেছে।

অনলাইন টুল ব্যবহার

তথ্য ফাঁস (ডাটা ব্রিচ) থেকে ই–মেইল বা পাসওয়ার্ড নিরাপদ রয়েছে কি না, তা জানার জন্য অনেক অনলাইন টুল রয়েছে। যেমন হ্যাভ আই বিন পাউনড নামের একটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবহারকারী সহজেই জানতে পারবেন, তার ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাসওয়ার্ড কোনো ডাটা ব্রিচে ব্যবহৃত হয়েছে কি না। এই টুলটি কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে ব্যবহারকারীর তথ্য চুরি হয়েছে, সেটাও নির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেয়।

পাসওয়ার্ড পরিবর্তন

ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পাসওয়ার্ড হ্যাকারদের হাতে চলে গেছে, এমনটি যদি নিশ্চিত হওয়া যায়, তবে দেরি না করে তৎক্ষণাৎ পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করতে হবে। পাসওয়ার্ড তৈরির ক্ষেত্রে এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যাতে বড় হাতের অক্ষর, ছোট হাতের অক্ষর, সংখ্যা ও বিশেষ চিহ্নের (যেমন: @, #, $) মিশ্রণ থাকে। এটি পাসওয়ার্ডকে আরও নিরাপদ করে তুলবে। এ ছাড়া একাধিক অ্যাকাউন্টে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অতিরিক্ত সুরক্ষার জন্য টু-ফ্যাক্টর অথেন্টিকেশন চালু রাখতে হবে।

সচেতন থাকা

নিজের ই-মেইল বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা সম্পর্কে সচেতন থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য নিয়মিত ই–মেইলে আসা নিরাপত্তা সতর্কবার্তা পরীক্ষা করা এবং সংযুক্ত ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের নিরাপত্তা নজর রাখতে হবে। তথ্য চুরি বা সাইবার আক্রমণের আগে সতর্ক হলে বড় ধরনের ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।

সূত্র: টেকলুসিভ

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর প সওয় র ড ন র পদ প সওয

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার তীব্র সমালোচনা

‘আমার সোনার বাংলা...’ গাওয়ায় রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার নির্দেশ দিয়েছেন আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা। রাজ্যের এক সিনিয়র কংগ্রেস নেতার বিরুদ্ধে এই মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ ঘটনায় তীব্র সমালোচনা করেছেন রবীন্দ্রপ্রেমীরা। রবিবার আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। 

গত সোমবার আসামের শ্রীভূমি জেলার ইন্দিরা ভবনে কংগ্রেস সেবা দলের বৈঠকের সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালবাসি’ গানটি গেয়েছিলেন বিধুভূষণ দাস নামে এক সিনিয়র কংগ্রেস কর্মী। এরপরই বিতর্ক ছড়ায়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি বিভিন্ন সময় গেয়েছেন প্রখ্যাত শিল্পী সুচিত্রা মিত্র, মান্না দে, শান্তিদেব ঘোষ, কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়, লতা মঙ্গেশকর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, নচিকেতাসহ আরো অনেক প্রথিতযশা শিল্পীরা। কিন্তু সেই গান নিয়েই এত বিতর্ক মেনে নিতে পারছেন না শান্তিনিকেতনের আশ্রমিক, শিক্ষার্থী থেকে বিদ্বজনেরা। 

রাজ্যটির বীরভূম জেলার শান্তিনিকেতনে সিনিয়র আশ্রমিকেরা বলছেন এ তো একেবারে ‘হাস্যকর’! রবি ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুরের প্রশ্ন ‘আমরাও কি তাহলে রাষ্ট্রদ্রোহী?’ 

১৯০৫ সালে লর্ড কার্জনের ‘বঙ্গভঙ্গ’ প্রস্তাবের বিরুদ্ধে সরব হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ। এর প্রতিবাদে রাখিবন্ধন করে পথে নেমেছিলেন স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সময় ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন তিনি। ১৯৭২ সালের ১৩ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার এই গানটিকে ‘জাতীয় সঙ্গীত’ হিসাবে গ্রহণ করে। 

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিবারের সদস্য সুপ্রিয় ঠাকুর বলেন, “এক্কেবারে হাস্যকর ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথের গান সবার জন্যই, সবাই গেয়ে থাকেন। আমরাও এখনো গেয়ে থাকি। এটা যদি দেশদ্রোহীতা হয়, তাহলে আমরা দেশদ্রোহী। একজন মুখ্যমন্ত্রী (হিমন্ত বিশ্ব শর্মা) যদি এধরনের কথা বলেন, তাকে তাহলে ‘মুখ্য’ বলা যাবে না, অন্য কিছু বলতে হবে।”

বিশ্বভারতীর পাঠভবনের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ও সিনিয়র আশ্রমিক সুব্রত সেন মজুমদার বলেন, “ব্যাপারটা আমার কাছে অত্যন্ত হাস্যকর ও লঘু মনে হয়। রবীন্দ্রনাথ বিশ্ববন্দিত, তাই তার গান সব জায়গায় গাওয়া যায়। কিন্তু, একথা স্বীকার করি ‘আমার সোনার বাংলা’ বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত এবং তারা গুরুদেবের এই গানটিকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছেন বলে আমরা সম্মান করি। এই গান কোথাও গাওয়া যাবে না এমন বিধিনিষেধ থাকা ভালো নয়। এটা অত্যন্ত ছোট মনের পরিচয়। তাই এই ধরনের ঘটনা দেখে আমরা অত্যন্ত মর্মাহত। তাদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে তারা যেন আকাশের মত মন নিয়ে বিষয়গুলি দেখেন। মুখ্যমন্ত্রীকে সবাইকে নিয়ে রাজ্য চালাতে হয়, তাই তার অনেক উদার হওয়া উচিত।”

আরেক সিনিয়র আশ্রমিক অপর্ণা দাস মহাপাত্র বলেন, “জিনিসটা খুব হাস্যকর। রবীন্দ্র সঙ্গীত যে কোনো জায়গায়, যে কোনো পরিস্থিতিতে গাওয়া যায়। তার সঙ্গে দেশদ্রোহীতার সম্পর্ক খুঁজতে যাওয়া অত্যন্ত হাস্যকর। ‘আমার সোনার বাংলা’ এত সুন্দর একটি গান, যা যে-কোন উপযুক্ত পরিস্থিতিতেই গাওয়া যায়। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর যদি এইটুকু জ্ঞান না থাকে বা রবীন্দ্রসঙ্গীতের প্রতি ভালোবাসা না থাকে সেটা আমাদের কাছে খুব দুঃখের।”

আশ্রমিক সুলগ্না মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমার সোনার বাংলা গানটি একটা জাতীয় সঙ্গীতের ঊর্ধ্বে গিয়ে এটা রবীন্দ্র সঙ্গীত। আর কি বলবো, কিছু বলারই নেই।”

আসামের ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছে বিশ্বভারতীর বাম ছাত্র সংগঠন ‘স্টুডেন্টস ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া’ (এসএফআই)। তাদের সদস্যরাও পথে নেমে স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন। 

আসমের এই ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার পথে নেমেছে বিশ্বভারতীর এসএফআই ইউনিটের সদস্যরা। এসএফআই ইউনিটের সম্পাদক বান্ধুলি কারার বলেন, “আমরা একটা বড় সমস্যার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি। রবীন্দ্রনাথের লেখা গান গাওয়ায় আসামে একজনের বিরুদ্ধে এফআইআর হয়েছে। এই গানটা শুধু একটা দেশের জাতীয় সংগীত নয়। এই গানটা মাটির গান, ভালোভাসার গান, মানবতার গান, একতার গান। এই গান গাওয়ায় যারা রাষ্ট্রদ্রোহী বলছেন, আসলে তারা মানবতাবিরোধী। রবীন্দ্রনাথের গান, তার লেখা, তার মুক্ত চিন্তা এগুলো বাঙালির চেতনার একটা অংশ। রবীন্দ্রনাথকে যদি অপমান করা হয় তার অর্থ বাঙালির শিক্ষা, সংস্কৃতির অপমান করা। রবীন্দ্রনাথ কেবলমাত্র বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা নন, তিনি আমাদের বাংলার গর্ব, ভারতের গর্ব। যারা বাংলার শিক্ষা, সংস্কৃতিকে মুছে ফেলতে চাইছে তাদের বিরুদ্ধে আমাদের প্রতিবাদ চলবে।” 
 

সুচরিতা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ